এখনকার মুর্শিদাবাদ জেলার কর্ণসুবর্ণই প্রাচীন যুগের স্বাধীন ঐক্যবদ্ধ বাংলার প্রথম রাজধানী। ফাইল ছবি।
চৈত্রের এই তীব্র দাবদাহের মধ্যেই নিজের জেলার উল্লেখযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান, তথা বাংলার প্রথম স্বাধীন শাসক শশাঙ্কের রাজধানী হিসেবে পরিচিত কর্ণসুবর্ণ বা সাবেক কানসোনা ভ্রমণ করার সময় মনে হচ্ছিল যেন ‘টাইম ট্রাভেল’ করছি! আমাদের অতীতের অন্তঃস্তলে গেঁথে থাকা সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য, উভয়ই আমাদের টেনে নিয়ে যায় এই ধরনের ইতিহাসের ফেলে যাওয়া নিদর্শনগুলির কাছে। এখনকার মুর্শিদাবাদ জেলার কর্ণসুবর্ণই প্রাচীন যুগের স্বাধীন ঐক্যবদ্ধ বাংলার প্রথম রাজধানী। অথচ, এমন একটা গুরুত্ব বহনকারী স্থানই বর্তমানে রয়েছে চরম অবহেলায়। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের কলকাতা মণ্ডলের তরফ থেকে যৎসামান্য খুঁজে পাওয়া অস্তিত্বগুলিকে সংরক্ষিত রাখার জন্য চার দিকে থাকা ভগ্নপ্রায় প্রাচীরটিকে পুনরায় মেরামত করার প্রচেষ্টা চলছে দেখে ভালই লাগল। তবে বিস্তারিত জানার জন্য ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন, মাটির নীচে চাপা পড়ে থাকা ইতিহাসকে সামনে আনতে বৃহদাকারে এই এলাকায় খননকার্য চালান।
অস্তিত্বের সঙ্কটে থাকা একদা ‘রাজধানী’ শহরটি দেখতে দেখতে আমার বার বারই মনে পড়ছিল ইতিহাসের বইতে পড়া, হিউয়েন সাঙের সুস্পষ্ট বর্ণনাগুলি। এলাকাটি নিচু, স্যাঁতসেঁতে হওয়া সত্ত্বেও ছিল বেশ জনবহুল, বসবাসকারী মানুষজন ছিলেন বেশ ধনী! নিয়মিত চাষবাস হত, ফুল ও ফলের প্রাচুর্য ছিল এবং এখানকার আবহাওয়া ছিল নাতিশীতোষ্ণ। জনগণ উন্নত চরিত্রের অধিকারী ছিলেন এবং তাঁরা ছিলেন শিক্ষার পৃষ্ঠপোষক। হয়তো সেই জন্যই গড়ে উঠেছিল ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় ‘রক্তমৃত্তিকা মহাবিহার’, যেটি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকেও প্রাচীন বলে হিউয়েন সাঙের বর্ণনা থেকেই প্রমাণ মেলে। অথচ, এখন শুধুমাত্র অবহেলার কারণে কার্যত গোচারণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে এই সংরক্ষিত এলাকাটি। পরিশেষে বলা যায়, গৌতম বুদ্ধ, সম্রাট অশোকের মতো মানুষের পায়ের ছাপ যেখানে রয়েছে, সেখানে আজও উপযুক্ত পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠল না, এটা আমাদের কাছে দুর্ভাগ্যের বিষয়।
অঙ্কুর পান্ডে, কান্দি, মুর্শিদাবাদ
প্রণম্য বিজ্ঞানী
আমরা পেরিয়ে এলাম বিশ্ববিখ্যাত ভারতীয় নোবেলজয়ী জীববিজ্ঞানী প্রয়াত হরগোবিন্দ খুরানার জন্মশতবর্ষ। শারীরবিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞান বিভাগে ১৯৬৮ সালে ৪৬ বছর বয়সে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত জীববিজ্ঞানী পদ্মভূষণ অধ্যাপক হরগোবিন্দ খুরানা। ওই একই বছর ওই বিভাগে অধ্যাপক খুরানার সঙ্গে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন রবার্ট ডব্লিউ হোলি এবং মার্শাল ডব্লিউ নিরেনবার্গ। ১৯২২ সালের জানুয়ারি মাসে অবিভক্ত ভারতের পঞ্জাবে এক প্রত্যন্ত, স্বল্প-শিক্ষিত ও অসচ্ছল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। কঠিন অধ্যবসায় ও মেধার বলে অধ্যাপক খুরানা পৌঁছে গিয়েছিলেন নোবেলমঞ্চে। পুরস্কার ঘোষণা করার সময়ে ওই তিন জন নোবেলজয়ী বিজ্ঞানীর উদ্দেশে বলা হয়েছিল, “আপনারা আধুনিক জীববিজ্ঞানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অধ্যায়টি রচনা করেছেন।”
অধ্যাপক খুরানা ছিলেন মূলত জৈবরসায়ন বিশেষজ্ঞ, পরবর্তী সময়ে এক জন বিশিষ্ট আণবিক জীববিজ্ঞানী হয়ে উঠেছিলেন। তাঁকে বলা হয় রাসায়নিক জীববিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা। জীব শরীরের ডিএনএ-র আণবিক বিন্যাসে জীবের বৈশিষ্ট্য-নির্ধারক যে সব তথ্য অন্তর্নিহিত থাকে, যা প্রোটিন অণুর অ্যামিনো অ্যাসিড বিন্যাসে প্রেরিত হয় বা স্থানান্তরিত হয়, তা ৬৪টি তিন-অক্ষরের শব্দের মাধ্যমে ঘটে (আরএনএ ট্রিপলেট কোডন)। পলিপেপটাইড শৃঙ্খলে একের পর এক অ্যামিনো অ্যাসিড (মোট ২০) কিসের প্রভাবে, কেমন ভাবে সাজানো থাকবে, তার হদিস দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৬২ সাল থেকে আগামী কিছু বছর পর্যন্ত আমেরিকার উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন বিভাগে অধ্যাপনা ও গবেষণা করার সময়ে অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে উনি৬৪টি তিন অক্ষরের শব্দকে কৃত্রিম পদ্ধতিতে নিখুঁত ভাবে সংশ্লেষণ করতে পেরেছিলেন এবং সেইগুলির চরিত্র বিশ্লেষণ করে শেষ পর্যন্ত জেনেটিক কোডের রহস্য উন্মোচন করেছিলেন। এ ছিল এক যুগান্তকারী গবেষণা।
১৯৪৫ সালে লাহোর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হরগোবিন্দ খুরানা স্নাতকোত্তর পড়া শেষ করেন। পরীক্ষার ফল এবং গবেষণার উৎকর্ষের জন্য তাঁকে ইংল্যান্ডের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ে জৈবরসায়নে পিএইচ ডি করার জন্য ভারত সরকার থেকে বৃত্তি দেওয়া হয়। গ্রামের বটগাছের নীচে গ্রামীণ পাঠশালায় যাঁর পড়াশোনা শুরু, তিনি বিদেশ পাড়ি দিলেন। ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অধ্যাপকের কাছে খুরানা পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা (১৯৫০-৫২) করেছিলেন, সেই আলেকজ়ান্ডার টড ১৯৫৭ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। আবার অধ্যাপক খুরানার অধীনে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণাকারী বিজ্ঞানী মাইকেল স্মিথ ১৯৯৩ সালে নোবেল পুরস্কার পান। তবে ছাত্রজীবনে যথেষ্ট কষ্টও করেছিলেন তিনি। শোনা যায়, কেমব্রিজে আলেকজ়ান্ডার টড-এর অধীনে কাজ করার পূর্বে খুরানা যখন সুইৎজ়ারল্যান্ডে জ়ুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা শুরু করেন, তখন তাঁর কোনও বৃত্তি বা স্কলারশিপ ছিল না। গবেষণাগারেই সামান্য দুধ-ভাত খেয়ে দীর্ঘ ১১ মাস কাটিয়েছিলেন তিনি। নোবেলপ্রাপ্তির পর কিছু দিন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি-র জীববিজ্ঞান ও রসায়ন বিভাগে অধ্যাপনা করার সময় খুরানা গবেষণাগারে পর পর দু’টি জিন সম্পূর্ণ ভাবে কৃত্রিম (রাসায়নিক) পদ্ধতিতে সংশ্লেষণ করতে সফল হয়েছিলেন। এটিও ছিল বিংশ শতাব্দীর জীববিজ্ঞানের এক অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য গবেষণা। এই ভাবে জেনেটিক এঞ্জিনিয়ারিং-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন তিনি।
পরিশ্রমী ও আড়ম্বরহীন এই বিজ্ঞানসাধক গবেষণাগারে এক টানা অনেকটা সময় অতিবাহিত করতেন। তাঁর অধীনে গবেষণাগারে ২৭টি দেশের গবেষকরা গবেষণার কাজে নিযুক্ত ছিলেন। ২০০৭ সালে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে অবসর গ্রহণের পরেও তরুণ গবেষকদের গবেষণা প্রকল্প ও অগ্রগতি সম্বন্ধে তিনি খোঁজখবর নিতেন, তাঁদেরকে উৎসাহ দিতেন। ৯ নভেম্বর, ২০১১ সালে আমেরিকার বস্টন শহরে অধ্যাপক হরগোবিন্দ খুরানা মারা যান। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে চিরদিন তিনি অমর হয়ে থাকবেন।
সুব্রত ঘোষ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
মেয়েদের কামরা
২০০৯ সাল থেকে এ রাজ্যে মেয়েদের জন্য নির্দিষ্ট ট্রেন চলছে। মুম্বই ও দিল্লিতে চলছে ১৯৯২ সাল থেকে। দক্ষিণের দিকে আবার কিছু লেডিজ় স্পেশালে যাত্রীরা তো বটেই, ট্রেনের ড্রাইভার থেকে গার্ড, চেকার, সবাই মহিলা। আমাদের রাজ্যে শিয়ালদহ-কৃষ্ণনগর মাতৃভূমি লেডিজ় স্পেশাল এখন মেয়েদের লাইফ-লাইন। এই লোকালে মেয়েরা অনেক স্বচ্ছন্দ, কোনও যৌন হয়রানির ভয় নেই।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আমরা যারা কৃষ্ণনগরের ওপারে থাকি, তাদের পক্ষে এর পরের যাতায়াতটা দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে। এই অঞ্চলে ট্রেন যত বেড়েছে, তার অনেক গুণ যাত্রী বেড়েছে। যাত্রী-বৃদ্ধির অন্যতম কারণ, ট্রেনের ভাড়া বাসের ভাড়া থেকে অনেক কম। লোকাল ট্রেনে সামনে ও পিছনে দুটো মেয়েদের কামরা থাকে, আর লালগোলা প্যাসেঞ্জারে একটা ছোট্ট মেয়েদের কামরা থাকে। তাই সেখানেও জায়গা পাওয়া দুষ্কর। আর এক্সপ্রেস ট্রেনে তিন-চার মাস আগে থেকেই সিট রিজ়ার্ভ হয়ে যায়। তাই জরুরি কোনও কারণে যেতে হলে প্যাসেঞ্জার ট্রেনই ভরসা। মাতৃভূমি লেডিজ় স্পেশাল যদি কৃষ্ণনগরের পরে বহরমপুর পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া যেত, আমাদের মতো যাত্রীদের উপকার হত।
মঞ্জু নাথ (মুখোপাধ্যায়, মুড়াগাছা, নদিয়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy