ইবসেনের ডল’স হাউজ় জানে ভারতের যন্ত্রণা
হেনরিক ইবসেনের ‘এ ডল’স হাউজ়’-এ নোরা তার বিয়ে ভেঙে বেরিয়ে এসেছিল। পুরুষতন্ত্রের শক্তিশর্তে জারিত সে বিয়ে যে মেয়েটিকে পুতুল ছাড়া কিছুই ভাবে না! লন্ডনের বাঙালি নাট্যকার তনিকা গুপ্ত বিখ্যাত নাটকটিকেই নতুন আঙ্গিকে ভেবেছেন। সময়টা ১৮৭৯-ই। তবে নোরাকে এনেছেন কলকাতায়। এখানে তার নাম নিরু। টম নামের এক প্রতিপত্তিমান ইংরেজের বাঙালি স্ত্রী। টম তাঁর এই বিচিত্র ভারতীয় ‘সম্পদ’টি নিয়ে খুবই গর্বিত। এমনই সময় নীরুর অতীতের এক কাল-রহস্য হঠাৎ আছড়ে পড়ে দম্পতিটির আপাত সুখের নীড়ে। তনিকার নাটকে টম-নীরু-র রূপকে উপস্থাপিত সেই আমলের ব্রিটেন ও ভারত। ‘ডল’স হাউজ়’ আসলে তেত্রিশ কোটি দেবতা অধ্যুষিত, মোহিনীভূমি ভারতবর্ষ। ব্রিটিশ তাকে অধিকারের নেশায় মেতেছে। ভারতের প্রতি তাদের সেই মানসিকতারই ঘুণ ঢুকেছে এই দুই নরনারীর সম্পর্কে। তনিকা বলেছেন, ‘উনিশ শতকের কলকাতায় ইউরোপীয়দের সঙ্গে স্থানীয় হিন্দু-মুসলিমদের বিয়ে চেনা ঘটনা। এঁদের সন্তানদেরই আমরা অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান বলি। এই নাটকে একটা প্রশ্ন তুলতে চেয়েছি। ইংরেজদের ভারতীয় স্ত্রীদের জীবনটা কোন খাতে বইল।’ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম অবশ্য এই মঞ্চায়নে আপ্লুত। প্রশংসিত নীরু চরিত্রাভিনেত্রী অঞ্জনা ভাসনও।
ব্রেক্সিট-সিংহিনী
ব্রিটেনে সংসদীয় গণতন্ত্রের ত্রাতা হলেন এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত, অভিবাসী-বংশজ মহিলা। জিনা মিলার। পার্লামেন্টের অধিবেশন স্থগিতের বিপক্ষে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন। জিতেও গেলেন। দুধনাথ-সাবিত্রীর সিংহিনী কন্যেটি জিনা নাদিরা সিংহ নামে জন্মেছিলেন ব্রিটিশ গায়ানায়। বিহার থেকে শ্রমিকের কাজে সেখানে আসেন তাঁর পূর্বপুরুষরা। ইংল্যান্ডের বোর্ডিং স্কুলে এসেই বৈষম্যের শিকার হন ১১ বছরের জিনা। যে তাঁকে জ্বালাত, ব্যক্তিত্ব-ম্যাজিকে তাকেই বন্ধু করে নেন। বিখ্যাত হলেন ২০১৬-য়। ব্রেক্সিট-কাণ্ডে তিনি সরকারের বিরুদ্ধে আদালতে আপিল ঠোকেন। বলেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বেরনোর আগে পার্লামেন্টে ভোটের প্রয়োজন। তাঁকে বিদ্বেষী ইমেল পাঠাত ব্রেক্সিট-বাদী দক্ষিণপন্থীরা। সুপ্রিম কোর্ট ২০১৭-তেও জিনার পক্ষেই রায় দিয়েছিল। তাঁর মামলাতে ক্ষমতা ফিরে পায় পার্লামেন্ট। এখনও খুনের হুমকি পান জিনা, সশস্ত্র দেহরক্ষী নিয়ে ঘোরেন। তাঁর কথায়, সংসদীয় গণতন্ত্রের খাতিরে লড়েও সুখ। ২০১৮-য় ব্রিটেনের ‘সবচেয়ে প্রভাবশালী কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিত্ব’ হয়েছেন জিনা, প্রকাশ করেছেন আত্মজীবনী ‘রাইজ়: লাইফ লেসনস ইন স্পিকিং আউট’। এই ঐতিহাসিক জয়ের পর সেই বইয়ে নতুন অধ্যায় জুড়বে নিশ্চয়।
মাকড়সার রস
মৃদুভাষিণী, কোমলদর্শনা। তাঁরই নাম লেডি হেল! বরিস জনসনের জীবন সত্যিই বুঝি ‘হেল’ করে দিলেন সুপ্রিম কোর্টের এই প্রেসিডেন্ট। প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টের অধিবেশন যেভাবে স্থগিত করেছিলেন, তা বেআইনি বলে রায় দিয়েছেন শ্বেতাঙ্গ পুরুষ শাসিত ব্রিটিশ বিচারব্যবস্থার প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট। আলোচনায় তাঁর প্রাণী ও পতঙ্গ অনুকৃতির ব্রোচ-প্রীতিও। শুনানিতে তিনি রত্নখচিত মাকড়সা-ব্রোচ পরে আসতেন। সোশ্যাল মিডিয়া বিষধর ‘ব্ল্যাক উইডো’ মাকড়সার সঙ্গে তুলনা টেনে প্রধানমন্ত্রীকে সতর্ক করল। কেউ বললেন, গণতন্ত্র রক্ষায় স্পাইডারউয়োম্যান। মনে করালেন, মাকড়সা নারীর প্রাণপ্রাচুর্যের প্রতীক। দেশে স্পাইডার টিশার্টের চাহিদা তুঙ্গে। ট্রেন্ড হয়েছে মাকড়সা-ব্রোচ। ৭৪ বছরের জাস্টিস-লেডি এখন ফ্যাশনেরও পোস্টার গার্ল।
শেষ অভিযান
বন্ধ হল ভ্রমণ সংস্থা টমাস কুক। ১৮৪১-এ সংস্থার প্রথম কন্ডাক্টেড ট্যুরটি আয়োজন করেন প্রাণপুরুষ টমাস কুক। লেস্টার থেকে লাফব্রো পর্যন্ত ১২ মাইলের ট্রেনযাত্রা। খরচ জনপ্রতি এক শিলিং। ইউরোপ ভ্রমণ শুরু ১৮৫৫-এ। প্রথম আন্তর্জাতিক পরিক্রমা ১৮৭২-এ। কুকের নেতৃত্বে ২২ দিনে, ২৯০০ মাইল পেরিয়ে পৃথিবীটাকে এক চক্কর ঘুরে এসেছিলেন পর্যটকরা।
ভিক্টোরিয়ান মহিলাদের ঘরের বাইরে এনে জঙ্গল, পাহাড়, সমুদ্র দেখিয়েছিলেন তিনিই। কোনও মহিলা একলা বিদেশভ্রমণে ইতস্তত করলে সফরসঙ্গী হতেন স্বয়ং কুক। নিজের পায়ে ‘বেড়ানো’ থেকে পুরোদস্তুর ভূপর্যটক হয়ে ওঠেন মেয়েরা। ১৭৮ বছরের এমন কত ইতিহাস আজ সময়ের গর্ভে। লেস্টার স্টেশনে টমাস কুকের মূর্তিটি তবু মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy