—ফাইল চিত্র।
অশোক সরকারের ‘কৃষকবন্ধু রাজনীতি’ (৬-৪) শীর্ষক প্রবন্ধ প্রসঙ্গে এই চিঠি। তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার ছাড়া কৃষক আন্দোলনের দাবি ছিল, ন্যূনতম সহায়ক মূল্যকে আইনসিদ্ধ করতে হবে, এবং কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ফসল কিনতে হবে সরকারকে। সহায়ক মূল্য হবে উৎপাদন ব্যয়ের দেড়গুণ। আন্দোলনের চাপে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার তিনটি আইন প্রত্যাহার করেছিল। আশ্বাস দিয়েছিল যে, ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে (এমএসপি) কৃষিপণ্য ক্রয়ের ব্যবস্থা দ্রুত গ্রহণ করবে সরকার। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থাই হয়নি। উপরন্তু, সাধারণ মানুষের মধ্যে যাতে কৃষকদের দাবিগুলো সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণার সৃষ্টি হয়, এবং তারা আন্দোলনের বিরুদ্ধাচরণ করে, সেই উদ্দেশ্যে কিছু মিথ্যা যুক্তি বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে। যেমন, এমএসপি চালু করতে গেলে অনেক টাকা লাগবে, দাবি করছে কেন্দ্রীয় সরকার। এর সত্যতা কতটুকু? ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে সমগ্র কৃষিজাত পণ্য কিনতে সরকারের বাস্তবিক কত টাকা লাগবে? বর্তমানে এমএসপি-র অধীনে আছে ২৩টি কৃষিজ পণ্য। এর মধ্যে রয়েছে সাতটি দানাশস্য (ধান, গম, বাজরা, ভুট্টা, জোয়ার, রাগি এবং যব); পাঁচটি ডাল (ছোলা, অড়হর, মুগ, মসুর, কলাই), সাতটি তৈলবীজ (বাদাম, সয়াবিন, রেপসিড, সর্ষে প্রভৃতি); এবং চারটি বাণিজ্যিক ফসল (আখ, তুলো, কাঁচা পাট প্রভৃতি)। এই ২৩টি ফসলের মোট ন্যূনতম সহায়ক মূল্য হল ১০.৭৮ লক্ষ কোটি টাকা। কিন্তু বাস্তব হল, এই সব পণ্যের পুরোটা বাজারে আসে না। কারণ, খাদ্যশস্যের একটা অংশ কৃষকরা নিজেরা খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করেন, বিক্রি করেন না। যেমন, রাগির অর্ধেক, ধানের ২০ শতাংশ ও গমের ২৫ শতাংশ বাজারে আসে না। কিছু শস্য পরবর্তী মরসুমের জন্য সংরক্ষণ করা হয় বীজ হিসাবে। কিছুটা পশুখাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়। উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্যের গড় বাজারজাত পরিমাণ ৭৫% ধরলে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে কিনতে সরকারের মাত্র আট লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় হবে। কিন্তু এই টাকাও খরচের প্রয়োজন নেই।
প্রথমত, আখ কেনেন চিনিকল মালিকেরা, সরকারের তা কেনার দরকার নেই। দ্বিতীয়ত, তুলো বা পাটের মতো কৃষিপণ্যের সবটা সরকারের কিনে নেওয়ার প্রয়োজন নেই। সরকারের উচিত এই সব ফসলের ততটা অংশ কিনে নেওয়া, যতটা বাজারে একটা প্রভাব ফেলবে। দেখা গিয়েছে, ২০১৯-২০ আর্থিক বর্ষে দেশে মোট উৎপাদিত ৩৫০.৫০ লক্ষ বেল তুলোর মধ্যে সরকার ৮৭.৮৫ লক্ষ বেল তুলো কিনেছিল। এর ফলে বাজারে একটা প্রভাব পড়েছিল এবং কৃষকরাও খোলা বাজারে তুলো ভাল দামে বিক্রি করতে পেরেছিলেন। সুতরাং সরকার যদি ঘোষণা করে, মোট উৎপাদিত তুলো ও পাটের ৪০% সে কিনবে তা হলে কৃষকরা বাকি তুলো ও পাট খোলা বাজারেও যথেষ্ট দামেই বিক্রি করতে পারবেন। সরকারেরও আর্থিক বোঝা অনেকটা কমবে।
তৃতীয়ত, সরকারের উচিত খাদ্যশস্য এবং অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য জনসাধারণের কাছে সস্তা দরে বিক্রি করা। কারণ, মানুষকে খাওয়ানো সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এর ফলে একটা বিপুল পরিমাণ অর্থ সরকারের কোষাগারে ফিরে আসবে, এবং একই সঙ্গে জনসাধারণও ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী কিনতে পারবে।
এই সমস্ত দিক বিবেচনা করলে সরকারকে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের জন্য বর্তমান বার্ষিক ৩.২ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয়ের উপর আরও অতিরিক্ত এক থেকে দেড় লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে, যেটা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে কিছুই নয়। বহুজাতিক সংস্থাগুলিকে সরকার প্রতি বছর বহু লক্ষ কোটি টাকা ভর্তুকি বা অন্যান্য সহায়তা দেয়। তা হলে কৃষক ও সাধারণ ক্রেতার দুর্দশা খানিকটা লাঘব করার জন্য টাকা খরচ করবে না কেন?
শংকর ঘোষ, সম্পাদক, অল ইন্ডিয়া কিসান খেত মজদুর সংগঠন
পথ সমাজতন্ত্র
বিগত দশ বছরে দেশের অর্থনীতি ক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপের প্রশংসা করেও অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু তাঁর ‘ভাবতে ভয় হয়’ (৩০-৩) শীর্ষক প্রবন্ধে বলেছেন, “কিন্তু সব মিলিয়ে ভারতের ভিতে ভাঙন ধরেছে। টানা পাঁচ বছরে প্রতি বছর আর্থিক বৃদ্ধির হার কমে যাচ্ছে। ভারতে এ জিনিসটা আগে কখনও হয়নি। দশ বছর আগেও এই অবস্থা কল্পনা করা যেত না।” ভারতে আর্থিক বৃদ্ধির প্রায় পুরোটাই অতি ধনীদের কুক্ষিগত, বেকারত্বের হার এবং আর্থিক অসাম্য সর্বোচ্চ, এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে, বাক্স্বাধীনতা হরণ ও মেরুকরণের রাজনীতি, এবং বিজ্ঞানের চর্চাকে পিছনে ঠেলে দিয়ে রাজনৈতিক সুবিধাবাদকে প্রাধান্য দেওয়া তাঁকে চিন্তিত করেছে। প্রবন্ধকারের এই অভিযোগ বাস্তবকেই উন্মোচিত করেছে। ওই দিনই ‘অস্পৃশ্যতার কলুষ’ সম্পাদকীয়টিও গণতন্ত্রপ্রিয়, সচেতন নাগরিক সমাজের চিন্তাভাবনাকে আলোড়িত করবে। সম্পাদকীয়তে যথার্থই বলা হয়েছে যে, অস্পৃশ্যতার রাজনীতি ভারতের সমাজকে দ্বিধাবিভক্ত, দুর্বল করেছে।
অষ্টাদশ লোকসভার নির্বাচনে তাই দেশবাসীর কাছে ভারতের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের সঠিক পথের দিশা জরুরি হয়ে পড়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের দারিদ্র দূরীকরণই হওয়া উচিত লক্ষ্য। তার উদ্দেশ্যে সমাজমুখী অর্থনীতির সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রধান কাজ। গণতন্ত্র, জাতীয় সংহতি ও সংবিধানকে মজবুত করে দেশ গঠনের সঙ্কল্প গ্রহণ করাই সময়ের ডাক। অতিধনীদের হাতে দেশের সম্পদ তুলে দিয়ে বিপুল সংখ্যক শ্রমজীবীদের হতদরিদ্র রেখে দেশোন্নতির বাগাড়ম্বর চলতে পারে না। রাষ্ট্রীয় নীতি ও অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন চাই। প্রশ্ন হল, কোন রাজনৈতিক শক্তি এমন মহতী উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারবে?
আমাদের দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের শ্রেষ্ঠ নেতারা স্বাধীন ভারতে ধনতন্ত্রের নয়, সমাজতান্ত্রিক নীতির পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। কার্যত তা হয়নি। স্বামী বিবেকানন্দ নিজেকে সমাজতন্ত্রী বলেছিলেন। যুবসমাজকে বিপ্লবী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। মহাত্মা গান্ধী, নেতাজি সুভাষচন্দ্র, জওহরলাল নেহরু ও সমাজবাদী নেতারা সকলেই ভারতে সমাজবাদের কথা বলেছেন। তাঁদের মতবাদে ভিন্নতাও ছিল। তবে বৃহৎ পুঁজিপতি তথা অতিধনীদের কবল থেকে দেশকে মুক্ত না করলে দারিদ্র, বৈষম্য, বঞ্চনার অবসান হতে পারে না, এটা তো সহজবোধ্য।
সমাজতন্ত্র গঠন সহজসাধ্য ব্যাপার নয়। কিছু ভুল নীতির জন্য সোভিয়েট ইউনিয়ন-সহ পূর্ব ইউরোপে সমাজতন্ত্রের পতন ঘটেছে। ভারতে সমাজতন্ত্র তথা সাম্যবাদী সমাজ গড়া লক্ষ্য হলেও, সংসদীয় গণতন্ত্রের পথেই তার যাত্রা শুরু করতে হবে। সেই উদ্দেশ্যে ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলসমূহের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাই জাতির একমাত্র ভরসা।
প্রশান্ত বকসি, সুভাষ পল্লি, শিলিগুড়ি
সাদা পলাশ
অনেকেই জানেন, সাদা পলাশ খুবই বিরল। পুরুলিয়ার বুকে আট জায়গায় ১৫টি সাদা পলাশ গাছের সন্ধান পাওয়া গিয়াছে। এই শ্বেত পলাশগাছের সাদা নির্যাসের নানা ঔষধিগুণও রয়েছে। দুঃখের বিষয়, বন দফতরের উদাসীনতায় এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে শ্বেতপলাশ অকালে ঝরে নষ্ট হয়। পর্যটকরা লাল পলাশের গাছগুলি থেকে ফুল পাড়তে গিয়ে যে ভাবে ডাল নষ্ট করেন, তাতে সাদা পলাশের ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তা হয়। তবে আশার কথা এই যে, বর্তমানে উদ্ভিদ গবেষকরা এই সাদা পলাশের ফুল থেকে‘জিন পুল’ সংরক্ষণ করে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে চারা তৈরি করছেন। এ ভাবে তাঁরা রাজ্যে বিভিন্ন জেলার বনাঞ্চলে শ্বেতপলাশের বংশ বিস্তারে উদ্যোগী হয়েছেন। আবেদন, বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে শ্বেতপলাশ লাগান ও বাঁচান!
তপনকুমার বিদ, বেগুনকোদর, পুরুলিয়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy