অলিখিত প্রথার মতোই মান্যতা পেয়ে আসছে যে সরস্বতী পুজোর আগে, অর্থাৎ পুষ্পাঞ্জলি না দিয়ে পড়ুয়াদের কুল খেতে নেই। ফাইল ছবি।
সরস্বতী পুজোর আগে, অর্থাৎ পুষ্পাঞ্জলি না দিয়ে পড়ুয়াদের কুল খেতে নেই— ছেলেবেলায় যে ভাবে বলা হত, আজও একই ভাবে সেই নিষেধ চলে আসছে। অলিখিত প্রথার মতোই মান্যতা পেয়ে আসছে তা। বাজারে বা গ্ৰামের দিকে রাস্তার ধারের কোনও গাছে কুল দেখেও মুখ ঘুরিয়ে চলে যেতে হবে এই ভেবে সান্ত্বনা পেয়ে যে, আর তো ক’টা দিন। পুজো কাটলেই যত খুশি খাওয়া যাবে। তত দিন পর্যন্ত গাছে ঢিল পড়ে না। কিন্তু লোভনীয় এই ফলটা খেতে কেন সরস্বতী পুজোর পুষ্পাঞ্জলি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে? এই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর আছে কি? তবে ধৈর্যের পরীক্ষা যে তাতে হয়ে যায়, সেই বিষয়ে সন্দেহ নেই। হয়তো লোভ ও ইচ্ছাকে সংযমে রাখতেই চালু হয় এই নিষেধাজ্ঞা।
পুষ্পাঞ্জলি মিটে গেলে বাড়ি-সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলে খাওয়াদাওয়া। সে দিনের প্রধান খাবার খিচুড়ি। অনেকের বাড়িতে সেই খিচুড়ির সঙ্গে কুলের চাটনিও হয়ে থাকে। পাশাপাশি এই সরস্বতী পুজোকে কেন্দ্র করে প্রাচীন আর এক প্রথা প্রচলিত আছে— গোটা সেদ্ধ খাওয়া। মূল উপাদান শীতের মরসুমি বিভিন্ন আনাজপাতি। শক্ত ডাঁটাযুক্ত শিষ পালং, আলু, শিম, মটরশুঁটি, ছোট বেগুন, রাঙা আলু ইত্যাদি পুজোর দিন সন্ধেবেলা কোনও পাত্রে অল্প তেল মশলা সহযোগে হালকা আঁচে সেদ্ধ হয়। ভিন্ন নিয়মে অনেক সময় নাড়াচাড়ার জন্য খুন্তিও ব্যবহার করা হয় না। পাত্র দু’হাতে ধরে আগুন থেকে নামিয়ে মাঝে মাঝে ঝাঁকানো হয়ে থাকে। আর, যে-হেতু নামটাই গোটা সেদ্ধ, তাই সমস্ত আনাজ গোটাই রান্না করতে হয়।
সাধারণত এই গোটা সদ্য নয়, পর দিন অর্থাৎ বাসি খাওয়ার প্রথা রয়েছে। গোটা খাওয়া হয় ভাত বা মুড়ি সহযোগে। অনেকে আত্মীয় পরিজনদের মধ্যেও বিতরণ করেন গোটা সেদ্ধ। বিভিন্ন জেলাতে সরস্বতী পুজোর এক অত্যাবশ্যক অঙ্গ রূপে জড়িয়ে রয়েছে এই গোটা সেদ্ধ খাওয়ার প্রথাটি।
সনৎ ঘোষ, বাগনান, হাওড়া
কাটুক অন্ধকার
উৎসবের রং মেখে আয়েস করে বাঙালি অস্মিতাকে উচ্চ কণ্ঠে প্রকাশ করতে না পারলে বাঙালিয়ানা বোধ হয় থাকে না। বাঙালি যে কোনও অজুহাতে উৎসবে মাতোয়ারা হয়ে থাকতে চায়। বড়দিন বেশ আমোদ, উল্লাসে কাটানো হয়েছে। এ বার সরস্বতী পুজোর পালা। বাসন্তী রঙের মেলা। বাগ্দেবীর আরাধনায় বিদ্যায়তন সেজে ওঠে আলোয়।
উৎসবকে আঁকড়ে ধরার প্রধান কারণ বোধ হয় ছেলেমেয়েরাও আজ উৎসব মুখর পরিবেশে আনন্দ করে বাস্তবের কঠোরতাকে ভুলে থাকতে চায়। সরস্বতী পুজোর দিনেও প্রবল ডিজের আওয়াজ, চটুল গান, বাঁধনহীন উচ্ছ্বাস স্বাভাবিক বিষয় হয়ে গিয়েছে। অথচ, বাগ্দেবীর আরাধনায় শিশুদের গান, কবিতা— এ সব কিছু নিয়ে সুন্দর অনুষ্ঠান করার চেষ্টা করা যায় না কেন? অবশ্য ব্যস্ত সমাজে এ সব উদ্যোগের দায় কে আর নেয়। গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিয়ে মনে হয়, এই তো বেশ ভাল আছি। উৎসব মানে মনের মাঝে আনন্দ, উৎসব মানে না পাওয়ার বেদনাগুলো ভুলে থাকা, জীবনের কঠোর বাস্তবতা ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা। বাংলার মানুষের কাছে হুল্লোড়, হুজুগ না থাকলে, জীবনটা কেমন যেন ফিকে লাগে। যদিও উৎসবের আড়ম্বর, আতিশয্যের মধ্যে আন্তরিকতার যথেষ্ট অভাব ধরা পড়ে।
বাঙালি কাতারের ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে রাত জেগে থাকতে পারে, উৎসব করতে পারে, কিন্তু পড়াশোনা করার, কিছু শেখার মনের তাগিদটাই যেন হারিয়ে ফেলেছে। নম্বর পাওয়ার, পাশ করানোর দায়িত্ব শিক্ষক নেবে। নির্দেশও আছে বেশি নম্বর দেওয়ার। কিন্তু এতে যে কী অশনিসঙ্কেত লুকিয়ে আছে, কে-ই বা তা বুঝতে চায়! তার চেয়ে বরং, আলোর মালায় ভরিয়ে তোলো সব। চলুক জীবনের ধারা। অনেক অভাব, অশান্তি, হতাশা, বিষাদ পাপোশে চাপা দিয়ে কিছু দিনের জন্য সে অন্তত খানিকটা সুখের ঠিকানা খুঁজে নিতে চায়।
উৎসব থাক, থাক আনন্দধারা, কিন্তু বাস্তব জীবনের রুক্ষ দেওয়ালে এক বার থামি, মনের জানলাটা খুলে দেখি হাতে হাত ধরে খানিকটা এগোতে পারা যায় কি না। সুস্থ চেতনা আলোর পথে ফিরিয়ে দিক আমাদের জীবনের চাকা। সেই আশায় বুক বেঁধে রাখি।
রাজেন্দ্রকুমার আচার্য, জামবুনি, বীরভূম
চাঁদার জুলুম
বাঙালির ঘরের কাছে প্রিয় বেড়ানোর গন্তব্য দিঘা। কিছু দিন আগে আমার পরিবারের তিন জন দিঘা, শঙ্করপুর, তাজপুর ও মন্দারমণির উদ্দেশে কলকাতা থেকে রওনা হই। বিপত্তি শুরু হয় যাত্রাপথে। জায়গায় জায়গায় চাঁদার জুলুম। কোথাও সরস্বতী পুজোর চাঁদা, তো কোথাও স্থানীয় মন্দিরের উন্নয়নের। ফলে পথে ভালই যানজট হচ্ছিল, যা আবার জুলুমকারীরা রীতিমতো উপভোগ করছিল। সুরাহার আশায় যদি বলি, সরস্বতী পুজোর এখনও বহু দেরি, তৎক্ষণাৎ উত্তর আসে, এক বারই তো দেবেন। এগুলো নাকি এখন তুচ্ছ ব্যাপার। অতএব চুপচাপ মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।
এ বার আসি দিঘা সমুদ্রসৈকতের হোটেলের রাতের খাবার সম্পর্কে। ভাত থেকে শুরু করে প্রতিটি খাবার সকালের তৈরি করা বলে মনে হয়েছিল। ফলে রাতে সেই বাসি খাবার খেতে সবাই বাধ্য হই। খাবার গরম তো দূর অস্ত্, ভাত পর্যন্ত ঠান্ডা পরিবেশন করা হয়। আর এটা চলে প্রতি দিন রাতে। আমাদের মতো এমন অভিজ্ঞতা মনে হয় কমবেশি সকলের আছে।
এমনকি ফিরে আসার সময় টোটো ভাড়ায় পর্যন্ত বাড়তি বিড়ম্বনার সম্মুখীন হতে হয়। নিউ দিঘা সমুদ্রসৈকত থেকে দিঘা স্টেশন টোটোতে খুবই কম সময় লাগে। কিন্তু ভাড়া দাবি করা হয়, একশো টাকা! আসার সময় ত্রিশ টাকা আর ফেরার সময় একশো কেন, প্রশ্ন করায় জবাব আসে, আসার সময় হোটেল থেকে কমিশন পাওয়া যায়। তাই বলে এই সামান্য দূরত্বের ভাড়া কেন লাফিয়ে একশো টাকা হয়ে যায়, তার কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।
যে ভাবে দিঘায় পর্যটকদের বিড়ম্বনা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে পুলিশ-প্রশাসনের অবিলম্বে এ ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলে মনে করি।
তপনকুমার দাস, কলকাতা-১২২
অতিরিক্ত ছুটি
নবান্ন থেকে প্রকাশিত রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ২০২৩ সালের ছুটির তালিকা দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম। গত কয়েক বছর ধরেই কয়েকটি ধর্মীয় উৎসবে নির্দিষ্ট দিন ছাড়াও, তার আগে বা পরে অতিরিক্ত দিন হিসাবে ছুটি ঘোষণা করার রীতি চালু হয়েছে। যেমন, আগামী বছরে দুর্গাপুজোয় চতুর্থী থেকে শুরু করে মোট ১২ দিন ছুটি পাওয়া যাচ্ছে শনি-রবিবার সমেত। সরস্বতী পুজো, প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন পড়ায়, তার আগের দিন ২৫ জানুয়ারি অতিরিক্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। একই ভাবে কালীপুজো ও ছটপুজো রবিবার পড়ায় তার পরে যথাক্রমে দু’দিন ও এক দিন বাড়তি ছুটি মিলছে। ভ্রাতৃদ্বিতীয়া বুধবার পড়া সত্ত্বেও, পরের দিন বৃহস্পতিবার কোনও এক অজ্ঞাত কারণে ছুটি ঘোষিত হয়েছে। কিন্তু বাঙালির অপর এক গুরুত্বপূর্ণ উৎসব জগদ্ধাত্রী পুজোকে কেন ছুটির আওতার বাইরে রাখা হয়, তার কোনও সঙ্গত কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, যে উপরোক্ত ওই পুজোর দিনগুলিকে ছুটির আওতায় না রেখে, কিছু অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দিবসের ছুটিগুলি ধার্য করার যৌক্তিকতা কোথায়? প্রায়শই, সরকারি কর্মীদের শ্লেষাত্মক উক্তি শুনতে হয় যে, ন্যায্য ডিএ থেকে বঞ্চিত হলেও, সরকার ছুটির ডালি সাজিয়ে তাঁদের খেদ পূরণ করে দিচ্ছেন। এই সব অবাঞ্ছিত ছুটির লোভ দেখিয়ে, যে অভিনব কৌশলে সরকারি কর্মচারীদের মুখ বন্ধ রাখার প্রয়াস চালানো হচ্ছে, তা সত্যি বিস্ময়কর।
শান্তনু ঘোষ, শিবপুর, হাওড়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy