“‘ছাপ্পা’ ধাক্কায় অস্বস্তি দলে” (১-৩) শীর্ষক সংবাদ পড়ে নিজের কিছু অনুভূতি তুলে ধরতে চাই। মনে পড়ল ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময়কার কিছু কথা। প্রথম বার ভোট দেব, মনের মধ্যে একটা চাপা উত্তেজনা। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে গিয়ে ইভিএম-এর সামনে দাঁড়াতেই কিছু ছেলে চলে এল। সবাই চেনামুখ। এক জন আমায় বামপ্রার্থীর বোতামটি টিপে দিতে বলল। আর এক জন বলল “আরে ও জানে। আমাদেরই লোক।” আমার পরিবার বাম সমর্থক। তাই এই ধরনের মন্তব্যে খুব খারাপ লাগছিল। প্রথম বার ভোটদানের পর একরাশ মনখারাপ নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। আমাদের এলাকায় এই ধরনের কাজ প্রথম।
পর দিন শুনলাম, অনেকেই ভোট দিতে পারেননি। এবং এটা শুধু যে বিরোধী দলের সমর্থকদের সঙ্গে হয়েছে, তা নয়। শাসক দলের কোনও নেতার সঙ্গে কারও ব্যক্তিগত সমস্যা থাকলেও তাঁকে আটকে দেওয়া হয়েছে। সবাই সমালোচনা করছেন। ঘটনা এখানেই শেষ নয়। এর পর আমাদের বুথে পুনর্নির্বাচন হল। এবং তার আগের দিন রাতে শাসক দলের কর্মীরা বেছে বেছে বিরোধী দলের সমর্থকদের বাড়িতে গিয়ে ভোট না দিতে যাওয়ার হুমকি দিয়ে এল। আমাদের বাড়িতে আমাদের ঘর ছাড়া সবাই বামবিরোধী রাজনীতির সমর্থক হওয়ায় হুমকি পেলেন। পরিবারের মধ্যে এই ঘটনায় আরও অস্বস্তিতে পড়েছিলাম। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে যাওয়ার রাস্তায় বিভিন্ন জায়গায় ভোটারদের আটকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পাড়ার চেনা মানুষরা যেন মনে হচ্ছিল আমাদের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলছেন।
এর পর ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটেও আমাদের এলাকায় সেই একই ছবি। পার্টির ভিতরে কিছু কর্মী এই বিষয়টি তুলে ধরলেও, তাঁদের আমল দেওয়া হয়নি। আমরা আজকেও সেই একই ছবি দেখতে পাচ্ছি। এখনও আমাদের রাজ্যে বিরোধী শক্তি শাসকের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার মতো জায়গায় নেই। ভোট যদি ঠিকমতো হত, তা হলেও শাসক ভাল ফল করত। তা-ও কেন এই ধরনের আচরণ? শাসকের এই আচরণের জন্য কিন্তু অনেক তৃণমূল সমর্থকও লজ্জায় পড়ছেন। তাঁদের কথা নেতৃত্ব ভাবছেন?
অভিজিৎ ঘোষ
ইছাপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
বিরোধীর দায়িত্ব
‘ছেলেখেলা’ (৩-৩) শীর্ষক সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে এই পত্রের অবতারণা। সেই বাম আমল থেকে দেখে আসছি সারা ভারত জুড়ে সব রাজনৈতিক দলের পুরসভা, বিধানসভা, লোকসভা-সহ যে কোনও নির্বাচনে দু’টি মূল সুর। একটি হল বিরোধীশূন্য, আর একটি হল পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি। অর্থাৎ, যেন তেন প্রকারেণ ক্ষমতা দখল। এই চিন্তাভাবনার ফল যে কত মারাত্মক, তা কি রাজনৈতিক দলের নেতারা জানেন না? এই ধরনের চিন্তাভাবনা সুস্থ গণতন্ত্রের পরিপন্থী। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে যদি বিচার করা যায় তা হলে দেখা যাবে যে, সেখানে বলা হয়েছে— যে কোনও রাজ্যের বা দেশের বিরোধী দল যত শক্তিশালী, তার শাসক দল কখনও কোনও স্বৈরাচারী ভূমিকা পালনের সাহস পায় না। পাশাপাশি শাসক দল যাতে বিপথে চালিত না হতে পারে, তার জন্য বিরোধীরা একটা ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে। যেখানে বিরোধী দল যত শক্তিশালী, সেখানে শাসক দল তত ভাল। এ কথা অস্বীকার করার জায়গা নেই।
বিরোধীশূন্য রাজনীতি সুস্থ গণতন্ত্রেরও পরিপন্থী। সকল রাজনৈতিক দলের মাথায় রাখা উচিত যাতে নির্বাচনে এই প্রবণতা এবং পেশি আস্ফালন থেকে দূরে সরিয়ে রেখে মানুষকে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে নির্বাচনে তাঁদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেওয়া যায়। অন্যথায়, নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হবে, যা সাম্প্রতিক নির্বাচনে দেখা গিয়েছে।
মিহির কুমার ঘোষাল
দালাল পুকুর, হাওড়া
বুথ দখল
জয়নগর মজিলপুর পুরসভার সাধারণ নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা প্রসঙ্গে আমার এই পত্রের অবতারণা। গত ২৭ ফেব্রুয়ারিতে এই পুরসভার ১৪টি ওয়ার্ডেই শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোটদান শুরু হয়। যে হেতু দু’দিন আগে রাতে এখানকার দু’টি ওয়ার্ডে বহিরাগত দুষ্কৃতীরা হানা দিয়েছিল এবং জনৈক পুলিশ অফিসার ও তাঁর বাহিনী রাতের টহলদারিতে থাকা সত্ত্বেও তাঁদের উপস্থিতিতে দুষ্কৃতীরা পালাতে সক্ষম হয়েছিল, সেই জন্য এলাকার মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগে বদ্ধপরিকর ছিলেন। সেই কারণে বুথে বুথে স্থানীয়দের লম্বা লাইন ছিল। কিন্তু সকাল আটটা নাগাদ একটি ওয়ার্ডে দুষ্কৃতীরা পাইপগান বোমা ইত্যাদি নিয়ে ঢুকে ভোটারদের তাড়িয়ে ছাপ্পা মেরে দ্রুত ভোট শেষ করে। দায়িত্বে থাকা পুলিশবাহিনী তাদের পালাতে সাহায্য করে।
এর পাশের ওয়ার্ডটিতেও একই কায়দায় বিরোধী প্রার্থীদের মারধর করে ভোটারদের ভয় দেখিয়ে বুথ দখল করে ছাপ্পা দিয়ে ভোট শেষ করে। থানা থেকে ১০ মিটারের মধ্যে তৈরি হয়েছিল ২ নং ওয়ার্ডের ভোটগ্রহণ কেন্দ্র এবং রাস্তায় সিসিটিভি লাগানো হয়েছিল মাননীয় সাংসদের সাংসদ কোটার অর্থ দিয়ে। দুষ্কৃতীরা এগুলো নষ্ট করে দিয়েছিল। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা করতে দেখা যায়নি জয়নগর থানাকে। এ ভাবে একে একে মজিলপুরের বিভিন্ন ওয়ার্ড দখল হয় এবং প্রকৃত ভোটাররা ভোট দানে বঞ্চিত হন। যে দুটো ওয়ার্ডে বিরোধীরা জয়ী হয়েছেন, তার একটায় ভৌগোলিক অবস্থার কারণে দুষ্কৃতীরা হানা দেয়নি, অপরটিতে হানা দেওয়ার চেষ্টা করলেও বিরোধীরা প্রতিহত করায় তারা সফল হয়নি।
বিশ্বম্ভর চট্টোপাধ্যায়
জয়নগর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
আনন্দ!
নিখিল কবিরাজের চিঠিটির প্রসঙ্গে (‘বিজয় কই?’, ২৬-২) এই চিঠির অবতারণা। বুথ জ্যাম, রিগিং করে বিজয় মিছিলে হাঁটার কথা তো ছেড়েই দিলাম। টাটার মতো কোম্পানিকে তাড়িয়ে দিয়ে কী ভাবে বিজয় মিছিল হয়েছিল, সেই কথা ভোলার নয়। এতেই ওদের আনন্দ, এতেই ওদের বিজয়। এর পরে কোনও স্বদেশি বা বিদেশি শিল্পসংস্থা পশ্চিমবঙ্গের দিকে ফিরেও তাকায়নি। তাতে আফসোসের কিছু নেই। ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে জিতে যাওয়াটাই ওদের উদ্দেশ্য। বিধানচন্দ্র রায়ের পরে এই রাজ্যে আর সে ভাবে শিল্প হয়নি। বছর বছর পাশ করে বেরোনো ছেলেমেয়েদের কাজ করার দরকার নেই। সব কিছুই তো দুয়ারে বসেই এখন পাওয়া যায়। রাজনৈতিক টানাপড়েনের শিকার হয়ে পশ্চিমবঙ্গের শিল্প সম্ভাবনার চিরমৃত্যু ঘটুক, এতেই রাজনৈতিক দলগুলো খুশি। এই আনন্দ নিয়েই বিজয় মিছিল হয়।
তাপস গুপ্ত
বারাসত, উত্তর ২৪ পরগনা
নজরদারি চাই
‘পরীক্ষা-আশঙ্কা’ (৪-৩) পড়ে জানতে পারলাম, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি মহাশয় আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পড়ুয়ারা নিজের স্কুলে পরীক্ষা দেওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষিকারা উত্তর বলে দিতে পারেন। এ প্রসঙ্গে কিছু কথা। প্রথমত, দুটো বছর শিক্ষার্থীরা সেই ভাবে পড়াশোনা করতে পারেনি। অনলাইনে আমরা শিক্ষকরাও সেই ভাবে পাঠ দিতে পারিনি (সমগ্ৰ রাজ্যে তা সম্ভবও নয়), দ্বিতীয়ত, কিছু স্কুলও চাইবে সবাইকে পাশ করাতে। সেই ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বসানো এবং নকল করলে তা না দেখার ভান— প্রত্যহ চলতেই থাকবে। তৃতীয়ত, প্রাইভেট স্কুলগুলোর ক্ষেত্রে সোনায় সোহাগা। ভাল রেজ়াল্ট করানো বা পাশ করানোর দায় তাদের, নতুবা পরের বছরের মার্কেটিং ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। এর জন্য প্রয়োজন ছিল যতটা সম্ভব কাছে পরীক্ষা সেন্টারগুলো রাখা, যেটা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ করতে পেরেছে। এবং এই আশঙ্কা থেকে বাঁচার একমাত্র পথ প্রধান শিক্ষক ও সহপ্রধান শিক্ষক ছাড়াও অন্য স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নজরদারির ব্যবস্থা এবং সকলের সহযোগিতা।
সূর্যকান্ত মণ্ডল
কলকাতা-৮৪
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy