‘টরেটক্কার গল্প’ (২২-৪) পড়ে পুরনো অনেক কথাই মনে পড়ে গেল। টেলিগ্রাফ ট্রেনিং-এর পর আমাকে পোস্টিং দেওয়া হল এলগিন রোড পোস্ট অফিসে। আশির দশকে এলগিন রোড পোস্ট অফিসে প্রায় দু’হাজার টেলিগ্রাম বুকিং হত। এক দিন দেখলাম লেটারহেডে সুন্দর হাতের লেখায় টেলিগ্রাম পাঠিয়েছেন সত্যজিৎ রায়। তার পর থেকে প্রায়ই দেখতাম, সত্যজিৎবাবু টেলিগ্রাম করে বিভিন্ন জায়গায় পাঠাচ্ছেন। শব্দ গোনার জন্য আমাদের টেলিগ্রাম পড়তে হত। কত মানুষকেই উনি পাঠাতেন। ‘এক ডক্টর কি মওত’ ছবিতে ভাল অভিনয়ের জন্য অমল পালেকরকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। লন্ডনে পিয়ালী মুখার্জির কেয়ার অব-এ মমতাশঙ্করকে লিখছেন, নতুন ছবির শুটিংয়ের জন্য তাড়াতাড়ি কলকাতায় ফিরতে।
এক দিন দেখলাম সত্যজিৎবাবু ফরাসি টিভির জন্য নিজের লেখা ‘পিকু’ ছবি করছেন। এই টেলিগ্রামটি পাঠানোর প্রায় এক মাস পরে ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’য় খবরটা বার হয়। কয়েক মাস পরে সত্যজিৎবাবুর পারিবারিক ড্রাইভার গোরা জানাল, ‘পিকু’ ও ‘সদগতি’ এই ছবি দু’টি দক্ষিণ কলকাতার একটি সিনেমা হলে দেখানো হবে। গোরার সহযোগিতায় আমরা দু’জন সত্যজিৎবাবুর বাড়িতে গিয়ে কার্ড পেলাম এবং ছবি দু’টি দেখলাম। হলের সামনে প্রচুর পুলিশ। ডিসি সাউথ নিজে দেখাশোনা করছেন, সত্যজিৎবাবু লবিতে দাঁড়িয়ে।
শেষের দিকের একটা টেলিগ্রামের কথা মনে পড়ে, ইসমাইল মার্চেন্টকে করা। উনি সত্যজিৎবাবুর বিশেষ অস্কার পাওয়ার ব্যাপারে মনে হয় খুব উৎসাহিত ছিলেন। টেলিগ্রামটার ‘টেক্সট’ এই রকম: Dear Ismail, Foreign rights of Trilogy and Jalsaghar owned by NFDC and Charulata by R D Bansal 45 Lenin Sarani Calcutta-13 ask Angelika films to contact them Best wishes Satyajit.
তপন কুমার চট্টোপাধ্যায়
পানিত্রাস, হাওড়া
আলো নিভেছে
পশ্চিমবঙ্গের হিংস্র রাজনৈতিক সংস্কৃতির যে চরিত্র বিশ্লেষণ প্রদীপ বসু করেছেন তা সময়োপযোগী (‘আলো ক্রমশ নিভে আসছে’ ১-৫)। তিনি তথাকথিত আমরা-ওরা বিভাজনের কথা বলে দায় সারেননি, সেই বিভাজনের স্তরগুলিকে সমাজতত্ত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে বোঝাবার চেষ্টা করেছেন। লিখছেন, ‘‘...পশ্চিমবঙ্গ আজকের ভারতের সবচেয়ে হিংস্র রাজ্য।’’ কিন্তু এমন অবস্থা কেন হল তা বুঝতে হলে বর্তমান শাসক দলটির যে বিশেষ রাজনৈতিক চরিত্র এবং পূর্বতন শাসকের সঙ্গে, বা বলা যেতে পারে ভারতবর্ষের অন্য রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে, যে মৌলিক পার্থক্য, তা বোঝা প্রয়োজন। কোনও নীতি-আদর্শ নয়, অন্ধ সিপিএম-বিরোধিতাকে মূলধন করে গড়ে ওঠা ব্যক্তিকেন্দ্রিক দলটির মূল চালিকাশক্তি তার সর্বাধিনায়িকা, যিনি বিরোধী রাজনীতি করার দিনগুলিতে, প্রদীপবাবুর ভাষায়, ‘‘এক দিনের জন্যও শাসক দলের সঙ্গে আলোচনায় বসেননি।’’
অর্থাৎ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার যা মূল, সেই আলাপ-আলোচনার সংস্কৃতিকে তিনি কোনও দিন প্রশ্রয় দেননি, বিশ্বাসও করেন না। স্বাভাবিক ভাবেই, তাঁর দলের মধ্যেও তা সঞ্চারিত হতে দেননি। আর এখানেই আগের হিংসার সঙ্গে এখনকার তফাত।
সিপিএম খুব খারাপ দল হলেও, তাদের নেতৃত্বের মধ্যে এমন কিছু মানুষ ছিলেন যাঁরা সৎ, আদর্শবান এবং আত্মপ্রচারসর্বস্ব না হয়েও মানুষের জন্য দরদি। কিন্তু এখনকার শাসক দলের নেতৃত্ব? খুব বেছে বেছে সেই মানুষগুলিকেই নেত্রী সামনে এনেছেন, যাঁদের রাজনীতির মূল নীতিই হল হিংসা। প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া যাঁদের ব্রত। এমনটা না করেও উপায় নেই, নেত্রীর রোষের মুখে পড়তে হবে। কিন্তু সেই হিংসার মোড়ক আবার মানুষের উন্নয়ন, মানুষের আদালত— এ রকম সুন্দর সুন্দর কথা। আগে তা-ও পার্টি আর সরকার কিছুটা হলেও আলাদা করা যেত। বুদ্ধবাবুকেই তো আমরা দেখেছি পার্টি-বিরোধী অবস্থান নিতে। সে দিন আর নেই।
তবে শেষ বিচারে দোষী আমরা, এই রাজ্যের মানুষেরা। প্রদীপবাবু এই ব্যাপারে একদম খাঁটি কথাটি বলেছেন। আমাদের মেরুদণ্ডহীনতা, অপদার্থতা এবং হিংসার প্রতি আমাদের মোহ আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি করেছে। জ্ঞানীজনে বলেন, আমরা সেই রাজনৈতিক দল বা নেতা-নেত্রী পাই আমরা যার যোগ্য। আমাদের যোগ্যতা রাজ্যে প্রতি দিন ঘটে চলা হিংস্র ঘটনাগুলিতে প্রমাণিত। আর প্রমাণিত আমাদের অকাট্য যুক্তিতে— এ সব তো আগেও হয়েছে। তাই সব দেখেশুনে মনে হয়, আলোচ্য নিবন্ধের শিরোনাম হওয়া উচিত ছিল— আলো নিভে গিয়েছে।
সুশোভন সরকার
কলকাতা-২৫
বিপরীত
মে দিবসে প্রকাশিত জয়দীপ মুখোপাধ্যায় ও প্রদীপ বসুর লেখা দু’টি পরস্পর-সম্পর্কিত হয়ে বেশ চমৎকারিত্ব সৃষ্টি করেছে। মে দিবস রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতিষ্ঠা দিবস। শ্রীমুখোপাধ্যায় মিশনের প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে স্বামীজির চিন্তাধারা ব্যক্ত করেছেন। লিখেছেন, স্বামীজি চেয়েছিলেন এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়তে, যা ভারতবাসী জনসাধারণের উন্নতির জন্য একটি যন্ত্র হিসেবে কাজ করবে, যাকে কোনও শক্তি দাবাতে পারবে না, এবং তখন ভবিষ্যতের চিন্তা ছেড়ে স্বামীজি নিশ্চিন্তে ঘুমোবেন।
আর প্রদীপবাবু আজকের হানাহানির পশ্চিমবঙ্গের, ক্ষমতাহীন, দমন-পীড়নে ভীত, উদ্ভিদতুল্য অধিবাসীদের কথা বলেছেন। এই রাজ্যের মানুষকে তিনি অপদার্থ, ভীরু এবং সংগ্রামবিমুখ বলে চিত্রিত করেছেন। বঙ্কিমচন্দ্র থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন ‘‘বাঙ্গালী শুধু কান্দে আর উৎসন্নে যায়।’’
এটাকে সত্যি ধরে নিলে বলতে হয়, বাঙালির সমাজজীবনে স্বামীজি-কল্পিত কোনও ‘‘বৌদ্ধিক কর্মপ্রবাহই’’ সৃষ্টি হয়নি, যার থেকে ভারত দূরে থাক, পশ্চিমবঙ্গেই ‘‘একটা নতুন সমাজ তৈরি হবে।’’
বৈদ্যনাথ মুখোপাধ্যায়
কলকাতা-১০
স্বেচ্ছামৃত্যু
• বছর কুড়ি আগে ১৯৯৮ সালে কেরলে এক জন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সি ভি টমাস হাইকোর্টে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন করেছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল তিনি তাঁর জীবনের সমস্ত কাজ শেষ করে ফেলেছেন। সমস্ত সাংসারিক দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সুখী, তাঁকে স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দেওয়া হোক। সারা জীবন তিনি দেশের সমস্ত আইন মেনে চলেছেন। তাই আত্মহত্যা তিনি করতে চান না। ভারতীয় শাস্ত্রে ‘নির্বাণ’, ‘সমাধি’কে তিনি স্বেচ্ছামৃত্যুর সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। হাইকোর্ট অবশ্য তাঁর আবেদন খারিজ করে দেয়। এর তিন বছর পর অপারগ টমাস সাহেব গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। সুইসাইড নোটে তিনি লেখেন, “এই দাসত্ব মৃত্যুর থেকেও অসহনীয়। এ রকম দুর্ভাগ্য যেন আর কারও না হয়”। তাঁর ইচ্ছেকে সম্মান জানিয়ে চার্চ কর্তৃপক্ষ তাঁকে সমাধিক্ষেত্রের এক কোনায় (যা আত্মহত্যাকারীদের জন্য নির্দিষ্ট) কবর না দিয়ে সাধারণ নির্দিষ্ট জায়গায় অনুমতি দেন। ‘দ্য টেলিগ্রাফ’-এ সবিস্তারে খবরটি প্রকাশিত হয়েছিল।
১০ মে ইচ্ছামৃত্যু বরণ করলেন অস্ট্রেলীয় উদ্ভিদ ও পরিবেশ বিজ্ঞানী ডেভিড গুডঅল, সুইৎজ়ারল্যান্ডে। তাঁর বয়স ১০৪। কোনও দুরারোগ্য ব্যাধিতে তিনি ভুগছিলেন না। তিনটি ডক্টরেট ডিগ্রি তাঁর শিরোপায়। ১০২ বছর অবধি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেছেন। গুডঅল বলেছেন, ‘‘আমার বয়স ১০৪। আমার ভাঁড়ারে আর বেশি দিন আয়ু নেই। আমার দুর্ভাগ্য যে এই বয়সে এসে আমি পৌঁছেছি। আমি আর আনন্দ অনুভব করছি না। আমি মৃত্যুকে বেছে নিয়েছি স্বেচ্ছায়। এটা দুঃখের কিছু নয়। আমি যদি এটা না চাইতাম, তা হলে মৃত্যু দুঃখের হতে পারত।’’
শেখর বসু মল্লিক
কলকাতা-৪২
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy