Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: কে এই ‘মূল হিন্দু’

সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের পিতামহ অক্ষয়কুমার দত্তের গবেষণা মতে ভারতে এক সময় কমবেশি ১৮৩টি উপাসক গোষ্ঠীর অবস্থান ছিল।

শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৭:০৯
Share
Save

প্রেমাংশু চৌধুরী লিখিত ‘রাজনীতির মহাকুম্ভ’ (৬-২) প্রসঙ্গে কিছু কথা। সনাতন হিন্দুধর্মের মূল সনাতনী ধারা যেমন আজ খুঁজে বার করা কঠিন, তেমনই এটা সহজেই বলা যায় এই ধারার মধ্যে এসে মিশেছে অন্য অনেক গোষ্ঠী যারা সনাতন শব্দের প্রসারিত অর্থে নিজেদের হিন্দু বলেই মনে করে। এই গোষ্ঠীগুলির মধ্যে ছোট বড় দ্বন্দ্ব লেগেই ছিল। কখনও তা রক্তক্ষয়ী রূপ নিয়েছে, কখনও তাত্ত্বিক লড়াই-এর মধ্যেই সীমায়িত থেকেছে। এই বিষয় নিয়ে ত্রিবেণী সঙ্গমে কম জল গড়ায়নি। সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের পিতামহ অক্ষয়কুমার দত্তের গবেষণা মতে ভারতে এক সময় কমবেশি ১৮৩টি উপাসক গোষ্ঠীর অবস্থান ছিল। যে গোষ্ঠী যেখানে তুলনামূলক বেশি সেই গোষ্ঠী সেখানে আধিপত্য বিস্তারে কসুর করেনি। সকলেই দেখাতে চায় তারাই সবার সেরা। এই সর্বশ্রেষ্ঠ হওয়ার তীব্র প্রচেষ্টা কিন্তু কোনও সময়ই কমেনি। এই বিবিধ বিভাজন প্রাচীন ভারতের জাতীয় সংহতির ক্ষেত্রে কুঠারাঘাত হেনেছে বলেই সহমত পোষণ করেন এক শ্রেণির ইতিহাসবিদ। তাঁরা উদাহরণ হিসাবে আলেকজ়ান্ডারের ভারত আক্রমণের সময়ের কথা বলেন।

সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা আসে বৌদ্ধধর্মের কাছ থেকে। এক সময় রাজা, সম্রাট, সাধারণ প্রজা যখন বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করছেন, তখন হিন্দুধর্মের বৃহত্তম গোষ্ঠীপিতা আদি শঙ্করাচার্য চিন্তিত হয়ে পড়লেন। তিনি যা করলেন সেই কূটচালগুলি বিরল। তারই একটি হিন্দু ঐক্যের নামে কুম্ভ সম্মেলন, হিন্দু ঐক্যের নামে কুম্ভমেলা এবং তলে তলে উগ্র হিন্দুত্ববোধ জাগ্রতকরণ। তবুও এ কথা বলা যায় যে, হিন্দু অনৈক্য ও বিভাজন রোধ করা সম্ভব হয়নি। আর ঠিক সেই জায়গা থেকেই খুব সুকৌশলে রাশটা চলে এল উগ্র দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদীদের হাতে। তাঁরা রাজনৈতিক সহায়ক সংগঠনের মাধ্যমে তলে তলে এত দিন যে ঐক্য ও উগ্রতার মোড়কে বিপণন করছিলেন, এ বার মহাকুম্ভমেলায় সেটা মোড়ক ছাড়াই খোলাখুলি হাতে ধরিয়ে দিলেন। তাঁরা বারে বারে একটাই প্রচার চালালেন— এই দেশ শুধুমাত্র মূল হিন্দুদের দেশ। এই মূল হিন্দু বা সনাতনী হিন্দু কারা, সেই বিষয়ে কি তাঁদের স্পষ্ট কোনও ধারণা আছে? তাত্ত্বিক কোনও ভাবনার হদিস দিতে পারবেন কি? দলিতরা কি হিন্দু নন? জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষরা কি হিন্দু নন? মণিপুরে যে অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটে চলেছে সেই বিষয়ে কেন্দ্রের উদাসীনতা কি বার্তা দেয় না যে সব ভিন্ন জাতিগত পরিচয় ভুলে দিল্লির সরকার যাঁরা চালাচ্ছেন বা উত্তরপ্রদেশের বশংবদ সহযোগী শাসক যে পথে হাঁটছেন সেই পথেই মণিপুরও হাঁটুক। দিল্লির সরকার আসলে বোঝাতে চাইছে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য নয় বরং ঐক্যের মধ্যেই বৈচিত্র ধৃত রয়েছে আর সেই মহামূল্যবান ঐক্য নিহিত রয়েছে উগ্র হিন্দুত্ববাদের মধ্যে।

শান্তি প্রামাণিক, উলুবেড়িয়া, হাওড়া

আশার সমাধি

প্রেমাংশু চৌধুরীর লেখা ‘রাজনীতির মহাকুম্ভ’ প্রবন্ধ বিষয়ে কিছু কথা। স্বাধীনোত্তর সময় থেকে এখনও যা হয়নি, সেই বিরল কৃতিত্ব স্থাপন করলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।‌ অর্ধকুম্ভ, পূর্ণকুম্ভর পর এই বার মহাকুম্ভের আয়োজন করলেন তিনি। ২০২৪ সালের লোকসভার ভোটে আসন কমে যাওয়ার যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল, তাতে হিন্দুত্বের মলমের প্রলেপ দেওয়ার বিরাট সুযোগ এসে গেল মহাকুম্ভমেলার আয়োজন করায়। কুম্ভমেলাকে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জাতীয় মেলার তকমা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে আগেই। সেই সুযোগে যোগী মহারাজ কোমর বেঁধে লেগে পড়লেন আয়োজনে। প্রথমেই ভারতের নামী-দামি মানুষকে চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানালেন কুম্ভে পুণ্যস্নান করতে। গঙ্গাবক্ষে অনেক ভিআইপি তাঁবু তৈরি করলেন। চলল লাগাতার বিজ্ঞাপন।‌ হিন্দুত্বের ডালিতে রাজনীতির ফুলের সজ্জা সাজিয়ে চলতে লাগল লাগাতার প্রচার।‌ এ বারে যোগীর লক্ষ্য ছিল ২ লক্ষ কোটি টাকা রোজগার করে সরকারের ঘরে আনা। তাই তৈরি করা হয়েছিল আধুনিক তাঁবুর বিশালাকায় এলাকা। এর ফলে সাধারণ মানুষের আসা-যাওয়ার জায়গা ছোট হয়ে গেল।‌ যোগী ভুলে গেলেন ৪৫ দিনে ৪৫ কোটি মানুষকে আগমনের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল।

এ দিকে মানুষ চিরকালের আবেগের ডানায় ভর দিয়ে ট্রেনে, বাসে, যে যা পেরেছেন তার মাধ্যমেই পুণ্যার্জনের আশায় ছুটে গিয়েছেন ত্রিবেণীর সঙ্গমস্থলে। প্রতি দিন এক কোটি মানুষ প্রয়াগরাজে ঢুকলে কী ভাবে ভিড় সামাল দেবেন তার রূপরেখাই তৈরি করলেন না যোগী। যদিও ভেবেছিলেন মহাকুম্ভের শেষে মোদীকে বলতে পারবেন এ সব ছিল ‘যোগী কা কামাল’। দেখলেন, কেমন করে হিন্দু সম্প্রদায়ের নরম আবেগ উস্কে দিয়ে সফল কুম্ভমেলার আয়োজন করলাম!

সব আশা শেষ হয়ে গেল মৌনী অমাবস্যার দিনে। অসম্ভব ভিড় নিয়ন্ত্রণে কোনও ব্যবস্থা না থাকায় প্রাণ হারিয়েছেন ত্রিশ জন। আহত কত কেউই জানেন না। এখনও নিখোঁজ মানুষের জন্য পরিবারের মানুষেরা বিনিদ্র রজনী পার করে দিচ্ছেন।‌ যোগীজির রাজনৈতিক লাভের আশায় এখন নিরাশার ভ্রুকুটি। এত বড় দুর্ঘটনা সব পরিকল্পনা ঘেঁটে দিল।

আর প্রধানমন্ত্রী এত কিছুর পরও মিডিয়া পরিবৃত হয়ে কুম্ভস্নানের অভিনয় করেছেন। শরীরে ওয়াটারপ্রুফ জ্যাকেট পরে নেমেছিলেন গঙ্গাবক্ষে। মানুষ প্রশ্ন করছেন, আমরা তো আড়ম্বর ছাড়াই হৃদয় থেকে ডুবের পর ডুব দিচ্ছি। আর প্রিয় প্রধানমন্ত্রী শাহি স্নান করলেন ওয়াটারপ্রুফ জ্যাকেট পরে। এটা কেমন হল?

যা-ই হোক এই হিন্দু-হিন্দু খেলা কমবে বলে মনে হয় না। মানুষের স্বল্প স্মরণশক্তির কথা জানার জন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা পুনরায় একই স্লোগান তুলে ভোট ভিক্ষা করবেন। আস্তে আস্তে সব ঘটনা মানুষ ভুলে যাবেন।

বীরেন্দ্র নাথ মাইতি, খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

সচেতন থাকুন

তূর্য বাইনের প্রবন্ধ ‘যখন ছাদ ভেঙে পড়ে’ (৩১-১) নিয়ে কিছু কথা। সম্প্রতি কলকাতায় বাড়ি হেলে পড়া নিয়ে কলকাতা পুরসভাকে সবাই দোষ দিচ্ছেন। তবে এই নিয়ে যে সব প্রচার চলছে, তাকে বাড়াবাড়ি বলে মনে হচ্ছে। গত ১৩ বছরে কলকাতায় রকেটগতিতে বাড়ি নির্মাণ হয়েছে। বাম আমল কিন্তু এই বিষয়ে পিছিয়ে ছিল। এখন যে গতি দেখা যাচ্ছে তা বর্তমান সরকারের কৃতিত্ব। তবে, একটা গোটা নির্মাণপ্রক্রিয়াই বেআইনি হলে সেটাকে ছাড়পত্র দেওয়া উচিত না। কিন্তু এত বাড়িই বা হচ্ছে কেন?

যে ভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে নতুন নির্মাণ প্রয়োজন হবেই। না হলে লোক কোথায় বসবাস করবেন? যে পাড়ায় থাকতে হয়, সেখানে সব মানুষ যে ভাল নন, এ কথা যেমন সত্যি, তেমন বাড়ির ক্ষেত্রেও তা-ই। মোদ্দা কথা, ক্রেতাদের আরও সচেতন হতে হবে। বাড়ি কেনার সময় সব কিছু ভাল ভাবে প্রোমোটারের থেকে জেনেবুঝে নেওয়া দরকার। অনেক সময় একটু কম দামের লোভে তাঁরা চোখ বুজে বাড়ি কিনে ফেলেন। ফলাফল সব সময় ভাল হয় না। বর্তমানের গর্ভেই ভবিষ্যতের বিপদের বীজ থাকে।

প্রদীপ কুমার সেনগুপ্ত, ব্যান্ডেল, হুগলি

পুকুরের জল

নলের জল সরবরাহের কারণে পুকুরগুলো মজে গিয়েছে। পুকুরগুলি খনন করে গভীর ও জলধারণযোগ্য করে ফেলা হোক। এই পুকুরে বর্ষার জমা জল জমিতে সেচের কাজে লাগবে। ফলে মাটির নীচ থেকে জল ওঠানোর দরকার হবে না। জলজ প্রাণীও বিচরণ করতে পারবে। গাড়ি ধোয়া, রাস্তায় জল ছেটানো ইত্যাদির জন্য মাটির নীচের জল তোলার আর দরকার হবে না। পুকুরগুলো যাতে আবার মজিয়ে দেওয়া না হয় তার জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা থাকা উচিত।

মঞ্জুশ্রী মণ্ডল, তারকেশ্বর, হুগলি

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Central Government Hinduism

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}