—ফাইল চিত্র।
‘সপ্তক’ ক্রোড়পত্রের (২২-১) অনুষঙ্গে বলি, অগ্রগণ্য শিল্পীরা আমাদের ‘সুরের আকাশে ধ্রুবতারা’ তো বটেই, তবে এই উদ্যাপন সুমনে এসে থেমে গেল কেন, স্পষ্ট নয়। নচিকেতা, অঞ্জন, শিলাজিৎ, মৌসুমী ভৌমিক, তার পরে বাংলা ব্যান্ডের উত্থান সময়ের চ্যালেঞ্জে উত্তীর্ণ হয়ে বাঙালির চিরন্তনতার মধ্যে ঢুকে গিয়েছে। এখন প্যান্ডেলে পুরনো গানের সঙ্গে ব্যান্ডের গানও বাজে। গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র (ছবিতে তিনি ও মহীনের ঘোড়াগুলি সম্পাদিত বাংলা গানের বিখ্যাত অ্যালবাম কভার) আত্মপ্রকাশের সঙ্গে সময়ের স্রোতের বিপ্রতীপে যে চলন শুরু হয়েছিল, যা তখন মূলস্রোতে মিশতে পারেনি, তা নব্বই দশকের শেষে ও একবিংশের গোড়ায় আবার জাঁকিয়ে বসে।
প্রাথমিক অচলায়নজনিত বিকর্ষণ কাটিয়ে উঠে কয়েক প্রজন্মের নস্টালজিয়ার বড় অংশীদার হয়ে ওঠে ক্রসউইন্ডস, ভূমি, পরশপাথর, ক্যাকটাস, ফসিলস, লক্ষ্মীছাড়া, চন্দ্রবিন্দু, একলব্য ও আরও কিছু ব্যান্ড। ‘আমার ঘুম ভাঙে’, ‘পচাকাকা’, ‘ভালো লাগে’, ‘সুজন’, ‘হলুদ পাখি’ খুব অল্প সময়ে বাঙালি কৈশোর-তারুণ্যকে আন্দোলিত করে। ‘আসলে জীবন বলে সত্যি কিছু নেই/ জীবন জীবিত থাকার অভিনয়’-এর মতো ডার্ক রোমান্টিসিজ়ম কিংবা ‘জুতোর ঘুম থেকে জাগে পেরেক/ টাকা পাঠাচ্ছে না মেজোমামা, আমি তো চাইবই— এ শহরে তুমি নেমে এসো’ বা ‘ঘুম ঘুম ক্লাসরুম’— একবিংশ শতকের রোজকার রংচটা ভালবাসার এই অনাবিল উদ্যাপন ও উচ্চারণ, যা তথাকথিত স্বর্ণযুগের গানে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত, নাড়িয়ে দিয়েছিল নবীন প্রজন্মকে। তাঁদের অনেকেই আজ মধ্যযৌবনে, সময় পেলেই ফিরে যান সেই নস্টালজিয়াতে, যা সেই সময়ের একান্ত আপন অভিজ্ঞান। তাকে বাদ দিয়ে বাংলা গানের নকশিকাঁথা সম্পূর্ণ হয় না।
ঠিক সেই সময়, এই ‘ছকভাঙা’ গানের সমান্তরালে, তথাকথিত ‘ছকমানা’ বেসিক গানেও মণিমুক্তো ছড়িয়ে যাচ্ছিলেন ইন্দ্রনীল, শ্রীকান্ত, রূপঙ্কর, শুভমিতা, মনোময়, রাঘব, লোপামুদ্রা, জয় সরকারের মতন গানওয়ালারা। তাঁদের সেই প্রচেষ্টা আঞ্চলিক বিস্তৃতির নিরিখে হয়তো সীমিত হতে পারে, তবে তা বাঙালির চিরকালীন সম্পদ।
দীপেশ চক্রবর্তীর লেখার সূত্র ধরে, একটু বলি গানের মাধ্যমের কথা, যা ক্রমাগত বদলে চলেছে। সত্তর বা আশির দশকে যা ছিল মূলত রেডিয়ো, কিছু ক্ষেত্রে রেকর্ড। তার পর ক্যাসেট, তার পর সিডি। এই সময় অবধি নতুন (বাংলা) গানের তেষ্টা মিটিয়ে নেওয়ার যে চাহিদা ছিল, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রেকর্ড কোম্পানিগুলির বাছাই করা সঙ্কলনগুলি বহু বছর ধরে রসদ জুগিয়ে যেতে থাকে। তা বেসিক গানের হোক, বা ফিল্মি। ২০০২-০৩ সাল নাগাদ কিছু বেসরকারি এফএম চ্যানেলের সৌজন্যে আবার বাংলা গানের নতুন ধারা এক জোয়ার নিয়ে আসে। একটি দু’টি করে বাংলা ছবিতে গানের মোড় ঘুরতে থাকে। এর পর আসে ইন্টারনেট। চাহিদার তুলনায় জোগান হয়ে পড়তে থাকে লাগামছাড়া। সঙ্গে আরও এক অদ্ভুত সঙ্কট, বেসরকারি এফএম চ্যানেলগুলি থেকে প্রায় সম্পূর্ণ ভাবে উবে যেতে শুরু করল বাংলা গান। বলা ভাল, বাংলা ভাষা। ইন্টারনেট প্রাথমিক ভাবে সর্বসাধারণের মাধ্যম হয়ে থাকলেও, এখন বহুলাংশে তা পুঁজির নিয়ন্ত্রণে। টিভি হোক বা রেডিয়ো, বা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম— প্রচারিত গানের ৯৮% মূলত হিন্দি ফিল্মি গান। সৌজন্য বিপুল পুঁজি। সিডি বিক্রি তলানিতে। যেটুকু বাংলা গান মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছে, তা মূলত চলচ্চিত্রের দৌলতেই। ইন্টারনেটের ক্যাকোফোনি আর ফিল্মি গানের আগ্রাসনে অনেক মণিমুক্তো হারিয়ে যাচ্ছে অগোচরে।
সামগ্রিক ভাবে বাংলা ভাষাকে আকর্ষক ও আবেদনমুখর করে তুলতে নিয়মিত ভাষার ও শিল্পের নতুন ভাবে চর্চা ও গবেষণা, ছোটদের যথাযথ বাংলা শিক্ষা এবং সামগ্রিক সামাজিক গণ-আন্দোলনের প্রয়োজন। তার সঙ্গে সংস্কৃতিমনস্ক ও উদ্যোক্তা (entrepreneur) বাঙালির হাতে পুঁজির কেন্দ্রিকরণ জরুরি; যথাযথ পুঁজির পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া সমকালীন সব রকম বাংলা গানের প্রসার সম্ভব নয়। ঐতিহ্যের উদ্যাপনের পাশাপাশি যদি আমরা সচেতন ভাবে ‘নূতনের অভিলাষী’ হয়ে না উঠি, আগামী প্রজন্মের কাছে নস্টালজিক হয়ে ওঠার মতো বাংলা গান থাকবে কি না, আশঙ্কা হয়।
সুপ্রতীক রায়চৌধুরী
কলকাতা-১১৪
‘অবাঙালি’
‘ওঁরা অবাঙালি! কে বলে!’ (সপ্তক, ২২-১) শীর্ষক নিবন্ধ সম্পর্কে বলি, আরও যে-সব শিল্পী দু’জায়গাতেই চুটিয়ে কাজ করেছেন, তাঁরা হলেন গীতা দত্ত, ঊষা মঙ্গেশকর, বাপী লাহিড়ি। বাংলা ছবিতে হিন্দি গানের নিদর্শনও কম নেই। ‘প্রভুজি, জীবন-জ্যোতি জগাও’, শিল্পী যূথিকা রায়, ‘রসকে ভরে তোরে নয়ন’, শিল্পী প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায় (ছবি: ‘ঢুলি’), ‘চল অ্যায়সি জগাহ্’, শিল্পী লতা মঙ্গেশকর (ছবি: ‘শেষ পরিচয়’), ‘তাপ চড়ে তো’, শিল্পী মান্না দে ও আরতি মুখোপাধ্যায় (ছবি: ‘বিলম্বিত লয়’), ‘করো না ফেরে’, শিল্পী মান্না দে ও গীতা দত্ত (ছবি: ‘দুই বেচারা’) প্রভৃতি। সুমন কল্যাণপুর বেসিক বাংলা গান ছাড়াও বাংলা সিনেমাতেও কণ্ঠ দিয়েছেন। যেমন, ‘দূরে থেকো না’ (ছবি: ‘মণিহার’), ‘তোরা হাত ধর’ (ছবি: ‘কৃষ্ণসুদামা’)। অনিল চৌধুরীর কথায়, হৃদয়নাথ মঙ্গেশকরের সুরে লতা মঙ্গেশকর আরও গেয়েছেন, ‘দে দোল দোল’ (সহশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়), ‘বাজল কালো ঘিরল গো’। মহেন্দ্র কপূর বাংলা গানও গেয়েছেন, ‘সব কিছু ফেলে’ (ছবি: ‘কৃষ্ণসুদামা’)। মুকেশ বাংলা ছবিতে কণ্ঠ দিয়েছেন, ‘সরি ম্যাডাম সরি’ (ছবি: ‘সরি ম্যাডাম’)।
হীরালাল শীল
কলকাতা-১২
যন্ত্রসঙ্গীত
‘সপ্তক’-এ কিংবদন্তি যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পীদের স্থান হলে ভাল লাগত।
ষাট বা সত্তরের দশকে ভি বালসারার পিয়ানো অ্যাকর্ডিয়ন, হারমোনিয়াম, ইউনিভক্স ছাড়া, আর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, বটুক নন্দীর হাওইয়ান আর ইলেকট্রিক গিটার ছাড়া কোনও ফাংশন শুরুই হত না। ভি বালসারা অসাধারণ সব বাংলা গানে সুর দিয়েছিলেন। ১২টি হিন্দি ছায়াছবিতে আর প্রায় ৭০টি বাংলা গানে তিনি সুরারোপ করেছেন। আর তাঁর নিজের যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশনার তো জবাব নেই। মান্না, হেমন্ত, সন্ধ্যা, আরতিদের পাশাপাশি তাঁর বাজনার রেকর্ড (বা পরবর্তী কালে ক্যাসেট) সমান তালে বিক্রি হত।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন হাওয়াইয়ান গিটারের রাজা। পুজোর গানের সঙ্গে তাঁর বাজনাও রিলিজ় করত বড় বড় কোম্পানি থেকে। তাঁর সেরা সময়ে, সারা ভারত ঘুরে অনুষ্ঠান করে বেড়িয়েছেন। সারা রাত একা বাজিয়েছেন আইআইটি এবং রিজিয়নাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ মুম্বইতে। ওয়াই এস মুলকি-র মতো যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পীর সঙ্গেও বহু অনুষ্ঠান করেছেন। সারা ভারতে ছড়িয়ে আছে তাঁর ছাত্রছাত্রী। একা একটা যন্ত্রকে ভারতে জনপ্রিয় করে দিয়েছিলেন।
মাউথ-অর্গান শিল্পী মিলন গুপ্তও তুলনাহীন। গুরু দত্তের আন্ধেরির ফেমাস স্টুডিয়োতে বসে ‘সিআইডি’ ছবির বিখ্যাত গান ‘অ্যায় দিল হায় মুশকিল’ কী ভাবে তৈরি হল, তা তিনি টেলিভিশনে নিজেই বলেছেন। গানের সুরটি প্রকৃতপক্ষে তাঁরই দেওয়া। তাঁর বাজনার বিক্রিও খুব ভাল ছিল।
সোমনাথ মুখোপাধ্যায়
কলকাতা-৫৭
সন্ধ্যার গান
‘সপ্তক’ ক্রোড়পত্রে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় সম্পর্কে ‘না, না তুমিই বলো’ পড়লাম। ‘চম্পা-চামেলি’ গানটি সুপ্রিয়া দেবীর লিপ-এ নেই, তনুজার লিপে আছে। তা ছাড়া গানটা ডুয়েট। সন্ধ্যা ও মান্না দে-র কণ্ঠে। তনুজার সঙ্গে লিপ দিয়েছিলেন উত্তমকুমার। অনিল বাগচীর সুরে ‘এন্টনি ফিরিঙ্গি’ ছবির এই গান অমর হয়ে আছে। অনুপম ঘটকের সুরে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু’ গানটা চিরস্মরণীয় গানের তালিকায় উপর দিকে থাকবেই।
অঞ্জন কুমার শেঠ
কলকাতা-১৩৬
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy