Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Society

সম্পাদক সমীপেষু: শিশুদের অবহেলা

যদি প্রাপ্তবয়স্কদের দেওয়া সুযোগ-সুবিধে কিছু কমিয়ে শিশুদের কল্যাণের জন্য সমস্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হয়, তা হলেই ভবিষ্যতের আশা আছে।

সমস্ত শিশুর অন্ন, বস্ত্র, স্বাস্থ্য, শিক্ষা সুনিশ্চিত ও নিরাপদ হলে তবেই এক দিন সুস্থ সমাজ গঠিত হওয়ার আশা আছে।

সমস্ত শিশুর অন্ন, বস্ত্র, স্বাস্থ্য, শিক্ষা সুনিশ্চিত ও নিরাপদ হলে তবেই এক দিন সুস্থ সমাজ গঠিত হওয়ার আশা আছে। ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২২ ০৪:৩৯
Share: Save:

‘অভাব কেবল খাদ্যের নয়’ (৫-১২) প্রবন্ধটির জন্য অনেক ধন্যবাদ। মুখে যা-ই বলা হোক, যাদের জন্য সমাজের চিন্তা করা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তারাই বাস্তবে সবচেয়ে অবহেলিত। এ গভীর বেদনার ও লজ্জার। এদের ভোট নেই বলেই কি এই অবহেলা? না কি এরা নিজেদের দাবি জানিয়ে চিৎকার করতে পারে না বলে? আমরা ভুলে যাই যে, সমস্ত শিশুর অন্ন, বস্ত্র, স্বাস্থ্য, শিক্ষা সুনিশ্চিত ও নিরাপদ হলে তবেই এক দিন সুস্থ সমাজ গঠিত হওয়ার আশা আছে। গোড়ায় পচন ক্রমাগত বেড়ে গেলে, নানা সুবিধা বিতরণকারী প্রকল্পের নামে ‘শ্রী’ বসালেও, বাস্তবে কোথাও শ্রী থাকবে না। যদি প্রাপ্তবয়স্কদের দেওয়া সুযোগ-সুবিধে কিছু কমিয়ে শিশুদের কল্যাণের জন্য সমস্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হয়, তা হলেই ভবিষ্যতের আশা আছে। এখানেই দরিদ্র শ্রমজীবী মায়েদের, এমনকি বাড়ির পরিচারিকাদেরও শিশু সন্তানদের সুরক্ষার প্রশ্নটি একটি অত্যন্ত জরুরি বিষয় হয়ে ওঠে।

আমি একটি অনগ্রসর এলাকার স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষিকা। দেখেছি, কত মেধাবী ছাত্রীর শুধু অভিভাবকহীন অবস্থার জন্য কী করুণ পরিণতি হয়েছে। কত মেয়ে কোনও দিন খালি পেটে স্কুলে চলে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। মা সকালে বেরিয়ে যান, কোনও খাবার রান্না করে যেতে পারেননি। তবে এ-ও বলব যে, মায়েদের সচেতনতার অভাবও কিছুটা এর জন্য দায়ী। অনেক সস্তা পুষ্টিকর খাবারের খোঁজও তাঁরা রাখেন না। আমার তো মনে হয় শিশু কল্যাণের একটা অপরিহার্য অঙ্গ পুষ্টিকর, অথচ সুলভ খাদ্য সম্পর্কে মায়েদের অবহিত করা। এ ব্যাপারে অবশ্য সচ্ছল মায়েরাও প্রায় একই রকম অসচেতন। তাঁরা মনেই করেন না যে, সন্তানদের জন্য এটা খুব জরুরি বিষয়।

সুতনুকা ভট্টাচার্য, কলকাতা-৪৭

ক্রেশ প্রয়োজন

স্বাতী ভট্টাচার্যের প্রবন্ধটি শিশুস্বাস্থ্য সম্পর্কে গা-ছাড়া সরকারি প্রকল্পের বিরুদ্ধে এক গঠনমূলক পথের দিশা দেখায়। শ্রমজীবী মায়েরা কাজের সময়ে শিশু সন্তানকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রেখে যেতে বাধ্য হন। কিন্তু আমরা এখনও ভেবে উঠতে পারিনি, এই শ্রমজীবী মায়েরাও ‘ওয়ার্কিং মাদার’। তাঁদের সন্তানরাও ভবিষ্যতের নাগরিক হিসেবে দেশের উন্নয়নের সূচক বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে সক্ষম হবে। গতানুগতিক ভাবে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে, বা সরকারি স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মিড-ডে মিলে দু’হাতা খিচুড়ি ও আধ সিদ্ধ ডিমের বাইরে কী বরাদ্দ করা সম্ভব, আমরা ভাবি না। যথাযথ পুষ্টি বিধানের আদর্শের বাস্তবায়ন সরকারি ভাবে আর কবে করা হবে? সংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত মায়েদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ৯০ দিন থেকে ধাপে ধাপে বাড়িয়ে ১৮০ দিন করা হয়েছে। পুষ্টি বিজ্ঞানে মাতৃদুগ্ধের গুরুত্ব অপরিসীম, তাই এই সরকারি উদ্যোগ সাধুবাদযোগ্য। কিন্তু অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত অসংখ্য মায়েদের জন্য ‘মাতৃত্বকালীন ছুটি’-র ভাবনা এখনও আকাশকুসুম কল্পনা। অথচ, জীবনযাত্রার ধরন বদলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলা জিনিসপত্রের দাম আজ ধনী-গরিব নির্বিশেষে স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই অর্থ উপার্জন করতে পথে নামিয়েছে। অণু পরিবারে সন্তানকে দেখাশোনা করার ব্যবস্থা করতে কর্মরত দম্পতিদের সমস্যা অবর্ণনীয়। সংগঠিত ক্ষেত্রে সবেতন ‘মাতৃত্বকালীন ছুটি’ বা সন্তানের ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত ৭২০ দিন ‘সন্তান পরিচর্যার ছুটি’-র সংস্থান থাকলেও অসংগঠিত ক্ষেত্রে সেই সুবিধা নেই, আয়া রেখে সন্তান বড় করার সামর্থ্যও নেই। ফলে শিশু দিবসে আলের উপরে ঘুমন্ত শিশুর ছবি, কিংবা নারী দিবসে শিশুকে পিঠে গামছা বাঁধা অবস্থাতে কর্মরত মায়ের ছবি সংবাদমাধ্যমে বছরের পর বছর ধরে আমরা দেখতে পাই। কাজেই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলোকে শুধুমাত্র খিচুড়ি বিলির কেন্দ্র হিসাবে না রেখে, অন্যান্য রাজ্যের মতো সাত-আট ঘণ্টার ক্রেশ হিসেবে গড়ে তোলা হোক। সন্তানদের সঠিক পরিচর্যার জন্য এই উদ্যোগ ‘নিউট্রিশন রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার’-এর চেয়েও অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে বলে আশা করা যায়। এ ছাড়া পুরনিগম, পুরসভা, পঞ্চায়েত, স্বাস্থ্য দফতর, স্বনির্ভর গোষ্ঠী বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মিলিত উদ্যোগে আরও অতিরিক্ত ক্রেশ, ডে কেয়ার সেন্টার বা ডে বোর্ডিং স্কুলের ব্যবস্থা করলে সংগঠিত ও অসংগঠিত— উভয় ক্ষেত্রে মায়েরা নিশ্চিন্তে ঘরে-বাইরে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হবেন। প্রবন্ধকারের সঙ্গে সহমত পোষণ করে বলা যায়, নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে সুস্থ-সবল ভবিষ্যৎ নাগরিক তৈরি করতে হলে “পঞ্চাশ বছরের ঘুণধরা প্রকল্পের বাইরে নতুন করে চিন্তা করতে হবে।” শ্রীহীন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে খিচুড়ির লাইনে পুষ্টিহীন সারিবদ্ধ শিশু, অথবা আয়ার অজ্ঞতায় সচ্ছল পরিবারেও ভগ্নস্বাস্থ্য শিশুর ছবি রাষ্ট্রের লজ্জা।

তন্ময় মণ্ডল, গোবরডাঙা, উত্তর ২৪ পরগনা

শ্রমিকের মৃত্যু

গত ২৮ নভেম্বর সকালে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু উড়ালপুলে কাজ করার সময়ে গাড়ির ধাক্কায় এক মহিলা শ্রমিকের মৃত্যু হয়, এবং বেশ কয়েক জন আহত হন। এই দুর্ঘটনা আবার প্রমাণ করে দিল যে, কলকাতায় রাস্তা বা ব্রিজের উপর কাজ করতে গেলে প্রাণ হাতে নিয়ে কাজ করতে হয়। যে সব সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা এই শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করায়, তাদের কাছে এবং সরকারের কাছে এঁদের জীবনের কোনও দাম আছে বলে মনে হয় না। আমি ১৯ বছর নিউ ইয়র্কে বিভিন্ন হাই ওয়ে এবং ব্রিজের উপর বিভিন্ন সংস্থাকে কাজ করতে দেখেছি, এবং নিজেও কাজ করেছি। গরিব মানুষের জীবন নিয়ে এ ভাবে ছিনিমিনি খেলা হলে সেখানে তা মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়।

নিউ ইয়র্কে রাস্তা এবং ব্রিজের উপর কাজ করতে গেলে ‘মেনটেন্যান্স অ্যান্ড প্রোটেকশন অব ট্র্যাফিক’ প্ল্যান বা ড্রয়িং লাগে। এই ড্রয়িং-এ বিস্তারিত তথ্য দেওয়া থাকে— কাজ চলার সময় কোনখান দিয়ে কী ভাবে গাড়ি যাবে, এবং গাড়ির গতি কত থাকবে। কংক্রিটের বেরিয়ার, কমলা রঙের ড্রাম, প্লাস্টিকের কোন এবং বেরিয়ার যথেষ্ট ব্যবহার হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী রাস্তায় অস্থায়ী চিহ্নও দেওয়া হয়। এক বার সারা রাত ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে ব্রিজের গার্ডার পরিবর্তন করে সকালে ঠিক সময়ে ব্রিজ খুলে দিয়েছিলাম। যাঁরা সে রাতে কাজ করেছিলেন, সবাই প্রশংসিত হয়েছিলেন। একেই বলে টিম স্পিরিট।

অলোক সরকার, কলকাতা-৭৫

চট শিল্প

রাজ্যের চট শিল্পকে কেন্দ্র-নির্ভরতা কমাতে হবে বলে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বার্তা দিয়েছেন চটকল মালিকদের (‘শিল্পকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর বার্তা মন্ত্রীর’, ১৩-১১)। প্রসঙ্গত জানাই, কেবলমাত্র খাদ্যশস্যের বস্তার বরাত পাওয়ার লক্ষ্যে কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। তা হলে কৃত্রিম তন্তুর সঙ্গে প্রতিযোগিতার বাজারে প্রাগৈতিহাসিক যুগের চটগুলি টিকে থাকা মুশকিল। বিগত চার দশকে বহু বার দেখা গিয়েছে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ, প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, দরবার এমনকি বিধানসভায় আলোচনা এবং পাট নীতি প্রণয়ন হলেও রুগ্ণ চট শিল্পকে চাঙ্গা করা যায়নি। কেন্দ্র-নির্ভরতা কমলে এবং জুট মালিকদের মধ্যে স্বনির্ভরতা গড়ে উঠলে কিছুটা হলেও বস্ত্র মন্ত্রকের বঞ্চনা নিয়ে ক্ষোভ থামবে। প্রয়োজন পণ্যের নিত্যনতুন প্রয়োগ এবং প্লাস্টিকের বাজার দখল করা। বন্যা ঠেকাতে এবং বালির বস্তার বাঁধ দিতে উন্নত দেশের কাছে, এমনকি স্বদেশে জুট বস্তাই পরিত্রাতা। কারণ, সিন্থেটিক কিংবা পলিথিন বালির বস্তায় ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হাইড্রোকার্বন কণা জলে এবং সমুদ্রগর্ভে দূষণের কারণ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। বর্ধমানের একটি নামী চটকল সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার বন্যা রোধে চটের ব্যাগ রফতানি করেছে। এমনকি যুদ্ধের সময় হামলা ঠেকাতে বাঙ্কার তৈরির জন্য প্রচুর পরিমাণে বালির বস্তার প্রয়োজন রয়েছে। এই ধরনের রফতানিতে উৎসাহ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে কেন্দ্র। সংরক্ষণে নয়, স্বনির্ভরতায় বাঁচুক চট শিল্প।

সুব্রত পাল, শালবনি, বাঁকুড়া

অন্য বিষয়গুলি:

Society child
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy