পুরোটাই চমক, জনগণকে বোকা ভেবে মুগ্ধ করার অপচেষ্টা। ফাইল চিত্র।
‘ভোটে নজর রেখেই কি কম গতির বন্দে ভারত’ (২৪-১২) শীর্ষক সংবাদটি সম্পূর্ণ সত্য। পুরোটাই চমক, জনগণকে বোকা ভেবে মুগ্ধ করার অপচেষ্টা। রেলগাড়ির গতিই যদি না বাড়ল, তা হলে জনগণের অর্থের বিপুল অপচয়ে (প্রথম রেকটি তৈরি করতে খরচ পড়েছিল ৯৭ কোটি টাকা) বন্দে ভারত ট্রেনসেট তৈরি করে জনগণের কী লাভ হল? হাওড়া-নিউ জলপাইগুড়ি শতাব্দী এক্সপ্রেসের মতো ওয়াপ-৫ ইঞ্জিন ও এলএইচবি রেক দিয়ে আর একটি ট্রেন চালিয়ে দিলেই তো হত!
বন্দে ভারত ট্রেনসেট নিয়ে হইচই পুরোটাই মিডিয়াকেন্দ্রিক, এবং তৈরির প্রথম ধাপ থেকেই এ নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। কিছু ঘটনায় দেখা গিয়েছে, রেলগাড়িটি গরুর সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারণ, নকশা প্রস্তুতকালে তথাকথিত বিশেষজ্ঞরা ঔপনিবেশিক আমল থেকে ভারতীয় রেলে চালু থাকা ‘কাউ ক্যাচার’ জিনিসটিকে বিসর্জন দিয়েছিলেন। বাস্তববোধ বিবর্জিত পরিকল্পনার এ এক প্রকট উদাহরণ।
জনগণের অর্থের বিপুল অপচয়ে নির্মিত এই রেলগাড়ি থেকে জনগণ কী পেল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সময় এসেছে। কেন এই নির্মাণ, কে এতে লাভবান হল? ১৯৮৩ সালে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ছাড়ত সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে, হাওড়া পৌঁছত সন্ধ্যা ৭টা ৫০-এ। তখন ছিল অবৈদ্যুতিক সিঙ্গল লাইন, সিগন্যালিং ব্যবস্থা ছিল সাবেক সিমাফোর। গত দশকগুলিতে রেলের পরিকাঠামো উন্নত করতে খরচ হয়েছে বিস্তর, কিন্তু সেই খরচের বিনিময়ে কতটুকু উপকার সাধিত হয়েছে? প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে, রেলগাড়িটি নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছে বিপরীতমুখী যাত্রা শুরু করতে সময় নেবে এক ঘণ্টা। ট্রেনসেট তো দু’দিকেই সমগতিশীল, তার তো ইঞ্জিন কাটা জোড়ার ঝামেলা নেই। তা হলে এত সময় লাগবে কেন?
ভারতীয় রেলের মতো জনগণের অর্থে চালিত সংস্থার লক্ষ্য হওয়া উচিত ‘বহুজনহিতায় বহুজনসুখায়’; তা না করে ভারতীয় রেল গরিবের প্যাসেঞ্জার রেলগাড়িগুলিকে বন্ধ করে দিচ্ছে। কোথায় হারিয়ে গেল হাওড়া নিউ জলপাইগুড়ি প্যাসেঞ্জার, হাওড়া মোগলসরাই প্যাসেঞ্জার, হাওড়া দানাপুর প্যাসেঞ্জার ভায়া সাহেবগঞ্জ লুপ, শিয়ালদহ গয়া প্যাসেঞ্জার ভায়া সাহেবগঞ্জ লুপ। এগুলি হয় লুপ্ত হচ্ছে, নয়তো এক্সপ্রেস বানিয়ে ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। যেমন, ময়ূরাক্ষী এক্সপ্রেস। নির্বাচনের সময় মানুষ কি এইগুলি ভুলে গিয়ে শুধু চমকেই মুগ্ধ হবেন?
তপন পাল, কলকাতা-১৪০
কুড়ি মিনিট
কেন্দ্রীয় সরকার ও রেল মন্ত্রক বছর দুই আগে ঘোষণা করেছিল যে, দেশের প্রায় সব রাজ্যের বিভিন্ন রেল রুটে উচ্চ গতিসম্পন্ন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চালানো হবে, যার সর্বোচ্চ গতি হবে ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার। আমদাবাদ, মুম্বই রুটে পরীক্ষামূলক ভাবে প্রথম বন্দে ভারত চালানো হয়, যা সাফল্য লাভ করে। দেশবাসী কিছুটা আনন্দিত ও আশান্বিত হন।
কিন্তু ঘোষণাই সার, অত উচ্চ গতির বন্দে ভারত সর্বত্র এখনও শুরু করা যায়নি। বিজেপি-শাসিত কয়েকটি রাজ্য, যেমন— কর্নাটক ও গুজরাত ইত্যাদিতে মন্থর গতির বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চালানো হয়, যার গতি প্রত্যাশার তুলনায় যথেষ্ট কম। এর মধ্যে মন্থরতম এক্সপ্রেসটি চলে বেঙ্গালুরু-মাইসুরু রুটে। আসলে, রেল লাইন তথা রেল রুটের প্রয়োজনীয় সংস্কার না করে এবং নতুন শক্তপোক্ত ট্র্যাক না বানিয়ে সাত তাড়াতাড়ি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চালু করার ঘোষণার মধ্যে ভোটের রাজনীতি ছাড়া আর কিছুই নেই।
সম্প্রতি হাওড়া ও নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের মধ্যে যে নতুন বন্দে ভারত ট্রেনটি চলাচল শুরু করল, বিতর্ক আছে তা নিয়েও। কথা ছিল এই ট্রেন চালু হলে হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে পুরী বা নিউ জলপাইগুড়ি যাওয়ার সময় অনেক কমে যাবে, ৭ থেকে ৮ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছনো যাবে। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। এখন ২০২৪-এর নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে হাওড়া ও নিউ জলপাইগুড়ির রুটে মন্থর গতির বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চালানো হচ্ছে গড়ে ঘণ্টায় ৭০ থেকে ৭২ কিলোমিটার গতিতে, যা প্রায় শতাব্দী-র গতিবেগের সমান। এই রুটে বর্তমানে শতাব্দীর সময় লাগে ৮ ঘণ্টা ২০ মিনিট, আর বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের সময় লাগার কথা ৮ ঘণ্টা। অর্থাৎ, সময় কমবে মাত্র ২০ মিনিট, যা হাস্যকর ও অর্থহীন।
শোনা যাচ্ছে, রেল লাইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার না হওয়ার জন্য সারা রেলপথের কোথাও ৯০ থেকে ১০০ কিমি প্রতি ঘণ্টায় গতিতে চলতে পারবে না ট্রেনটি। হাওড়া ও শিয়ালদহের ব্যস্ত রুটে যেখানে অজস্র লোকাল ও প্যাসেঞ্জার তথা মেল গাড়ি চলে, সেখানে বন্দে ভারত বা অন্য কোনও উচ্চ গতিসম্পন্ন গাড়ি চালাতে হলে অনেক লোকাল ট্রেন বাতিল করতে হবে, বা তাদের বিভিন্ন স্টেশনে দাঁড় করিয়ে রাখতে হবে। এতে নিত্যযাত্রীদের ক্ষোভে রেল কর্তৃপক্ষ জেরবার হবে। সুতরাং, আলাদা লাইন বা ট্র্যাক করা ছাড়া গতি নেই।
অথচ, রেল মন্ত্রকের অত টাকা নেই। বিরোধী-শাসিত রাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকার এত টাকা ঢেলে কোনও প্রকল্প করবে, এমন ভরসা করাও সহজ নয়। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যে, প্রস্তাবিত মন্থর গতির বন্দে ভারত এক্সপ্রেস কেন্দ্রীয় সরকারের একটা ফাঁকা প্রতিশ্রুতি হয়েই থেকে যাবে। কার্যক্ষেত্রে তার রূপায়ণ করা যথেষ্ট কঠিন। তাই প্রধানমন্ত্রী ও রেল মন্ত্রককে অনুরোধ, নতুন ও উচ্চ গতিসম্পন্ন ট্রেন চালু করার কথা ঘোষণা না করে বর্তমানের রেলপথগুলির প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হোক, তথা নতুন রেল লাইন বা ট্র্যাক বানানো হোক। তা হলে দুরন্ত, শতাব্দী ও রাজধানী এক্সপ্রেসের মতো ট্রেনগুলির গতি এমনিতেই বাড়বে এবং যাত্রাপথের সময় অনেকটা কমবে। তাতে যাত্রীদের সুবিধা হবে। নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে কাজ না করে দেশবাসীর প্রকৃত উন্নতি সাধন ও উপকারের জন্য কাজ করুন নেতা ও মন্ত্রীরা।
পঙ্কজ সেনগুপ্ত, কোন্নগর, হুগলি
সংরক্ষণই সার
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর শাখায় লোকাল ট্রেনগুলির প্রায় প্রত্যেক সাধারণ কামরাতেই ষাটোর্ধ্ব প্রবীণ নাগরিকদের জন্য কমপক্ষে সাতটি আসন সংরক্ষিত থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে, বিশেষত দিনের ব্যস্ত সময়গুলিতে সেই সব আসন কার্যত জোরপূর্বক দখল করে বসছেন ষাট-অনূর্ধ্ব কিছু অসচেতন যাত্রী। সিট ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করলে, অধিকাংশই তাতে কর্ণপাত না করে এড়িয়ে যান। অনেকে প্রবীণদের প্রতিবন্ধী কামরায় ওঠার পরামর্শও দিয়ে থাকেন। রেল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন, প্রবীণ নাগরিকদের এই সমস্যা মেটাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হোক।
দীনদয়াল বসু, নারিকেলবাড়, হাওড়া
ইনহেলার
সংবাদে জানলাম, দাম কমবে জ্বর, ক্যানসার, ডায়াবিটিস, হেপাটাইটিস-সহ বেশ কিছু রোগের ওষুধের (‘আগামী মাসেই দাম কমছে ১২৯ ওষুধের’, ২৩-১২)। তবে এর মধ্যে শ্বাসকষ্টজনিত কারণে ব্যবহৃত ‘ইনহেলার স্প্রে’ আছে কি না, বোঝা যাচ্ছে না। অথচ, এই ‘ইনহেলার’ অনেকের কাছে একটা জীবনদায়ী ওষুধ। বছর দুয়েক আগেও যে ইনহেলার-এর দাম ছিল ৪৫০ টাকার কাছাকাছি, এখন হয়েছে ৫৪৫ টাকা। গোটা দেশেই বায়ুদূষণ-সহ নানা কারণে শ্বাসকষ্টজনিত অসুখ বাড়ছে সব বয়সের মানুষের মধ্যে। ইনহেলার-এর মূল্য এমন বাড়লে সাধারণ মানুষ কিনবেন কী করে?
মুকুল বাগচী, ডানকুনি, হুগলি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy