সুকান্ত চৌধুরীর লেখা ‘রোগমুক্তির সন্ধানে’ (৯-৯) শীর্ষক প্রবন্ধ প্রসঙ্গে এই চিঠি। আর জি কর হাসপাতালে যে ভাবে এক কর্মরত তরুণী ডাক্তারকে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছে, তা সত্যিই বড় মর্মান্তিক। তার থেকে মর্মান্তিক এক মাস পার হয়ে গিয়েও শাস্তি তো দূর, অধরা রয়ে গিয়েছে আসল অপরাধীরা। তবে তদন্তে উঠে এল আর জি কর আসলে একটি দুর্নীতির আখড়া, যার সঙ্গে অনেক রাঘব বোয়াল জড়িত। এখন পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছে যে, কবে সন্তানহারা মা ও রাজ্যবাসী বিচার পাবেন, তার নিশ্চয়তা নেই। বিচার এবং অপরাধীদের শাস্তি চেয়ে সারা দেশের, এমনকি দেশের বাইরের মানুষও লাগাতার প্রতিবাদ মিছিল চালিয়ে যাচ্ছেন। এই অনভিপ্রেত ঘটনাটি সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে জুনিয়র ডাক্তারদের মনে, তাঁরা অপরাধীদের শাস্তির সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের নিরাপত্তার দাবিতে কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন। এর ফলে এক শ্রেণির মানুষের মনে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। অনেকেই নানা ভাবে অভিযোগ করছেন যে, জরুরি প্রয়োজনেও মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। তাঁদের নার্সিংহোমের খরচ চালানোর ক্ষমতা নেই। ফলে, জড়িবুটিই এখন ভরসা।
এই পরিস্থিতিতে সুকান্ত চৌধুরী সঠিক পথ বাতলেছেন। ডাক্তাররা কাজ বন্ধ করে আন্দোলন করলে এই দরিদ্র মানুষগুলোর কী হবে? বিভিন্ন পেশার মহিলা পুরুষ এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। তাঁরা সবাই কাজ বন্ধ রাখলে জনজীবন স্তব্ধ হয়ে যেত। তাতে সরকারের কতটা ক্ষতি হত জানি না, তবে আমাদের চার পাশে বহু মানুষকে বিনা অপরাধে শাস্তি ভোগ করতে হত। এই রকম পরিস্থিতি কি দেশের জনজীবনের পক্ষে অনুকূল?
রোশেনারা খান, মেদিনীপুর
বিবেচনা দরকার
সুকান্ত চৌধুরী তাঁর প্রবন্ধে আবেদন করেছেন, “এই আন্দোলনের স্থায়ী কল্যাণকর ফল দেশের মানুষ যেন পায়।” এই আবেদনকে সমর্থন করে কাজে ফিরতে অনুরোধ করি জুনিয়র ডাক্তারদের। ভারতের আইন, শাসন ও বিচারের যেমন গতিপ্রকৃতি, তাতে এই মর্মান্তিক ঘটনার সহজ কোনও মীমাংসা আশা করা যাচ্ছে না। মূল অপরাধীর সাজা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার সংস্কারের অপেক্ষায় থাকলে কর্মবিরতি দীর্ঘস্থায়ী হবে। যা কাজের কথা নয়। বরং এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় এক অভূতপূর্ব আন্দোলন, যা কার্যত বিপ্লবে রূপান্তরিত হতে চলেছে, তাকে কায়েমি স্বার্থ এবং তার সঙ্গে যুক্ত অপরাধ চক্র উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দেবেই। ইতিমধ্যে আওয়াজ উঠেছে, জুনিয়র ডাক্তারদের এই আন্দোলনে পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসা পরিষেবা বিপর্যস্ত। সরকারি ডাক্তারদের ধর্মঘটে গরিব মানুষরা চিকিৎসা পাচ্ছেন না। অর্থাৎ, সিনিয়র, জুনিয়র থেকে সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীকে দায়ী করা হচ্ছে চিকিৎসা-সঙ্কটের জন্য।
এই প্রসঙ্গে কিছু বাস্তব তথ্য মিলিয়ে নেওয়া দরকার। ইন্টার্ন, হাউসস্টাফ, পিজিটি প্রভৃতি মেডিক্যাল কলেজ ছাড়া অন্য কোথাও নেই। বাংলায় নথিভুক্ত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা আনুমানিক তিন হাজার। তার পরেও রয়েছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র, জেলাগুলিতে ব্লক, মহকুমা থেকে জেলা পর্যন্ত নানা স্তরের হাসপাতাল, যেগুলির মধ্যে রয়েছে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালও। রেল, ইএসআই প্রভৃতি হাসপাতালের সংখ্যা আনুমানিক ৬০। এর কোনওটাতেই ধর্মঘট নেই। সেখানে পরিষেবা চলছে আগের মতো। আরও আছে পুরসভা ও কর্পোরেশন হাসপাতাল, যেখানে জুনিয়র ডাক্তার নেই, ধর্মঘটের কোনও প্রভাব নেই। অতএব জুনিয়র ডাক্তার আছেন, এমন হাসপাতাল মোট হাসপাতালের একটি সামান্য অংশ, জুনিয়র ডাক্তাররা মোট ডাক্তারদের একটা ছোট অংশ। যেখানে জুনিয়র ডাক্তাররা কাজ করেন, সেই মেডিক্যাল কলেজগুলিতেও সিনিয়র ডাক্তাররা সবাই রোগী দেখছেন, ওপিডি চালাচ্ছেন। জুনিয়র ডাক্তাররাও চিকিৎসার প্রতি তাঁদের দায়বদ্ধতা বোঝাতে ‘অভয়া ক্লিনিক’ চালাচ্ছেন। ঘরের কাছে রোগীরা মোটামুটি চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং ওষুধও পাচ্ছেন বিনামূল্যে।
অতএব জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্মঘটে স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, রোগীরা প্রাণ হারাচ্ছেন, এই অভিযোগ কতটা গ্রহণযোগ্য? সম্প্রতি কোন্নগরের একটি মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শাসক দল দাবি তুলছে, রোগী বিনা চিকিৎসায় মারা গিয়েছেন, জুনিয়র ডাক্তাররা থাকলে রোগী মারা যেতেন না। অভিযোগের সত্যতা যা-ই হোক, এ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, আন্দোলনের এক মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পর জুনিয়র ডাক্তারদের ঝুঁকি বাড়ছে। কারণ, রোগীমৃত্যুর এই সংখ্যা আরও বাড়বে, এবং তার সমস্ত দায় জুনিয়র ডাক্তারদের দিকে ঠেলে দিয়ে তাঁদের ‘গণশত্রু’ বানানোর চেষ্টা চলবে।
ইতিমধ্যে বিরোধীদের রক্তচক্ষু দেখাচ্ছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর ‘ফোঁস’ করার বক্তব্যের মধ্যেই তা স্পষ্ট। শোনা গিয়েছে, এর মধ্যেই আরএমও, সিনিয়র রেসিডেন্ট ডাক্তারদের নামের তালিকা, আধার কার্ড, প্যান নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, তাঁদের শিক্ষার শংসাপত্র, মোবাইল নম্বর ইত্যাদি তথ্য নাকি চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। সরকারের পক্ষে রুটিনমাফিক বলা হলেও প্রমাদ গুনছে সরকারি চিকিৎসাজগৎ। কারণ, শাসক দলের অনুপ্রাণিত নেতা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা লাগাতার হুমকি দিয়ে শাসাচ্ছেন প্রতিবাদীদের। মুছে দিতে চাইছেন প্রতিবাদের অক্ষর, স্বর, সুর। সেই জন্য অনুরোধ, জুনিয়র চিকিৎসকরা কাজে নেমে মানুষের পাশে থাকুন। প্রবন্ধে প্রবন্ধকার পাঁচ দফা মূল্যবান প্রস্তাব দিয়েছেন। আশা, চিকিৎসকরা নিশ্চয়ই বিবেচনা করবেন।
শুভ্রাংশু কুমার রায়, চন্দননগর, হুগলি
ছুটি নেই
সুকান্ত চৌধুরীর লেখাটি অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত এবং প্রাসঙ্গিক। এখানে কোনও তদন্তকারী সংস্থা নয়, বরং চিকিৎসকরাই আন্দোলনের নায়ক হয়ে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের সুবিচারের পথ প্রশস্ত করতে পারেন। তবে তাঁদেরও সতর্ক থাকতে হবে। না হলে যে সমাজ আজ তাঁদের পাশে আছে, সেই সমাজই কাল জুনিয়র ডাক্তারদের ‘ভিলেন’ বানাতে সময় নেবে না। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে সেই প্রচেষ্টা। কুড়ির অধিক রোগীর বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়ার তথ্য ইতিমধ্যেই আনা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। এই সূত্রে প্রবন্ধকারের প্রস্তাবগুলি যথাযথ। আন্দোলন যেমন চলছে চলুক, তবে চিকিৎসকরা হাসপাতালে রোগী দেখার সময় তাঁদের প্রকৃত পরিস্থিতির কথা মানুষকে জানান। তাঁরা যে নাওয়া-খাওয়া ভুলে কখনও ৩৬, কখনও ৪৮, আবার কখনও ৭২ ঘণ্টা ডিউটি করেন, তার জ্বলন্ত উদাহরণ আমার নিজের সন্তান। ভারতের সর্বত্র এই অবস্থা। পিজিটি-দের কোনও ছুটি নেই।
মমতা ভট্টাচার্য, রামরাজাতলা, হাওড়া
খুচরো সঙ্কট
বাজার, ট্রেন ও রাস্তায় হকারদের সঙ্গে নিত্যযাত্রীদের একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু একটা বিষয় নিয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়তে হয় দু’পক্ষকেই, তা হল খুচরো। দশ টাকা, কুড়ি টাকার নোট নিয়েই বিড়ম্বনা। ময়লা, ছেঁড়া, ফাটা থাকেই। কেউ চুপচাপ নিয়ে নেন, কেউ বিক্রেতাকে বদলে দেওয়ার কথা বলেন। প্রতি দিন বহু হাত ঘোরার ফলেই বিশেষ কিছু কাগজের নোটের এই দুরবস্থা। অনেকেই মনে করেন, যা চলে যাবে, তার যত্ন করে কী হবে? তাই বহু ভাঁজ করে, যেমন-তেমন করে রাখেন নোটগুলো। তাই এমন দশা হচ্ছে। অনেকেই খুচরো টাকাপয়সা রাখেন পকেটে বা মানিব্যাগে, যাতে অস্বস্তিতে পড়তে না হয়।
এমনও দেখেছি যে, বাসে উঠে যাত্রীরা খুচরো পাওয়ার জন্য বড় অঙ্কের নোট দিতে চাইছেন, আর কন্ডাক্টর তাঁকে বলছেন, “ভাড়া দিতে হবে না, রেখে দিন।”
সনৎ ঘোষ, বাগনান, হাওড়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy