দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। ফাইল চিত্র।
সম্পাদকীয় কলমে (‘আশঙ্কা ও প্রশ্ন’, ১২-১২) শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানিকালে মাননীয় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কিছু মন্তব্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, সেগুলির উদ্দেশ্য হতে পারে অপরাধীদের মনে ভীতি সঞ্চার করা। এ বিষয়ে আমি পূর্ণ সহমত পোষণ করি। মাননীয় বিচারপতিকে যথাযোগ্য সম্মান জানিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়তো অন্যায় নয়, গুরুতর অপরাধে অভিযুক্তেরও আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার আছে। তা হলে বিচার চলাকালীন মামলায় ন্যায়দণ্ডের বদলে দণ্ডের ভীতি সঞ্চার করা হবে কেন? স্মরণীয়, গোড়ার দিকে এই মামলার কিছু রায়ের উপর ডিভিশন বেঞ্চ স্থগিতাদেশ দেওয়ায় মাননীয় বিচারপতি উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। এই আদালতেই অভিযুক্তদের বক্তব্য না শুনে কর্মরত শিক্ষকদের চাকরি বাতিল করার উপর সুপ্রিম কোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়েছে। প্রসঙ্গত, দুর্নীতি এখন সর্বব্যাপী, সর্বজনবিদিত। আদালতেই তার বিচার হবে, পথেঘাটে নয়। প্রথম থেকেই মাননীয় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের শুনানি চলাকালীন একাধিক মন্তব্য ও অন্তর্বর্তিকালীন নির্দেশগুলি সংবাদপত্র ও রাজনীতিতে বিপুল আলোড়ন তোলে। সেই অভিঘাতে জনমানসে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়, তার প্রতিফলন দেখা যায় পুলিশ ঘেরাটোপে অভিযুক্তকে জুতো ছোড়া, বা আদালত চত্বরে ‘চোর’ স্লোগানে। যার কোনওটাই অভিপ্রেত নয়। সুপ্রিম কোর্টও সংবাদমাধ্যমে দোষী নির্ণয় বা ‘মিডিয়া ট্রায়াল’-এ বিচারপতিদের প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
সম্প্রতি শিক্ষক পদপ্রার্থী এক মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে মাননীয় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ভাটপাড়া পুরসভার উপ পুরপ্রধান তথা প্রাথমিক শিক্ষককে সরাসরি তাঁর এজলাসে তলব করেন। অভিযোগটি আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারিণীর জরিমানা হয়। আইনজীবী মহলে প্রশ্ন উঠেছে, অভিযুক্তকে রীতি মেনে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে সরাসরি তলবের প্রবণতা ও পদ্ধতি কি আদালতের নৈর্ব্যক্তিক ভূমিকার বদলে ‘অতি সক্রিয়তা’র ইঙ্গিত নয়? এমন প্রশ্ন উঠেছে, এক জন শিক্ষক ও জনপ্রতিনিধির সম্মানহানির দায় কার? উল্লেখ্য, গত শতকের ষাট-সত্তরের দশকে বিচারব্যবস্থার ‘অতি সক্রিয়তা’ নিয়ে প্রবল চর্চা হয়েছিল। গণতন্ত্রের স্তম্ভগুলোর মধ্যে যতই বিবাদ ও বিরোধ থাকুক, বিচারব্যবস্থার উপর মানুষের অগাধ আস্থা ও বিশ্বাস আছে।
আদালত আবেগের স্থান নয়, ন্যায়ধর্মের প্রতিষ্ঠান।
পরেশ মালিক, চন্দনদহ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
বেহাল দশা
অশোক দাশের ‘বদলি এড়াতে’ (১৭-১২) শীর্ষক পত্রটির সূত্র ধরে দু’-একটি কথা সংযোজন করতে চাই। পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাম জমানায় গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসা পরিকাঠামো বলতে কিছুই ছিল না, সেই জন্য কলকাতার হাসপাতালে ‘রেফার’ করা হত। ঠিক কথা। কিন্তু প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি যে, বর্তমানেও গ্রামীণ হাসপাতালে পরিকাঠামোর হাল খুবই খারাপ। চিকিৎসকগণ সেই কারণেই রোগীকে অন্য হাসপাতালে রেফার করতে বাধ্য হচ্ছেন, নিজের বদলি এড়ানোর জন্য নয়।
আমি ২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯-এর ২৮ ডিসেম্বর, এবং ২০২০-এর ১৬ ডিসেম্বর— এই তিন দিনে তিন জন রোগীকে জরুরি চিকিৎসার জন্য সোনারপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাই। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ‘রেফার’ করা হয় উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে। প্রথম জন অন্য হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই মারা যান। রোগীর ইসিজি পর্যন্ত হাসপাতালে করা যায়নি, বলা হয়েছিল মেশিন খারাপ। দ্বিতীয় জনকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করা সম্ভব হলেও, বিলম্বে চিকিৎসা শুরু হওয়ায় পরের দিন রোগী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ভুক্তভোগীদের কথা অনুযায়ী, সাম্প্রতিক কালেও হাসপাতালের পরিকাঠামোয় পরিবর্তন হয়নি। হাসপাতাল ভবন ঝাঁ চকচকে হয়েছে, প্রবেশপথে নির্মিত হয়েছে বিরাট তোরণ। কিন্তু চিকিৎসার মূল পরিকাঠামো যে তিমিরে ছিল, রয়ে গিয়েছে সেই তিমিরেই।
সোনারপুর-রাজপুর অঞ্চলে বসবাসকারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার লক্ষ। কিন্তু, পুরসভা অঞ্চলের নিকটবর্তী বড় সরকারি হাসপাতাল বলতে এম আর বাঙ্গুর, সড়কপথে যা প্রায় এক ঘণ্টার পথ। ফলত, সোনারপুর গ্রামীণ চিকিৎসা কেন্দ্রে জনসংখ্যার চাপ অত্যধিক। এলাকার মানুষ বহু দিন ধরে পরিষেবা বৃদ্ধি এবং পরিকাঠামো আরও উন্নত করার দাবি করে আসছেন। কিন্তু তা অরণ্যে রোদন। বাম জমানায় মূল চিত্রটি যা ছিল, এখনও তা-ই। সোনারপুরে দিনের পর দিন এই আবহে কাজ করতে গিয়ে চিকিৎসকদের এমনিতেই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার কথা। কাজেই, নতুন করে তাঁরা নিজেদের পিঠ আর কী বাঁচাবেন?
রাজীব রায় গোস্বামী, রাজপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
নিরাপত্তার রং
রাস্তার পাশে নিরাপদ যাতায়াতের জন্য ব্যবহৃত কংক্রিটের ‘কার্ব স্টোন’, দুই লেনের মধ্যবর্তী কংক্রিটের সেন্ট্রাল মিডিয়ান, রাস্তার ধারে ধাতুর বেড়া (স্টিল ফেনসিং), ব্রিজের ফুটপাত-লাগোয়া কংক্রিটের হুইল গার্ড, ব্রিজ প্যারাপেট বা ইস্পাত-নির্মিত ‘ক্র্যাশ বেরিয়ার’— সর্বত্রই দেখি আকাশি নীল ও সাদা রং করা হয়েছে। এটি মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়, বরং যথেষ্ট বিপজ্জনক। ইন্ডিয়ান রোড কংগ্রেস গবেষণার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রকার সড়ক, কালভার্ট বা ব্রিজ ইত্যাদি নির্মাণের সহজ, সাশ্রয়কারী ও পরিবেশবান্ধব নির্দেশরেখা তৈরি করেছে। এগুলি পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত আকারে ‘কোড অব প্র্যাকটিস’ হিসাবে সমস্ত রাজ্যে ব্যবহার হয়ে থাকে। সেখানে বলা হয়েছে, রাস্তার বিভাজিকা বা সীমা নির্দেশক নির্মাণগুলি কংক্রিট বা ইস্পাত, যা দিয়েই তৈরি হোক না কেন, সেগুলিকে ‘হাই কনট্রাস্ট’ রঙের হতে হবে। রংগুলি হল যথাক্রমে সাদা, কালো, হলুদ ও সবুজ। এগুলি বিভিন্ন রাস্তার ক্ষেত্রে এক-এক রকম।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই এই নিয়ম লঙ্ঘন করে সর্বত্র নীল-সাদা রং করছে, যা নাকি শাসক দলটির প্রতীকী রং। তার আগে কিন্তু সাদা-কালো, বা হলুদ-কালো ব্যবহার হত। এই ‘হাই কনট্রাস্ট’ রঙের বৈশিষ্ট্য, গাড়ির চালক অনেক দূর থেকে সাবধান হতে পারেন রাস্তাটির গড়ন সম্পর্কে। ফলে রাস্তায় দুর্ঘটনার সংখ্যা কমে। আর এই রংগুলি রাতে আলো প্রতিফলন করলে (রেট্রো-রিফ্লেকটিভ পেন্ট) রাতে চালকেরা অনেক বেশি বুঝতে পারেন, এতে রাতে দুর্ঘটনা কমে। এই রং অনেক বেশি দিন স্থায়ী হয়, শুধু মাঝেমাঝে পরিষ্কার করার ব্যবস্থা রাখা উচিত।
রাজ্যে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষিত ও অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন, যাঁরা এ বিষয়ে যথেষ্ট অবগত। রাজ্য প্রশাসনকে তাই অনুরোধ, রাস্তা ও পরিবহণের নিরাপত্তা সংক্রান্ত নির্মাণগুলির রঙের দায়িত্ব ইঞ্জিনিয়ারদের উপর পুরোপুরি ছেড়ে দিন। এতে দুর্ঘটনা কমবে।
মৃণাল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-১০৭
নারীশিক্ষা
আফগানিস্তানে তালিবানি ফতোয়া জারি করে মহিলাদের উচ্চশিক্ষা নিষিদ্ধ হল। এ নিয়ে অন্যান্য দেশ তো বটেই, ইসলামিক রাষ্ট্রগুলিও প্রতিবাদে সরব। মেয়েদের শিক্ষা থেকে বঞ্চনার বিধান ইসলামে আছে কি? আমরা তো শুনেছি, ইসলাম ধর্মে বলা আছে, নারী ও পুরুষের ইসলামিক শিক্ষা ও আধুনিক শিক্ষায় বাধা দেওয়া যায় না। অতীতে সামন্ততান্ত্রিক মানসিকতা থেকে মহিলাদের শোষণ ও নিষ্পেষণ করা হত। আজকের দিনে এ সব কুপ্রথা মেনে নেওয়া যায় না। সমাজবিজ্ঞানীরা বলেছেন, উন্নয়নের কর্মকাণ্ডে মহিলাদের ব্যতিরেকে কোনও কাজই সুস্থায়ী হয় না। তালিবানের সঙ্কীর্ণ মানসিকতা বর্তমানে অচল এবং অবাস্তব।
মুস্তাক আলি মণ্ডল, আমতা, হাওড়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy