কেন্দ্রের বিজেপি সরকার বহু দিন ধরেই চাইছিল যে, লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন এক সঙ্গে হোক। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একাধিক বার বলেছেন, ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ আইন হওয়া উচিত। নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করেছে। আইন কমিশন মতামত দিয়েছে। এই ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্র। তা কতটা সফল হবে, সেটাই দেখার বিষয়।
অস্বীকার করা যায় না যে, বিভিন্ন সময়ে লোকসভা ও বিধানসভার নির্বাচন অনুষ্ঠানের ফলে সরকারি কোষাগারের উপর বিরাট চাপ পড়ে। সরকারি কর্মচারীদের অনেক সময়-ব্যয় হয়। সব নির্বাচন এক সঙ্গে হলে জনগণের অনেক অর্থ সাশ্রয় হবে। এর জন্য বিপুল সংখ্যক ভোটিং মেশিন ও অন্যান্য সরঞ্জামের প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু বিভিন্ন নির্বাচনের ব্যয়ের তুলনায় এ সব সম্পদ একত্রিত করাকে বড় কাজ হিসাবে বিবেচনা করা যায় না। কঠিন লক্ষ্য হল, সংবিধান সংশোধন করা, এবং তার পর নিশ্চিত করা যে, ভবিষ্যতেও একই সঙ্গে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
স্বাধীনতার প্রাথমিক বছরগুলিতে লোকসভা এবং বিধানসভার নির্বাচন একযোগে অনুষ্ঠিত হত। কিন্তু প্রায় কুড়ি বছর পরে কিছু বিধানসভা এবং তার পরে লোকসভা তাদের নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ করতে পারেনি, যার কারণে চক্রটি ভেঙে যেতে থাকে। এখন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, এক বছরে বেশ কয়েকটি নির্বাচন করতে হবে। এ ভাবে নির্বাচনের মরসুম সারা বছর চলে। এতে রাজনৈতিক দলের নেতাদের অনেকটা সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। নিরাপত্তা বাহিনী ও সরকারি কর্মচারীদের রুটিন কাজ ছেড়ে নির্বাচনের যোগ দিতে হয়। নির্বাচনী ব্যয়ের বাজেট ক্রমাগত বাড়ছে।
‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ অবশ্যই একটি ভাল ধারণা। তবে এর জন্য অনেক বিধানসভার মেয়াদ কমানো এবং অনেকের মেয়াদ বাড়ানো সহজ হবে না। যে সব বিধানসভার নির্বাচন সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে, বা যাদের মেয়াদ তিন বছরের বেশি বাকি রয়েছে, সে সব রাজ্যের কাছে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য হবে না।
একযোগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা চালু হওয়ার পরেও প্রশ্ন থেকে যাবে লোকসভা বা কোনও বিধানসভা যদি তার মেয়াদ পূর্ণ করতে ব্যর্থ হয়, সরকার মাঝপথে পড়ে যায়, তা হলে কী হবে। এমতাবস্থায় মধ্যবর্তী নির্বাচনের পরিবর্তে বিকল্প ব্যবস্থা কি আগামী নির্বাচনের সময় না আসা পর্যন্ত কার্যকর করা হবে? এ ধরনের নিয়ম প্রণয়ন পুরো শাসনব্যবস্থাকে বিঘ্নিত করতে পারে। তাই কেন্দ্রীয় সরকারের সাম্প্রতিক উদ্যোগ নিয়ে বিরোধী দলগুলি বলছে, এই ব্যবস্থা চালু হলে গোটা যৌথ ব্যবস্থার কাঠামোই বিপদে পড়বে। কী ভাবে এই প্রস্তাব কার্যকর হবে, তা ক্রমে বোঝা যাবে। তবে একে অবাস্তব বলা চলে না।
অভিজিৎ রায়, জামশেদপুর
দ্বিচারিতা
গত ১৮ জুলাই বেঙ্গালুরুতে কেন্দ্র-বিরোধী সমাবেশের জন্যে সারা ভারত থেকে যে সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত হয়েছিলেন, তাঁরা কী বার্তা দিলেন সেই সমস্ত নিপীড়িত মানুষকে, যাঁরা পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের চরম লাঞ্ছনার শিকার হয়ে চলেছেন? বিশেষ করে বাম ও কংগ্রেসের যোগদানকে এই বঙ্গের মানুষ দ্বিচারিতার চরম উদাহরণ বলে মনে করে, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে কি? তৃণমূল দলটি বিরোধী দলের সমর্থকদের নির্বিচারে মারধর করছে, বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে, এমনকি খুন অবধি করে যাচ্ছে। সেই দলের নেত্রীর সঙ্গে এক পঙ্ক্তিতে বসে আলোচনা ও নৈশভোজ সারতে বাম ও কংগ্রেস নেতাদের কি এতটুকু বিবেকে বাধল না? ভাবতে অবাক লাগে, এ কিসের রাজনীতি যেখানে সমর্থকদের প্রতি নির্যাতনের প্রতিরোধ না করে রাজ্যের বিরোধী নেতারা অন্য রাজ্যে গিয়ে তৃণমূলের দুর্বিনীতদের সঙ্গে এক টেবিলে আলোচনায় বসছেন, আর বিজেপি-বিরোধিতার উপাখ্যান শোনাচ্ছেন। রাজ্য বা দেশ কি এই খেলো যুক্তিকে মান্যতা দেবে?
যাঁরা এই জোটের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের মধ্যে গুটিকয়েক ছাড়া অন্যরা প্রায় সকলেই নিজ নিজ রাজ্যে অল্পবিস্তর দুর্নীতি বা অন্যান্য অপকর্মের ‘স্বীকৃতি’ পেয়ে গিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে বাম বা কংগ্রেস, যারা পশ্চিমবঙ্গে অবিরত দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন, এবং প্রতি ক্ষেত্রেই আইনের দ্বারস্থ হচ্ছেন, তাঁদের দুর্নীতিগ্রস্ত দলগুলির সঙ্গে হাত মেলানো দ্বিচারিতা। আসলে বামেরা চিরকালই বিরোধী আসনে অভ্যস্ত এবং পরজীবী। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে এখন তাঁদের কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই। আগে পশ্চিমবঙ্গ, কেরল এবং ত্রিপুরা— এই তিনটি রাজ্যে ক্ষমতায় ছিলেন বামেরা। এখন একটিতে ঠেকেছে। তাই অন্যের সহযোগিতা ছাড়া গতি নেই। অন্য দিকে, কংগ্রেসের সমস্যা অন্তর্দ্বন্দ্ব ও যোগ্য নেতৃত্বের অভাব। অপরিণত রাহুল গান্ধীর উপর কেউ ভরসা করতে পারছে না। সর্বভারতীয় এই বিশাল দলটি এখন দেশের মানুষের কাছেও আস্থাযোগ্যতা হারিয়েছে অনেকটাই। আর সেই সুযোগেই বিজেপির এই বাড়বাড়ন্ত।
এই দুরবস্থার জন্যে দায়ী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি সনিয়া গান্ধীর সমর্থন। রাহুল গান্ধীর আপত্তি সত্ত্বেও সনিয়া সমানে মমতাকেই প্রশ্রয় দিয়ে চলেছেন। এই দ্বিচারিতা বাংলার গরিব, পার্টি-অন্তপ্রাণ সমর্থকরা কী করে মেনে নেবেন? তাঁরা প্রাণের দায়ে হয় তৃণমূল অথবা বিজেপির কাছেই আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হবেন। এই চিন্তাভাবনা মাথায় রেখে, ও নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে, দুই দলের প্রবীণ নেতারা নিজেদের ক্ষমতায় একজোট হয়ে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। সেটি অনেক সম্মানের হত। তা না করে বিজেপির সঙ্গে লড়তে যাওয়ার জন্যে ভোজবাজির খেলা হল। এই জোটের আসল উদ্যোক্তা যিনি, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী সেই নীতীশ কুমারের অবস্থানও আবার সন্দেহজনক অবস্থায় রয়েছে। তবে এই পর্বে পরিষ্কার হয়ে গেল যে, পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী রাজনৈতিক নেতা, সাংসদ বা প্রতিমন্ত্রীরা এ রাজ্যে হাত পা ছুড়ে আস্ফালন করে যতই হম্বিতম্বি করুন না কেন, হেড অফিস দিল্লির অঙ্গুলিহেলনেই তাঁরা কাজ করেন।
সুব্রত সেনগুপ্ত কলকাতা-১০৪
তিক্ত অমৃত
আবির্ভাব ভট্টাচার্যের ‘অমৃতকালের ভারতকথা’ (৮-৯) প্রসঙ্গে এই চিঠি। পুরাকালে বা নিকট অতীতে— কোনও কালেই ভারতের সমাজের সকল মানুষ অমৃতের স্বাদ পায়নি। আর আজকের এই ‘অমৃতকাল’-এ তো প্রতি দিনের ভাত-রুটি জোগাড় করতেই সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। যত বাড়ছে খাদ্যপণ্যের দাম, ততই দ্রুততায় ব্যাঙ্কের খাতা থেকে মুছে দেওয়া হচ্ছে শিল্পপতিদের কাছ থেকে ফেরত না-পাওয়া বিপুল পরিমাণ ঋণের অঙ্ক। বিশেষ কয়েক জন ধনী ব্যবসায়ী (অবশ্যই শাসক-ঘনিষ্ঠ) ঋণ শোধ না করে তাঁদের মুনাফার অঙ্ক আরও বাড়িয়ে চলেছেন, আর মধ্যবিত্ত মাসিক কিস্তির টাকা শোধ না করার গ্লানিতে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছেন। রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম চড়চড়িয়ে ১১০০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার পর, পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে হঠাৎ কুম্ভীরাশ্রু দেখা গেল— গ্যাসের দাম ২০০ টাকা কমানোর ঢক্কানিনাদে এখন কান পাতা দায়!
টাকার দাম ক্রমশ পড়ছে, কর্মসংস্থান এমন তলানিতে পৌঁছেছে যে, সরকারি রোজগার মেলা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চাকরির পদোন্নতির চিঠিও বিলোচ্ছেন! সপার্ষদ জি২০-র অতিথিদের আপ্যায়নের আয়োজনে রাজধানীর বুকে গরিব মানুষের মাথার ছাউনি গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে নির্বিচারে। আর সেই সম্মেলনেই বলা হচ্ছে যে, সাধারণ মানুষ নাকি ‘স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে’ যোগদান করে একে উৎসবের চেহারা দিয়েছে! আর কত? এত অমৃতের স্বাদ আর যে নিতে পারছি না! সব কিছুরই তো একটা সীমা থাকে!
শুভ্রা চক্রবর্তী হাওড়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy