জার্মান ছাত্র জেকব লিন্ডেনথাল।
নয়া নাগরিকত্ব আইন এবং দিল্লির ছাত্রদের উপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে সহপাঠীদের সঙ্গে মিছিলে হাঁটায় জার্মান ছাত্র জেকব লিন্ডেনথালকে (ছবিতে) জার্মানিতে ফিরে যেতে বলা হয়েছে (‘মিছিলে কেন, জার্মানিতেই ফিরে যাও’, ২৫-১২)। প্রায় একই অবস্থায় এই পত্রলেখককে কিন্তু অন্য এক গণতান্ত্রিক দেশ থেকে নিজের দেশ ভারতে ফিরে আসতে হয়নি।
১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারি। সে দিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ সিনিয়র, ইরাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ আরম্ভ করেছেন। ইরাকের অপরাধ, সাদ্দাম হুসেন কয়েক মাস ধরে তেলসমৃদ্ধ কুয়েত দখল করে রেখেছেন। সেই সময় বছর তিনেক হল আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফর্নিয়ার অন্তর্গত সান্টা বারবারা ক্যাম্পাসে, আমন্ত্রিত বিদেশি শিক্ষক হিসেবে পড়াচ্ছি। যুদ্ধ আরম্ভের ওই দিনে, আমেরিকা ছুতোনাতায় যুদ্ধ করার প্রতিবাদে, ক্যাম্পাসের বেশ কিছু শিক্ষক ক্লাস বয়কট করছেন।
ওখানে ক্লাস বয়কটের ঘটনা নেহাতই ব্যতিক্রমী। দুই বা তিন দশকে এক বার ঘটে। বিবেকের তাড়নায় আমিও স্থির করলাম, ওই দিন ক্লাসে গিয়ে পড়াব না। এই প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করব কি করব না, তা নিয়ে আমার উপর কোনও রকম চাপ ছিল না।
ক্লাসে গিয়ে বললাম, এই যুদ্ধে যে মানুষদের প্রাণ যাবে তাঁদের প্রতি সমবেদনায়, যুদ্ধের প্রতিবাদে, ক্লাসের নির্দিষ্ট বিষয় পড়াব না। পরিবর্তে এই যুদ্ধ বিষয়ে আলোচনা করব ও আমার মতামত জানাব। ছাত্রছাত্রীদেরও সুযোগ দেওয়া হল, নিজেদের মতামত অসঙ্কোচে প্রকাশ করার। তাদের অধিকাংশ যুদ্ধের বিরোধী হলেও, কেউ কেউ বলেছিল তারা এই যুদ্ধকে সমর্থন করে। ঠান্ডা মাথায় আলোচনা চলেছিল। যুদ্ধ সমর্থনকারীরা কেউই আমার বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে বলেনি, ‘‘গো ব্যাক টু ইন্ডিয়া।’’
কয়েক দিন বাদে ওই ক্যাম্পাসের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত বিদেশি নাগরিকের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এক চিঠি আসে, যার সারমর্ম: ‘‘আপনাদের কেউ কেউ আমাদের প্রশ্ন করেছেন, আমেরিকার বর্তমান যুদ্ধ চলাকালীন, ক্যাম্পাসের সঙ্গে যুক্ত বিদেশি নাগরিকেরা যুদ্ধের বিরোধিতা করে ক্লাসে ও ক্লাসের বাইরে সর্বজনসমক্ষে বক্তব্য পেশ করতে পারেন কি না। আপনাদের দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানাই যে, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফর্নিয়া মনে করে, শিক্ষার অগ্রগতির স্বার্থে, ক্যাম্পাসের সঙ্গে যুক্ত সকলের সব বিষয়ে সমস্ত রকম মত প্রকাশে স্বাধীনতা থাকা জরুরি, তা তিনি আমেরিকার নাগরিক হোন বা না-ই হোন। এক অগ্রণী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে এই বিশ্ববিদ্যালয় কারও কণ্ঠ রুদ্ধ করতে চায় না।’’
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই মানসিকতা যে কোনও গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষের কাছেই তারিফযোগ্য, বিশেষত যখন সান্টা বারবারা ক্যাম্পাসের ছাত্রছাত্রীরা ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় যুদ্ধের প্রতিবাদে ব্যাঙ্ক অব আমেরিকার স্থানীয় শাখা পুড়িয়ে দিয়ে সারা দেশে সংবাদ শিরোনামে এসেছিল। প্রতিবাদীদের বক্তব্য ছিল, উক্ত ব্যাঙ্কের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানই যুদ্ধ থেকে লাভবান হয়। তাদের স্লোগান ছিল: ‘‘সমাজ পরিবর্তন, সামাজিক ন্যায় ও শান্তি।’’ ঘটনার জেরে ৩০০ ছাত্রছাত্রী গ্রেফতার হয়েছিল, কার্ফু জারি হয়েছিল, পরবর্তী এক প্রতিবাদে পুলিশের গুলিতে এক ছাত্র মারাও গিয়েছিল।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান কেমন, তা বোঝাতে একটি মাত্র তথ্যই যথেষ্ট: এর দশটি ক্যাম্পাসে গত আট দশকে নোবেল-প্রাপকের সংখ্যা ষাটের বেশি। এঁরা হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন নোবেল পেয়েছেন অথবা নোবেল পাওয়ার পর এখানে যোগ দিয়েছেন।
বলা বাহুল্য, ইরাক যুদ্ধের প্রতিবাদ করায় আমাকে স্বদেশে ফিরে আসতে হয়নি।
পরবর্তী ২৮ বছরে, আমন্ত্রিত শিক্ষক হিসেবে বছরে এক বা একাধিক সেশন সেখানে পড়িয়েছি। ক্লাসে আলোচ্য বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক মনে হলে মার্কিন সরকারের নীতির সমালোচনা করেছি।
যেমন গত কয়েক বছর আমার পরিবেশবিদ্যার ক্লাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরিবেশনীতি তীব্র ভাবে সমালোচিত হয়েছে। এই সমালোচনা ক্লাসের চার দেওয়ালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ইউনিভার্সিটির এক নামী ম্যাগাজিন আমার সমালোচনার অংশ প্রকাশ করেছে। এর পরও আমাকে সরকারি রক্তচক্ষুর সম্মুখীন হতে হয়নি, সম্ভবত ভবিষ্যতেও হবে না।
মানসেন্দু কুণ্ডু
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফর্নিয়া, সান্টা বারবারা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন দাদাগিরি
স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র ইরানের সেনাপ্রধানের উপর বিনা প্ররোচনায় হামলা চালিয়ে আমেরিকা তার দাদাগিরির পরম্পরা বজায় রেখেছে। আমেরিকার লোভ দীর্ঘ দিনের, পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোর তরল সোনা হস্তগত করা। এই দেশগুলোর মধ্যে যারা নিজেদের সার্বভৌমত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করেছে, তাদের উপর আমেরিকা কারণে-অকারণে চড়াও হয়েছে। ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হুসেনকে আমেরিকা নৃশংস ভাবে হত্যা করেছিল— তা আজও ইরাকের মানুষের মনে দগদগে। ওসামা বিন লাদেনকে পাকিস্তানের মাটিতে ঢুকে হত্যা করার ঘটনা সকলেই জানেন। দোষ-গুণের কথা নয়, সকলকে শাস্তি দেওয়ার দায়িত্ব আমেরিকা একা গ্রহণ করে কেন? আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধানের জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জ রয়েছে। যে কোনও দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো আমেরিকার স্বভাবে দাঁড়িয়েছে।
নারায়ণ চন্দ্র দেবনাথ
নোনাচন্দনপুকুর, ব্যারাকপুর
ট্রাম্পই দায়ী
‘ট্রাম্পের মাথার দাম বেঁধে হুমকি ইরানের’ (৭-১) সংবাদটি সম্পর্কে এই চিঠি। সোলেমানির হত্যাকাণ্ডকে, ট্রাম্প বৃহত্তর যুদ্ধ এড়ানোর একটি পদক্ষেপ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। হাস্যকর। আসলে এই অমানবিক এবং নিষ্ঠুর কাজটি পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধ শুরুর পরিস্থিতি তৈরি করল। ইতিমধ্যেই আমরা তেল এবং সোনার ঊর্ধ্বমুখী দামে এই পরিস্থিতির পরিচয় পাচ্ছি। ট্রাম্পই কিন্তু ২০১৮-র মে থেকে ইরানের সঙ্গে গোলযোগ বাধিয়েছেন, ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছেন, চুক্তিটি একপেশে এবং ত্রুটিপূর্ণ অভিহিত করে। আন্তর্জাতিক ভাবে সম্পাদিত চুক্তি ট্রাম্প কেন ভঙ্গ করলেন? যে চুক্তিতে তাঁরই দেশের পূর্বতন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সম্মতি-স্বাক্ষর আছে? ২০১৫-তে করা চুক্তিটি ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া এবং চিনের উপস্থিতি এবং সহমতের ভিত্তিতেও হয়েছিল।
অশেষ দাস
সোদপুর
গায়ত্রী নয়
প্রবালকুমার বসুর ‘কথা দিচ্ছি গায়ত্রীর ঠিকানা পাবে’ (রবিবাসরীয়, ৫-১) লেখাটি পড়তে পড়তে হোঁচট খেলাম। লেখা হয়েছে, ‘অবশ্য আরও এক গায়ত্রীর সন্ধানও পাওয়া যায়।...তখন সেখানে সুপারিনটেনডেন্ট ছিলেন অধ্যাপক জনার্দন চক্রবর্তী। তাঁর কন্যার নামও গায়ত্রী, যদিও বয়সে সে বেশ খানিকটা ছোট।’
তথ্যটি ভ্রান্ত। অধ্যাপক চক্রবর্তী আমার দাদামশাই। তাঁর কোনও কন্যার নামই গায়ত্রী নয়।
সুমিতা চক্রবর্তী
কলকাতা-৬৭
লেখকের উত্তর: পত্রলেখিকাকে ধন্যবাদ। জনার্দনবাবুর এক কন্যার নাম গায়ত্রী, এই বিভ্রান্তি বিনয়েরই সৃষ্টি। এ রকম বিভ্রান্তি তিনি জ্ঞানত বা অজ্ঞানত করে এসেছেন, আমার লেখাতেই রয়েছে। সেই কারণেই এই গল্প এগোয়নি।
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy