‘এমএ মেয়ের চায়ের দোকান’ (৩-১১) শীর্ষক সংবাদ প্রসঙ্গে এই পত্র। সত্যিই স্বনির্ভর হয়ে কিছু করার এই প্রচেষ্টা ও উদ্যোগকে কুর্নিশ জানাই। এ দেশ থেকে পাশ্চাত্যের নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে, গবেষণা করতে গিয়ে আংশিক সময়ের জন্য হোটেল-রেস্তরাঁয় কাজ বা গাড়ির ড্রাইভিং করা যায় অবলীলায়। সে ক্ষেত্রে কোনও সঙ্কোচ থাকে না। কিন্তু এ দেশে স্বনির্ভর হওয়ার ক্ষেত্রে প্রথাগত চাকরির বাইরে কিছু করতে গেলেই শিক্ষাগত যোগ্যতাকে সামনে এনে তির্যক মন্তব্য বা সরকারকে দোষারোপের একটা ঢেউ নেমে আসার প্রবণতা দেখা যায়।
টুকটুকি দাস এখানেই ব্যতিক্রমী। তাঁর এই উদ্যোগ শিক্ষিত কর্মপ্রার্থী বেকার যুবক-যুবতীদের বিকল্প পেশা সন্ধানে উৎসাহিত করবে। প্রাথমিক শ্রেণিতে বিভিন্ন পেশার মানুষদের সম্পর্কে মূল্যবোধের শিক্ষার পাঠে আমরা কবি কামিনী রায়ের কবিতাংশ পড়েছিলাম— “সকলের তরে সকলে আমরা...”। অর্থাৎ, সমাজে বিবিধ পেশার মানুষ থাকবেন, কিন্তু কেউই আমরা আলাদা কিছু নই। টুকটুকি দাস এই সমাজের তথাকথিত বিকল্প পেশা সন্ধানের আলস্যকে দূরে সরিয়ে সময় ও শ্রমকে ঠিক ভাবে ব্যয় করার শিক্ষা দিয়েছেন আমাদের। তাঁর এই কর্ম-উদ্যোগ আরও একটি বিষয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। পেশা পছন্দের ক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্যের জগদ্দল পাথরটাকে সরিয়ে নিজস্ব মতকে মর্যাদা দিয়ে জীবিকা নির্বাচন করে জীবনযুদ্ধে তিনি অবতীর্ণ হয়েছেন। এই যুদ্ধে অবশ্যই তিনি সফল হবেন।
সাবির চাঁদ, রেজিনগর, মুর্শিদাবাদ
বিকল্প পথ
টুকটুকি দাসের সংবাদটি পাঠকের মনে উচ্চশিক্ষিত ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আশার উদ্রেক করবে। তিনি প্রমাণ করেছেন যে, উচ্চশিক্ষা অর্জন করে চাকরি না পেয়ে হতাশ হয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলাই একমাত্র পন্থা নয়, জীবিকা উপার্জনের অনেক সৎ, সম্মানজনক পথ খোলা। যেটা দরকার তা হল, গতানুগতিক চিন্তা থেকে বেরিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে বিকল্প কর্মসংস্থানের সন্ধান করা।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে বংশপরম্পরায় এক ধরনের হীন মানসিকতা অনেককে অদ্ভুত এক ব্যূহে আবদ্ধ করে রাখে— লেখাপড়া শেখার একমাত্র লক্ষ্য চাকরি পাওয়া। উচ্চশিক্ষিত মানুষের জন্যও কিন্তু জীবিকা উপার্জনের অনেক উপায় আছে। টুকটুকির নিদর্শন তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
সঞ্জিত ঘটক, কলকাতা-১০৩
চাকরি অধরা
কোনও পেশাই ছোট নয়। সব পেশাই সমান। মুখে বললেও আমাদের দেশের মানুষ অন্তর থেকে সব পেশাকে আজও সমান মর্যাদা দেন না। টুকটুকি দাস স্বেচ্ছায় এই পেশা বেছে নেননি। এমএ পাশ করার পর চাকরির পরীক্ষা দিয়ে শেষ পর্যন্ত চাকরি অধরা হওয়ায় এই পেশাকে বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁর মতো বহু শিক্ষিত যুবকযুবতী আনাজের দোকান, টোটো, অটো চালকের পেশা বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন।
স্নাতকোত্তর টুকটুকি দাসের রেলের প্ল্যাটফর্মে চায়ের স্টল খোলা থেকে স্পষ্ট, রাজ্যের শিক্ষিত বেকার যুবকদের কী হাল! স্কুলশিক্ষক-সহ একাধিক কর্মক্ষেত্রে যখন অযোগ্য যুবকদের চাকরি পেতে দেখা যায়, তখন উচ্চশিক্ষিত টুকটুকি দাসের চাকরি না পাওয়া হতাশার জন্ম দেয়। রাজ্য সরকার লক্ষ্মীর ভান্ডার-সহ দুর্গাপুজোয় ক্লাবগুলিকে অনুদান দিয়ে যখন হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে, তখন মনে হয়, ওই অর্থে যদি রাজ্যে শিল্প, কারখানা হত, তা হলে টুকটুকি দাসের মতো শিক্ষিত বেকারদের এই দুরবস্থার সম্মুখীন হতে হত না। তাঁরা যোগ্যতা অনুযায়ী একটা চাকরি পেতে পারতেন।
অতীশচন্দ্র ভাওয়াল, কোন্নগর, হুগলি
থমকে উন্নয়ন
টুকটুকি দাসের খবরটা দেখে বিচলিত হওয়ার কারণ নেই। ইংরেজি সাহিত্যে প্রথম শ্রেণিতে এমএ পাশ করে কেউ কি চায়ের দোকান খোলার স্বপ্ন দেখে? কমপক্ষে একটা প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতার কাজ তিনি পেতেই পারতেন। কিন্তু এ রাজ্যে শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা ‘উন্নয়ন উন্নয়ন’ করে যতই গলা ফাটাক না কেন, প্রকৃত উন্নয়ন এ রাজ্যে অধরাই রয়ে গেল। আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনেস্কোর সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে প্রকাশ যে, প্রাইমারি থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, বিভিন্ন স্তরে আমাদের রাজ্যে স্কুলশিক্ষায় শূন্য পদের সংখ্যা ১ লক্ষ ১০ হাজার। বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষক ঘাটতিতে লেখাপড়া একেবারে শিকেয় ওঠার জোগাড়। বিগত দশ বছরে রাজ্য সরকারি বিভিন্ন দফতরে নিয়োগ প্রক্রিয়া একেবারে বন্ধ বললেই চলে। স্কুল সার্ভিস কমিশন পরীক্ষায় যথাযথ ভাবে পাশ করার পরও নিয়োগ হয় না। কর্মপ্রার্থীদের আন্দোলনে বসতে হয় রাস্তায়, বা কোর্টের দ্বারস্থ হতে হয়। করদাতার টাকায় বিভিন্ন জনমোহিনী প্রকল্প করে হয়তো সস্তার জনপ্রিয়তা পাওয়া যায়, কিন্তু সে পথে কি প্রকৃত উন্নয়ন ঘটে?
দিলীপ কুমার সেনগুপ্ত, কলকাতা-৫১
করুণা নয়
টুকটুকির ঘটনাটি এত বড় একটা খবর হয়ে উঠল কেন? মেয়ে বলে? ২০২১-এ ভারতীয় মেয়েরা যখন বোমারু বিমান ওড়াচ্ছে, মাউন্ট এভারেস্টে চড়ছে, অলিম্পিক্সের পদক আনছে, বিশ্ব বক্সিংয়ে চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে— তখন একটা চায়ের দোকান খোলা কি বিরাট কোনও অঘটন? গত বছরের এক সমীক্ষা দেখিয়েছিল— এই দেশে ৯৫% পাশ করা ইঞ্জিনিয়ার চাকরি পান না!
নীলরতন সরকার হাসপাতালে ১৫,০০০ টাকা মাসিক বেতনের ডোম পদের জন্য আবেদন করেন গ্র্যাজুয়েট, পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট, এমবিএ-রা। তা হলে চায়ের দোকানের এই বিবরণ কিসের জন্য? টুকটুকি এই বাংলার এক জন লড়াকু মানুষ। পাঠকদের করুণার প্রত্যাশী তিনি নন। অযথা, সংবাদপত্রের সার্চলাইট তাঁর উপর না-ই বা পড়ল?
দেবাশিষ মিত্র, কলকাতা-৭০
সুবিধা আদায়?
‘এমএ মেয়ের চায়ের দোকান’ শীর্ষক খবরটি পড়ে এতটুকু বিস্মিত হইনি। বরং কী ভাবে এক জন মেয়ে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতাকে বিজ্ঞাপন হিসাবে ব্যবহার করে মানুষের সহানুভূতি আদায়ে নেমেছেন, এটা ভেবে হতাশ হলাম। বর্তমানে দেশে বেকারত্বের সংখ্যা যখন ৪৫ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে, তখন এ রকম কত উচ্চশিক্ষিত নামমাত্র পারিশ্রমিকে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন, তার ঠিক নেই। বিএড, পিএইচ ডি ডিগ্রি নিয়েও কারখানায় শ্রমিকের, রাজমিস্ত্রির, বা কম যোগ্যতার কাজ করছে। সেখানে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখে দায়িত্ব বণ্টন ও বেতন— কিছুই হয় না। কিন্তু তাঁরা সেটাকে বিজ্ঞাপন হিসাবে ব্যবহার করে মানুষের সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করেন না।
খবরে প্রকাশ— মেয়েটি একাধিক চাকরির পরীক্ষা দিয়েও পাশ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই একটি প্রশ্ন জরুরি— তিনি চাকরির পরীক্ষায় পাশ করতে পারেননি কেন? তা হলে কি মেধার কোনও ঘাটতি ছিল? অর্থাৎ, তিনি নিজের ঘাটতিকে অস্বীকার করে সরকারের নীতিকে বিদ্রুপ করে সমাজের বেকারত্বকে প্রকট করতেই এমন পথ বেছে নিলেন? সব শেষে বলি, চা করার সঙ্গে কারও শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনও সম্পর্ক নেই। কোনও কালেই ছিল না।
প্রণয় ঘোষ, কালনা, পূর্ব বর্ধমান
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy