গত ১ এপ্রিল এই সংবাদপত্রে একটি স্তম্ভের ছবি প্রকাশিত হয়েছে, যার সন্ধান মিলেছে প্রাচীন মন্দির লাগোয়া জলাশয় খননের সময়। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিউজ়িয়োলজি বিভাগের সুপারিন্টেনডেন্ট কৌশিক ঘোষ বলেছেন, সম্ভবত ওখানে কোনও কুয়ো ছিল। এখানে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, “জলাশয়ের মধ্যে কুয়ো কেন?” যথার্থ জিজ্ঞাসা। উভয় বঙ্গেই (নিশ্চয়ই বহির্বঙ্গেও) জলাশয় খননের পর তার তলদেশে এক পাশে খনন করা হত একটি কুয়ো— বিশ, ত্রিশ, চল্লিশ ফুট বা তারও বেশি গভীর। তাতে জলাশয়ের জলের একটা সম্পর্ক তৈরি হত গভীরতর স্তরের জলের সঙ্গে। উৎসটি আছে বলে জলাশয় শুকোয় না। এ এক নাড়ির বাঁধন। এই প্রসঙ্গে শিলংবাসী ব্রাহ্ম লেখিকা-শিক্ষিকা শারদামঞ্জরী দত্ত-র আত্মকথা মহাযাত্রার পথে থেকে ১৯১০ সনের দিকে তাঁর কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ভ্রমণের সময়কার এক অভিজ্ঞতার কথা বলি।
প্রসন্নকুমার দাশগুপ্ত ছিলেন আগরতলা স্টেটের দেওয়ান, আগে ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। শারদা প্রসন্নকুমারের কুমিল্লা শহরের বাসায় একটি পারিবারিক উপাসনায় যোগ দিয়েছিলেন। রাতের আহারের পরে, শারদামঞ্জরীর কথায়, “শ্রীযুক্ত রবীন্দ্রনাথের কথা আলোচনা হইতেছিল। তিনি (প্রসন্নকুমার) বলিয়া উঠিলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ যেন আমাদের এই দীঘির উৎস।’ কুমিল্লা সহরে খুব বড় বড় দীঘি আছে; তাহারই একটির পাড়ে তাঁহার বাসা। সম্মুখের দীঘির নাম উল্লেখ করিয়া তিনি এই কথা বলিলেন। বহুকাল এই দীঘি খনন করা হইয়াছে, এখনও তাহার নির্মল জল সকলকে পানীয় যোগাইতেছে। সকলেই জানে যে পুকুর কাটিয়া তাহার ভিতরে এক কোণে খুব গভীর ছোট কুয়ার ন্যায় গর্ত করা হয়। ইহাকে সাধারণ গ্রাম্য ভাষায় (কূপ হইতে বোধ হয়) ‘হুপ’ বলা হয়। ইহাকেই তিনি উৎস বলিলেন। এই দীঘি যে অনবরত পানীয় যোগাইতেছে, তাহার মূল কারণ হইল, উৎসের মুখ খোলা আছে বলিয়া। কবীন্দ্র— রবীন্দ্রনাথের ভিতর হইতে যে কবিতা ও সাহিত্যের ধারা অনবরত বাহির হইতেছে, ইহার মূল কারণ সেই অনন্ত অপার্থিব উৎসের সঙ্গে কবির যোগ আছে বলিয়া। উপমাটি আমার ভাল লাগিয়াছিল বলিয়া দীর্ঘকাল পরেও স্মরণ আছে।”
দিঘির কূপ বা ‘হুপ’-এর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের তুলনা বা প্রাসঙ্গিক উপমাটি অভিনব ও অনবদ্য।
ঊষারঞ্জন ভট্টাচার্য, উলুবাড়ি, গুয়াহাটি
যন্ত্রদানব?
‘কাজের সময়’ (৯-৩) শীর্ষক সম্পাদকীয়টি নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী। দেশ জুড়ে বেসরকারি বা অসরকারি দফতরে কর্মরত কর্মীদের উপর যে অমানবিক কষাঘাত চলছে, সভ্য সমাজে তা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং অপরাধমূলক বললেও কম বলা হয়। শ্রমের বিনিময়ে মজুরি বা বেতন প্রদান— এটা তো সর্বকালের স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু তাই বলে যে কর্মীটি রাতদিন এক করে কাজ করে চলেছেন, তাঁকে দিনের পর দিন অতিরিক্ত খাটিয়ে নেওয়ার প্রবণতা, সে তো সীমাহীন অনৈতিকতারই নামান্তর। কেতাদুরস্ত কার্যালয় সাজিয়ে তার আড়ালে চলা কর্মীদের যান্ত্রিক করে তুলে এ ভাবে নির্বিচার শোষণের ফলে কর্মীদের মনোবলে ধাক্কা লাগছে। তাঁদের জন্য নেই কোনও আনন্দ, বা বিশ্রামের এক দণ্ড সুযোগ।
বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এক-এক কর্তার এক-এক রকম ফরমান। এক জন বলছেন সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ করার কথা। আর এক কর্তা আরও কয়েক কদম এগিয়ে বলছেন, উঁহু, তা কী করে হয়? ৯০ ঘণ্টা কাজ করে যেতে হবে। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। স্বভাবতই, কর্মীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। সৃজনশীল কাজকর্মের প্রতি আনুগত্যের অভাব দেখা দেওয়ার প্রশ্নটিও উঠে আসা স্বাভাবিক। সেখানে যদি কর্তৃপক্ষের কৃত্রিম মেধার সঙ্গে মানবিক তুলনা টানার চিন্তাভাবনা থাকে, তবে তো কর্মীদের মধ্যে নৈরাশ্য আসা খুবই সঙ্গত। সম্পাদকীয় আলোচনাটিতে উঠে এসেছে কর্মজীবনের সঙ্গে ব্যক্তি-জীবনের ভারসাম্যহীন এক ভয়াবহ ছবি। একটি অসরকারি সংস্থার স্বাস্থ্য সমীক্ষা দেখিয়েছে, ভারতে কাজের ক্ষেত্রে ‘বার্নআউট’-এর হার প্রায় ৬০ শতাংশ, যেখানে বিশ্বের গড় ২০ শতাংশ। এখানে সঠিক ভাবেই উল্লেখ করা হয়েছে, কর্মের সঙ্গে প্রয়োজন চিত্ত বিনোদন ও বিশ্রামের। তা না করে রোবট তৈরি করার বা যন্ত্রদানব সভ্যতার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ রকম চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে সর্বত্র মনুষ্যত্ব উধাও হয়ে যাবে, তা আমরা কেউই যেন ভুলে না যাই।
শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, নবদ্বীপ, নদিয়া
ভগ্নদশা
হুগলি জেলার একটি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র ও দর্শনীয় স্থান সবুজদ্বীপ। সবুজদ্বীপ প্রধানত হুগলি নদীর উপর তৈরি হওয়া একটি ব-দ্বীপ, একটু এগিয়ে গেলে আরও কয়েকটি ছোট দ্বীপ রয়েছে। সোমড়াবাজার স্টেশনে নেমে টোটো করে সবুজদ্বীপ ফেরিঘাটে পৌঁছে সেখান থেকে ফেরি করে পৌঁছে যাওয়া যায়। বর্তমানে সবুজদ্বীপ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন বিভাগের আওতাধীন এবং সেখানে যাতায়াত ও থাকা-খাওয়ার সুবন্দোবস্ত রয়েছে। শীতকালীন বিভিন্ন পরিযায়ী পাখির আগমন এবং জলপথে দুই দিকের মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য সত্যি জায়গাটিকে আকর্ষণীয় করে তোলে। কিন্তু সেখানে অগ্রিম বুকিং ছাড়া পর্যটন বিভাগের রিসর্ট এবং সংলগ্ন উদ্যানে প্রবেশ নিষেধ। এ ছাড়া ফেরিঘাটের পরিষেবাও মেলে না। বেশির ভাগ পর্যটক বা প্রবীণ নাগরিক বিষয়টি জানেন না।
অতি উৎসাহী পর্যটকদের অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে ডিঙি করে পৌঁছে দেওয়া হলেও সেখানে যথেষ্ট পরিচ্ছন্নতার অভাব, পিকনিক করে ফেলা আবর্জনার স্তূপ, ছোট আগাছা পরিপূর্ণ পরিবেশ, এবং সর্বোপরি যে টাওয়ারে উঠে সবুজদ্বীপের চার দিক দর্শন করা হয়, সেটির ভগ্নদশা দেখে অনেকেই পর্যটন কেন্দ্রটি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। যদি ফেরিঘাটে নির্দিষ্ট মূল্যের টিকিট পরিষেবা চালু করার পাশাপাশি দ্বীপটিতে কিছু পরিকাঠামোগত উন্নয়ন এবং টাওয়ারটির সংস্কার করে স্থানটি পরিচ্ছন্ন রাখা হয়, তবে লোকজনের কাছে এটি পুনরায় আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে।
শেষাদ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়, বৈঁচিগ্রাম, হুগলি
সার্টিফিকেট নেই
‘সিসি আছে তো? ফ্ল্যাট কেনার আগে আবার যাচাই করার পরামর্শ’ (২৪-৩) পড়ে আমার মতো কালীপার্কের একটি আবাসনের বহু বাসিন্দাই অজানা আশঙ্কায় ভুগছি। কারণ ফ্ল্যাট কিনে গত পাঁচ-ছ’বছর বসবাস করলেও আমরা এখনও কমপ্লিশন সার্টিফিকেট পাইনি। প্রোমোটার বিধান নগর পুরসভার ছাপ মারা একটি রসিদ দেখিয়ে বলেন সিসি-র জন্য আবেদন করেছেন। সিসি না থাকায় বাসিন্দারা মিউটেশনের জন্য আবেদন করতে পারছেন না এবং বাড়ির করও দিতে পারছেন না। বিধান নগর পুরসভার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
দেবব্রত পাল, কলকাতা-১৩৬
জলকষ্ট
রাজপুর সোনারপুর পুরসভার বাসিন্দা। দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের পুরসভা থেকে যে জল সরবরাহ করা হয়, তার মান অত্যন্ত খারাপ। পরিষ্কার জল পাওয়া তো দূরের কথা, সেই জল পান করার অযোগ্য। সেই জল ফিল্টার না করে পান করা অসম্ভব। তা ছাড়া, জলে প্রচুর আয়রন থাকার কারণে আমাদের জল সরবরাহের পাইপলাইনের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ ক্রমশই বাড়ছে। প্রতিনিয়ত পাইপলাইনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে, যা সাধারণ নাগরিকদের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর। কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
রানা ঘোষ, কলকাতা-১৪৯
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)