‘বিনা ভোটে জয়, প্রশ্ন তৃণমূলেই’ (১১-২) প্রসঙ্গে কিছু কথা। তৃণমূলের অন্দরের কোন্দল এখন কারও অজানা নেই। কিছু দিন আগে, “‘শেষ কথা’ তিনিই, বোঝালেন মমতা” (২৮-১) শীর্ষক খবরের প্রেক্ষিতে সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় খবরের সত্যতা স্বীকার করেও ‘উদ্ভট মস্তিষ্কের উর্বর কল্পনাপ্রসূত প্রতিবেদন’ বলে ‘সম্পাদক সমীপেষু’ বিভাগে চিঠি (‘ভ্রান্ত প্রতিবেদন’, ৩০-১) দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, শাক দিয়ে আর মাছ ঢাকা যাচ্ছে না। বর্তমান পুরভোটের প্রার্থী তালিকা বাদ দিয়ে নেত্রী দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশ করে বললেন, এই তালিকাই চূড়ান্ত বলে গ্রাহ্য হবে। এর ফলে জেলায় জেলায় ক্ষোভ, প্রতিবাদ ইত্যাদি দেখা দিল। যাঁদের নাম প্রথমে তালিকায় ছিল, পরে উঠে গিয়েছে, এমন বহু প্রার্থী নির্দল হিসাবে মনোনয়ন জমা দিলেন। দলে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা স্পষ্ট প্রতীয়মান।
‘নিজমুখে’ (৮-২) সম্পাদকীয়তে এই কথাই আলোচনা করা হয়েছে যে, দলে নিশ্চয়ই সংশয় তৈরি হয়েছে যার জন্য নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিজমুখেই বলতে হচ্ছে যে, তাঁর সিদ্ধান্তই শেষ কথা। এ বার সাঁইথিয়া, বজবজ, দিনহাটাতে পুরভোটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় তৃণমূলী সন্ত্রাসকে চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে। সে কথাই দলের যুবনেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য সমাজমাধ্যমে বলেছেন। মনে করিয়েছেন যে, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের মতো সন্ত্রাস সংগঠন করলে আবারও ফল খারাপ হবে, যেমনটা ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে হয়েছিল।
বস্তুত এক দশক ক্ষমতায় থাকার পর আবারও নির্বাচিত হওয়ায় দলটির কোণে কোণে ক্ষমতার লোভ, টাকার গন্ধ আর পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি জাঁকিয়ে বসেছে। বহু পঞ্চায়েত পুরসভায় স্বল্পশিক্ষিত, দরিদ্র মানুষের আবাস যোজনার অনুদান, বা একশো দিনের কাজের টাকা বেমালুম আত্মসাৎ করা হচ্ছে। এক-এক জন পঞ্চায়েত সদস্যের রাজকীয় বাড়ি, টাকার পাহাড় তৈরি হয়েছে। পুরসভায় প্রার্থী-পদ পাওয়ার জন্য তাই এত কাড়াকাড়ি। এ সব নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা, বা সম্প্রতি হাই কোর্টের নির্দেশে দুর্নীতির জন্য গ্রুপ ডি পদে ৫৭২ জনের নিয়োগ বাতিল ইত্যাদির দায় তৃণমূল সরকার অস্বীকার করতে পারে না। বিরোধীদের বক্তব্য, তৃণমূলের ‘মুষলপর্ব’ শুরু হয়েছে। এ কথা অনস্বীকার্য যে, এই দুর্নীতি, এই সন্ত্রাস চিরস্থায়ী হতে পারে না।
শিখা সেনগুপ্ত
কলকাতা-৫১
অগণতান্ত্রিক
উত্তরে দিনহাটা আর দক্ষিণে সাঁইথিয়া, এই দুই পুরসভা বিনা ভোটেই প্রায় দখল করে নিল শাসক দল! বুঝতে পারছি না, পরীক্ষা না দিয়েই পাশ করার এই অগণতান্ত্রিক কৌশল কেন তৃণমূলের মাথা থেকে যাচ্ছে না? তথাকথিত নেতৃবৃন্দই বা কেন মেনে নিচ্ছেন এই নিন্দনীয় পদ্ধতি? নির্বাচন এক গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রাথমিক ও মুখ্য পর্যায়। তার তাৎপর্যও যথেষ্ট। তাকে মান্যতা দিলে শাসক দলেরই সম্মান বাড়ে। তেমনই রাজ্যের গণতান্ত্রিক কাঠামোও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়। নির্বাচন কমিশনের বল বাড়ে। জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় না। ভোট উৎসবকে প্রাণের পরব হিসাবে পরিগণিত করেন তাঁরা। কিন্তু শাসক দলের ঔদ্ধত্য, ক্ষমতা দখলের আকাশচুম্বী ইচ্ছে, পেশিশক্তির প্রয়োগ, ফ্যাসিবাদকেই ডেকে আনে। এই দিনই যে একমাত্র দিন নয়, সামনে আরও দিন পড়ে আছে— এই ভাবনাও তাঁদের তীব্র ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষা থেকে সরিয়ে আনতে পারছে না। বিরোধীমাত্রেরই ভোটে দাঁড়ানোর অধিকার সম্পূর্ণ সাংবিধানিক। যে দল সারা ভারতে শাখা বিস্তারের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে, ‘ত্রিপুরার গণতন্ত্র হত্যাকারী বিপ্লব দেব নিপাত যাক’ স্লোগানে আকাশ ভরিয়েছে, সেই দল ঠিক একই ঘটনা এই রাজ্যে করছে, তা কি সত্য নয়? জানি, জয়ী হওয়ার পরও বিরোধী প্রার্থীদের শাসক দলে টেনে নেওয়ার সুযোগ পড়ে আছে— তবুও ভোটে দাঁড়ানোর অধিকারটুকু কেড়ে নিলে ভোট প্রহসনে পরিণত হয়।
মনশ্রী চৌধুরী
কাটোয়া, পূর্ব বর্ধমান
আচরি ধর্ম
সাঁইথিয়া, বজবজ, দিনহাটা— তিন-তিনটি পুরসভা ভোটের আগেই শাসকের হাতে চলে আসায় সন্দেহ দানা বাঁধে। অথচ রাজ্যের শাসকই যখন কেন্দ্রে বিরোধী স্বরের অধিকার নিয়ে মুখ খোলে, তখন বোধ হয় ‘আপনি আচরি ধর্ম পরেরে শিখাও’ আপ্তবাক্যটি বারংবার নিঃশব্দে প্রতিধ্বনিত হয়।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের বিষয়ে তৃণমূলের তরুণ ব্রিগেডের যুক্তি কিন্তু দলের অন্দরেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে গা-জোয়ারির কথাও উঠে এসেছে, এবং তার ফলেই যে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল, সে কথা মনে করিয়ে দিতেও ভোলেননি দলের এক তরুণ নেতা। অর্থাৎ সাধু সাবধান। বিধানসভায় ২১৩টি আসন লাভের ফলে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে গণতান্ত্রিক সুস্থতাকে জলাঞ্জলি দেবে না তৃণমূল, আশা করা যায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এক সময়ে বিরোধীদের কণ্ঠরোধের ক্ষেত্রে (বামফ্রন্টের আমলে) বহু আন্দোলন করেছেন। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মুখেও এক সময় এমন কথা শোনা গিয়েছিল যে, বিরোধী দলের হয়ে শাসক দল কি প্রার্থী দিয়ে দেবে! চৌত্রিশ বছরের সেই আত্মবিশ্বাসীদের পরিণাম আজকের পশ্চিমবঙ্গ।
তাই মনে হয়, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে যাওয়ায় রাজ্যের শাসক দলের অতি উৎসাহী হওয়ার কোনও কারণ নেই। বিরোধীশূন্য গণতন্ত্রকে অশনিসঙ্কেত রূপেই দেখতে হবে।
সঞ্জয় রায়
দানেশ শেখ লেন, হাওড়া
ভোটের ভয়
শাসক দলের প্রতিনিধিরা সত্যিই যদি ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা’য় একাধিক পুরসভায় জয়লাভ করে থাকেন, তা হলে তাঁদের বিরুদ্ধে সব ক’টি বিরোধী দল অভিযোগ করছে কেন? কোথাও মনোনয়ন দিতে যাওয়া বিরোধী প্রার্থীর কাগজপত্র কেড়ে নেওয়া হয়েছে, কোথাও বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে। সবই কি মিথ্যা অভিযোগ? শাসক দল জানে, তারা সব ক’টি পুরসভা ও পুরনিগমে বোর্ড গঠন করবে। তা হলে কেন বিরোধীদের সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভাবে মনোনয়ন জমা দিতে দেননি?
ঋতুপর্ণা ভট্টাচার্য
চুঁচুড়া, হুগলি
বিষপান
এক ব্যবসায়ী মোদীকে দায়ী করে বিষপান করেছেন ও বিগত তিন বছরে বেকারত্ব, ঋণভারে জর্জরিত হয়ে দেশে গড়ে রোজ ২৩ জন সাধারণ মানুষ আত্মঘাতী হয়েছেন— খবরটি পাঠ করে মনে হয় সত্যিই যেন হীরকরাজার দেশে বাস করছি (‘মোদীকে দায়ী করে বিষপান’, ১০-২)। পেট্রল, ডিজ়েল, রান্নার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, লকডাউন, বেকারত্ব, জিএসটি-তে ছোট-মাঝারি ব্যবসায়ীদের ক্ষতি, ঋণ মেটাতে গিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া, এ সব দেখেও ‘রাজা’ নির্বিকার। তাঁর ৫৬ ইঞ্চি বুকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধিতে কৃষক, শ্রমিক তথা সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন কঠিন জীবন নির্বাহের ব্যথা বাজে না। বরং ধর্ম নিরপেক্ষতাকে জলাঞ্জলি দিয়ে হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নাম করে নিরীহ নাগরিককে নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) মাধ্যমে আত্মহত্যায় প্রলুব্ধ করেন, যেমন ঘটেছে অসমে।
তরুণ কুমার নিয়োগী
কাঁচরাপাড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy