‘শুধু মিছে কথা ছলনা’ (২২-১০) সম্পাদকীয়টি বড্ড একপেশে এবং পক্ষপাতদুষ্ট। গোটা বিশ্বে ভারত টিকাকরণ নিয়ে যে নজির সৃষ্টি করেছে, তার প্রশংসা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও করেছে। কিন্তু ভারতের কিছু সংবাদমাধ্যম এতে সাফল্যের থেকে ব্যর্থতাকেই বেশি খুঁজে পাচ্ছে, এটাই দুর্ভাগ্যের। কো-উইন অ্যাপে ১০০ কোটির উপরে নাম নথিভুক্ত হয়েছে মানে ১০০ কোটি ডোজ়ই দেওয়া হয়েছে। আর ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল তাদের এই প্রশাসনিক সাফল্যকে রাজনৈতিক প্রচারে লাগাবে, এটাই স্বাভাবিক নয় কি?
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে টিকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হলেও মানুষের যদি টিকা নেওয়ার আগ্রহ না থাকে, তা হলে সরকার শত চেষ্টা করেও সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে না। কারণ, করোনা সংক্রমণ কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মধ্যে মৃত্যুভয় যেমন কমেছে, তেমনই কোভিড বিধি পালনেও অনীহা দেখা দিয়েছে।
সবচেয়ে বেশি টিকা বিদেশে রফতানি করে গোটা বিশ্বে সুনাম কুড়িয়েছে ভারত। ওমান, মঙ্গোলিয়া, বাহরিন, মরিশাস, ফিলিপিন্স ও মলদ্বীপে বিনামূল্যে ৮ লক্ষ ১০ হাজার কোভিশিল্ড, আফগানিস্তান, ভুটান, নেপালের জন্য ২৫ লক্ষ কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিন আলাদা করে পাঠিয়েছে ভারত। এ ছাড়াও বার্বাডোজ় ও ডমিনিকা বিনামূল্যে ভারতের থেকে ভ্যাকসিন পেয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছে। সুতরাং, উক্ত সম্পাদকীয়তে টিকাকরণের ক্ষেত্রে ভারতের উজ্জ্বল দিকটিও তুলে ধরার দরকার ছিল।
প্রণয় ঘোষ
কালনা, পূর্ব বর্ধমান
দায়হীন
করোনা সংক্রমণের হার ফের ঊর্ধ্বমুখী। সকলেই এখন একে অপরের উপর দোষ চাপাতে ব্যস্ত— সরকার জনগণের উপর, জনগণ সরকারের উপর। কিন্তু আমার মনে হয় যে, দায়বদ্ধতা সকলেরই দেখানো উচিত ছিল, সেটা কোনও ভাবেই কেউ দেখায়নি। পুজোর নেশায় উন্মত্ত জনগণ, সরকারি আধিকারিকদের অবহেলা— সব মিলে আগামী দিনের জন্য একটা ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গকে। এখন সরকারি বৈঠকে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ, টিকাকরণ বৃদ্ধি এবং পরীক্ষা বৃদ্ধির কথা বলা হলেও তা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়েও থেকে যাচ্ছে প্রশ্ন।
সাধারণ মানুষ এখনও সামান্য জ্বরকে করোনা না বলে ‘সর্দি-কাশি’ বলতে পছন্দ করেন। বাঙালিদের সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য, তারা ‘ও করছে, আমি করব না কেন’— এই তত্ত্বে বড় বেশি বিশ্বাসী। বোঝা উচিত ছিল, সবাই যদি এক সঙ্গে বেরিয়ে পড়েন, তা হলে আর সরকারি বিধি-নিষেধের কোনও গুরুত্ব থাকে না। দুটো করে করোনা টিকা নেওয়ার পর মানুষ নিজেদের হারকিউলিস ভাবতে শুরু করেছেন, তাই অনেকের মুখে মাস্ক আজকাল দেখা যায় না। বিধি-নিষেধের তোয়াক্কা না করে যে যার মতো পুজোমণ্ডপকে সুন্দর ভাবে দর্শকদের জন্য সাজিয়ে তুলে তার পর অনলাইনে পুজো দেখানোর ব্যবস্থা করার কোনও মানে হয় কি? সেখানে করোনা টেস্ট বাড়ানোর কী অর্থ, যেখানে মানুষ করোনা টেস্ট করাতেই চাইছেন না।
এমনিতেই বিধি-নিষেধ মানার প্রয়োজন জনগণ বোধ করছেন না এবং সরকারও কোনও বিধি-নিষেধ কঠোর ভাবে প্রয়োগ করছে না। চিকিৎসকদের মতামতকে এত দিন গুরুত্ব না দিয়ে এখন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর অযথা চাপ দেওয়ার অর্থ কী? এ বার সময়ই বলে দেবে করোনা সংক্রমণের হার এবং মানুষের উদ্বেগ আর কত বাড়বে!
অদ্বিতীয় বন্দ্যোপাধ্যায়
বারাসত, উত্তর ২৪ পরগনা
মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ
প্রায় দু’বছর ধরে অতিমারির কারণে বহু মানুষ কর্মচ্যুত অথবা অর্ধেক বেতনে কাজ করছেন। তার পর প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য চাষাবাদও ঠিকমতো হয়নি। হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। সাধারণ মানুষ এখন এক প্রকার আর্থিক অনটনে ভুগছেন। কোনও রকম ভাবে সংসার চালাতে তাঁরা হিমশিম খাচ্ছেন। সম্প্রতি বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। সর্ষের তেল ১৫০ টাকা থেকে বেড়ে ২০০ টাকা হয়েছে। জিরে, লঙ্কা, হলুদ, চিনি— সব কিছুই খুচরো বাজারে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আর পোস্ত তো সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গিয়েছে। এই সব জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের একান্ত প্রয়োজন। যদিও পেট্রল, ডিজ়েলের দাম বৃদ্ধির জন্য জিনিসপত্রের বহন খরচ বাড়ছে, ফলে জিনিসপত্রের দামও ঊর্ধ্বমুখী। সাধারণ মানুষের সর্বনাশ হচ্ছে। পেট্রল তো আগেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে, ডিজ়েলও সেই পথে। যাঁদের ভোট নিয়ে সরকার প্রতিষ্ঠিত হল, সেই ভোটারদের দৈনন্দিন জীবন এখন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জালে জর্জরিত। অন্য দিকে, রান্নার গ্যাস প্রায় ১০০০ টাকা হতে চলেছে। ভর্তুকিও বন্ধ। সাধারণ মানুষকে শুধু চাল, গম দিলেই তাঁদের সংসার চলে যাবে? সরকারের কাছে অনুরোধ, সাধারণ মানুষের জীবনে একটু স্বস্তি আনতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা হোক।
চিত্তরঞ্জন মান্না
গড়বেতা, পশ্চিম মেদিনীপুর
সম্মিলিত উদ্যোগ
পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান সরকারের সিদ্ধান্তহীনতার শিকার বাংলার সাধারণ মানুষ। করোনার ভ্রুকুটি, চিকিৎসকদের সাবধানবাণী সত্ত্বেও ভোটের প্রচার হল, ভোট হল, বারোয়ারি পুজোর অনুমতি দেওয়া হল, আইন বাঁচিয়ে। মানুষের বিবেচনার উপর সব ছেড়ে দেওয়া হল। অথচ, এখানে একটি নির্বাচিত সরকার রয়েছে, প্রশাসন রয়েছে। মানুষের উপচে পড়া ভিড় আর দল বেঁধে প্যান্ডেল হপিং-এর উৎসাহ দেখে মনে হচ্ছিল, মানুষ বোধ হয় মৃত্যুভয়কেও জয় করে ফেলেছেন। না কি সবাই ভাবছেন ‘অন্যদের হবে, কিন্তু আমি এবং আমার বাড়ির লোকদের কিছু হবে না’।
এর পর অতিমারির তৃতীয় ঢেউ যখন বিপুল ভাবে আছড়ে পড়বে, যখন হাসপাতালেও আর জায়গা পাওয়া যাবে না, তখন নাহয় চিৎকার করে সরকারকে দোষারোপ করলেই চলবে! আর ‘ক্ষতিপূরণ’ তো তৈরিই আছে! আমার প্রশ্ন, সাধারণ মানুষ নাহয় আবেগতাড়িত হয়ে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছেন, কিন্তু পুজো উদ্যোক্তাদের কি উচিত ছিল না এ বিষয়ে সচেতন হওয়া? এই অতিমারি পরিস্থিতিতে এত বড় আয়োজনের খুব প্রয়োজন ছিল কি? প্রশাসনই বা কী করে এ সবের অনুমতি দেয়? সবাই অন্যের কাঁধে দোষ চাপাবে, কিন্তু কেউ এগিয়ে এসে দায়িত্ব নেবে না। পৃথিবীকে করোনামুক্ত করতে হলে সবাইকে হাতে হাত মিলিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
পরাশর চট্টোপাধ্যায়
দত্তপুকুর, উত্তর ২৪ পরগনা
কৌতুকও নেই
আসীম কুমার মিত্রের ‘হারিয়েছে গান’ (১৬-১০) পড়ে মনে হল গানের পাশাপাশি আর একটি জিনিসও পুজোর সময় হারিয়ে গিয়েছে। পুজোর কমেডি। পুজোর সময় রেকর্ডে, পরে ক্যাসেটে কৌতুক নকশা পরিবেশিত হত। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, জহর রায়, নবদ্বীপ হালদারের মুখের মজাদার ছবি বা কার্টুন দিয়ে বেরোত পুজোর কৌতুক নকশা। পুজো প্যান্ডেলে গানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাজত এই সব নকশা। সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়, যেমন— টেলিফোনে ক্রস কানেকশন, চালের অভাব, পাতাল রেলের খোঁড়াখুঁড়ি, মেসবাড়ির জীবন, মধ্যবিত্তের দাম্পত্য কলহ, পরিবার পরিকল্পনা, ছাত্র-আন্দোলন, বেকার সমস্যা, নির্বাচন, গ্রামের যাত্রাপালা, রেলভ্রমণ প্রভৃতি নিয়ে এগুলো তৈরি হত। মানুষ এগুলো শুনে সমস্যা ভুলে হাসত। দৈনন্দিন জীবনের সমস্যাগুলোকে হালকা করে দিত এই কৌতুক নকশাগুলো। আজকের দিনেও সমস্যার অন্ত নেই। কিন্তু সেই ধরনের কৌতুক নকশার বড় অভাব।
অভিজিৎ ঘোষ
শ্যামনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy