—ফাইল চিত্র।
সংবাদপত্র বা সমাজমাধ্যমের সাহায্যে এখন হয়তো অধিকাংশেরই জানা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে, রাস্তায় পুলিশের গুলি, লাঠিচার্জ প্রাণ কেড়ে নিয়েছে বহু মানুষের। সরকারি হিসাবের বাইরেও ঝরেছে আরও অনেক প্রাণ। ফাঁকা হয়ে গিয়েছে অনেক মায়ের কোল। এই সকলের মূলে ‘সংরক্ষণ’। মেধার মাধ্যমে নয়, মুক্তিযোদ্ধাদের বংশধরেরাই যেন ভোগ করবে সকল অধিকার। শিক্ষার যখন মানসম্মান ধূলিসাৎ, তখন কিছু শিক্ষিত পড়ুয়া এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গেলে পুলিশ তাদেরই উপর গুলি চালায়। শোনা যাচ্ছে, কোথাও কোথাও গরম জলও নিক্ষেপ করা হয়েছে বিক্ষোভকারীদের উপর। এমনকি এমনও অভিযোগ উঠেছে, বিক্ষোভকারীদের সাহায্যের নামে পানীয় জলের মধ্যে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে ঘুমের ওষুধ। তবে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের পড়ুয়া নয়, রাস্তায় নেমেছিল হাই স্কুলের ছাত্ররাও।
আর কত দিন বাংলাদেশের রাস্তা পড়ুয়াদের রক্তে ভিজবে? যখন পড়ুয়াদের উপর, ভবিষ্যৎ-কান্ডারিদের উপর নির্বিচারে গুলি চলল, তখন বাংলাদেশের বাইরে থেকে এল না কেন কোনও সাহায্য? কেউ কোনও কথা বলল না কেন মানবাধিকার নিয়ে? অন্যান্য দেশের মতো ভারতও কেন চুপ করে রইল? এ দেশ কি ও দেশ, শিক্ষিত যুবকরা কোথাও পাচ্ছে না শিক্ষার মূল্য, পরিশ্রমের মূল্য, তাদের আর্তনাদে তাদের পাশে দাঁড়ানোর মতো মেলে না কাউকে। এ ভাবেই আবার মায়ের কোল শূন্য হয়, নিরীহ মানুষের রক্তে রাস্তা রক্তিম হয়ে ওঠে, এক দিন ঝিমিয়ে পড়ে আন্দোলন, অন্যায়ের বিচার পায় না সাধারণ মানুষ।
এই আন্দোলনে যাদের প্রাণ গেল, সেই মানুষগুলোর রক্ত যাতে বিফলে না যায়, তার জন্য আসুক আন্তর্জাতিক সমর্থন। শিক্ষাকে বাঁচাতে রব উঠুক সে দেশের সমাজের সকল স্তরে। ভারতেরও এই আন্দোলন থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত, পড়ুয়ারা অনেক বদল আনতে সক্ষম। এ দেশেও সম্প্রতি ডাক্তারি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে অনেক মেধাবী পড়ুয়া বঞ্চিত হয়েছে। ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড’— এই আদর্শ যেন আজ ক্রমেই পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ হোক বা ভারত— শিক্ষার মূল্যকে যে করেই হোক বাঁচাতে হবে। কিন্তু তা প্রাণের বিনিময়ে নয়।
রূপম দাস, কৃষ্ণনগর, নদিয়া
শাসকের ভুল
বাংলাদেশ সম্প্রতি প্রত্যক্ষ করল একটি স্বতঃস্ফূর্ত এবং সঙ্গত ছাত্র আন্দোলন, যার মধ্যে জ্বলে উঠেছিল শাসকের বিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভের আগুন। সেই বিক্ষোভকে যখন নারকীয় কায়দায় দমন করতে চায় শাসক, তখন প্রথম এবং প্রধান কর্তব্য হল দ্বিধাহীন ভাবে আন্দোলনরত ছাত্রদের পাশে দাঁড়ানো এবং সর্বতো ভাবে সেই শাসকের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো।
বাংলাদেশের প্রধান দুই বিরোধী শক্তিই যে আদ্যন্ত মৌলবাদী মতাদর্শের, তা বললে কি খুব ভুল হবে? মৌলবাদী এবং স্বৈরাচারী শাসকের মধ্যে তুলনায় তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া যেতে পারে, এক জন স্বৈরাচারী শাসক চরিত্রগত ভাবে কম ক্ষতিকর, যে-হেতু মৌলবাদকেই বিশ্বমানবতার সবচেয়ে বিপজ্জনক শত্রু মনে করা হয়। তবে এখানে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে— বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের আন্দোলন মোকাবিলার পন্থা এবং কাজে কি মৌলবাদকে পুষ্ট করার যথেষ্ট উপাদান ছিল না?
কোনও দেশে কোনও কালেই বিষয়ভিত্তিক স্বতঃস্ফূর্ত ছাত্র আন্দোলনের নির্দিষ্ট কোনও আদর্শ কিংবা রাজনৈতিক রণকৌশল থাকে না। থাকলে তাকে রাজনৈতিক আন্দোলন বলা হত, ছাত্র আন্দোলন নয়। দেখা গিয়েছে এই সব ছাত্র আন্দোলনে সাধারণত একটা পর্যায়ে অনুপ্রবেশ ঘটে কোনও স্বার্থান্বেষী বর্বর শক্তির। তার নাম হতে পারে মৌলবাদ বা ফ্যাসিবাদ। তারা ঘোলা জলে মাছ ধরতে নামে, ছাত্রদের সরকার-বিরোধী আবেগকে সুনিপুণ ভাবে নিজেদের কায়েমি স্বার্থে কাজে লাগায় পুরোদস্তুর। সর্বোপরি নিরপরাধ ছাত্রসমাজের ঘাড়ে বন্দুক রেখে সেই আন্দোলনকে নিজেদের দখলে নেয়। বাংলাদেশেও সম্ভবত তা-ই হয়েছে।
সে দেশের আওয়ামী লীগ সরকার কি এই সত্য জানত না? তারা প্রথম থেকেই কৌশলগত ভাবে এই আন্দোলনের মোকাবিলা না করে এমন খুনের খেলায় মাতল কেন? বহু ছাত্র শহিদ হওয়ার পরে তাদের মনে হল যে, এ বার ‘আলোচনা’ দরকার? এই ভুলের কোনও ক্ষমা আছে কি?
সৌরভ মণ্ডল, বসিরহাট, উত্তর ২৪ পরগনা
মেধার সুযোগ
১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। দেশ স্বাধীন হলেও মেধাবীরা পায়নি চাকরির স্বাধীনতা। সংরক্ষণ ব্যবস্থার কারণে এখনও সরকারি চাকরিতে সে দেশে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে তারা।
সরকারি তথ্য মতে, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ করা হত ২০ শতাংশ। বাকি ৮০ শতাংশ পদে নিয়োগ হত সংরক্ষণের ভিত্তিতে। ১৯৭৬ সালে মেধার ভিত্তিতে ৪০ শতাংশে নিয়োগ বাড়ানো হয়। ক্রমে সংরক্ষণ বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫ শতাংশে। এই অগ্রাধিকার কোটার মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ জেলা কোটা ও ৫ শতাংশ ‘আদিবাসী’ সম্প্রদায়ের। পরে ১ শতাংশ ‘প্রতিবন্ধী’ কোটা চালু করে বর্তমানে মোট কোটা দাঁড়িয়েছে ৫৬ শতাংশে। অর্থাৎ, ১০০ জনে ৫৬ জনই সরকারি চাকরি পাবে সংরক্ষণের ভিত্তিতে। আর মেধাবী সাধারণ শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ৪৪ জন। শুরু থেকেই মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকলেও পরবর্তী কালে কোটায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং পরে নাতি-নাতনিদের যুক্ত করা হয়। প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গিয়েছে, এই সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার জাঁতাকলে বেশির ভাগ পদই থাকছে ফাঁকা। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-র তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৫ লক্ষ ৯০ হাজার। এত সংখ্যক বেকারের দেশে পদ শূন্যই বা থাকে কী ভাবে? আর কোটা ব্যবস্থাই বা কতখানি যুক্তিযুক্ত?
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে কোটা পদ্ধতি বাতিল হলেও, ২০২১ সালে কয়েক জন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হাই কোর্টে মামলা করেন। গত ৫ জুন এক রায়ের মাধ্যমে আবারও ফিরে আসে কোটা। ফের ১ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে নামে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মেধাবী শিক্ষার্থীদের দাবি, ‘কোটা বাতিল নয়, কোটার সংস্কার চাই’। অর্থাৎ, কোটাকে ৫৬ শতাংশে না রেখে ৫ বা ১০ শতাংশের মধ্যে রাখা হোক। সরকারি চাকরিতে বৈষম্য দূরে ঠেলে, মেধাবীদের মূল্যায়ন করা হোক। শিক্ষার্থীদের এই দাবি অনেকাংশে মেনে নিয়ে হাই কোর্টের রায় সম্প্রতি বাতিল করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার শীর্ষ আদালতের রায় অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে এই বৈষম্য দূর করার পথে অগ্রসর হোক এবং মেধাবীদের যথার্থ মূল্যায়ন করুক— এটাই এখন কাম্য।
মোফাজ্জল হোসেন, বাংলাদেশ
নয় থেকে বারো
পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনের সমস্ত ট্রেন ১২ বগি করার কথা থাকলেও কোনও অজ্ঞাত কারণে তা হয়নি। এর অন্যতম সকালের নৈহাটি-শিয়ালদহ লোকাল। এমনিতেই এই ট্রেনটি অফিস টাইমের ট্রেন হওয়ায় প্রচণ্ড ভিড় থাকে। তার সঙ্গে ওই সময়ে নৈহাটিতে ঢোকা ব্যান্ডেল লোকালের সমস্ত যাত্রীও এই ট্রেন ধরেন। ফলে সবারই খুব অসুবিধা হচ্ছে। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে ব্যবস্থা করুক।
সব্যসাচী বসু, শ্যামনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy