সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরিহারা শিক্ষকেরা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজ্য সরকার পোষিত এবং সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে পড়াতে পারবেন। তাঁদের মতো শিক্ষাকর্মীরাও যাতে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজ করতে পারেন, সেই নিয়ে এ বার আইনি রক্ষাকবচ নেবে রাজ্য সরকার। গ্রুপ ডি এবং গ্রুপ সি শিক্ষাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে সেই আশ্বাসই দিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। শিক্ষাকর্মীরা যদিও জানিয়ে দিলেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তাঁরা। শিক্ষামন্ত্রী জানালেন, ২১ তারিখের মধ্যেই ‘যোগ্য-অযোগ্য’-দের তালিকা প্রকাশ করা হবে।
শুক্রবার দুপুরে গ্রুপ ডি এবং গ্রুপ সি শিক্ষাকর্মীরা পার্কসার্কাস ময়দানে জড়ো হয়ে মিছিল করে তৃণমূল ভবনের উদ্দেশে রওনা দেন। বাইপাসের সামনেই তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। তার পরে সেখান থেকে সাত জন প্রতিনিধির একটি দল তৃণমূল ভবনে গিয়ে ব্রাত্যের সঙ্গে বৈঠকে বসে। সেই দলে ছিলেন শিক্ষাকর্মী সুজয় সর্দার। তিনি বলেন, ‘‘স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ শিক্ষকদের বাঁচাতে শিক্ষাকর্মীদের বলি দিতে চাইছেন। সরকার আমাদের হয়ে একই পথে লড়াই না-করলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটব।’’
তৃণমূল ভবনে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ব্রাত্যের সঙ্গে শিক্ষাকর্মীদের বৈঠক চলে। তার পরেই শিক্ষাকর্মীদের তরফে ব্রাত্যের আশ্বাসের কথা জানানো হয়। শিক্ষাকর্মী সুজয় বলেন, ‘‘আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, শিক্ষকদের কাজ করার জন্য যেমন ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা নেওয়া হয়েছে, তেমন আমাদের ক্ষেত্রেও নেওয়া হবে। দু’-এক দিন পর থেকে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে বলে আমাদের জানানো হয়েছে। আমাদের নিয়ে আবেদন জানানো হবে বলেই জানানো হয়েছে। যত ক্ষণ না পর্যন্ত দাবি পূরণ হচ্ছে আমাদের আন্দোলন চলবে।’’
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বৈঠক শেষে বলেন, ‘‘আমরা তো আগেই জানিয়েছি যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা ২১ তারিখের মধ্যেই প্রকাশ করব। সেটাই আমরা অনুসরণ করছি। শিক্ষাকর্মীরা আমার কাছে এসেছিলেন। আইনি সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এর বাইরে বেশি কিছু বলার নেই। বললে আদালত অবমাননা হবে।’’
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে রাজ্য সরকার পোষিত এবং ভারপ্রাপ্ত স্কুলের ২৬ হাজার (২৫,৭৩৫) জন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হয়। তাঁরা সকলেই ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিলেন। রাজ্য সরকার সেই রায়ের মডিফিকেশন চেয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়। তারা আবেদনে জানায়, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শিক্ষকদের কাজ করতে দেওয়া হোক। নয়তো রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলিতে পড়ুয়ারা বিপাকে পড়বে। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আর্জিতে সাড়া দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বৃহস্পতিবার জানিয়, যাঁরা ‘চিহ্নিত অযোগ্য’ (দাগি) নন, তেমন শিক্ষক-শিক্ষিকারা আপাতত স্কুলে যেতে পারবেন। তবে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে রাজ্য সরকারকে পরীক্ষা নিয়ে নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। শুধু শিক্ষকদের ক্ষেত্রেই এই নির্দেশ কার্যকর হবে। শিক্ষাকর্মীদের চাকরি বাতিলই থাকছে বলে জানায় আদালত। সেই রায়ের পরের দিন ব্রাত্যের সঙ্গে বৈঠক করলেন শিক্ষাকর্মীরা। সেখানে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিলেন শিক্ষামন্ত্রী।
- ২০১৬ সালের এসএসসিতে নিয়োগের পুরো প্যানেল বাতিল করল সুপ্রিম কোর্ট। বলল, পুরো প্রক্রিয়ায় কারচুপি করা হয়েছে। ওই নিয়োগপ্রক্রিয়ার কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই।
- এসএসসি-র শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। কলকাতা হাই কোর্ট এই সংক্রান্ত শুনানির পর ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ নিয়োগপ্রক্রিয়াই বাতিল করে দিয়েছিল।
- রাজ্যের ২৬ হাজার চাকরি (আদতে ২৫,৭৫২) বাতিল করে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ জানিয়েছে, তিন মাসের মধ্যে নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।
-
নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে ‘দাগিদের’ বাদ দেওয়ার রায়কে চ্যালেঞ্জ, ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্য এবং এসএসসি
-
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে সংশোধন এসএসসির, জেনারেলের মতোই আবেদন করতে হবে ওবিসিদের
-
আদালত অবমাননার আশঙ্কা, তাই নির্দেশ মতো পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি আইনি লড়াই চলবে, বললেন মমতা
-
উত্তরপত্রে কারচুপি থাকলে পরীক্ষায় বসতে পারবেন না, ‘অযোগ্য’দের আর্জি খারিজ করে জানাল সুপ্রিম কোর্ট
-
থানায় হাজিরা দিতেই হবে দুই চাকরিহারা শিক্ষককে! বিকাশ ভবনের সামনে লোকসংখ্যাও কমাতে হবে, বলল হাই কোর্ট