E-Paper

বাল্যবিবাহ, পাচার রুখে মেয়েদের জীবন বদলাচ্ছে কবাডি

ছোট থেকে তাদের খেলার প্রতি আগ্রহ থাকলেও সামাজিক ও পারিবারিক পরিবেশের বাইরে গিয়ে খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল না।

ভারতীয় মহিলা কবাডি দল।

ভারতীয় মহিলা কবাডি দল। ছবি পিটিআই।

স্বাতী মল্লিক

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:৩২
Share
Save

ওদের কেউ এক সময়ে পারিবারিক হিংসাকে স্বাভাবিক বলেই মনে করত। কেউ ভাবত, বিয়েটাই মেয়ে-জন্মের লক্ষ্য। কারও আবার খেলাধূলায় আগ্রহ থাকলেও সামাজিক-পারিবারিক গণ্ডি টপকানো সম্ভব ছিল না। এমন কয়েক হাজার মেয়ের জীবন, ধ্যানধারণা ও মানসিকতাকে বদলে দিতে বছর পাঁচ-ছয় আগে কবাডিকে হাতিয়ার করে ময়দানে নামে দু’টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তারা জানাচ্ছে, ‘নারীর ক্ষমতায়নে কবাডি’ প্রকল্পটি গত চার-পাঁচ বছরে বদলে দিয়েছে প্রায় ৪-৫ হাজার মেয়ের জীবন। এমনকি, বাল্যবিবাহ, পাচারের মতো ঘটনাও রোখা গিয়েছে। এ বার তাই বিভিন্ন স্কুল, সরকারি-বেসরকারি স্তরে এবং শিশুদের নিয়ে কাজ করা অন্য সংস্থাদের সঙ্গেও এই প্রকল্প ও তার সাফল্য ভাগ করে নিতে চায় তারা।

২০১৯ সাল থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘তেরে দ্য হোমস’ এবং ‘প্রাজক’-এর যৌথ উদ্যোগে মালদহ, মুর্শিদাবাদ, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, দক্ষিণ ২৪ পরগনা-সহ রাজ্যের একাধিক জেলার (যেখানে বাল্যবিবাহ, পাচারের মতো ঘটনা বেশি ঘটে) ‘হটস্পট’গুলিকে চিহ্নিত করে বস্তি এলাকা ও রেললাইনের ধারে ঝুপড়িবাসী মেয়েদের নিয়ে শুরু হয়েছিল প্রকল্পটির পথ চলা। বর্তমানে সুন্দরবনের কুলতলি, গোসাবার কয়েকটি স্কুলে এটি পরীক্ষামূলক ভাবে চালু হয়েছে। কলকাতার আদিগঙ্গার ধারেও এই প্রকল্পের কাজ চলছে।

‘তেরে দ্য হোমস’-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার পৌলমী দে সরকার বলছেন, ‘‘দেখা গিয়েছে, এই পদ্ধতির মাধ্যমে মেয়েদের মধ্যে ভাল-খারাপ বোধ, আত্ম-স্বাতন্ত্র্যবোধ, কথা বলার ক্ষমতা তৈরি হয়েছে। কম বয়সে বিয়ে, পাচার, লিঙ্গভিত্তিক হিংসার কবল থেকে নিজেদের মুক্ত করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সাহস পেয়েছে। সেই সাহস জুগিয়েছে কবাডি। খেলার মাধ্যমেই অন্য জীবনের স্বাদ পেয়েছে ওরা। আজ তারাই তাদের সম্প্রদায়ের অন্য মেয়েদের কাছে আদর্শ।’’

যেমন, মালদহের মিষ্টি এবং সুস্মিতা। ছোট থেকে তাদের খেলার প্রতি আগ্রহ থাকলেও সামাজিক ও পারিবারিক পরিবেশের বাইরে গিয়ে খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল না। এই প্রকল্পের ছোঁয়ায় তারা নতুন আকাশের সন্ধান পায়। দলগত খেলায় অংশগ্রহণ তাদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। বর্তমানে মিষ্টি দুবাইয়ে আয়োজিত ইয়ুথ এশিয়ান গেমসে জ্যাভলিন ছোড়ায় দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। সুস্মিতা কবাডি নিয়েই জাতীয় পর্যায়ে খেলেছে। অংশ নিয়েছে বেঙ্গল শুটিং বল স্টেট চ্যাম্পিয়নশিপেও। জলপাইগুড়ির কিশোরী মৌসুমী (নাম পরিবর্তিত) আবার এই প্রকল্পের সান্নিধ্যে এসে বুঝেছে, পারিবারিক হিংসা কোনও স্বাভাবিক ঘটনা নয়। তাই এক দিন বৌদির গায়ে দাদা হাত তুললে বাধা দিয়েছে সে। বদল এনেছে দাদার মানসিকতায়। অনেকে আবার মা-বাবাকে ‘পালিয়ে না যাওয়ার’ আশ্বাস দিয়ে রুখে দিয়েছে নিজেদের বাল্যবিবাহের আশঙ্কা। পরিবর্তে অর্জন করছে স্বাধীনতা, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর অধিকার।

কী ভাবে এটা সম্ভব হচ্ছে? ‘প্রাজক’-এর কর্ণধার দীপ পুরকায়স্থের ব্যাখ্যা, ‘‘অনেক মেয়ের আত্মবিশ্বাস কম থাকে, ফলে অনেক সময়েই তারা পিছিয়ে যায়। খেলা তাদের মধ্যে সেই আত্ম-সমর্থবোধ, দলীয় সংহতির বোধ তৈরি করে। ফলে এক সময়ে সামাজিক-সাংস্কৃতিক বেড়া ভাঙার সাহস আসে খেলা থেকেই।’’

দুই সংগঠনের তরফে জানা গিয়েছে, ভারত ছাড়া বাংলাদেশ এবং নেপালেও একই পদ্ধতিতে মেয়েদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে কাজ চলছে। তবে সেখানে কবাডির বদলে হাতিয়ার হ্যান্ডবল এবং ফুটবল। পৌলমী বলছেন, ‘‘২৪ এপ্রিল এক কর্মশালায় এই প্রকল্পের সব কিছু সকলের সঙ্গে ভাগ করে নেব আমরা। চাই, সরকারি স্তরেও এর প্রয়োগ শুরু হোক। যে হেতু কবাডি খেলতে কোনও পরিকাঠামো লাগে না, তাই সরকারি হোমগুলিতে সহজেই এর ব্যবহার সম্ভব। সেখানে আসা মেয়েদের মানসিক চাপ, অবসাদ কমিয়ে তাদের নতুন জায়গায় মানিয়ে নেওয়ার শিক্ষা দিতে পারে কবাডি।’’

প্রথম থেকে এই প্রকল্পের পাশে আছে রাজ্যের শিশু অধিকার রক্ষা কমিশন। কমিশনের চেয়ারপার্সন তুলিকা দাস বলছেন, ‘‘আগামী কর্মশালায় এই প্রকল্পের পদ্ধতির কথা বিশদে জানব। বিচ্ছিন্নতার এই যুগে আগামী প্রজন্মকে কী করে ভাল ও সুরক্ষিত রাখা যায়, দলগত খেলার নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে তাদের সার্বিক উন্নয়ন জন্য আরও সদর্থক কাজ কী ভাবে করা যায়— তা বুঝেই পরবর্তী পদক্ষেপের কথা ভাবা হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kabaddi Underage marriage Women Trafficking

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।