—ফাইল চিত্র।
“কালাজ্বরের ওষুধের আবিষ্কর্তা হয়েও উপেন্দ্রনাথ কেন ‘বিস্মৃত’, উঠছে প্রশ্ন” (২০-১২) শীর্ষক সংবাদ সূত্রে এই পত্র। চিকিৎসক উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর ১৫০তম জন্মজয়ন্তীতে এনআরএস হাসপাতালের অলিন্দে উপেন্দ্রনাথের আবক্ষ মূর্তি প্রতিষ্ঠা করার সময় এই প্রশ্ন উঠে এসেছে। নতুন প্রজন্মের কাছে ইউ এন এক জন প্রায় অপরিচিত চিকিৎসক, কালাজ্বরের মহৌষধ আবিষ্কর্তা হিসাবে পাঠ্যসূচিতে সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্নে হয়তো কেউ কেউ তাঁর নাম শুনেছেন। পরাধীন দেশে পরিকাঠামোর প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ‘ইউরিয়া স্টিবামাইন’ নামক যৌগ আবিষ্কারের মাধ্যমে ভয়ঙ্কর কালাজ্বরকে পরাস্ত করে লক্ষ লক্ষ রোগীর প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন উপেন্দ্রনাথ। পঁচিশ বছর বয়সে এই মেধাবী ছাত্র এমবি পরীক্ষায় পাশ ও সার্জারিতে প্রথম হয়েছিলেন। সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার জন্য তাঁকে ‘গুডইভ’ ও ‘ম্যাকলাউড’ পদক দেওয়া হয়েছিল। হিমোলাইসিস-এর উপর গবেষণা করে উপেন্দ্রনাথ পিএইচ ডি লাভ করেন। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল সার্ভিসভুক্ত না হয়েও তিনিই ছিলেন প্রথম ভারতীয়, যাঁকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অতিরিক্ত চিকিৎসক পদে নিয়োগ করা হয়েছিল।
সে সময় দমদম সেনানিবাসে কয়েক জন ইংরেজ সৈন্য অজানা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। ওই অজানা জ্বর লোকমুখে ‘দমদম জ্বর’ নামে প্রসিদ্ধ হয়। মেডিক্যাল কলেজের অণুজীব বিশেষজ্ঞ এই জ্বরের (কালাজ্বর) প্রকৃত কারণটি যে মাছিবাহিত, তা চিহ্নিত করেন। সেই তথ্যে ভর করে ক্যাম্বেল, অধুনা এনআরএস হাসপাতালে শুরু হয় উপেন্দ্রনাথের নিরলস গবেষণা। ‘ইউরিয়া স্টিবামাইন’ নামক ওষুধ কালাজ্বর আক্রান্ত রোগীর উপর প্রয়োগ করে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন আশাতীত সাফল্য অর্জন করেছিলেন তিনি। ১৯২২ সালের অক্টোবর মাসে তাঁর গবেষণালব্ধ ফলাফল প্রকাশিত হয়। চিনে কালাজ্বর নির্মূল করতে উপেন্দ্রনাথ আবিষ্কৃত ওষুধ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। ‘ইউরিয়া স্টিবামাইন’ বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহারের পর কালাজ্বরের মৃত্যুহার ৯০ শতাংশ থেকে কমে ১-২ শতাংশে এসে দাঁড়ায়।
চিকিৎসা, গবেষণার পাশাপাশি উপেন্দ্রনাথ ‘রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল’, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় আয়ুর্বেদ বিজ্ঞান পরিষদ ইত্যাদি সংগঠনের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন। যাদবপুর যক্ষ্মা হাসপাতাল, সেন্ট্রাল গ্লাস অ্যান্ড সেরামিক ইনস্টিটিউট প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে বহু অর্থ দান করেছিলেন। ১৯৩৫ সালে তাঁকে ‘নাইটহুড’ উপাধি দেওয়া হয়। ১৯৩৯ সালে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন-এ এ দেশে প্রথম ব্লাড ব্যাঙ্ক স্থাপনের কৃতিত্ব তাঁরই ঝুলিতে। ১৯২৯ ও ১৯৪২ সালে এ দেশ থেকে নোবেল পুরস্কারের জন্য তাঁর নাম সুপারিশ করা হয়েছিল। পরাধীন দেশে না জন্মালে হয়তো তিনি নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হতেন।
এই বহুমুখী প্রতিভাধর চিকিৎসা বিজ্ঞানীর স্মরণে স্বাধীন দেশে সে রকম উদ্যোগ করা হয়েছে কি? হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় মন্তব্য করেছিলেন, ‘বাঙালি আত্মবিস্মৃত জাতি’। উপেন্দ্রনাথ-সহ সে কালের সকল মনীষীর জন্য বোধ হয় এই বাক্যটি সমান ভাবে প্রযোজ্য। (তথ্য ঋণ: প্রথম ১০০ বাঙালি)
সরিৎশেখর দাস, কলকাতা-১২২
গল্প-আড্ডা
সায়ন্তনী ভট্টাচার্যের লেখা “বিজ্ঞান ও উত্তরসূরি, গল্পআড্ডায় ‘রত্ন-জাত’রা” (২৮-১২) শীর্ষক প্রতিবেদন পড়ে বোঝা গেল, নিছক ‘গল্পআড্ডা’ নয়। এ তো মৌখিক ইতিহাস, যা অত্যন্ত সহজ কিন্তু সমৃদ্ধ। এঁদের ঐতিহ্য এই প্রজন্মের আগামী কালের চলার পথের রসদ জোগাবে। মনে পড়ে গেল মৌখিক ইতিহাসে সমৃদ্ধ সম্প্রতি আরও দু’টি আলোচনা, যা প্রতিবেদকের ভাষায় ‘গল্পআড্ডা’।
১৭ ডিসেম্বর, ২০২৩-এ চন্দননগরে কানাইলাল বিদ্যামন্দির (ইংরেজি বিভাগ)-এ বিপ্লবী শহিদ কানাইলাল দত্তের জীবনীমূলক গ্রন্থ স্মৃতির আলিঙ্গনে কানাইলাল প্রকাশ উপলক্ষে বক্তব্য রাখলেন এই গ্রন্থের লেখিকা, বিপ্লবী কানাইলাল দত্তের ভ্রাতুষ্পৌত্রী শর্বরী দত্ত বসু। উপস্থিত আগত অতিথি বিপ্লবী পরিবারের সদস্য সুব্রত চাকী (বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকীর পৌত্র), বিশ্বরঞ্জন দাস (বিপ্লবী পুলিনবিহারী দাসের পৌত্র), কৌশিক দত্ত (বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের ভ্রাতুষ্পৌত্র), ইন্দ্রাণী বসু (বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর পৌত্রী),ইন্দুজ্যোতি মুখোপাধ্যায় (বিপ্লবী বাঘা যতীনের পৌত্র), তরুণ বিশ্বাস (বিপ্লবী বসন্ত বিশ্বাসের পৌত্র), প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় (বিপ্লবী উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভ্রাতুষ্পৌত্র) প্রমুখ বক্তব্যরাখলেন। এঁদের মৌখিক ইতিহাসে উঠে এল বিপ্লবীদের বিষয়ে অজানা নানা তথ্য। উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন দীপান্বিতা গঙ্গোপাধ্যায় (বিপ্লবী কানাইলাল দত্তের ভ্রাতুষ্পৌত্রী তটিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের পুত্রবধূ এবং বাংলার প্রথম মহিলা ডাক্তার কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রপৌত্র রাজীব গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী)। এঁদের উপস্থিতিতে সমগ্র অনুষ্ঠান ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের পুনরালোচনা ও চর্চায় ঐতিহাসিক মুহূর্ত হয়ে দাঁড়ায়।
গত ২৭ ডিসেম্বর আয়োজিত চন্দননগর বইমেলায় বিপ্লবী অরুণচন্দ্র দত্ত ও বিপ্লবী আশুতোষ নিয়োগীর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপক অনুষ্ঠানে নিজের বক্তব্যে কিছু অজানা তথ্য জানালেন আশুতোষ নিয়োগীর নাতনি সুকন্যা মুখোপাধ্যায়। ধারাবাহিক ভাবে বিপ্লবীদের নিয়ে গ্রন্থ প্রকাশ ও আলোচনায় বিগত ২৩টি বইমেলায় ২৮ জন স্থানীয় বিপ্লবীর শ্রদ্ধাস্মরণ উপলক্ষে এঁদের পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মের অনেক সদস্য বক্তব্য রেখেছেন ‘আড্ডাগল্প’-এর আবহে। আলোচিত হয়েছে ‘রত্ন-জাত’ বিপ্লবীর আত্মত্যাগ, আত্মবলিদান ও তাঁদের পরিবারের স্বার্থত্যাগের কথা। এই সব অনুষ্ঠানও সে কারণে ঐতিহাসিক।
বাঙালি আড্ডাপ্রিয়, গল্পপ্রিয়। এই আড্ডাগল্পে অনেক ভিতরের কথা বেরিয়ে পড়ে। স্বাধীনতা আন্দোলন, শিক্ষাজগৎ, সংস্কৃতি, বিনোদন, ইতিহাসচর্চা, এমনকি জ্ঞানচর্চার বহুস্বরে ভাস্বর, বৈচিত্রময়, মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন বাঙালি ও বাংলার ইতিহাসে এমন অজস্র ভিতরের কথা আছে, যা বাস্তবে অজানা, অগ্রন্থিত ইতিহাস। এমন আড্ডাগল্পে বাঙালি ও বাংলা রসেবশে এগিয়ে থাকুক।
শুভ্রাংশু কুমার রায়, চন্দননগর, হুগলি
দামি বিমা
চিকিৎসা বিজ্ঞানের অসামান্য উন্নতির ফলে সাধারণ মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে। আজ থেকে কয়েক দশক আগেও সামান্য রোগে ভুগে মানুষের মৃত্যু ঘটত। বর্তমানে অনেকটাই সেই চিত্র পাল্টেছে। স্বাভাবিক ভাবেই বয়স্ক মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক জন মানুষকে দীর্ঘ আয়ুর ফলে জীবনে বেশ কয়েক বছর নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হয়, হয়তো সেই সঙ্গে একাধিক বার হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়। এ দেশে সরকারি ভাবে প্রত্যেক নাগরিকের সুচিকিৎসা করার মতো পরিকাঠামো নেই। সরকারি চিকিৎসা বাজেটও তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই কম। সাধারণ মানুষ বেসরকারি চিকিৎসা গ্রহণ করেন নিতান্তই বাধ্য হয়ে। সচেতন মানুষ চিকিৎসা বিমা করতে আগ্রহী। কিন্তু বর্তমানে, বিশেষত কোভিড-পরবর্তী সময়ে চিকিৎসা বিমা করতে অনেক টাকার প্রিমিয়াম লাগছে, যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। সরকারি ভাবে এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরির প্রয়োজন। সেই সঙ্গে চিকিৎসা বিমা থেকে শুরু করে জীবন বিমাকে অবশ্যই জিএসটি মুক্ত করতে হবে। চিকিৎসা পরিষেবা পণ্য নয়। তাই একদম প্রান্তিক মানুষও যাতে জীবন বিমা ও চিকিৎসা বিমা করতে পারেন, সেই দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সৈয়দ সাদিক ইকবাল, সিমলা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
আনন্দের গুঁতো
শীতকাল পিকনিকের মরসুম! আর পিকনিক মানেই ডিজের দাপট, চটুল হিন্দি গান এবং মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপানের কুরুচিকর সংস্কৃতি! বর্তমান তরুণ প্রজন্ম পিকনিকের অজুহাতে যে ভাবে রাস্তাঘাটে তারস্বরে ডিজে চালিয়ে গাড়িতে পিকনিকে যাচ্ছে, তার ফলে শব্দদূষণ তো বাড়ছেই, বয়স্ক মানুষরাও নানাবিধ সমস্যায় পড়ছেন! যুবসমাজের মাথায় রাখা উচিত— নিজেদের আনন্দ যেন কখনও অপরের নিরানন্দের কারণ না হয়ে ওঠে!
সৈকত কর্মকার, গোবরডাঙা, উত্তর ২৪ পরগনা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy