পুরুলিয়ায় ট্রেকিং। —ফাইল চিত্র।
পুরুলিয়ায় শৈলারোহণ করতে প্রতিদিন মাথাপিছু ফি ১৫০ টাকা! ১৬ বছরের নীচে স্কুলপড়ুয়া হলে ৭৫ টাকা। যা এত দিন সকলের জন্য ছিল মাত্র ২০ টাকা করে।
এমনকি, তাঁবুতে থাকতে প্রতিদিন মাথাপিছু দিতে হবে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা! ট্রেকিং, পাখি দেখতে গেলেও ফি লাগবে ১৫০ টাকা। পুরুলিয়ায় পাহাড়ে যেতে বন দফতরের নতুন নির্দেশিকায় এ ভাবেই বহু গুণ বেড়েছে ফি-এর পরিমাণ। যা দেখে
চোখ কপালে উঠেছে পাহাড়প্রেমীদের। তাঁদের দাবি, এমন চড়া হারে ফি বাড়ানো হলে পুরুলিয়ার বুকে হয়তো অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে অ্যাডভেঞ্চার ও পাহাড়প্রেমী মানুষজনের আনাগোনা।
যদিও বিতর্কের জেরে সোমবার পুরুলিয়ার বন দফতর সূত্রে দাবি করা হয়, ওই নির্দেশিকায় ব্যাখ্যার একাংশ ছাপা না থাকার কারণে এই ভুল বোঝাবুঝি। ওই দফতর সূত্রের খবর, শৈলারোহণ ও ট্রেকিংয়ের জন্য ফি ২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ টাকা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে সরকারি ডরমিটরিতে কেউ থাকলে তার ভাড়া হিসাবে নেওয়া হবে ১৫০ টাকা। শিবিরের জন্য বন দফতরের তাঁবু নিলে তার ভাড়া বাবদ ৩০০-৫০০ টাকার কথাই উল্লেখ করা হয়েছে ওই নির্দেশিকায়। তবে সেই কথা স্পষ্ট ভাবে লেখা না থাকায় বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। শীঘ্রই সেই তথ্য সংশোধন করা হবে বলেও দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে।
শৈলারোহণ থেকে ছোটখাটো ট্রেকিং, পাখি দেখা— পাহাড়ি পথে সড়গড় হতে অথবা প্রশিক্ষণ নিতে অ্যাডভেঞ্চার-প্রেমী বাঙালির অন্যতম প্রিয় গন্তব্য পুরুলিয়া। শীতে পুরুলিয়ার বিভিন্ন পাহাড়ে শৈলারোহণের প্রশিক্ষণ দিতে শিবিরের আয়োজন করে থাকে দক্ষিণবঙ্গের বহু পর্বতারোহণ ক্লাব। পাহাড়মনস্ক তরুণ-তরুণী থেকে স্কুলপড়ুয়া— সকলেই স্বল্প খরচে অংশ নিতে পারেন সেখানে। তার জন্য পুরুলিয়ার বন দফতরের কাছে আয়োজনকারী ক্লাবগুলিকে ফি দিতে হলেও তার পরিমাণ নিতান্তই কম। কিন্তু নয়া নির্দেশিকার জেরে সেই ফি-র বোঝা হঠাৎ এতটা বেড়ে গেলে শিবিরের প্রতি সাধারণের আগ্রহ হারাবে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকে।
সোনারপুরের একটি পর্বতারোহণ ক্লাবের তরফে পর্বতারোহী রুদ্রপ্রসাদ হালদার জানান, গত বছর গর্গাবুরু পাহাড়ে পাঁচ দিনের শৈলারোহণ শিবিরের জন্য প্রতিদিন মাথাপিছু ২০ টাকা করে ফি দিতে হয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘‘২০ টাকা থেকে ফি এক ধাক্কায় ১৫০ টাকা! সেই সঙ্গে তাঁবুতে থাকার জন্যও অতিরিক্ত ফি। এমন অবিশ্বাস্য হারে ফি বাড়ানো হলে প্রকৃতি চেনানো এবং অ্যাডভেঞ্চারের যে কর্মযজ্ঞ প্রতি শীতে পুরুলিয়ার নানা পাহাড়ে হয়ে আসছে, তা থিতিয়ে যেতে বাধ্য। বন দফতর ও ক্রীড়া দফতরের এ ব্যাপারে সদর্থক ভূমিকা নেওয়া উচিত।’’
এর আগে ২০১৯ সাল থেকে মাঠাবুরু পাহাড়ে শিবির করতে যাওয়া ক্লাবগুলিকে অবশ্য খানিকটা বেশি হারেই ফি গুনতে হয়েছে। মাঠাবুরুতে শিবির করতে প্রতিদিন ৪ হাজার টাকা (৪০ জন পর্যন্ত অংশগ্রহণকারীর ক্ষেত্রে) ফি ধার্য করা হয়েছিল। তবে পাহাড়প্রেমী ও ক্লাবগুলির আপত্তিতে সেই ফি-র পরিমাণ কিছুটা কমানো হয়। যদিও মাঠাবুরু ছাড়া অন্যত্র পরিকাঠামো না থাকায় ন্যূনতম ফি-ই নেওয়া হয়েছে এত দিন। এ ছাড়া নিয়ম মেনে শৈলারোহণের প্রশিক্ষণ শিবির করা হলে আয়োজনকারী ক্লাবগুলিকেও ৩০ হাজার টাকা করে সরকারি অনুদান দেওয়া হচ্ছে।
সোমবার পুরুলিয়ার বন দফতরের আধিকারিকের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করেন রাজ্যের যুবকল্যাণ ও ক্রীড়া দফতরের অধীনে থাকা ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড
অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস ফাউন্ডেশন’-এর পর্বতারোহণ সংক্রান্ত উপদেষ্টা দেবদাস নন্দী। এ দিন বৈঠকের পরে তিনি বলেন, ‘‘সদর্থক আলোচনা হয়েছে। ফি-র পরিমাণ আগের তুলনায় কিছুটা বাড়ানো হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তা এমন ভয়ঙ্কর
হারে নয়। খুব তাড়াতাড়ি নতুন নির্দেশিকা জারি করবে পুরুলিয়ার বন দফতর।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy