বিশ্বজিৎ রায়ের নিবন্ধের (‘উদারতা ও বহুত্বের শিক্ষক’, ৫-৯) প্রথম অনুচ্ছেদের শেষ বাক্যটি— ‘‘মাঝে মাঝে মনে হয়, এ দেশের হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদ এক অর্থে উগ্র-একমাত্রিক সেকুলারের গুঁতোর বিপরীত প্রতিক্রিয়া।’’ কিন্তু ‘উগ্র-একমাত্রিক সেকুলার’ মানে কী, তিনি তার ব্যাখ্যা দেননি।
সুপ্রিম কোর্ট একাধিক রায়ে বলেছে যে, ভারত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। ব্যাখ্যায় বলেছে, সংবিধান প্রণেতারা ধর্মনিরপেক্ষতার পশ্চিমি ধারণাটি, যাতে রাষ্ট্রকে ধর্ম থেকে সম্পূর্ণ ভাবে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে, তা গ্রহণ করেননি। ভারতের বহুত্ববাদী ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং ভারতবাসীর ধর্মপ্রিয়তার কথা বিবেচনা করে ধর্মনিরপেক্ষতার যে ধারণা সংবিধান গ্রহণ করেছে, তা হল সব ধর্মের সহাবস্থান। এই ব্যবস্থায় কোনও ব্যক্তির, তিনি সরকারি পদাধিকারী হলেও, ধর্মীয় আচারনিষ্ঠ জীবনযাপনে বাধা নেই। বর্তমানে হিন্দুত্ববাদীরা বিভ্রান্তি তৈরি করতে প্রচার করে, সংবিধানের কোথাও ‘সেকুলার’ শব্দটি না থাকলেও সরকার গায়ের জোরে ভারতকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাইছে। এই অপপ্রচারকে প্রতিহত করতে ১৯৭৬ সালে সংবিধান সংশোধন করে প্রস্তাবনায় ‘সেকুলার’ শব্দটি সংযোজিত হয়। হিন্দুত্ববাদ ‘একমাত্রিক’ ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতিক্রিয়া নয়। মূল সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতিক্রিয়া।
কানাইলাল মুখোপাধ্যায়
কলকাতা-১০৬
তথ্যের সুরক্ষা
প্রায়ই অজানা নম্বর থেকে আমার কাছে ফোন আসে, এবং নানা আকর্ষক ‘অফার’-এর প্রলোভন দেখানো হয়। প্রশ্ন হল, ব্যাঙ্কে আমার রেজিস্টার করা মোবাইল নম্বর তারা কী ভাবে জানল? ব্যাঙ্কের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য (আপনি অমুক কার্ড ব্যবহার করছেন, অমুক ঋণ নিয়েছেন) কী করে অনায়াসে আমাকেই বলা হচ্ছে ফোনের ওই দিক থেকে? তা হলে কি ব্যাঙ্কের তথ্য কোথাও ফাঁস হচ্ছে?
গ্রাহকের তথ্য যাতে সম্পূর্ণ সুরক্ষিত থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে ব্যাঙ্কের আধিকারিকদের। আমানত সুরক্ষিত রাখার অংশ হিসেবেই দেখতে হবে তথ্যের সুরক্ষাকে। সরকার ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ গড়ে তোলার জন্য মানুষকে অনুপ্রেরণা দিচ্ছে। কিন্তু ডিজিটাল জগতে কী ভাবে সুরক্ষিত রাখা যায় তথ্য, সেই বিষয়ে ব্যবস্থা করছে কি? স্থানীয় ক্লাব, অসরকারি সংস্থাকেও এগিয়ে আসতে হবে এলাকার মানুষকে আরও বেশি করে ডিজিটাল সুরক্ষা সম্পর্কে অবগত করার জন্য।
মনোজিৎ ঘোষাল
গড়জয়পুর, পুরুলিয়া
শকুন্তলার আগে
সম্প্রতি নানা সংবাদপত্রে হায়দরাবাদের নীলকণ্ঠ ভানু প্রকাশের মানসাঙ্কে ব্যুৎপত্তির বিষয়ে লেখা হয়েছে। তার আগে শকুন্তলা দেবীর জীবন অবলম্বনে তৈরি ছবিটি নিয়েও বেশ কিছু লেখালিখি হয়েছে। এই প্রসঙ্গে বিস্মৃতপ্রায় গণিতবিদ সোমেশচন্দ্র বসুর কথা মনে করাতে চাই। অবিভক্ত বাংলাদেশ এক সময় তাঁর গণিত প্রতিভার জন্য তাঁকে সম্মানের আসনে বসিয়েছিল। বিদেশের, বিশেষ করে আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তাঁর মানসাঙ্ক প্রদর্শন বিশেষ প্রশংসা লাভ করে। ১৯ এপ্রিল, ১৯২১ সালে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হল-এ সোমেশচন্দ্র একটি ৩০ রাশিকে অপর একটি ৩০ রাশি দিয়ে গুণ ও কিউব রুট-এর অঙ্ক মুখে মুখে করে দেখিয়েছিলেন। বেঙ্গলি পত্রিকা তাঁকে ‘ইন্ডিয়ান লাইটনিং ক্যালকুলেটর’ বলে উল্লেখ করে। ১৯২২ থেকে ১৯২৪ সালের মধ্যে সোমেশচন্দ্র ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানে তাঁর মানসাঙ্কের প্রদর্শন করেন।
ইংল্যান্ডে ২৫ মিনিটে ৪০ রাশির সংখ্যাকে অপর একটি ৪০ রাশির সংখ্যা দিয়ে গুণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৪৫ মিনিটে ৬০ রাশির সংখ্যাকে অপর একটি ৬০ রাশির সংখ্যা দিয়ে গুণ করে দেখান। প্যারিসে তাঁকে প্রশ্ন করা হয় যে, ২৪ ডিসেম্বর ১৮৭৩ থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯২৪ সকাল ১০টা পর্যন্ত কত সেকেন্ড হয়? তিনি ২৭ সেকেন্ডের মধ্যে উত্তর দেন। ফের ১৯২৮-৩০ সালে ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান। আমেরিকার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি একটি ১০০ রাশিকে অপর একটি ১০০ রাশি দিয়ে গুণ করেন ৫২ মিনিটে। সেই সময় সেখানে প্রচণ্ড হট্টগোল করা হলেও তাঁর একাগ্রতায় বিঘ্ন ঘটেনি। তিনি শুধু অঙ্কের ফলই মুখে মুখে বলে দিতেন তা নয়, পুরো অঙ্কটাই তাঁর চোখের সামনে ভাসত। তাই তিনি যে কোনও পঙ্ক্তির যে কোনও সংখ্যা সঙ্গে সঙ্গে বলে দিতে পারতেন।
আমেরিকায় থাকাকালীন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা হয়। রবীন্দ্রনাথের মাধ্যমে আইনস্টাইনের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। আইনস্টাইন সোমেশচন্দ্রের বিবিধ মানসাঙ্কের পরিচয় পেয়ে বিস্মিত হন। আমেরিকার সংবাদপত্রে তাঁকে ‘মেন্টাল উইজ়ার্ড’ এবং যন্ত্রের প্রতিদ্বন্দ্বী বলে উল্লেখ করা হয়।
তিনি অসাধারণ স্মৃতিশক্তিধরও ছিলেন। তাঁর প্রণীত পাটিগণিত, জ্যামিতি, বীজগণিত, ত্রিকোণমিতি তৎকালীন বঙ্গসমাজে বিশেষ সমাদৃত হয়। সোমেশচন্দ্রকে বর্তমান প্রজন্ম তো জানেই না, আগের প্রজন্মেরও অনেকে বিস্মৃত হয়েছেন।
বল্লরী বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা-৩১
সেই ধারা
শিক্ষক দিবসে সুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের নিবন্ধ (‘স্যর ক্ষমা চাইছি...’, ৫-৯) প্রসঙ্গে বলা যায়, রাজনীতির উসকানিতে আমরা মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলি। শিক্ষক ও ছাত্রের সম্পর্ক কত মধুর হতে পারে, তা বোঝাতে আমি তিন প্রজন্মের শিক্ষক-ছাত্রের গল্প বলি। আমার বাবার সেজো জ্যাঠামশায় ও শিক্ষক ছিলেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়। গ্রীষ্মের ছুটিতে তিনি আমার বাবা ও অন্য ছাত্রদের নিয়ে দেশের বাড়ি খুলনার রাড়ুলী গ্রামে যেতেন। বিকেলবেলায় ছাত্রদের সঙ্গে বাড়ির আম ও সন্দেশ খেতেন। সন্ধেবেলায় ছাত্রদের নিয়ে কপোতাক্ষ নদে নৌকাভ্রমণে যেতেন। ছাত্রদের নিয়েই উত্তর বাংলার বন্যাত্রাণে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তিনি।
আমার শিক্ষক বাবার সঙ্গে হাঁটতে গিয়ে দেখেছি, ছাত্ররা সাইকেল থেকে নেমে অনুমতি নিয়ে তবে যেত। ছাত্রদের খেলার জন্যে বাবা আমাদের বাড়ির সামনের মাঠটি দিয়ে দিয়েছিলেন। ছাত্রদের সঙ্গে ওই মাঠের জঙ্গলও পরিষ্কার করেছিলেন। দুই বাংলার বহু ছাত্র এখনও তাদের ‘চারুবাবু স্যর’-কে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। আমার ছোট ভাইও শিক্ষকের চাকরি নিয়েছে। ছাত্রদের সঙ্গে তারও দেখি বেশ সুসম্পর্ক রয়েছে।
শিখা সেনগুপ্ত
কলকাতা-৫১
সংরক্ষণ চাই
সুরকার ও স্বরলিপিকার নিতাই ঘটক প্রায় ১৫০০ নজরুলগীতি ও অন্য আরও ৫০০ গানের স্বরলিপি করেছেন। তিনি ছিলেন কবি নজরুল ইসলামের ছায়াসঙ্গী। ‘দুর্গম গিরি কান্তার-মরু’, ‘জাগো অনশন বন্দী’, ‘তোমারই আঁখির মতো’ প্রভৃতি জনপ্রিয় নজরুল গীতির সুরকার তিনি। এইচএমভি, সেনোলা, মেগাফোন ও রিগাল কোম্পানিতে মিউজ়িক ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁর তালিমে গান রেকর্ড করেছেন বহু শিল্পী— বেচু দত্ত, সত্য চৌধুরী, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, ইলা বসু, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। ১৯২৬ সালে নিতাইবাবু আকাশবাণীতে যুক্ত হন।
১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৪ সালে গোবরডাঙার ঘটকপাড়ায় নিজের বাড়িতে তিনি প্রয়াত হন। দশ বছর পরে স্থানীয় গোবরডাঙা পুরসভা তাঁর বাড়ির সামনের রাস্তার নামকরণ করে তাঁর নামে। তাঁর বিভিন্ন রেকর্ড, হাতে লেখা স্বরলিপির ডায়েরি, নজরুলের হাতে লেখা চিঠিপত্র— সব শেষ হয়ে যাচ্ছে অবহেলায়। কোনও সংগ্রহশালা আজ পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি, হয়নি বাড়িটির সংস্কারও। এই গুণী মানুষটির স্মৃতি সংরক্ষণ জরুরি।
পাঁচুগোপাল হাজরা
অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy