মনোবিদ জয়ন্তী বসুর ‘বন্ধু হে আমার, রয়েছ...’ (৩০-৫) লেখাটি আমাদের এক চিরন্তন মৌলিক প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। এ এক অদ্ভুত সময়, যখন একটি ভাইরাস আমাদের অস্তিত্বের মূল ধরে টান দিচ্ছে। যারা টিকে আছি, তাদের মনও হয়ে পড়ছে ভঙ্গুর, ত্রস্ত, অসহায়। এখনও অবধি ভেঙে না-পড়া শক্ত মনের মানুষও অন্তঃস্থলে হয়ে পড়ছে বেসামাল। চেনা মুখগুলোর আকস্মিক প্রয়াণ বেদনার অন্তিম প্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে আমাদের। এখন ‘পজ়িটিভ’ থাকতে বলাটাও যেন এক বিরাট ঠাট্টা। সংবেদী মন অন্য মানুষের দুর্দশায় বিষণ্ণ হবেই। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু, সে মন যেন অন্ধকারাচ্ছন্ন না হয়। লেখিকার সরল, সহজ মন ছুঁয়ে যাওয়া অকপট উক্তি, “দেহের সব রোগের ওষুধ মজুত থাকে না চিকিৎসকের ভাঁড়ারে। মনের সব কষ্টের সমাধান থাকে না মনোবিদের ঝুলিতে”, শেষ অবধি সুন্দর, চিরন্তন সহজ সত্যকে ভণিতা ছাড়াই স্বীকার করে। যতই কঠিন হোক এই সত্য, তাকে সহজ ভাবে মেনে নিতে হবে। এই সত্য যেন পথ দেখায় অন্য এক উত্তরণের, উপলব্ধির। আমরা ভাবতে বাধ্য হই নিজেদের নিয়ে। ফিরে যেতে হয় অস্তিত্বের মূল চেতনায়। ফিরে যেতে হয় প্রকৃতির কাছে, সমাজের কাছে।
মনোবিজ্ঞানী ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, সব মনোকষ্ট বা মানসিক অসুস্থতার জন্মই সমাজ থেকে, আর তার সমাধানও লুকিয়ে আছে সেই প্রকৃতি আর সমাজেই। আর তাই আধুনিকতার আত্মস্বাতন্ত্র্যে উন্মাদ নিজেকে নিয়ে দিশাহীন মানুষকে আজ ভাবতে হবে পরিবেশ, গাছপালা, অরণ্যানী আর অন্য সব প্রাণিকুলের সঙ্গে আমরাও প্রকৃতিরই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। বিচ্ছিন্নতার ভাবনার মধ্যেই আছে ধ্বংসের বীজ। লেখিকার কথায়, পারস্পরিক ভালবাসাতেই খুঁজে নিতে হবে আমাদের শুশ্রূষা। কিন্তু, তার আগে আত্মগর্বী, সমাজবিচ্ছিন্ন মানুষকে তো ভাবতে হবে যে, সে আদপে একটি সমাজবদ্ধ জীব, তার স্বাধীনতা মানে অন্য মানুষের থেকে পলায়ন নয়, ভোগবাদী ইচ্ছাপূরণ নয়, যন্ত্রের আচ্ছাদনে স্বরচিত দ্বীপান্তর নয়। স্বাধীনতা মানে পারস্পরিক নির্ভরতা, আরও বেঁধে বেঁধে থাকা।
কোভিড আজ মৌলিক প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে— আমাদের অস্তিত্ব কিসের বিনিময়ে? অতিমারি যদি কেটেও যায়, এই ত্রস্ত, আড়ষ্ট মন নিয়ে কী ভাবে আমরা পরস্পরের মুখোমুখি হব, জানি না। আদৌ কি পুরনো আবেগ আর ভালবাসার সহজতায় ফিরে যেতে পারব? জানি না। জানি না কোন মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠবে আগামী প্রজন্ম। শুধু জানি, উদ্ধার পেতে হলে স্পর্শের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার এটাই আদর্শ সময়। সময় নিজের কাছে নিজেকে মানুষ বলে খুঁজে পাওয়ার। কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কথাতেই হয়তো খুঁজে নিতে হবে আমাদের দিশা, “তুমি মাটির দিকে তাকাও, সে প্রতীক্ষা করছে,/ তুমি মানুষের হাত ধরো, সে কিছু বলতে চায়।”
অনিন্দ্য ঘোষ, কলকাতা-৩৩
গৃহবন্দির স্বাস্থ্য
অতিমারিতে গৃহবন্দি পরিস্থিতি সর্বস্তরের মানুষের জীবনে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলছে। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরবিদ্যা বিভাগের তরফে বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত ব্যক্তিদের ও ছাত্রছাত্রীদের উপর লকডাউনের আগে ও লকডাউন অন্তর্বর্তী সময়ে কী ধরনের শারীরবৃত্তীয় ও মানসিক পরিবর্তন হয়েছে, তাই নিয়ে একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে তিনটি প্রধান সমস্যা। এক, কেবল জাগা বা ঘুম নয়, দেহের তাপমাত্রা, হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ, হরমোন নিঃসরণ, মানসিক সক্রিয়তা ইত্যাদি সবই দিন ও রাতের ছন্দ অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। গৃহবন্দি দশায় এই স্বাভাবিক ছন্দ বিঘ্নিত হচ্ছে। দুই, বেশির ভাগ বাড়িতে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার মতো আসবাবপত্র নেই। ফলে, দেহভঙ্গিমায় বিচ্যুতি ঘটছে। তিন, অতিমারির কারণে সামাজিক মেলামেশা কমে গিয়েছে। আট বছর থেকে ষোলো বছর বয়সি ছাত্রছাত্রীদের গৃহবন্দি অবস্থা তাদের চিন্তাধারা ও শারীরিক বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলছে। খেলার সুযোগ সীমিত হওয়ার জন্য দেহের শিথিলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতিরিক্ত ফোন বা কম্পিউটার ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে তারা। এই অতিরিক্ত ‘স্ক্রিন টাইম এক্সপোজার’-এর জন্য স্বাভাবিক ঘুমের প্রকৃতি ও সময় ব্যাহত হচ্ছে। মাথার যন্ত্রণা ও চোখের সমস্যাও বেড়ে যাচ্ছে। বহুজাতিক সংস্থার কর্মীরাও চোখের সমস্যা, ক্লান্তি, ঘাড়, কোমর ও পিঠের নীচের দিকে ব্যথা অনুভব করছেন। পুলিশবাহিনী ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে নিযুক্ত কর্মীরা অতিরিক্ত পরিশ্রম ও পরিবার থেকে দূরে থাকার জন্য শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তির শিকার হচ্ছেন। ঘুমের ব্যাঘাত, আপৎকালীন কাজের চাপ প্রভাব ফেলছে মানসিক স্বাস্থ্যে। উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা, অবসাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সেই কারণে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। যেমন, শারীরবিদ্যার নীতি মেনে নিজের কাজের জায়গায় অস্থায়ী পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে। নজর রাখতে হবে, শিরদাঁড়া যেন সোজা থাকে এবং চেয়ারে বসলে পা যেন মাটিতে থাকে। মাটিতে বসলে পিঠের দিকে যাতে অবলম্বন থাকে। কাজ, ঘুম ও খাওয়ার সময় অপরিবর্তিত রাখতে হবে। অনর্থক স্ক্রিন এক্সপোজার কমাতে হবে।
সাঈনী আরজু, বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ
ভরসা রেডিয়ো
‘মুছে যাক গ্লানি’ (পত্রিকা, ২৯-৫) নিবন্ধে করোনা আবহে অবসাদ কাটাতে বেশ কিছু কার্যকর উপায় জানিয়েছেন লেখিকা। তবে একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক উনি বাদ দিয়েছেন, তা হল পছন্দের গান-বাজনা শোনা। আরও ভাল হয় যদি রেডিয়োকে সঙ্গী করে নেওয়া যায়। এক কালের অতি জনপ্রিয় এই শ্রুতিমাধ্যমের থেকে আজকাল অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু খুব জোর দিয়েই বলতে পারি, আজকের দিনেও রেডিয়োর মতো মনোরঞ্জনের সুলভ সর্বক্ষণের সঙ্গী খুঁজে পাওয়া কঠিন। বিশেষ করে যাঁরা আইসোলেশনে রয়েছেন, তাঁদের অনেকের হাতের কাছে টিভি ইত্যাদি নেই; কিন্তু হাতের কাছে একটা ফোন আছে। যদি তিনি এফএম তরঙ্গের সীমার মধ্যে থাকেন, তা হলে সাধারণ ফোনেই রেডিয়ো পেয়ে যাবেন। আর অন্যরা পাবেন স্মার্টফোনে। এর জন্য রেডিয়োসেট জরুরি নয়। আমি নিজে এবং আমার চেনাজানা অনেক বেতারপ্রেমী দীর্ঘ লকডাউনের মধ্যেও রেডিয়োকে সঙ্গী করে বেশ রয়েছি। তাই আসুন, এই কঠিন সময়ে অবসাদ কাটিয়ে উঠতে যখন খুশি, যেখানে খুশি রেডিয়ো শুনে মন প্রফুল্ল রাখুন, করোনাকে জয় করুন।
সাধন মুখোপাধ্যায়, বাঁকুড়া
হতাশার ফুটবল
কেন ভারতীয় ফুটবল সমানে এ রকম নিম্নমানের খেলা খেলে চলেছে? সুদীর্ঘ ৫০ বছর ধরে এ দেশের ফুটবলের এই ভয়ঙ্কর দৈন্যদশা কেন, তা নিয়ে কারও কোনও মাথাব্যথা নেই। এটা খুব আশ্চর্যজনক মনে হয়। অলিম্পিক্স, বিশ্বকাপ তো দূরের কথা, এশিয়াতেও দীর্ঘকাল বড় মাপের কোনও জয় নেই। অন্যান্য কিছু নতুন খেলায়, যেমন— ফেন্সিং, রোয়িং, সেলিং, জিমন্যাস্টিক্সে ভারতের প্রতিযোগীরা অলিম্পিক্সে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন। শুটিং, হকি, ব্যাডমিন্টন, তিরন্দাজি, কুস্তি, বক্সিং, ওয়েটলিফটিং, অ্যাথলেটিক্স, টেনিস, টেবিল টেনিস প্রভৃতি খেলায় ভারতীয় খেলোয়াড়েরা বর্তমানে বিশ্বমানের খেলা খেলছেন। ক্রিকেটের কথা তো ছেড়েই দিলাম। একমাত্র ফুটবলের ক্ষেত্রেই একেবারে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। কবে এ দেশের জনগণ অপর দেশের প্রশংসা ছেড়ে নিজের দেশের ফুটবলকে আপন করে নেবেন?
তাপস সাহা, শেওড়াফুলি, হুগলি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy