Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Panjshir Valley

সম্পাদক সমীপেষু:পঞ্জশিরের মেয়েরা

বরং যা কিছু প্রতিবাদ হয়েছে, তা কাবুলে। কাবুলের রাস্তায় প্ল্যাকার্ড হাতে নেমে পড়েছেন আফগান নারীশক্তি।

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫:২৭
Share: Save:

কিছু দিন আগে খবরে প্রকাশ পেয়েছিল, পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর প্রধান ফৈজ় হামিদ কাবুলে পা রাখার পর থেকেই পঞ্জশির দখলের জন্য নর্দার্ন অ্যালায়্যান্স ফোর্সের ঘাঁটিগুলিতে লাগাতার হামলা শুরু করেছে পাক বাহিনীর যুদ্ধ বিমান। এমনকি পঞ্জশিরে ‘স্মার্ট বোমা’ও নিক্ষেপ করেছে পাক বায়ুসেনার ড্রোন। চূড়ান্ত অনৈতিক এই কাজের বিরুদ্ধে কোনও দেশকে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। রাষ্ট্রপুঞ্জেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। যদি এমন কাজ আমেরিকা বা ন্যাটো করত, পৃথিবী জুড়ে তীব্র সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় বয়ে যেত। এ দেশের বামপন্থীরা প্ল্যাকার্ড হাতে আমেরিকার বিরুদ্ধে পঞ্জশিরের মানুষের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনে রাজপথে প্রতিবাদে সরব হতেন। কিন্তু পাকিস্তানের ওই কাজের পর তাঁদের মুখে টুঁ শব্দটি নেই।

বরং যা কিছু প্রতিবাদ হয়েছে, তা কাবুলে। কাবুলের রাস্তায় প্ল্যাকার্ড হাতে নেমে পড়েছেন আফগান নারীশক্তি। পোস্টারে লেখা, পঞ্জশিরে হামলার অধিকার কারও নেই, না তালিবানের, না পাকিস্তানের। মুখে স্লোগান— “আজ়াদি-আজ়াদি, আইএসআই মুর্দাবাদ, পাকিস্তান হায় হায়।” পুরুষরাও কণ্ঠ মেলাচ্ছেন।

কিছু দিন আগে মেয়েদের মিছিল লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছিল তালিবান। এলোপাথাড়ি লাঠি চার্জে অনেক মেয়ের মুখ ফাটিয়ে দিয়েছিল জঙ্গিরা। আজ অকুতোভয় সেই মেয়েরাই কাতারে কাতারে রাস্তায় নেমেছেন, হাতে আফগান জাতীয় পতাকা। এত দিনে আফগানিস্তানের মানুষ-সহ গোটা বিশ্ব বুঝেছে, তালিবানের মতো পাকিস্তানও আফগানিস্তানের মানুষের স্বাধীনতা হরণকারী, প্রধান শত্রু।

এই লড়াই আফগানিস্তানের মানুষের জঙ্গিদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার অর্জনের লড়াই। আফগান নারীর শৃঙ্খল মোচনের লড়াই। বিশ্বকে অবিলম্বে মানবিক হাত বাড়াতে হবে।

কুমার শেখর সেনগুপ্ত, কোন্নগর, হুগলি

নির্ভয়

এই সংবাদপত্রের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত ছবিতে (৮-৯) দেখা যাচ্ছে, তালিবানি বন্দুকের সামনে তালিবানদের সাহায্যকারী পাকিস্তানের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত অকুতোভয় এক আফগান মহিলাকে। একদা এঁদেরই তো পূর্বসূরি ছিলেন আফগান (পাশতুন) বীর ফরিদ খান। একা লড়াইয়ে বাঘ মেরে ‘শের শাহ’ উপাধি নিয়ে যিনি মাত্র পাঁচ বছর ভারত শাসন করেছিলেন এবং অসাধারণ কিছু সংস্কার সাধন করেছিলেন। এর মধ্যে ছিল দেশের সর্ববৃহৎ সড়ক নির্মাণ, যার বর্তমান নাম গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড। পঞ্জশিরের বীর আফগানদের থেকে আমরা যেন সাহস ভিক্ষা নিই।

কাজি মাসুম আখতার, কলকাতা-১০৭

সংখ্যালঘুর দাবি

আফগানিস্তানে শরিয়ত চালু হয়েছে, ইসলামিক রীতিনীতি (স্বঘোষিত) চালু হয়েছে, তাতে অবাক ন‌ই। যে কোনও মুসলিম দেশে শরিয়ত থাকবে, সংখ্যালঘুদের স্বাধীনতা হরণ হবে, এটা নতুন চিত্র নয়। সংবিধান অনুযায়ী, ভারতে সংখ্যালঘুরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক নন। সংখ্যাগরিষ্ঠদের সমান সুযোগসুবিধা ভোগ করেন। তবু এ দেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের একাংশ তালিবান শাসনের প্রতি সমর্থন জানান। প্রশ্ন জাগে, তাঁরা নিজের দেশে ধর্মনিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থা চাইলেও, যেখানে মুসলিম সম্প্রদায় সংখ্যাগরিষ্ঠ, সেখানে সংখ্যালঘু ক্রীতদাস হয়ে থাকুক, এটাই কি চান?

আফগানিস্তানের নাগরিকরা যে আজ মুসলিম কট্টরবাদীদের হাতে বন্দি, তাঁদের পিছনে দাঁড়ানোর জন্য কোনও মুসলিম দেশকে এগিয়ে আসতে দেখি না। ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ মুসলিম সম্প্রদায়, এমনকি বামপন্থী মুসলিম নেতারাও এর অন্যথা নন। কাউকে দেখলাম না, দেশের রাজপথে তালিবানদের বিরুদ্ধে মিটিং, মিছিল, মানববন্ধনের উদ্যোগ করতে!

কৌশিক সরকার, রঘুনাথপুর, পুরুলিয়া

কেমন ইমরান

সারা বিশ্বের স্বাধীনতাপ্রিয় মানুষ দেখছেন, জানছেন, আফগানিস্তানে কী ভাবে জবাই হচ্ছে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। কী ভাবে তালিবানি জঙ্গিরা পুরুষতন্ত্রের প্রাধান্য এবং আতঙ্ক বজায় রাখতে তথাকথিত শরিয়তি আইন লঙ্ঘনের অজুহাতে নারীদের সর্বসমক্ষে খুন করছে। এক জন অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে বাড়ি থেকে টেনে বার করে এনে তাঁর পুত্রদের সামনে হত্যা করা হয়েছে, কেননা তিনি বিগত সরকারের প্রশাসনে চাকরি করতেন। একবিংশ শতকের সভ্য বিশ্ব-নাগরিকরা সচেতন চোখে এ সব বীভৎসতা দেখছেন। কেউ আবার বলছেন, না না, এই তালিবান সেই তালিবান নয়। আগের চাইতে অনেক ভদ্র এরা। অন্য দেশগুলো নিজেদের স্বার্থ বুঝলে বন্দুক এগিয়ে দিচ্ছে, আবার ফুরোলে নির্লজ্জের মতো পৃষ্ঠপ্রদর্শন। দীর্ঘ দিন থেকেই কোলে ঝোল-টানা এই রাজনীতির লক্ষ্য ছিল আফগানিস্তান। সেখানকার স্বাধীন, সচেতন, শান্তিকামী মানুষের সুস্থ ভাবে বাঁচার অধিকার, নারীদের অধিকার নিয়ে ছেলেখেলা হয়েছে বার বার। নুইয়ে দেওয়া গিয়েছে, কিন্তু ভেঙে ফেলা যায়নি। তাই রাস্তায় নেমে উদ্যত বন্দুকের সামনে মানুষের মতো বাঁচার দাবি নিয়ে বিরোধী বিক্ষোভ হচ্ছে কাবুলে, যার নেতৃত্বে মেয়েরা। নারীশক্তি যখন জেগে ওঠে, মৃত্যুকে তুচ্ছ করে কোনও অন্যায়ের প্রতিবাদ করে, তখন সুনির্দিষ্ট দেওয়ালের লিখন ফুটে ওঠে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে সারা বিশ্ব প্রথমে চিনেছিল এক জন উঁচু মানের খেলোয়াড়, পাকিস্তান ক্রিকেট টিমের অধিনায়ক হিসাবে। মাঠের মধ্যে বাকি দশ জনকে পরিচালনা করা আর একটি দেশকে পরিচালনা করা এক নয়। এক জন জাত খেলোয়াড় কিছু বিশেষ ইতিবাচক মানসিকতার অধিকারী হন, খেলার মাঠের বাইরেও সেই মানবিক বৈশিষ্ট্যগুলি ফুটে ওঠার কথা। কিন্তু আজ তিনি মধ্যযুগীয় মানসিকতাকে মদত জোগাচ্ছেন। সন্ত্রাসবাদের সমর্থনে প্রত্যক্ষ পদক্ষেপ এক জন খেলোয়াড়ের আদর্শের সঙ্গে কিছুতেই যায় না। আমরা যারা খেলাকে ভালবাসি, তাদের কষ্ট হয় যখন দেখি, হীন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মোড়কে ঢাকা পড়ে যায় স্পোর্টসম্যানশিপ। তা হলে কি খেলাধুলো মানুষের চরিত্রগঠনে সাহায্য করে না?

বিশ্বনাথ পাকড়াশি, শ্রীরামপুর, হুগলি

ভারতের ভূমিকা

‘কূটনীতির পরীক্ষা’ (২-৯) সম্পাদকীয়ের উপসংহারটি যথার্থ। বিগত তালিবানি শাসনে (১৯৯৬-২০০১) আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে আমেরিকা-প্রণীত, সামরিক বাহিনী পরিচালিত ‘প্রভিনশিয়াল রিকনস্ট্রাকশন টিম’ প্রকল্পে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলি অর্থের অপচয় করেছে। একমাত্র ভারতই নিরপেক্ষ ভাবে বরাবর বিনিয়োগ করে গিয়েছে আফগানিস্তানের সব রাজ্যে। এই পদক্ষেপের ফলে ভারত এক স্থায়ী রাজনৈতিক মূলধন অর্জন করেছে, যা আফগান মানুষের মনে গেঁথে গিয়েছে। আলোচ্য নিবন্ধ প্রকাশের পরেই ১৯৯৫ সালে তালিবানে মিশে-যাওয়া হক্কানি নেটওয়ার্কের নেতা অনাস হক্কানির কণ্ঠে ভারতের সঙ্গে নতুন ভাবে সম্পর্ক গড়ার কথা শোনা গিয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ উন্নয়নে শত্রুর সঙ্গে সম্পর্ক নতুন ভাবে চিন্তা করার উদাহরণ ইতিহাসে অনেক আছে। আফগানিস্তানের কাছে ভারত তো আগ্রাসী শত্রু নয়।

মনে রাখতে হবে, তালিবানরা মানুষের মন বা হৃদয় জয় করেনি। দেশ শাসনের প্রথম বিফল অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে, এবং সমাজ ও বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন না হয়ে যদি তালিবান শাসননীতি প্রণয়ন করে, তা হলে ৭৫ বছরের সফল ভারতীয় গণতন্ত্রকে কোনও উগ্রপন্থাই চরম বিপদে ফেলতে পারবে না। ভারতকে অপেক্ষা করতে হবে।

পঙ্কজ কুমার চট্টোপাধ্যায়, খড়দহ, উত্তর ২৪ পরগনা

অন্য বিষয়গুলি:

Panjshir Valley pakistan Drone Attack
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy