Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: এ সমীক্ষা অর্থহীন

আমরা, সাধারণ মানুষও, ভোটের অনেক দিন আগে থেকেই, বিশেষত বালাকোট ঘটনার সময় থেকেই দেখছিলাম, বহু টিভি চ্যানেল যেন একই সুরে কথা বলছে, শাসক দলের তাঁবেদারি করছে।

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৯ ০০:১৭
Share: Save:

নির্বাচন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই টিভি চ্যানেলগুলি (এবং অন্যান্য গণমাধ্যমও) ঝাঁপিয়ে পড়ল এগজ়িট পোল নিয়ে। ফলাফল যা দেখা গেল, সবটাই কেন্দ্রের শাসক দলের পক্ষে গিয়েছে। ২২ বিরোধী দলের সম্ভাব্য জোট একেবারেই হালে পানি পায়নি।

এ দিকে ভোট শেষ হওয়ার আগের দিন থেকেই অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু এই ২২টি বিরোধী দলের মধ্যে অবিরাম সংযোগ রক্ষা করে চলেছেন, আলাপ-আলোচনা করছেন। এগজ়িট পোলের ফলাফলকে বিরোধীরা মোটামুটি প্রত্যাখ্যান করছেন। তাঁদের বক্তব্য, এই এগজ়িট পোল শাসক দলের নির্দেশে, বিরোধীদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য করা হয়েছে। এর কোনও সারবত্তা নেই, সবটাই বানানো গল্প। কেউ কেউ বলছেন, এটা চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়।

আমরা, সাধারণ মানুষও, ভোটের অনেক দিন আগে থেকেই, বিশেষত বালাকোট ঘটনার সময় থেকেই দেখছিলাম, বহু টিভি চ্যানেল যেন একই সুরে কথা বলছে, শাসক দলের তাঁবেদারি করছে। বিরোধী দলগুলো এমনিতেই এই ভোটে শাসক দলের জলের মতো পয়সা খরচের দিকটা বার বার তুলে ধরেছে। এগজ়িট পোলকে অনেকে এই প্রবল পয়সা খরচের একটি ফল হিসেবেও দেখছেন।

মুশকিল হচ্ছে, এই ধরনের সমীক্ষাগুলি বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়, অথচ মানুষকে যথেষ্ট প্রভাবিত করে। যে দল জিতছে বলে মনে হয়, মানুষ তাকে প্রায় ইচ্ছানিরপেক্ষ ভাবেই একটু ভাল চোখে দেখতে শুরু করে। তাই আমার মতে, এগজ়িট পোল ব্যাপারটিই বর্জন করা হোক।

মৃণাল মুখোপাধ্যায়

কলকাতা-৪২

বাস্তব চিত্র

জাগরী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আত্মরক্ষার ঢাল পদ্মবন’ (১৮-৫) প্রসঙ্গে এই চিঠি। অবাক লাগে দেখে, জাগরী এটা ধরেই নিয়েছেন যে, তৃণমূল সরকারকে সমস্যায় ফেলতে বামেদের ভোটও একেবারে ঝাঁকে ঝাঁকে পদ্মফুলে লুটিয়ে পড়বে।

সাধারণ একটা হিসেব ধরলে, শাসক দল হিসেবে তৃণমূলের ভোট শতাংশটি ৩৮। যদিও সেটা তর্কসাপেক্ষ। কেননা খোদ তৃণমূল নেতৃত্বই জানেন না তাঁদের ভোটের প্রকৃত হিসেবটা। পঞ্চায়েত ভোটে লুটতরাজ, দেড় কোটি ভোটারকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার পর, কোনও শাসক দলের পক্ষেই নিজের ভোট নির্ণয় করা সম্ভব নয়। তবুও ৩৮% বাদ দিয়ে ৬২% ভোটকে হিসেবে ধরলে, বামফ্রন্টকে এই দুঃসময়েও ২৫% দেওয়া যায়। রইল বাকি ৩৭%। এখানেই লুকিয়ে রয়েছে যাবতীয় চমক। কংগ্রেসের সামান্য শতাংশ ভোট বাদ দিয়ে, বাদবাকি শতাংশকে কেন্দ্র করে লড়াই বিজেপি-তৃণমূলের।

তৃণমূলের ধরে নেওয়া ৩৮% ভোটও সুরক্ষিত আছে কি না, গভীর চর্চার বিষয়। চতুর্দিকে কান পাতলে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তৃণমূল-বিরোধী আলাপ আলোচনা। এত ভাল ভাল কাজ করা মহান সরকারের মাত্র আট বছর পেরোনোর পরেই এই পরিস্থিতি! ভোটের হাওয়া বড়ই বেমক্কা। এক বার পালে লাগলে বেশ বড় শতাংশ ভোটার, শাসক দলকে তার কৃতকার্যের মাসুল ফিরিয়ে দিতে উন্মুখ থাকে। এখানে সব যুক্তিকে পাশে সরিয়ে বাম-বিজেপি আঁতাঁত একটা কষ্টকর কল্পনা।

গ্রামের দিকে একটু ঘোরাঘুরি করুন, কট্টর তৃণমূলী পরিবার দলে দলে কী ভাবে ঘর পরিবর্তন করছে, টের পাবেন। চোখেমুখে তাদের কঠিন প্রতিশোধস্পৃহা। সঙ্গে মার খেতে খেতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সমর্থকেরা। অস্তিত্বই যেখানে বিপন্ন, সেখানে বিজেপি ভাল না মন্দ, এই বোধটাই হারিয়ে ফেলেছে তারা। যে দু’মাস আগে ঠিক করে ফেলেছে, আনুগত্য বদল করবে, তাকে পত্রিকার যুক্তি দিয়ে প্রভাবিত করা যাবে না।

বিকাশ বসু

কলকাতা-১০৬

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বামশক্তি

‘পাটিগণিত এবং সংগঠন’, (১৫-৫) ও ‘ভালই তো, চিনে নেওয়া গেল’ (১৬-৫) নিবন্ধ দু’টি পড়ে এই চিঠি। মনে হয় বর্তমান নির্বাচনে ‘নিজের নাক কেটে পরের যাত্রাভঙ্গ করা’র আর একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাখতে চলেছে বামপন্থী দলগুলি। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির শক্তি যে বাড়তে চলেছে এবং সেটা যে সর্বতো ভাবে বামশক্তির ক্ষয়ে, সেটা বুঝতে তত্ত্বের অস্বচ্ছ ঠুলিপরা বামমার্গীয় চোখের দরকার হয় না, খোলা চোখে চার দিক দেখলেই বোঝা যায়। খারাপ লাগে এই ভেবে, অখিলেশ যাদব বা মায়াবতীর মতো রাজনীতিবিদ, একে অপরের ঘোষিত শত্রু হয়েও যেটা বুঝতে পারেন, প্রকাশ কারাট-সীতারাম ইয়েচুরির মতো প্রায় ১০০ বছরের ধারাবাহিক বামপন্থী শিক্ষায় প্রশিক্ষিত মানুষরাও তা পারেন না।

ধর্মীয় মৌলবাদকে ভিত্তি করে বিজেপির রাজনীতিতে স্থিতিলাভ এবং দেশে অতি নিম্নস্তরের ‘ক্রোনি ধনতন্ত্র’কে প্রতিষ্ঠা প্রদানের চেষ্টাকে যদি রাজনৈতিক ভাবে বাধা দিতে হয়, তা হলে দরকার দেশের সব বিজেপি-বিরোধী শক্তিকে একত্রিত করা। এই নির্বাচনের ক্ষেত্রে এটাই বোধ হয় ছিল বামপন্থী রাজনীতির ঐতিহাসিক দায়িত্ব। এর প্রয়োজনে কেরলে কংগ্রেস এবং পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস-সহ তৃণমূলের সঙ্গে জোট করার দরকার ছিল। প্রাথমিক স্তরে এর সুযোগ তৃণমূল নেত্রী করে দিয়েছিলেন জানুয়ারি মাসে, ভারতের প্রায় সব রাজনৈতিক দল সেখানে উপস্থিত হলেও, বাম দলগুলি অনুপস্থিত ছিল। তাতে নিজেদের অপ্রাসঙ্গিকতা বাড়িয়ে বিজেপিরই সুবিধে করে দেওয়া হয়েছে। এমন জোট হলে
অঙ্ক এবং সংগঠনের যোগফলে বামশক্তি পশ্চিমবঙ্গে নিজেদের অস্তিত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরতে পারত। ঠিকই, তৃণমূলের কোনও রাজনীতি নেই। কিন্তু তৃণমূলই একমাত্র দল যারা পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে, ক্ষুদ্রস্বার্থে হলেও, আটকানোর চেষ্টা করছে।

বিজেপিও পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট বা কংগ্রেস নয়, তৃণমূলকেই তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। অদূর ভবিষ্যতে তৃণমূলের ৪০ জন বিধায়কের বিজেপিতে যোগদান সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর কৌশলী বক্তব্য এটাই প্রমাণ করে, সুযোগ পেলেই বিজেপি তৃণমূলকে গিলে খাবে, যেমনটা ত্রিপুরায় হয়েছে এবং পশ্চিমবঙ্গেও শুরু হয়েছে। এই নির্বাচনে বিজেপি ফিরে এলে ভারতের গৈরিকীকরণ শুধু সময়ের অপেক্ষা। পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরা তো গিয়েছেই, কেরলও থাকবে না বামেদের হাতে। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির হাতে তৃণমূল বধ হলে বামশক্তির সুযোগ বাড়বে, এমন ভাবনাকে বাতুলতা ছাড়া আর কী বলা যেতে পারে?

কিছু দিন আগেও প্রধান শত্রুকে আটকানোর জন্য বামশক্তি অপ্রধান শত্রুর সঙ্গে হাত মেলাত। এই নির্বাচনে সেই তত্ত্ব বিসর্জন দিয়ে তারা শুধু নিজেদের নয়, দেশের চরমতম বিপদ ডেকে এনেছে। রাজ্যে তৃণমূলকে হটানোর ডাক বর্তমান পরিস্থিতিতে শুধু অরাজনৈতিক নয়, আরও নৈরাজ্য প্রতিষ্ঠার ডাকও, যার প্রমাণ পাওয়া গেল সে-দিন অমিত শাহের ‘পথশোভা’কে কেন্দ্র করে।

শুভেন্দু চৌধুরী

কলকাতা-৩৭

মুছে দিন

নির্বাচন পর্বে বাড়ির মালিক দেওয়াল লিখতে দিয়ে ভোটপ্রার্থীদের প্রতি বদান্যতা দেখিয়েছেন। নির্বাচন মিটে গিয়েছে। প্রার্থীরা নিজ দায়িত্বে দেওয়াল মুছে দিলে, বাড়ির মালিকের প্রতি সৌজন্য দেখানো হবে।

দেবব্রত সেনগুপ্ত

কোন্নগর ,হুগলি

নেতা হবে না?

যে সব ছাত্রছাত্রী মাধ্যমিকে খুব ভাল ফল করেছে, তারা কেউ বলছে ডাক্তার হবে, ইঞ্জিনিয়ার হবে ইত্যাদি। কেউ বলছে না, নেতা হবে, মন্ত্রী হবে। বাবা-মা-শিক্ষকেরাও তাদের নেতা-মন্ত্রী হতে উৎসাহিত করেন না। তা হলে কি শুধু অশিক্ষিত ব্যাকবেঞ্চাররাই দেশ চালাবে ?

অশোককুমার দাস

কলকাতা-৭৮

অন্য বিষয়গুলি:

Exit Poll TMC CPM BJP Wall Writing
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE