তপন পালের ‘অযাচিত উপদেশ’ (৮-১১) শিরোনামের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠির অবতারণা। উক্ত চিঠিতে পত্রলেখক কয়েক জন কাণ্ডজ্ঞানহীন মানুষের উচ্ছৃঙ্খলতার সপক্ষে যে সব যুক্তি উত্থাপন করেছেন, তা হাস্যকর ও বিস্ময় উদ্রেককারী। পত্রলেখকের বক্তব্য অনুযায়ী, যদি কোনও ব্যক্তি, স্ব-ইচ্ছায় দিঘা বা অন্য কোনও জায়গায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় একটু ‘আমোদ’ করতে যান, তা হলে প্রশাসনের কোনও এক্তিয়ার নেই তাতে বাধা দেওয়ার। প্রথমত, আসন্ন দুর্যোগের আশঙ্কায় যেখানে এক দল মানুষ অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন, সেখানে ‘ফুর্তি করতে’ আসাটাই মানসিক বিকৃতির লক্ষণ। দ্বিতীয়ত, ‘অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস’-এ প্রতিযোগীদের ছাড়পত্র দেওয়া হয় বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা যাচাইয়ের পর। উপরন্তু সেখানে উদ্ধার প্রক্রিয়ার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা থাকে। সংবিধানের মৌলিক অধিকারের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদে বর্ণিত ‘রাইট টু লাইফ’, অর্থাৎ জীবনের অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের উপর বর্তায়।
পূর্বতন ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুসারে আত্মহত্যার চেষ্টাও শাস্তিযোগ্য ছিল। পত্রলেখকের যুক্তি মানলে করোনার সময় লকডাউন অমান্য করা, ট্রেনে বিপজ্জনক ভাবে ভ্রমণ বা লাইন পারাপার— সবই বৈধ হিসেবে ঘোষিত হতে হয়। বিষ মদ খেয়ে মৃত্যু হলে সরকার থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় ঠিকই, কিন্তু তা মানবিকতার খাতিরে। সেটা কখনওই মদ পান-কে ন্যায্যতা দেয় না। এই সব কাণ্ডজ্ঞানহীন জনগণের জন্য সরকারি সম্পদ ও সময়ের যে অপচয় হয়, সেটার দায়ভার কার? এদের জন্য গণ-পরিসরে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে, বাকিদের যে পরিমাণ দুর্ভোগ পোহাতে হয় তার দায়িত্ব কে নেবে? প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, আমার বাড়ি থেকে দিঘা, এক ঘণ্টার রাস্তা। তা-ও কোনও দিন এমন দুর্বুদ্ধি হয়নি যে, ঝড় দেখতে দিঘা যাব বা বন্যাকবলিত এলাকায় ‘বন্যা দেখতে’ যাব। এ সব চিন্তা অসংবেদনশীল, দায়িত্বজ্ঞানহীন মানসিকতার পরিচয়।
শুভময় দাশ, তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর
অব্যবস্থার পুজো
সম্প্রতি বাংলার বিভিন্ন স্থানে পাঁচ দিন ব্যাপী জগদ্ধাত্রীর পুজো হয়েছে। বিশেষত চন্দননগরে। এই পাঁচ দিনে কয়েক লক্ষ জনসমাগম ঘটেছে মানকুন্ডু, চন্দননগর শহরগুলিতে। এত মানুষের ভিড় সামলানোর জন্য অসংখ্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। প্রতিটি স্টেশনের প্রতিটি প্ল্যাটফর্মে ছিল অসংখ্য পুলিশ। প্রসঙ্গত, পুজো উপলক্ষে একগুচ্ছ ‘স্পেশাল’ ট্রেনেরও ব্যবস্থা করা হয়েছিল পূর্ব রেলের তরফে।
তবে, এত পুলিশ থাকা সত্ত্বেও ভিড় সামলাতে রীতিমতো বেগ পেতে হয়েছে প্রশাসনকে। স্টেশনে থাকা অত পুলিশ বাহিনীর মধ্যে কয়েক জনকে আবার নিজেদের মধ্যে খাবার বিলি করতে ব্যস্ত থাকতে দেখা গিয়েছে। কোথাও আবার অগণিত মানুষের ভিড়-ঠেলাঠেলি না সামলে, বসে গল্পগুজবও করেছেন পুলিশকর্মীরা। এমনকি ট্রেনে ওঠার সময় যাত্রীদের গালিগালাজ, মারপিট করতে দেখেও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছেন তাঁরা। পুলিশের কাছ থেকে এটা কি প্রত্যাশিত?
আরও একটি বিষয় লক্ষ করলাম। প্ল্যাটফর্মে এত পুলিশ থাকলেও, মানকুন্ডু স্টেশন চত্বরের রাস্তায় সকালে বা দুপুরে কোনও পুলিশ মোতায়েন ছিল না। টোটো, বাইক, স্কুটি, সাইকেল প্রভৃতির মাঝে পথ চলা দায় হয়ে উঠেছিল। দশ মিনিটের রাস্তা পেরোতে সময় লাগছিল চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ মিনিট। জগদ্ধাত্রী পুজোর সময় মানকুন্ডু স্টেশন চত্বরে স্বাভাবিক ভাবেই সারা দিন অজস্র লোকের ভিড় হয় প্রতি বছর। তার পরও কেন এমন চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয় দূর থেকে আসা দর্শনার্থীদের। প্ল্যাটফর্মের পাশাপাশি রাস্তাতে কেন দেওয়া হল না কোনও পুলিশি নিরাপত্তা? এত পুলিশ মোতায়েন কি তবে নিছকই লোকদেখানো পদক্ষেপ ছিল?
সঙ্গীতা কর্মকার, হুগলি
ছুটির ফাঁদে
দুর্গাপুজো-কালীপুজোর মাস এলেই এ রাজ্যে ছুটির ঢল নামে। যদিও ছুটির মধ্যে ফাঁক থাকলে রাজ্য সরকার স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে তাতে বিশেষ ছুটি গুঁজে দেয় যাতে ছুটির জোয়ারে ভাটা না পড়ে। হাসপাতালে ডাক্তাররা ধর্মঘট করলে রোগীরা ফিরে যান, যা টিভিতে দেখা যায়। কিন্তু এই ছুটির মরসুমে কত আমজনতা যে নবান্ন বা জেলাশাসকের অফিস থেকে ফিরে যান, তার হিসাব কে রাখে? গোটা রাজ্যে কাজকর্ম যেন তখন স্তব্ধ হয়ে যায়। এই ছুটি কতটা প্রশাসনিক আর কতটা রাজনৈতিক কে জানে। প্রশ্ন হল, সরকারি চাকরিতে সর্বভারতীয় ক্যাডারদের যাঁরা এখানে কাজ করেন, তাঁরা নিজেরাও কি এই কর্মসংস্কৃতিতে হাঁপিয়ে ওঠেন না? এখানে একমাত্র ধর্মঘট করলে শ্রমদিবস নষ্ট হয়। আমাদের কলকাতা যে কর্মসংস্কৃতির জন্য ‘বিখ্যাত’, তা বেঙ্গালুরুতে কয়েক বছর কাজ করার সুবাদে বুঝেছি। ওখানে ‘ওয়ার্ক ইজ় ওয়ারশিপ’। অর্থাৎ, কাজ করতে কেউ পিছপা হয় না। শহরের অন্যান্য ক্ষেত্রের কাজ দেখে মনে হয় বাঙালি কাজ করতে চায়। শুনেছি, টালিগঞ্জ স্টুডিয়োতে বাঙালিরা ১৩-১৪ ঘণ্টা কাজ করেন। একটা সফল পেশাদার প্রশাসন জানে এক বার ছুটির ফাঁদে পড়ে গেলে তার থেকে বেরোনো শক্ত। প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিতে এক দিন দেরি করলে, তা বাস্তবায়িত করতে এক মাস দেরি হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে বাড়ে খরচও। তাই যে কোনও সফল রাজ্যের স্লোগানই হল— ‘কালকের কাজ আজ করো আর আজকের কাজ এখনই’। এ রাজ্যে এমন কর্মসংস্কৃতি কি আদৌ কোনও দিন ফিরবে?
রূপম মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-৮৪
অভিন্ন সিমেস্টার
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শুরু হয়েছে সিমেস্টার প্রক্রিয়ার মূল্যায়ন ব্যবস্থা। কলেজগুলোতে অনেক দিন আগে থেকেই এই ব্যবস্থা চালু হয়েছে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা কলেজগুলোতে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে শিক্ষার্থীদের সব ক’টি সিমেস্টারের পরীক্ষা হয়। অন্য কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়। খাতা দেখেন অন্য কলেজের শিক্ষকরা। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়েরই মার্কশিট পায়।
অথচ, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ক্ষেত্রে দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় বহির্মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা হলেও একাদশ শ্রেণিতে এই মূল্যায়ন ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বিদ্যালয়কেন্দ্রিক। যদিও পরীক্ষার সময়সূচি শিক্ষা সংসদ নির্বাচন করে। তবুও এ ক্ষেত্রে প্রতিটি শিক্ষার্থীর মূল্যায়নে সমতানীতি রক্ষিত হচ্ছে না। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে যখন সিমেস্টার চালু হয়েছে, তখন অভিন্ন সিমেস্টার প্রথাও চালু করা হোক। সর্বভারতীয় পরীক্ষায় সকলের সঙ্গে একই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়ে টিকে থাকার লড়াইয়ের পদক্ষেপগুলো জানুক শিক্ষার্থীরা। সে ক্ষেত্রে বিদ্যালয় স্তর থেকেই তা আয়ত্তের অভ্যাস গড়ে তোলা শিক্ষাব্যবস্থার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয় কি?
রাজলক্ষ্মী পাল, কৃষ্ণনগর, নদিয়া
আলোময়
গত দু’-তিন মাস হতে চলল কসবা থানার বিপরীতে সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় স্মৃতি উদ্যানের আলোগুলো খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। নিকটবর্তী এলাকার বহু মানুষ এখানে সকাল এবং বিকেল বেলায় হাঁটতে আসেন। উদ্যানে আলো ঠিকমতো না থাকায় সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে বেশির ভাগ অংশই অন্ধকারে ঢেকে যায়। এতে মানুষের অসুবিধা তো হচ্ছেই, উদ্যানে অসামাজিক কাজকর্ম শুরু হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ছে। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, জনসাধারণ, বিশেষত প্রবীণদের সুবিধার্থে অবিলম্বে আলোগুলি ঠিক করা হোক।
আনন্দ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-৭৮
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy