Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: আস্থার খোঁজে

কিছু দিন আগে ভোটার তালিকায় বহিরাগতদের নাম ঢোকানো এবং একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার কাজ ইচ্ছাকৃত ভাবে নির্বাচন কমিশন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছিল।

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৫ ০৪:৪০
Share
Save

অর্ঘ্য সেনগুপ্তর প্রবন্ধ ‘আস্থা অর্জনই প্রথম দায়িত্ব’ (২৮-৩) শিরোনামের কথাটি সঠিক হলেও জনতার ভোটে নির্বাচন কমিশনার বেছে নেওয়ার প্রস্তাবটি একেবারেই অবাস্তব। ভারতের মতো বৃহৎ গণতন্ত্রে নির্বাচন পরিচালনা করতে হলে পরিচালকদের প্রশাসনিক দক্ষতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচ্য হওয়া উচিত। ভারতের প্রশাসনিক আধিকারিকরা কর্মজীবনে জেলা ও মহকুমা স্তরে নির্বাচন পরিচালনায় নেতৃত্ব দিয়ে সেই অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। অনেকে রাজ্যস্তরে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক হিসাবেও কাজ করে থাকেন। তাই ভারতের নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগে এই প্রশাসনিক আধিকারিকদেরই প্রাধান্য থাকা উচিত। নিয়োগের সময় দেখা উচিত তাঁদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা। যে-হেতু সমগ্র নির্বাচন প্রক্রিয়াটি সংবিধান ও প্রচলিত আইন মেনে যথাযথ ভাবে করতে হয়, তাই তিন জন কমিশনারের মধ্যে দু’জন প্রশাসনিক এবং এক জন বিচারবিভাগ থেকে হলে কাঠামোটি সুন্দর হয়। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলনেতা থাকতেই পারেন। তবে আরও দু’-তিন জন বিশেষজ্ঞ, যেমন— সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি, ইউপিএসসি-র চেয়ারম্যান প্রমুখ থাকলেও ক্ষতি নেই। নেতৃত্ব ও নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে মানুষের মধ্যে আস্থা অর্জনের জন্য প্রয়োজন ব্যক্তিত্ব, সততা এবং ঋজু মেরুদণ্ড— এই গুণগুলি সকলের মধ্যে সমান ভাবে থাকবে, এমন আশা না করাই ভাল। তাই তো একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কমিশনারদের নির্বাচন করা হয়।

কিছু দিন আগে ভোটার তালিকায় বহিরাগতদের নাম ঢোকানো এবং একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার কাজ ইচ্ছাকৃত ভাবে নির্বাচন কমিশন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। লেখক বলেছেন, এতে কমিশনের প্রতি আস্থা কমে। এই সব সমস্যায় নির্বাচন কমিশন সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক সংস্থা হলেও তাকে নির্ভর করতে হয় সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মহকুমা, জেলা ও রাজ্য নির্বাচন আধিকারিকের কাজের উপর। এই আধিকারিকরাই নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরি-সহ ইভিএম সংরক্ষণ, মেরামতি, নির্বাচন পরিচালনা, ভোট গণনা, ফলাফল প্রকাশ ও জয়ী প্রার্থীদের শংসাপত্র দেওয়ার কাজ করে থাকেন। নির্বাচন পূর্ব এবং পরবর্তী হিংসা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামলানোর জন্য কমিশনকে শুধু পরিদর্শক (অবজ়ার্ভার)-এর উপর নির্ভর করলে চলবে না। স্পর্শকাতর এলাকায় আইন-শৃঙ্খলার ভার স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনের বদলে অন্য বাহিনীর হাতে তুলে দিতে হবে। যদিও এ ক্ষেত্রে জনগণের সচেতনতাই সব সমস্যা অনেকটা কমিয়ে দিতে পারে।

তাপস ঘোষ, হাওড়া

অভিযুক্ত কমিশন

নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ ও কমিশনের পরিচালনার পদ্ধতি বিষয়ে যে প্রয়োজনীতার কথা অর্ঘ্য সেনগুপ্ত বলেছেন, তার সঙ্গে প্রত্যেক গণতন্ত্রপ্রেমী নাগরিকই সহমত পোষণ করবেন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘নির্বাচন’ হল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটা ধাপ। সুতরাং, নির্বাচন পরিচালনার কাজটা সুষ্ঠু ভাবেই করা প্রয়োজন।

অতীতে অন্য সরকারের আমলে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ যে সব সময় দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে ছিল, তা কিন্তু নয়। এমএস গিল কিংবা নবীন চাওলা-দের মতো প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে জাতীয় কংগ্রেসের নৈকট্যের কথা অনেকেই জানে। এ ছাড়া, নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ব্যাপারটা সেই সময় সম্পূর্ণ ভাবে ক্ষমতাসীন সরকারের উপরই ন্যস্ত ছিল। আজকের মতো কোনও বাছাই কমিটি তখন ছিল না। কিন্তু, তার মানে এই নয় যে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা ও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে একটা নিরপেক্ষ ‘কলেজিয়াম’ গঠনের প্রস্তাব তড়িঘড়ি বাতিল করা হবে। এবং প্রধান বিচারপতির জায়গায় প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদের কোনও সদস্যকে কমিটির অন্তর্ভুক্ত করে সেই কমিটির ‘নিরপেক্ষ’ চরিত্রটাকে একেবারে নষ্ট করে দিতে হবে। এতে এক দিকে যেমন ‘সরকারের নিয়ন্ত্রণের কর্তৃত্ব পাকাপোক্ত’ হওয়ার একটা অনভিপ্রেত পরিবেশ সৃষ্টি হল, অন্য দিকে সরকারের চাপের কাছে নতিস্বীকারের মাধ্যমে এই ‘গণতান্ত্রিক মেরুদণ্ড-সম’ প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়ারও একটা আশঙ্কা থেকে গেল।

“আসলে, নির্বাচন হল এমন একটি প্রক্রিয়া, যাতে নাগরিকদের নিঃশর্ত আস্থা থাকা শুধু জরুরি নয়, অপরিহার্য”— প্রবন্ধকার এই বক্তব্য তুলে ধরেছেন। এর সূত্র ধরেই বলা যায়, সাম্প্রতিক অতীতে একটা অভিযোগ খণ্ডাতে গিয়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে যে ভাবে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে একটা ‘অবাস্তব’ ধারণাকে প্রতিষ্ঠা দিয়ে জানানো হয়েছিল ‘একই পরিচয় পত্রের নম্বরে একাধিক ভোটারের নাম থাকা মানেই ভুয়ো ভোটার নয়’, সেটা কিন্তু তাদের প্রতি আস্থা হারানোর পক্ষে যথেষ্টই ছিল। তা ছাড়া, গত বছরে অনুষ্ঠিত অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের পরে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ইভিএম-এর সঠিক ভাবে কাজ না করা বা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক জোটের হয়ে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করা কিংবা নির্বাচন-বিধি লঙ্ঘনকারী শাসকজোটের কোনও দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার মতো অভিযোগ উঠেছে। উঠেছে ভোটের হারের রহস্যজনক ভাবে বেড়ে যাওয়ার মতো চাঞ্চল্যকর অভিযোগও। ভোট ফর ডেমোক্র্যাসি নামে মহারাষ্ট্রভিত্তিক এক নাগরিক মঞ্চ দাবি করে, ভোটের দিনগুলোতে রাত আটটার পরে ভোটারদের উপস্থিতির যে সংখ্যা ঘোষণা করেছিল, তার থেকে চূড়ান্ত ভোটার সংখ্যা বেড়েছিল প্রায় পাঁচ কোটি মতো। আরও উল্লেখযোগ্য, এই সংখ্যাটা ৭৯টি আসনে এনডিএ প্রার্থীদের জয়ের মোট ব্যবধানের থেকেও বেশি। গত নির্বাচনগুলোয় ভোটের দিনে রাতের বেলায় ঘোষিত ভোটার সংখ্যা আর চূড়ান্ত ভোটার সংখ্যার ব্যবধান যেখানে এক শতাংশের আশপাশে থাকত, সেখানে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সাত দফার বিভিন্ন দফায় সেই ব্যবধানটা দাঁড়িয়েছিল ৩.২-৬.৩২ শতাংশের মতো। এই ধরনের অভিযোগে যদি বিন্দুমাত্র সত্যতা থেকে থাকে, তা হলে নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিচালনার মধ্যে যথেষ্টই ত্রুটি রয়েছে।

নির্বাচন কমিশন-এর গঠন-সংক্রান্ত মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন থাকা অবস্থাতেই অতি সম্প্রতি সর্বশেষ মুখ্য কমিশনার-সহ সহকারী দুই কমিশনারের নিয়োগ সম্পন্ন হল। প্রবন্ধকার ঠিকই বলেছেন সিবিআই বা লোকপাল নিয়োগে ‘নিরপেক্ষ’ কলেজিয়াম-এর অস্তিত্ব থাকা সত্ত্বেও সেই প্রতিষ্ঠানগুলি কিন্তু প্রশ্নের ঊর্ধ্বে উঠতে পারেনি। তবে, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে শীর্ষ আদালতের উপর এখনও জনগণের আস্থা বিদ্যমান। আশা করব, এর একটা বিহিত তাঁরা নিশ্চয়ই করবেন।

গৌতম নারায়ণ দেব, কলকাতা-৭৪

ভারাক্রান্ত ভাগাড়

সম্প্রতি হাওড়ার বেলগাছিয়া ভাগাড়ে ধস নামার কারণে হাওড়া শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। শহরগুলিতে জনসংখ্যা যে ভাবে বাড়ছে, তাতে এই ভাগাড়গুলি আর কত দিন এই বিপুল আবর্জনা ধারণ করতে পারবে? এই নিয়ে বহু আগেই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা উচিত ছিল। ২০২০ সালে হাওড়া পুরসভার পক্ষ থেকে প্রতি বাড়িতে একটি নীল ও একটি সবুজ— দু’ধরনের পাত্র দেওয়া হয়, যাতে পচনশীল ও অপচনশীল আবর্জনা আলাদা করে সংগ্রহ করা যায়।

এ ক্ষেত্রে পচনশীল আবর্জনা বিশেষ প্রক্রিয়ায় দূষণমুক্ত করা হয় এবং সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এত দিনেও পুরসভা থেকে আর কোনও নির্দেশ না আসায় পুরো উদ্যোগটাই থমকে গিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে নিবেদন, শীঘ্র বৈজ্ঞানিক উপায়ে আবর্জনা সংগ্রহ ও তার প্রক্রিয়াকরণ চালু হোক।

শিবপ্রসাদ রায় চৌধুরী, শিবপুর, হাওড়া

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Election Commission of India Election Commissioner

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}