অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, ১৬ নভেম্বর থেকে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হবে। শিক্ষাজগতের মানুষ এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। প্রায় দু’বছরের কাছাকাছি সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। স্কুল খোলার কথা শুনে শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকরা স্বভাবতই খুশি। কিন্তু এর পাশাপাশি থেকে যাচ্ছে আশঙ্কাও। পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত কোনও ছাত্রছাত্রীরই টিকাকরণ হয়নি। আবার ডবল ডোজ় নেওয়ার পরেও অনেকে কোভিড-আক্রান্ত হয়েছেন। এই অল্প দিনের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় আগের পরিকাঠামো ও সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা যাবে কি না, তা সময়ই বলবে। আপাতত নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস হবে। উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা বরাবরই ক্লাসে কম উপস্থিত থাকে। তা ছাড়া অনেকেই স্কুলছুট হয়েছে। তাই ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি কতটা হবে, স্কুল খোলার পর বোঝা যাবে। লোকাল ট্রেন সম্প্রতি চালু হলেও অধিকাংশ ট্রেনে প্রচণ্ড ভিড় হয়। দূরের শিক্ষকশিক্ষিকা, ছাত্রছাত্রীরা গাদাগাদি, ঠেলাঠেলি করে যদি স্কুলে আসেন, সে ক্ষেত্রে তাঁদেরও সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এ ছাড়াও প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থার্মাল গান, পর্যাপ্ত পরিমাণে স্যানিটাইজ়ার, মাস্ক, ব্লিচিং পাউডারের জোগান আছে কি না, সে বিষয়ে আগে থেকেই তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। স্কুলের বাথরুম পরিষ্কার রাখা, প্রতি দিন ক্লাস শুরুর আগে ও ছুটির পরে ক্লাসরুমে জীবাণুনাশক স্প্রে করা, এবং ছাত্রছাত্রীদের পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রেখে স্কুলে প্রবেশ ও প্রস্থান—এই বিষয়গুলোকেও নিশ্চিত করা প্রয়োজন। মাঝেমধ্যে চিকিৎসকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে এলে আখেরে সুবিধাই হবে।
গাফিলতি, অসাবধানতা ও অসচেতনতার কারণে যেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দরজা ফের বন্ধ হয়ে না যায়, সে দিকে সরকার, জনসাধারণ সবাইকেই নজর দিতে হবে।
স্বপন আদিত্য কুমার, অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
স্কুলের হাল
প্রায় ২০ মাস বন্ধ থাকার পর স্কুল খুলছে। স্কুল খোলার বিষয়টা অনেক অভিভাবকের কাছে খুশির, আবার অনেকের কাছে উদ্বেগের। দীর্ঘ দিন স্কুল বন্ধ থাকার জন্য স্কুলের পরিকাঠামো নিয়ে ভাবতে হবে। স্কুলের নোনাধরা দেওয়াল, ক্লাসরুমের ছাদ, উইপোকায় কেটে দেওয়া টেবিল ও বেঞ্চ, সিলিং ফ্যানের অচল হয়ে যাওয়া, স্কুলে বিদ্যুৎ সংযোগে ব্যাঘাত ঘটা, স্কুলের কাগজপত্র ইঁদুর, উইপোকাতে কেটে দেওয়া— এগুলো নিয়ে প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে। স্কুলে ছাত্রছাত্রীরা একটা বেঞ্চে পাঁচ-ছ’জন গা ঘেঁষাঘেঁষি করে বসে। তা হলে দূরত্ববিধি কী ভাবে মানা হবে স্কুলে? স্যানিটাইজ়ার, মাস্ক ব্যবহার করা ও সাবান দিয়ে হাত ধোয়া— স্কুলে ছাত্রছাত্রীরা এগুলোই বা কতটুকু মেনে চলতে পারবে, সে নিয়ে উদ্বেগ থাকছে। দীর্ঘ দিন স্কুল বন্ধ থাকায় স্কুলছুট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে। অনেকেই স্কুলে ফিরতে চাইছে না। তাদেরকে স্কুলে ফেরাতে তৎপর হতে হবে শিক্ষা দফতরকে। তাই স্কুল খুললেও চিন্তা রয়েই যাচ্ছে এই
সমস্ত বিষয়ে।
মুন্সি দরুদ, কাজিপাড়া, বীরভূম
পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ
মুখ্যমন্ত্রীর স্কুল খোলার নির্দেশ দেরিতে হলেও মন্দের ভাল। কারণ, বিধানসভার আসন ভর্তির তৎপরতা না দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যতের কথাই আগে ভাবা উচিত ছিল। বহু পুরসভার নির্বাচন কয়েক বছর ধরে বাকি আছে। কিন্তু তাতে কি জনসেবা বন্ধ আছে? বিদ্যালয় ও কলেজগুলো খোলার আগে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে এবং শিক্ষকদের অবশ্যই টিকাকরণ করতে হবে। প্রয়োজনে অন্য দেশগুলোয় স্কুল খোলার জন্য যে ধরনের সতর্কতা অনুসরণ করা হয়েছে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবা যেতে পারে।
রবীন্দ্রনাথ নাথ বসু, কলকাতা-৮
রতনের পাঠশালা
‘বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বারান্দায় শিক্ষার আলো’ (১৯-১০) শীর্ষক প্রতিবেদনটির জন্য ধন্যবাদ। এখন ওই অবৈতনিক কোচিং সেন্টারের নাম ‘রতনের পাঠশালা’। এই রকম মানবকল্যাণে নিবেদিত ডিভিসি-র প্রাক্তন কর্মী তথা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার রতন ঘোষ বাঙালির গর্ব।
নব্বইয়ের দশকে ডিভিসি বাঁকুড়া জেলার গঙ্গাজলঘাটিতে পূর্ব ভারতের সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎ প্রকল্পটি থেকে উৎপাদন শুরু করে। রতন ঘোষ নির্মাণ কাজের সূচনা লগ্ন থেকে যোগ দেন। তিনি এখানকার মানুষের দুর্দশার কথা উপলব্ধি করে ‘সদ্ভাবনা মঞ্চ’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে তোলেন। এটি যাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত, তিনি হলেন ডিভিসি-র তৎকালীন রিসার্চ অফিসার বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন রঙ্গলাল ধাড়া, মদনগোপাল গঙ্গোপাধ্যায়, উজ্জ্বল কুন্ডু, অপূর্ব সিংহ, দীপক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরা লক্ষ করেন যে, এখানকার আবাসনের পরিচারিকা, রিকশাওয়ালা, ঠেলাচালক, দিনমজুর শ্রেণির পরিবার তাদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ব্যাপারে উদাসীন। প্রথমেই এই সব পরিবারের ছেলেমেয়েদের নিয়ে সান্ধ্য কোচিং সেন্টার চালু করা হয়। যারা স্কুলছুট, তাদের ফের স্কুলে ভর্তি করানো হয়। মেয়েদের বাল্যবিবাহের প্রবণতা আটকে স্কুলমুখী করানোর উদ্যোগও করা হয়। সমস্যা ছিল কোচিং সেন্টারের জায়গা নিয়ে। কলোনি অফিসের গোল বারান্দা সন্ধ্যার পর ফাঁকা থাকে। সেখানে পাঠশালা শুরুর আবেদন জানানো হয়। সংগঠনের কর্মীরাই শিক্ষক। তাঁরা পড়ুয়াদের বই, খাতা-সহ সরঞ্জাম কিনে পড়ানো শুরু করেন। এলাকার মানুষ সংস্কৃতির বাতাস পেয়ে উজ্জীবিত হতে থাকেন। কর্মীদের বদলি এবং অবসরের জন্য কোচিং সেন্টার চালাতে বার বার নতুন শিক্ষক ডেকে আনতে হয় রতনবাবুকে। ২০১৭ সালের জুন মাসে তিনিও অবসর নেন। কিন্তু এলাকার মানুষের আবেদনে সাড়া দিয়ে রতনবাবুকে একটু থাকার ব্যবস্থা করে দেন ডিভিসি কর্তৃপক্ষ।
সেই গোল বারান্দায় দুঃস্থ পরিবারের ছেলেমেয়েদের নিয়ে সাবলীল ভাবে চলছে রতনের পাঠশালা। ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাই নাটক লিখে সরস্বতী পুজোয় অভিনয় করে। নাচ-গান-আবৃত্তির অনুষ্ঠান উপহার দেয়। রতনবাবু তাদের নিয়ে কখনও শুশুনিয়া, বিহারীনাথ বা জয়চণ্ডী পাহাড়ে ট্রেকিং করান। পাঠশালা চালাতে তাঁকে সহযোগিতা করছেন ডিভিসির একাধিক কর্মী-সহ এই কোচিং সেন্টারের প্রাক্তনীরাও।
দীপেন ঢাং, ডিভিসি, এমটিপিএস, বাঁকুড়া
পঞ্চায়েত ব্যবস্থা
তূর্য বাইন (‘লম্বা লাইন মানেই সাফল্য?’, ৩০-১০) যথার্থই লিখেছেন— ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থাই প্রকৃত ‘দুয়ারে সরকার’-এর কাজ করতে পারে। তার ব্যবস্থা করা উচিত। তবে একটি সংশোধন, পঞ্চায়েত ব্যবস্থা যে কমিটি সুপারিশ করেছিল, তার নাম বসন্তরাই মেহতা কমিটি না, বলবন্তরাই মেহতা কমিটি। ১৯৫৭ সালে গঠিত হয়েছিল স্বাধীন ভারতের প্রথম পরিকল্পিত প্রকল্প, কমিউনিটি ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম। ২ অক্টোবর, ১৯৫২ সালে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অংশ হিসাবে তা চালু হয়েছিল, তার মূল্যায়ন করার জন্য। কমিটি ১৯৫৮ সালে রিপোর্ট জমা দেয় এবং ‘পঞ্চায়েতি রাজ’-এর মাধ্যমে ‘গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ’-এর সুপারিশ করে।
এই চিন্তা অনুসারে, পঞ্চায়েতি রাজ হল পথ, আর গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ হল লক্ষ্য। রাজস্থান প্রথম রাজ্য, যা পঞ্চায়েত ব্যবস্থা গ্রহণ করে ১৯৫৯ সালে, অন্ধ্রপ্রদেশ দ্বিতীয়। যে বৃহৎ ও মহৎ উদ্দেশ্যে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু হয়েছিল, তা সফল হয়নি।
সমরেশ কুমার দাস, জালুকি, নাগাল্যান্ড
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy