Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Test Cricket

সম্পাদক সমীপেষু: পাল্টাচ্ছে ক্রিকেট

মজার বিষয় এটাই যে, এখন টেস্টেও এক দিন বা টি২০ ধরনের খেলা পুরো মাত্রায় ঢুকে পড়েছে। এতে অমীমাংসিত টেস্টের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে গিয়েছে। দুঃখের বিষয় এটাই, এর ফলে টেস্টের ধ্রুপদী ধরনটাই ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে।

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৪ ০৭:৩২
Share: Save:

নিউ জ়িল্যান্ডের কাছে টেস্ট সিরিজ়ে ৩-০’য় লজ্জাজনক হার আর যা-ই হোক, ভারতীয় খেলোয়াড়দের আত্মসম্মানে ঘা দিতে পেরেছে বলে মনে হয় না। এ ক্ষেত্রে নিউ জ়িল্যান্ড ক্রিকেট দলেরও ধন্যবাদ প্রাপ্য, যে-হেতু তারা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, ভারতীয় মহাতারকাদের নিয়ে যে মাতামাতিটা হয়, তাঁরা সত্যিই সেটার যোগ্য কি না।

তবে একটু তলিয়ে দেখলে বোঝা যাবে টেস্ট ক্রিকেট কিন্তু এক রকম পরিবর্তনের মুখে দাঁড়িয়ে। এক দিনের, টি২০-র যা রমরমা তাতে বিশ্বের অনেক দেশের খেলোয়াড়েরই লক্ষ্য এই দুই ক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করা। মজার বিষয় এটাই যে, এখন টেস্টেও এক দিন বা টি২০ ধরনের খেলা পুরো মাত্রায় ঢুকে পড়েছে। এতে অমীমাংসিত টেস্টের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে গিয়েছে। দুঃখের বিষয় এটাই, এর ফলে টেস্টের ধ্রুপদী ধরনটাই ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এ তো এক সামগ্রিক বিষয় যার ফল কম-বেশি সব দেশই ভোগ করছে। অতীতে বহু বার প্রথম টেস্ট হেরেও সিরিজ় জিতেছে ভারত। কারণ তখন সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো বহু ক্রিকেটার ছিলেন— অমরনাথ, গাওস্কর, কপিল, বেঙ্গসরকার প্রমুখ। পরবর্তী কালে সচিন, দ্রাবিড়, লক্ষ্মণ, সৌরভ, আজহারউদ্দিনরাও প্রয়োজনের সময়ে নিজেদের উজাড় করে দিয়েছেন। ক্রিকেটবিশ্ব চিরকাল এঁদের মনে রাখবে। পাশাপাশি দেশের মাটিতে এখনকার মহাতারকাদের এই নির্লজ্জ আত্মসমর্পণও সহজে ভুলবে না ক্রিকেটপ্রেমীরা।

ক’দিন পর শুরু হবে আইপিএল। আবার ছয়, চারের বন্যা বইবে, উইকেট টু উইকেট বল হবে, সুইং, স্পিন-বিহীন। আবার পাতাজোড়া হেডলাইন, বীরগাথা। কিন্তু এত কিছুর মধ্যে হয়তো টিমটিম করে বেঁচে থাকবে ক্রিকেটের আসল রূপ— ‘টেস্ট ম্যাচ’। মুষ্টিমেয় প্রতিভাধরের হাতেই এখন এর জিয়নকাঠি।

স্বপন চক্রবর্তী, হাওড়া

মেকি আড়ম্বর

প্রায় অতিমানবের পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়া আমাদের দিগ্বিজয়ী, মহান ব্যাটারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে ধরাশায়ী হওয়ার ঐতিহ্য সমানে চলছে। প্রথম দু’টি টেস্ট হারের পর অধিনায়ক রোহিত শর্মা-সহ টিম ম্যানেজমেন্ট ময়না তদন্তের পথে হাঁটতে রাজি ছিলেন না বিশেষ। বরং তাঁরা ‘এমনটা তো হতেই পারে’ গোছের একটা মানসিকতা দেখিয়েছিলেন। তবে কেন উইলিয়ামসনহীন‌ আনকোরা নিউ জ়িল্যান্ডের কাছে ধোলাইয়ের পর রোহিতদের চোখমুখ দৃশ্যত থমথমে হয়ে গিয়েছিল?

রোহিতরা যা-ই ভাবুন আর করুন, তাতে ভারতীয় ক্রিকেটের আসন্ন বিপদ সঙ্কেতগুলোকে কোনও ভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। আইপিএল নামক ‘মশলা’ ক্রিকেটের বাহ্যিক আড়ম্বর ও চাকচিক্যে বুঁদ হয়ে থাকার কারণে ভারতীয় ক্রিকেটে এর সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক অভিঘাত নিয়ে বিশেষ আলোচনা হয় না। মাত্রাতিরিক্ত অর্থ, যশ ও খ্যাতির মারণ নেশায় পড়ে কেউ আর আপসহীন শৈলী, নাছোড় ধৈর্য, চোয়াল চাপা জেদের মতো দুর্লভ ক্রিকেটীয় গুণগুলো অর্জনে বিশেষ মনোযোগী নন। বরং, সকল ক্রিকেটীয় মনোযোগ এখন কী করে প্রত্যেক বলে চার বা ছক্কা হাঁকানো যায়, তার দিকে কেন্দ্রীভূত হয়েছে। ভোররাত থেকে উঠে যে ছেলেটি কাঁধে ক্রিকেট ব্যাগ ঝুলিয়ে পাঁচটা সাতের লোকালে পা রাখে, তার কাছে চাঁদমারি ওই আইপিএল-এর‌ তাৎক্ষণিক লাভের রঙিন ললিপপ। যোগ্যতার চেয়ে অতিরিক্ত প্রাপ্তি ব্যক্তির‌ বৃহত্তর পর্যায়ে ও পরিসরে পৌঁছনোর পথে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হতে পারে। এই সব কিছুর পরিণতি আজ তাই চোখের সামনে— এক ইনিংসে ৪০-৪৫ রানে অলআউট।

উচ্চ মানের পেস বোলিংয়ের সামনে ভারতীয় ব্যাটারদের ধরাশায়ী হওয়া প্রায় ‘মিথ’ হয়ে গিয়েছে। সঙ্গে সিম, সুইং হলে তো আর কথাই নেই। অনেক ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ দাবি করেছিলেন, আইপিএল-এ বিদেশি বোলারদের বিরুদ্ধে খেলে ভারতীয় ব‌্যাটাররা পেস বোলিং সামলানোর শৈলী রপ্ত করে ফেলবেন। কিন্তু তা আর হল কই? আইপিএল-এর পাটা উইকেটে জোরে বোলারদের তিন-চার ওভার সামলানো আর সিমিং ট্র্যাকে চারটে স্লিপ ও দুটো গালির চক্রব্যূহ এড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধৈর্য, অনুশাসন ও জেদ নিয়ে পিচ কামড়ে পড়ে থাকার মধ্যে আকাশপাতাল ফারাক। মাঝখান থেকে কয়েক দশকের সযত্নে লালিত সাধের স্পিন রহস্যের সিন্দুকের ডালা বিদেশি ক্রিকেটারদের কাছে হাট করে খুলে দেওয়ার দরুন তাঁরা এখন আমাদের স্পিন-গুগলিতে তেমন আর ভিরমি খান না। বরং, আমাদের অস্ত্রেই এখন আমরা রক্তাক্ত হয়ে যাচ্ছি। হাতেগরম উদাহরণ মিচেল স্যান্টনার। অর্থাৎ, আমাদের আমও গেল, ছালাও গেল।

গাওস্কর, কপিল, সচিন, সৌরভ, যুবরাজ, সহবাগ, লক্ষ্মণ বা দ্রাবিড়ের মতো প্রথিতযশারা কেউই কিন্তু আইপিএল-এর তৈরি নন। দেশের ক্রিকেট মহানায়কেরা দিনের পর দিন রান না পেলে বিশেষ কেউ প্রশ্ন তোলেন না। এক বারও সাহস সঞ্চয় করে দৃপ্ত ভাবে বলতে পারেন না যে, যাও, ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলে আবার জাতীয় দলে ফিরে এসো। রান না পেলে বাবর আজ়মকে তাঁর দেশ দল থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়ার সাহস দেখাতে পারে, আর আমরা ব্যক্তিপুজোয় এমনই বুঁদ যে সে কথা দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারি না। দেশের ক্রিকেট কর্তারা যেন মাথায় রাখেন যে ক্রিকেটকে পণ্য করে ব্যবসায়িক লাভ তত দিন সম্ভব, যত দিন পর্যন্ত ক্রিকেট নিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত মাতামাতি থাকছে। আর জাতীয় দলের নিরবচ্ছিন্ন আন্তর্জাতিক সাফল্য ছাড়া সে উচ্ছ্বাসে ভাটা পড়তে বাধ্য।

পলাশ মান্না সবং, পশ্চিম মেদিনীপুর

খেলোয়াড় কই

ভারত-নিউ জ়িল্যান্ডের টেস্ট সিরিজ ০-৩’এ শেষ হওয়ার পর এক জন ভারতীয় হিসাবে আমি চূড়ান্ত হতাশ। প্রথমত, বৃষ্টি বাদ দিয়ে প্রথম টেস্ট শেষ হয়েছে সাড়ে তিন দিনের মধ্যে, দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনের মধ্যে, তৃতীয়টাও তা-ই। দেখে মনে হল টেস্ট দেখছি না, দু’ইনিংসের টি-টোয়েন্টি খেলা দেখছি। এই কি টেস্ট খেলার মানসিকতা? ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে কি এক জনও দ্রাবিড় বা লক্ষ্মণকে তুলে আনা গেল না, যিনি চোয়াল চেপে সারা দিন খেলে বলের নতুন চামড়া পুরনো করে দিতে পারেন? এক জনও কুম্বলে বা শ্রীনাথও কি মিলল না, যিনি এক নাগাড়ে ৩০ ওভার বল করে যেতে পারেন?

দ্বিতীয়ত, সেরা ব্যাটার ঋষভ পন্থ (৬ ইনিংসে ২৬১) বা সেরা বোলার রবীন্দ্র জাডেজাকে (৬ ইনিংসে ১৬ উইকেট) বাদ দিলে বাকিদের অবদান কী? দুই সিনিয়র খেলোয়াড় রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি পর পর ছ’টি ইনিংসে ব্যর্থ কেন? দু’জনের গড় ১৫ রানের আশেপাশে। এই নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন নেই? কেন দু’জনকে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার ফল দেখে তবেই টেস্ট দলে নেওয়া হবে না?

ওয়ান-ডে বা টি-টোয়েন্টির দল নিয়ে যে টেস্ট খেলা চলে না, তা এই ফলাফলে স্পষ্ট। বোঝাই গেল, ভারতীয় খেলোয়াড়দের কারও মধ্যে টেস্ট খেলার মানসিকতা নেই। সে ক্ষেত্রে টেস্ট যদি খেলতেই হয়, তা হলে টেস্টের জন্য নতুন ভাবে দল তৈরি করা হচ্ছে না কেন? রঞ্জি-র মতো ঘরোয়া ক্রিকেট প্রতিযোগিতাকে উপেক্ষা করে আদৌ কোনও লাভ হচ্ছে কি? নির্বাচকদের কাছে আগামী দশ বছর ভারতের হয়ে টেস্ট খেলার মানসিকতায় তৈরি তরুণ কয়েক জন ব্যাটার, বোলার ও অল-রাউন্ডারের তালিকা চাইলে পাওয়া যাবে তো?

অভিজিৎ মিত্র, বর্ধমান

আলোর রেখা

ভারত দুরমুশ হল, তবু কিছু আলোর রেখাও আছে। ওয়াশিংটন সুন্দর যেমন খেললেন, বোঝা গেল, রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বিকল্প তৈরি।

শুভদীপ পাত্র খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

অন্য বিষয়গুলি:

India Vs New Zealand test cricket
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy