‘পাখিটির দশা’ (১১-৪) সম্পাদকীয়ের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। যোগ্য-অযোগ্য বিতর্কের মাঝে প্রকৃত যোগ্য শিক্ষক কে, এই প্রশ্নে আজ শিক্ষার্থীরাও দ্বিধান্বিত। এই রকম পরিবেশে শ্রেণি-শিক্ষণে শিক্ষার্থীদের সক্রিয়তা কতটা আশা করা যায়, সে প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক। যিনি নিজেই অন্যায়ের সঙ্গে আপস করে শিক্ষকতার পেশায় প্রবেশ করেছেন, সেই শিক্ষকই বা শিক্ষার্থীকে আলোর পথ দেখাবেন কী ভাবে?
শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ আজ আদালতেও স্বীকৃত। শাসক দলও অস্বীকার করতে পারছে না। এই আবহে স্কুলগুলিতে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকে আছে। একেই স্কুলগুলি শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাবে ধুঁকছে। তার উপরে বিপুল সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীর নিয়োগ বাতিল হয়েছে। তাই কাজ চালানোর জন্যে স্কুলগুলিতে অতিথি শিক্ষক এবং অতিথি শিক্ষাকর্মীর প্রয়োজন হয়েছে। এ ব্যাপারে সরকার উদাসীন হলেও অতিথি শিক্ষকরা স্কুলের কথা ভেবে ১০০ দিনের কাজের দৈনিক মজুরির চাইতেও কম বেতনের বিনিময়ে নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন। আমাদের দেশে সম্মানজনক বেতনে কাজের সুযোগ যে বেশ কম তাও প্রমাণিত হয় এই তথ্য থেকে। যদিও সম্মানজনক পারিশ্রমিক দেওয়ার ক্ষমতা স্কুলগুলির নেই। সরকারি নিয়ম মেনে স্কুলগুলি শিক্ষার্থী-পিছু ২৪০ টাকা বেতন সংগ্রহ করতে পারে। পিছিয়ে পড়া এলাকায় সে টাকাও আদায় করা যায় না। এমন অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা শুধু একবেলা খেতে স্কুলে আসে। তাই ‘দিন আনি দিন খাই’ পরিবারগুলোর পক্ষে ২৪০ টাকা বেতন দেওয়ারও সামর্থ্য থাকে না। কম্পোজ়িট গ্রান্ট বাবদ সরকার থেকে যে টাকা স্কুলগুলি পায়, এ-বছর তার মাত্র ২৫ শতাংশ টাকা স্কুলগুলির হাতে এসেছে। তাই অতিথি শিক্ষকদের সম্মানজনক পারিশ্রমিক তো দূর, চক-ডাস্টার কেনারও সংস্থান হয়নি। এক দিকে তহবিলের দৈন্যদশা, অন্য দিকে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের অভাব— সব মিলিয়ে সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীরা আজ ভীষণ ভাবে অসহায়। এমতাবস্থায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘তোতাকাহিনী’-র নিন্দুকের মতো কেউ প্রশ্ন করতেই পারে, “মহারাজ, পাখিটাকে দেখিয়াছেন কি?”
অজয় ভট্টাচার্য, বনগাঁ, উত্তর ২৪ পরগনা
দুর্নীতিগ্রস্ত
সম্ভবত বিবেক দংশনে জর্জরিত হয়েই প্রসার ভারতীর প্রাক্তন সিইও ও রাজ্যসভার প্রাক্তন পদত্যাগী সদস্য (টিএমসি) জহর সরকার তাঁর প্রবন্ধ ‘আমরা হেরে যাইনি’ (১১-৪) উপস্থাপন করেছেন। একের পর এক অপ্রিয় সত্য কথা অবলম্বনে তাঁর এই পাঠক হৃদয় জয় করা প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠির অবতারণা। অতীতে যাঁরা রাজ্য শাসন করেছেন, তাঁরা সকলেই যে ধোয়া তুলসীপাতা ছিলেন, এমন বলা যাবে না। দুর্নীতি আগেও হয়েছে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন মা-মাটি-মানুষের সরকারের লাগামহীন বহুবিধ দুর্নীতি অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। যদিও অস্বীকার করার উপায় নেই যে, তৃণমূল সরকার রাজ্যে অনেক ভাল কাজও করেছে। বহু সামাজিক প্রকল্পের দৌলতে অজস্র মানুষের উপকার হয়েছে। কিন্তু সরকারের সব কৃতিত্ব ঢাকা পড়ে গিয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অ-শিক্ষক কর্মচারীদের চাকরি বিক্রি করার ঘটনায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর ‘কু’-পরামর্শদাতাদের অদূরদর্শিতাতেই সরকারের আজ এমন অবস্থা। তৃণমূলের ১৪ বছরের রাজত্বকালের বিভিন্ন কাজকর্ম ও বহুবিধ মন্তব্যের সূত্রে মনে হয়েছে, এই দলটার মূল দর্শনই হল বৈধ ও অবৈধ ভাবে ধনদৌলতের বিস্তার ঘটানো। বহু দিন আগে দলের এক বিশাল কর্মিসভায় নেত্রীর দেওয়া ‘৭৫-২৫’ ফর্মুলাই হচ্ছে নোট কামানোর অলিখিত লাইসেন্স। আর এই অলিখিত লাইসেন্সের দৌলতে যে যত বেশি ডিভিডেন্ড দিতে পারবে, সে-ই পাবে আদর, ভালবাসা, ক্ষমতা ইত্যাদি। এই দলে উপরমহলের নির্দেশ বা অনুপ্রেরণা ছাড়া কোনও সুকর্ম বা কুকর্ম সাধিত হতে পারে না।
প্রবন্ধকার তাঁর প্রবন্ধের শেষ ভাগে বলেছেন, এক হাতে ভর্তুকি আর এক হাতে চুরি, দুর্নীতি, তোলাবাজি, হুমকি আর দাদাগিরি আর তারা (জনগণ) বরদাস্ত করবে না। কিন্তু পুলিশি বর্বরতা ও মিথ্যা কেসে ফাঁসিয়ে দেওয়াকে উপেক্ষা করে আন্দোলন কি চিরস্থায়ী হওয়া সম্ভব? তা ছাড়া রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ‘সেটিং তত্ত্ব’ তো এখনও জীবিত।
বাবলু নন্দী, কলকাতা-৭৯
ডিজিটাল সুরক্ষা
কথায় বলে, প্রদীপের শিখার নীচে সর্বদাই অন্ধকার। বর্তমানে ভারত-সহ বহু দেশ প্রযুক্তিগত দিক থেকে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছনোর দৌড়ে অংশ নিয়েছে বটে, তবে এই সবের মধ্যেই কোথাও না কোথাও অন্ধকার দিকটি থেকে যাচ্ছে।
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের এক বাসিন্দার গল্প প্রযুক্তির ‘অন্ধকার’ দিকটির কথাই তুলে ধরে। লোকটির নাম প্রকাশ, আগে তিনি থাকতেন বাঁকুড়া জেলার কোনও এক গ্রামে। প্রায় দু’বছর হল, তিনি আমাদের গ্রামে নতুন বসতি গড়েছেন। এক দিন সকালে তিনি আমাদের জানালেন যে, ব্যাঙ্কে রাখা তাঁর সব টাকা উধাও হয়ে গিয়েছে। এই বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করতে জানা গেল, আগের দিন রাতে তাঁর কাছে একটি ফোন আসে। এক ব্যক্তি বলেন, তাঁর আধার কার্ডের সঙ্গে ব্যাঙ্কের বইয়ের লিঙ্ক নেই। তিনি আধার নম্বর চাইলে, প্রকাশবাবু প্রাথমিক ভাবে রাজি না হলেও, শেষ পর্যন্ত প্রতারকের ‘ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়া’র ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেন। এর পর দিন সকালে পার্শ্ববর্তী ব্যাঙ্ক থেকে ৫০০ টাকা তুলতে গিয়ে জানতে পারেন যে, তাঁর অ্যাকাউন্ট শূন্য। এই সমস্যা যে শুধু প্রকাশের সঙ্গেই হচ্ছে বা হয়েছে তা নয়, ভারতের বহু জায়গার বহু দরিদ্র মানুষ এর শিকার হচ্ছেন। আজকের দিনে যার নাম ডিজিটাল মেজ়। এটি সাধারণত গোলকধাঁধার মতো কাজ করে বিশেষত সেই সব মানুষের জন্য, যাঁরা এই দ্রুত ডিজিটাইজ়েশন প্রক্রিয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছেন না। ফলে ভারতের এই দ্রুত ডিজিটাইজ়েশন প্রক্রিয়া এক শ্রেণির মানুষের কাছে অভিশাপ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই প্রক্রিয়ার উপর পুরোপুরি ভরসা রাখা যাবে না যে-হেতু উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে এর মাধ্যমে চুরি-জালিয়াতি হচ্ছেই। একই কথা খাটে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপরেও। যে-হেতু এর সাহায্যে জালিয়াতি, গোপন তথ্য সংগ্রহ ও গোপন তথ্য প্রচার আরও সহজ হয়েছে।
আমরা শুধুমাত্র একটি ওটিপি বেসড সিস্টেম-এর উপর নির্ভর করে রয়েছি, যার খারাপ দিকটিও বেশ প্রকট। এর জন্য আমাদের অজানতেই আমাদের গোপন তথ্য চলে যাচ্ছে অন্যদের হাতে। ফলে সরকারের ডিজিটাল ইন্ডিয়া-র স্বপ্ন বার বার আহত হচ্ছে। এই ফাঁদ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়— সচেতনতা। সেই সঙ্গে এই ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত উন্নতির প্রয়োজন যাতে এই ধরনের জালিয়াতি রোধ করা যায়। তবেই ডিজিটাল ইন্ডিয়ার স্বপ্ন সফল হয়ে উঠবে।
অর্পণ মণ্ডল, সাদিপুর, পূর্ব বর্ধমান
চড়া বৃদ্ধি
গত বছর আমাদের ছোট্ট ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্সের ফি ছিল ৩২০ টাকা। এই বছর তা পুনর্নবীকরণ করার সময় জানলাম সেই ফি আরও ৮৫০ টাকা বেড়ে সর্বমোট ১১৭০ টাকা হয়েছে। কেন ও কি যুক্তিতে এই বৃদ্ধি, তা অজানা। “কার কাছে গেলে এর থেকে রেহাই পাবো” জিজ্ঞাসা করাতে কাউন্টারের অপর পার থেকে জবাব এল, সরে দাঁড়ান, পিছনের লোককে আসতে দিন। কলকাতা পুরসভা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করছি, এত চড়া হারে ট্রেড লাইসেন্স ফি বৃদ্ধি করবেন না।
শান্তনু চক্রবর্তী, কলকাতা-১৯