‘সুরের সাধনা’ (কলকাতার কড়চা, ২৫-১) ও ‘গাঁধীজি তাঁকে উপাধি দিয়েছিলেন বাংলার বুলবুল’ (রবিবাসরীয়, ২৪-১) আমাদের মনে করিয়ে দিল বাংলার সঙ্গীতজগতের এক নক্ষত্র উমা বসুর নাম। তাঁর অনন্যসাধারণ কণ্ঠে ‘আকাশের চাঁদ মাটির ফুলেতে’, ‘রূপে গন্ধে বর্ণে’, ‘ও আমার মন ভোলানো’, ‘মধু মুরলী বাজে’, ‘মন তুমি কৃষি কাজ জানো না’ গানগুলো অনন্য সম্পদ।
মনে আছে, তখন দু’-একটি বাড়িতে গ্রামোফোন বাজত। সেখানে ওঁর রেকর্ড চালানো হত। মোমের রেকর্ড, আটাত্তর-এ পিন লাগিয়ে বাজানো হত। যত ক্ষণ বাজত তাঁর গান, সঙ্গীতের মূর্ছনায় আচ্ছন্ন করে রাখত শ্রোতাদের। বন্ধু হরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের অনুরোধে দিলীপকুমার রায় যে দিন প্রথম ১৫ বছরের কিশোরী উমার গান শোনেন, সেই উপলব্ধির কথা তাঁর কথাতেই স্পষ্ট, “সে তো কণ্ঠ নয়, আলো। সুর ধরতে না ধরতেই চমকে গেলাম। মনে হ’ল যে সে হীরেই নয়, একেবারে কোহিনুর— অন্য পাঁচটার সঙ্গে যাকে এক আসনে বসানো যায় না— খাপ খাওয়ানো অসম্ভব।”
আবার শেখাতে বসে চমকে উঠে তাঁর মনে হয়, “শিষ্যার কাছে গুরু নিজেও দীক্ষা পান— আত্ম-আবিষ্কারের দীক্ষা।” বাংলার সঙ্গীতের ইতিহাসে এমন গুরু-শিষ্যার মণিকাঞ্চন যোগ বিরল বললে অত্যুক্তি হবে না। উমার পিতৃদেব ধরণীকুমার বসু মেয়ের প্রতিভা অতি শৈশবে চিনতে পেরে মেয়েকে স্কুলে পাঠাননি, বিয়েও দিয়ে দেননি। মেয়ের গানের প্রশিক্ষণের জন্যে সুব্যবস্থা করেছিলেন। উমা তাই তালিম পেয়েছিলেন সেই সময়ের শ্রেষ্ঠ তিন সঙ্গীতগুরুর কাছে— হরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, দিলীপকুমার রায় ও পণ্ডিত ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়। বাংলার পঞ্চকবি তো বটেই, তখনকার শ্রেষ্ঠ গীতিকার, সুরকারদের গানও তিনি গেয়েছিলেন। গেয়েছিলেন উর্দু গজলও। দিলীপকুমারের সঙ্গে সপরিবার কাশ্মীর ভ্রমণের সময় উমা লাহৌরে ধর্মবীর দম্পতির অনুরোধে ‘পাবলিক শো’ করে যক্ষ্মা হাসপাতালের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন। গাঁধীজির ‘নাইটিঙ্গেল অব বেঙ্গল’-এর গানের খ্যাতি ছড়াতে দেরি হয়নি। বছর পনেরো আগে ‘সারেগামা’ তাঁর ২১টি গানের সিডি প্রকাশ করেছিল। কিন্তু বাকি রেকর্ড কোথায়? শতবর্ষে লিপিবদ্ধ হোক তাঁর জীবন ও কীর্তি।
অভিষেক রায়, কলকাতা-৯২
বুলবুল
প্রয়াত গায়িকা উমা বসুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে রবিবাসরীয়তে ‘গাঁধীজি তাঁকে উপাধি দিয়েছিলেন বাংলার বুলবুল’ নিবন্ধটি পড়ে আমার প্রয়াত মায়ের কথা মনে পড়ে গেল। উমা বসু মায়ের প্রিয় দুই গায়িকার এক জন (অন্য জন শৈল দেবী) হওয়াতে ছোটবেলা থেকে বাড়িতে রেকর্ডে উমা বসুর গান শুনেছি এবং মুগ্ধ হয়েছি। বিশেষত, হিমাংশু দত্তের সুরারোপিত ‘চাঁদ কহে চামেলি গো’ গানটির রেশ এখনও আমার কানে লেগে রয়েছে। পরবর্তী কালে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়
এই গানটি রেকর্ড করলেও সেই সাফল্য আসেনি।
শুধু যে গাঁধীজিকেই উমা বসু গান শুনিয়েছিলেন, তা নয়। তিনি সুভাষচন্দ্র বসুকেও গান শুনিয়েছিলেন। ব্যারাকপুরের কাছে এক বাগানবাড়িতে অনুষ্ঠিত সেই আসরে দিলীপকুমার রায়ের তত্ত্বাবধানে গান গেয়েছিলেন উমা বসু। তবলায় সঙ্গত করেছিলেন জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ। ওই আসরের আরও আকর্ষণ ছিল অমলা নন্দীর (অমলাশঙ্কর) নাচ!
রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন, উমা শান্তিনিকেতনে গিয়ে গানের সঙ্গে নাচও শিখুক। বলেছিলেন, ওর (উমার) শরীরটাই নাচের। কিন্তু দিলীপকুমার রায় কবির সেই প্রস্তাবে রাজি হননি। এতে কবিগুরু একটু অসন্তুষ্টই হয়েছিলেন।
সোমনাথ রায়, কলকাতা-১৫
সূচনা কবে?
‘হঠাৎ আলোর ঝলকানি লেগে’ (পুস্তক পরিচয়, ১৬-১) পড়লাম। আলোচক অরবিন্দ সামন্ত লিখেছেন, “এই আলোচনার সূচনাবিন্দু ১৮৮০ সাল, কেন না ওই বছরই দুর্ভিক্ষ কমিশন প্রথম বার স্পষ্ট ভাষায় কবুল করে যে, দেশের বৈষয়িক উন্নতির অভাব আর শিল্পায়নের অনটনের জন্য
দায়ী হল কারিগরি বিদ্যা আর প্রযুক্তির অপ্রতুলতা।”
১৮৮০ সালের অনেক আগে থেকে বাংলায় উদাহরণ আছে কারিগরি বিদ্যার। দাঁতনে মোগলমারির স্থাপত্য বৌদ্ধ যুগের। বহু মন্দির, মঞ্চ, দেউল, গড়, চালা আছে, যেগুলির নির্মাণে সুপ্রাচীন গুপ্তযুগ ও সেনযুগের ভাবনা থাকা স্বাভাবিক। সুলতানি আমলে বাংলায় বহু মসজিদ তৈরি হয়েছে, যার চিহ্ন আছে মুর্শিদাবাদ, মালদহ, হুগলি, বর্ধমান প্রভৃতি জেলায়। এর সঙ্গে ঘড়ির ঘণ্টা, কামানে ধাতুবিদ্যার প্রয়োগ দেখা যায়। এ সব ঘটেছে ১৮৮০ সালের আগে। আসলে ছিল পুঁজি ও ইচ্ছার অভাব। হাজি মহম্মদ মহসিনের মতো মানুষ বিরল।
হুগলি জেলায় পশ্চিম এশিয়ার আরবি, তুর্কি, ইরানি, আফগানিস্তানি, পর্তুগিজ, ওলন্দাজ, ইংরেজ, দিনেমার, ফরাসি ছাড়াও আর্মেনিয়ান, অস্ট্রিয়ান, বেলজিয়ান, প্রাশিয়ান, গ্রিক, সুইডিশ ইত্যাদি বণিক এসেছেন। তাঁদের সঙ্গে এসেছে বিদেশি কারিগরিবিদ্যা ও প্রযুক্তি। পর্তুগিজ, ওলন্দাজ, ফরাসি স্থাপত্যে চার্চ, বাসস্থান, শিক্ষালয়ের কিছু নিদর্শন আছে, যার বয়স উল্লিখিত ১৮৮০ সালের আগে। কিন্তু নিজেদের মধ্যে যুদ্ধবিগ্রহের ফলে অনেক নিদর্শন নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এই কারিগরি বিদ্যা ও প্রযুক্তিজ্ঞানের প্রয়োগ ঘটিয়েছেন স্থানীয় মিস্ত্রি, কারিগর, শিল্পীরা। সুতরাং অপ্রতুলতা ও অভাব ছিল না।
আসল অভাব ছিল পুঁজি বিনিয়োগের, যা থেকে সংগঠিত ভাবে চর্চা হতে পারত। ভারতের হিন্দু শাসন ও সংস্কৃতি, পশ্চিম এশিয়া থেকে আগত মুসলিম শাসন ও ইসলামি সংস্কৃতি এই কারিগরি ও প্রযুক্তিবিদ্যার সামাজিকীকরণে মন দেয়নি। এই সংগঠিত রূপ পাওয়া গেল পরে, যা অরবিন্দবাবু উল্লেখ করেছেন— “১৮৮০ সালের পর থেকেই, লেখকের মতে, এ দেশে ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার নানা শাখা— মেকানিকাল, ইলেকট্রিকাল, মাইনিং ইত্যাদি— খুলে যায়।” আসলে, তত দিনে ইংরেজরা জাঁকিয়ে বসে পুঁজি বিনিয়োগের নিরাপত্তা ও মুনাফাপ্রাপ্তির ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হয়েছে। ফলে ইউরোপের শিল্পবিপ্লব, শিক্ষা, রেনেসাঁস, নগরায়ণ ইত্যাদির ফল এ দেশের শিক্ষিত মানুষের কাছে পৌঁছে গেল।
বাংলায় আলোর ঝলকানি ‘হঠাৎ’, এ কথা মানতে তাই অসুবিধা হয়।
শুভ্রাংশু কুমার রায়, চন্দননগর, হুগলি
অন্য রাবণ
ঋজু বসুর ‘দাঁড়াও পথিকবর, জন্ম যদি তব বঙ্গে...’ (২৬-১) প্রসঙ্গে জানাই, আমার বহু দক্ষিণী বন্ধু মনে করেন, রাবণকে আর্যাবর্তে ঠিক ভাবে উপস্থাপিত করা হয়নি। দক্ষিণে বহু কবি যেমন কম্বান, পেরিয়ার রাবণকে এক জন পণ্ডিত ব্রাহ্মণ, সঙ্গীতজ্ঞ এবং পরাক্রমী বীর হিসেবেই বর্ণনা করেছেন। দেবদত্ত পট্টনায়েক আবার বলেছেন যে, রাবণের মতো এক জন ব্রাহ্মণ পণ্ডিতকে হত্যা করে যথেষ্ট পরিতাপ করেছিলেন রাম। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অনেক রামায়ণেই রাবণ মহান রূপে আখ্যায়িত হয়েছেন। মাইকেল মধুসূদন দত্তকেও রাবণের সে সব গুণ আকৃষ্ট করেছিল হয়তো।
সৌগত বাগচি, কলকাতা-১৫৭
বাজেট
এই বাজেটে বরিষ্ঠ নাগরিকদের বেড়ানোর জন্য ১ লক্ষ টাকা অবধি আয়করে ছাড় দেওয়া হোক। তাতে পর্যটন শিল্প এবং তার সঙ্গে সংলগ্ন নানা পেশায় আয় বৃদ্ধি হবে। কারণ, বয়স্কদের হাতে বেড়ানোর জন্য অর্থ আর সময় দুটোই যথেষ্ট। করোনা-পরবর্তী কালে এই সুযোগ পেলে তাঁরা বেড়ানোর আশা চরিতার্থ করতে পারবেন।
সুজিত কুমার মিত্র, কলকাতা-১৩৭
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy