অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় ঠিক কিসের ঢেউ তুলতে চাইছেন, বুঝতে পারলাম না (‘ঢেউ উঠছে, কারা টুটছে’, ২৯-৬)। এক ডিজিটাল সম্মেলনে হাজির মোট পাঁচটি দেশ, দু’টি রাজ্য এবং কিছু বেসরকারি সংগঠন! একে ‘আন্তর্জাতিক’ সম্মেলন না বলে, খিচুড়ি জোট বলাই ভাল। এরা একটি জনহিতকর আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায়। উদ্দেশ্য অতি মহৎ, ভিত্তি অত্যন্ত দুর্বল।
একটি নতুন টিকা বা অন্য কোনও ওষুধ উদ্ভাবন সময়সাপেক্ষ এবং অর্থসাপেক্ষ। ফার্মা কোম্পানিগুলো এই ব্যাপারে প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করে, যা প্রায় ফাটকার পর্যায়ে পড়ে। গবেষণা সফল হলে, পেটেন্ট পেলে, অর্থ বহু গুণ হয়ে ফিরে আসে; অন্যথায় পুরোটাই খরচের খাতায়। উপযুক্ত লাভের হাতছানি না থাকলে, কোনও কোম্পানি এই ঝুঁকি নেবে না। পেটেন্টহীন ওষুধের স্বপ্ন সফল করতে গেলে, এগিয়ে আসতে হবে উৎসাহী সরকারকে। আজ পর্যন্ত কোনও দেশ— এই সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশ-সমেত— এই উদ্যোগ করেছে বলে জানা নেই। তা হলে?
ভারত উন্নয়নশীল দেশ, চিনের পরেই সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছে এ দেশের ওষুধ উৎপাদন ক্ষেত্র। এটা যেমন গর্বের, ঠিক তেমনই লজ্জার নামীদামি ওষুধ কোম্পানিগুলির ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে পরীক্ষামূলক প্রয়োগকে ভিত্তি করে টিকা তৈরির চেষ্টা। টিকা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হয়। এই ধরনের ওষুধ প্রস্তুত করতে প্রয়োজন সর্বোচ্চ মানের উৎপাদন এবং নজরদারি ব্যবস্থা। ক’টা উন্নয়নশীল দেশে সে পরিকাঠামো আছে? তাই, কার্যকর প্রতিষেধক ‘নানা দেশে উৎপাদন এবং বণ্টন’ ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখার শামিল।
শেষে বলি, যে কর্পোরেট আধিপত্যকে ভাঙার স্বপ্ন এই সম্মেলন দেখতে চেয়েছে, তার বাৎসরিক রোজগার ১,২৭,০০০ কোটি ডলার— যা সম্মিলিত দেশগুলির মোট আয়ের থেকে বেশি। ‘কালেকটিভ ডিসওবিডিয়েন্স’ কথাটা যত সুশ্রাব্য, কাজটা ততই দুঃসাধ্য।
দেবাশিস মিত্র
কলকাতা-৭০
যুদ্ধের মূল্য
ভারত যেখানে গরিব মানুষের রোগনির্ণয় এবং প্রাথমিক চিকিৎসার সুযোগ নিশ্চিত করতে পারল না, সেখানে ‘ক্ষমতা যার ভ্যাকসিন তার’ বনাম ‘প্রোগ্রেসিভ ইন্টারন্যাশনাল’ যুদ্ধের মূল্য কী? টিকাপ্রদানেই বা ভারত বিশ্বের গড় হারের থেকে পিছিয়ে কেন? লজ্জা লাগে, প্রতিবেশী বাংলাদেশও আমাদের থেকে অনেক এগিয়ে। সম্প্রতি ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট রডরিগো দুতের্তে দেশবাসীকে বলেছেন, “হয় ভ্যাকসিন নাও, না হলে ভারতে যাও।”
কোভিড-১৯’এর মতো জটিল সংক্রামক রোগের টিকা-সহ অন্যান্য ওষুধের আবিষ্কার নির্ভর করে উপযুক্ত মেধা এবং পুঁজিনির্ভর সঠিক পরিকাঠামোর উপর। তাই উন্নত দেশগুলিই পারছে ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে। ভারতে বহুল-ব্যবহৃত ‘কোভিশিল্ড’-ও অক্সফোর্ডে আবিষ্কৃত। ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থাকে মুনাফার কথা ভাবতেই হবে। স্বাস্থ্যের অধিকার অর্জন কোনও ‘ইজ়ম’ দ্বারা সফল হবে না। চাই সর্বজনীন আন্দোলনের ঢেউ।
পঙ্কজ কুমার চট্টোপাধ্যায়
খড়দহ, উত্তর ২৪ পরগনা
সমাজের রেফারি
“আলো ‘কমে’ আসিতেছে” (৩-৭) নিবন্ধে চিন্ময় গুহ ঠিকই বলেছেন, রাষ্ট্রীয় জীবনে চিন্তকদের কোনও পরিসর থাকছে না। রাজ্যে শুধু নয়, সারা দেশে যে পরিস্থিতি নির্মাণের প্রচেষ্টা চলছে তা অন্যায় এবং অবশ্য-পরিহার্য। আমরা কি ভাল-মন্দটুকুও ভুলতে বসেছি? সদ্য-নির্বাচিত বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী তাঁর এলাকার সমস্যা নিয়ে অস্বস্তির প্রহর কাটাচ্ছেন, সংবাদমাধ্যমে জেনেছি। সাধুবাদ প্রাপ্য তাঁর। কিন্তু নির্বাচনের আগে এই রাজ্যেই উঠল বিচিত্র স্লোগান, ‘খেলা হবে’। তা আজ ভিন্রাজ্যেও (ত্রিপুরা, উত্তরপ্রদেশ) পাড়ি দিতে চলেছে। রুটি-রুজির সমস্যা সরিয়ে রেখে কোন খেলায় মাতানো হচ্ছে? খেলা যদি হতেই হয়, তবে তা হোক সমাজচিন্তক রেফারির তত্ত্বাবধানে।
বরুণ কর
ব্যান্ডেল, হুগলি
বৈধ হোক ভ্যান
আনাজ বহনকারী ভ্যানচালকদের উপর পুলিশের অত্যাচার তুলে ধরেছেন স্বাতী ভট্টাচার্য (‘পুলিশ আর আনাজের ভ্যান’, ২৪-৬)। এই ভ্যানচালকরা বর্ষা, মহামারিকে উপেক্ষা করে ‘দুয়ারে আনাজ’ সরবরাহ করছেন। তাঁদের প্রতি এই অত্যাচারে লজ্জিত হতে হয়। মানলাম, তাঁদের যান সরকার-স্বীকৃত নয়, অবৈধ। পরিবেশ-দূষণ, শব্দদূষণের জন্য ক্ষতিকর। তার জন্যও কিন্তু চালকদের হয়রান হতে হয়। আনাজ বিক্রির জন্য যখন তাঁরা ভ্যান নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় বিভিন্ন আবাসনের সামনে দাঁড়ান, তখন জোটে মানুষের শাসানি। ভ্যান স্টার্ট দিলেই একরাশ কালো ধোঁয়া বেরোয়, সেই অপরাধে তাঁদের তাড়িয়ে দেন অনেক তথাকথিত শিক্ষিত মানুষজন। সরকারের উচিত ভ্যানের পরিকাঠামো উন্নত করে পরিবেশ উপযোগী করে তোলা, বৈধ লাইসেন্সের ব্যবস্থা করা। তা না করে, যে যে দিক থেকে পারছে, অবলীলায় অত্যাচার করে চলেছে। কবে সরকার, আর পরিবেশ সুরক্ষা সংগঠনগুলির ঘুম ভাঙবে?
উজ্জ্বল গুপ্ত
কলকাতা-১৫৭
অযথা হয়রানি
আনাজ বিক্রেতার ভ্যান থেকে পুলিশকর্মীর ওজনযন্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে চলেছে নিত্যদিন। বিভিন্ন ছোট দোকান, মাছ বিক্রেতা, সকলের ক্ষেত্রেই আইনের রক্ষকগণ ডান্ডাহস্ত। মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে সিভিক ভলান্টিয়ারদের অতি সক্রিয়তা চোখে পড়ার মতো। অথচ, এই তৎপরতা মদের দোকানের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে না। আইনরক্ষকদের তৎপরতা কেবলমাত্র গরিবদের ক্ষেত্রেই দেখা যায়। ভ্যান, রিকশা, অটো, টোটোওয়ালা এবং তাঁদের যাত্রীদের অযথা হয়রান করা হচ্ছে। নিয়ম মেনে চললেও নিস্তার পাওয়া যায় না। প্রায়ই এমন সংলাপ শুনি, “বাইরে বেরিয়েছিস কেন, জানিস না লকডাউন?” “না বেরোলে খাব কী?” “কেন? রেশনে চাল-ডাল দিচ্ছে না?” যেন শুধু চাল-ডালের উপর নির্ভর করে জীবন চলে যায়।
তাপস কুমার বিশ্বাস
কলকাতা-১২
‘উল্টে দেব?’
‘পুলিশ আর আনাজের ভ্যান’ নিবন্ধটি পড়ে কিছু বলার তাগিদ অনুভব করছি। সরকারি দফতরে একটি ছোট্ট চাকরি করার সুবাদে করোনাকালেও রাস্তায় বেরোতে হচ্ছে। ফলে গরিব ভ্যানচালক, টোটোচালকদের উপর পুলিশি অত্যাচারের বেশ কিছু সাক্ষী থেকেছি। অনেক টোটোচালক দুঃখ করে বলেছেন, “দিদি, আজ অমুক তেমাথার মোড়ের সিভিক ভলান্টিয়ার আমার গাড়িটা মেরে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। মালিক তো শুনবে না, নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়েই সারাতে হবে।” নিজের চোখে দেখেছি, পাইপ হাতে কী ভাবে টোটোগুলিকে পেটান সিভিক ভলান্টিয়াররা।
এক দিন ১০টা ২০ নাগাদ ভ্যানে ফল বিক্রি করা এক পেয়ারা বিক্রেতাকে এক সিভিক ভলান্টিয়ার তেড়ে উঠে বললেন, “দেখবি, ভ্যান উল্টে দেব? পাঁচ মিনিটের মধ্যে না চলে গেলে দেখ কী অবস্থা করি!” মনে হয়, এঁরা কি রক্তমাংসের মানুষ? একটা অতি ক্ষুদ্র ভাইরাসের আঘাতে গোটা দেশ যেখানে মুখ থুবড়ে পড়েছে, হাজার হাজার মানুষ পথে নেমেছেন পেটের জন্য, সেখানে এঁরা এত নির্মম কী করে হন? পুলিশকর্মী, সিভিক ভলান্টিয়ারদের একটু মানবিক হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে যাঁরা রাস্তায় নেমেছেন, তাঁদের উপর অবিচার করবেন না।
পদ্মা দে
মিঠাপুকুর, বর্ধমান
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy