Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪
Narendra Modi

সম্পাদক সমীপেষু: শিখলাম যে শিখব না

ছোটরা বড়দের দেখে শেখে। সাধারণ মানুষ শেখে বড় বড় নেতাদের দেখে। আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর দেশের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে শিখলাম, কোনও বক্তৃতা দিতে গেলে, কোনও প্রস্তুতির প্রয়োজন নেই।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদী।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদী।

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

ছোটরা বড়দের দেখে শেখে। সাধারণ মানুষ শেখে বড় বড় নেতাদের দেখে। আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর দেশের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে শিখলাম, কোনও বক্তৃতা দিতে গেলে, কোনও প্রস্তুতির প্রয়োজন নেই। অন্য কোনও দেশে গেলে, তার সংস্কৃতি বা ইতিহাস সম্পর্কে কিছু জানার প্রয়োজন নেই। এবং এগুলোর সারবস্তু হল, যা করছ, তা নিয়ে সিরিয়াস হওয়ার কোনও দরকার নেই। অমনোযোগী হলেই চলবে, অশ্রদ্ধা থাকলেও কিছু এসে যায় না। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও কম যান না, তিনি অতিথি প্রেসিডেন্টের নামটাই ভুল বলে ফেললেন। সব মিলিয়ে এখন যা অবস্থা, মানুষকে বোঝাতে হবে, যাঁকে ভোট দেবেন, আর যা-ই করুন, তাঁর কাছে কিছু শিখতে যাবেন না। বাচ্চাদেরও বলতে হবে, দেশনেতাদের আদর্শ ভেবো না, বরং মিম-এর উপাদান ভাবো।

অঙ্কন চক্রবর্তী

কলকাতা-৩৩

জল বাঁচাও

দেবদূত ঘোষঠাকুরের ‘জল নাই, জল চাই’ (১২-২) শীর্ষক নিবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। পৃথিবীর মোট জলভাণ্ডারের মধ্যে ভূগর্ভস্থ জল ১.০৫%। তবুও দুর্ভাগ্যবশত, উন্নয়নশীল দেশগুলিতে আজও অত্যন্ত অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার মাত্রাহীন ভাবে হয়ে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারতের অন্য রাজ্যগুলিও এর ব্যতিক্রম নয়।

১৯৭০-এর প্রথম বা মাঝামাঝি সময় থেকে পশ্চিমবঙ্গে যে ভূগর্ভস্থ জলের ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়, তা আজও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। গ্রামীণ এলাকায় পানীয়, রান্না এবং গৃহস্থালির কাজকর্মের জলের প্রধান উৎস ভূগর্ভস্থ জল। এমনকি কৃষিকার্যের জন্য ব্যবহৃত জলের প্রধান উৎসও ভূগর্ভস্থ জল। পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে মূলত গরম কালে। এই সময় যে কৃষিকার্য হয়, বিশেষ করে ধান চাষের জন্য যে জল প্রয়োজন হয়, তার পুরোটাই ভূগর্ভস্থ জলের উপর নির্ভরশীল। স্রেফ এক পাইপের (২০ ফুট) একটা টিউবওয়েল বসিয়ে প্রচুর জল তুলে নেওয়া হয়। আমাদের প্রকাশিত গবেষণাপত্রে দেখানো হয়েছে, দেগঙ্গা ব্লকে (উত্তর ২৪ পরগনায় অবস্থিত) প্রায় ৭.৪x১০১০ লিটার ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার করা হয় প্রতি বছর কৃষিকার্যের জন্য সমস্ত অগভীর নলকূপের মাধ্যমে (প্রায় সংখ্যায় ৩২০০)। নগরায়ণ, শিল্পায়নের জন্য জলের বেশি অংশটাও ভূগর্ভস্থ জলভাণ্ডার থেকে আসে। ফলে, জলস্তর ভূগর্ভস্থ পর্যায়ে মারাত্মক ভাবে নেমে গিয়েছে।

মাত্রাহীন জল উত্তোলনের ফলে আর্সেনিক বা ফ্লোরাইডের মতো ক্ষতিকারক পদার্থ তার খনিজ থেকে বেরিয়ে ভূগর্ভস্থ জলে মিশে যাচ্ছে। আজ পশ্চিমবঙ্গ বা ভারতের অন্যান্য প্রদেশে ভূগর্ভস্থ জলে যে আর্সেনিক বা ফ্লোরাইড উপস্থিত, তার পিছনে এই অবৈজ্ঞানিক জল উত্তোলনের ভূমিকাই প্রধান। কৃষিকার্যে অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার করার ফলে আজ খাদ্যশৃঙ্খলে মারাত্মক রকমের আর্সেনিক বা ফ্লোরাইডের উপস্থিতি ধরা পড়েছে। সমস্ত অগভীর নলকূপের মাধ্যমে, দেগঙ্গা ব্লকে প্রতি বছরে ৬.৪ টন আর্সেনিক উত্তোলন করা হয় ভূগর্ভস্থ জলের মাধ্যমে এবং এই পরিমাণ আর্সেনিক কৃষিজমিতে সংরক্ষিত হয় এবং খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করে। পানীয় জল ছাড়াও, বর্তমানে আতপ বা সেদ্ধ চালে মারাত্মক আর্সেনিকের উপস্থিতি এবং ভাতের মাধ্যমে মানবশরীরে এই ক্ষতিকারক আর্সেনিক (অজৈব) বিষের প্রবেশ, পরিস্থিতি অনেক গুণ বেশি জটিল করে তুলেছে। আমরা প্রচুর গবেষণাপত্রে এই বিষয়গুলি তুলে ধরেছি।

এই পরিস্থিতি থেকে বেরোনোর অনেক রাস্তা খোলা আছে। বৃষ্টির জল সংরক্ষণ, রাজ্য সরকারের ‘জল ধরো, জল ভরো’ নীতি, সর্বোপরি ভূপৃষ্ঠের জল সঠিক পরিশোধন করে অধিক পরিমাণে পানীয় বা কৃষিকার্যে ব্যবহার করা শুরু হলে, পরিস্থিতি অনেক ভাল হবে। সর্বোপরি, যেখানে বিকল্প জলের কোনও উৎস নেই, সেইখানেই আমরা ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার করতে পারি নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে। মহাভারতে পিতামহ ভীষ্ম মৃত্যুশয্যায় ভূগর্ভস্থ জলকে পানীয় জল হিসেবে নিতে অস্বীকার করেছিলেন, আমাদের মনে রাখা উচিত।

তড়িৎ রায়চৌধুরী

শিক্ষক, স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়

কেন অভিমান?

ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের উদ্বোধনে রেলের তরফ থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে তাঁর ব্যক্তিগত উষ্মার প্রকাশ খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এ রাজ্যের মানুষ এতে খুব একটা আশ্চর্য নন, কারণ এমনটা দেখতেই তাঁরা অভ্যস্ত।

প্রথমত, পানাগড়ে যানজট এড়াতে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের নবনির্মিত (৮ কিমি) বাইপাসের উদ্বোধনের কথা ছিল কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের। কিন্তু তাঁর উদ্বোধনের কয়েক ঘণ্টা আগেই উদ্বোধন করে দেন রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক। দুর্গাপুর-বাঁকুড়া রেললাইনের উপর উড়ালপুল উদ্বোধনেও অভিযোগ ওঠে, রেলকে না জানিয়েই রাজ্যের তরফে তা করে দেওয়া হয়েছে।

বর্ধমানে রেললাইনের উপর ঝুলন্ত সেতুর উদ্বোধনেও পানাগড় কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি ঘটে। রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের উদ্বোধনের কথা থাকলেও, সেই সূচির দিন কয়েক আগেই রাজ্যের তরফ থেকে পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় সেতুর উদ্বোধন করে দেন।

অর্থাৎ কথায় কথায় ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো’র বুলি আওড়ানো প্রশাসকগণ স্ব-স্ব ক্ষেত্রে স্বীয় ক্ষমতার প্রদর্শনকেই জন-গণ-মনোরঞ্জনের মোক্ষম অস্ত্র বলেই মনে করেন। এ রাজ্যের মানুষ এই আস্ফালন দেখতেই অভ্যস্ত, তাই মুখ্যমন্ত্রীকে ইস্ট ওয়েস্ট প্রকল্পের উদ্বোধনে আমন্ত্রণ না জানানোর মধ্যে বিরাট অস্বাভাবিকতা খুঁজে পান না।

প্রণয় ঘোষ

কালনা, পূর্ব বর্ধমান

অন্য ভাষা দিবস

প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও সর্বত্র পালিত হল ২১ ফ্রেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। কিন্তু মনে রাখতে হবে, সারা পৃথিবীতে আরও ৬টি ভাষার জন্য আলাদা আলাদা ভাষা দিবস আছে। আর মনে রাখতে হবে, বাংলা ভাষাকে নিয়ে আন্দোলন হয়েছে একটি নয়, দু’টি নয়, কমপক্ষে তিনটি।

২১ ফ্রেব্রুয়ারির কথা আমরা সকলেই জানি। ১৯৬১ সালের ১৯ মে বাংলা ভাষার স্বীকৃতির দাবিতে অসমের শিলচর স্টেশনে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন কমলা ভট্টাচার্য-সহ ১১ জন ভাষাসৈনিক।

এ-পার বাংলাতেও, বাংলা ভাষার স্বীকৃতির দাবিতে আন্দোলন হয়েছিল মানভূম জেলায়, যা তৎকালীন বিহার রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরে আন্দোলনের জেরে বিহার ভেঙে তৈরি হয় একটি জেলা: পুরুলিয়া। ১৯৩১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, সেই সময় মানভূম জেলার ৮৭% মানুষ বাংলাভাষী ছিলেন। মানভূমবাসীর দাবি ছিল, বাংলা যে হেতু তাঁদের মাতৃভাষা, মানভূম জেলাকে পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। স্বাধীনতা লাভের পর প্রায় ৯ বছর ধরে আন্দোলন চলে। একেবারে শেষ ধাপে, ১৯৫৬ সালের এপ্রিল মাসে পুঞ্চার পাকবিড়রা গ্রাম থেকে প্রায় ৯৫০ জন পদযাত্রী মানভূমকে পশ্চিমবঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে কলকাতা পর্যন্ত পায়ে হেঁটে এসে আইন অমান্য করেন এবং ৭ মে কারাবরণ করেন। ১৩ দিন পরে, ২০ মে তাঁরা মুক্তি পান। বাংলাভাষীদের আন্দোলনের ফলে পশ্চিমবঙ্গে সে বছর জন্ম নেয় আজকের পুরুলিয়া জেলা।

মানভূমের এ ভাষা আন্দোলন কোনও স্বাধীন দেশ গড়ার আন্দোলন ছিল না, ছিল কেবল বাংলা ভাষাকে তার প্রাপ্য মর্যাদা দেওয়ার লড়াই। আজকের প্রশাসনিক পুরুলিয়া সেই লড়াইয়েরই ফসল। এবং পুরুলিয়া জেলা যে এ রকম একটি গৌরবজনক ইতিহাসের উত্তরাধিকার বহন করে, তা অনেকেরই অজানা। তাই ২০ মে পালিত হোক আরও এক ভাষা দিবস।

দুর্গাপদ মাসান্ত

মেচেদা, পূর্ব মেদিনীপুর

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Donald Trump USA India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy