বাঙালি ফুটবলপ্রেমী জাতি। বাঙালি তার্কিক। পেলে, না মারাদোনা, না কি মেসি, কে শ্রেষ্ঠ— এই বিতর্ক চলতে থাকবে। কিন্তু ফুটবলের বাইরেও মারাদোনার আবেগপ্রবণ, বোহেমিয়ান, রোম্যান্টিক জীবনধারার জন্য তিনি অবশ্যই সব বাঙালির কাছে জনপ্রিয়তম। ফুটবলের খোঁজ না-রাখা মাসি-পিসি-ঠাকুমাদের কাছেও ভিন্দেশি মারাদোনা পরিচিত নাম। আমাদের বাবা, জেঠা, কাকারা ছিলেন ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ় আর ফুটবলে ব্রাজিলের সমর্থক। ব্রাজিলের সঙ্গে আর্থসামাজিক মিল ও ফুটবল আবেগের সঙ্গে সাযুজ্য তাঁদের ব্রাজিল অনুরক্ত করেছিল। ইউরোপীয় শক্তি ও গতির ট্যাকটিক্যাল ফুটবলের চেয়ে ব্রাজিলের শৈল্পিক দৃষ্টিনন্দন ফুটবল তাঁদের বেশি আকর্ষণ করত। আশির দশকে মারাদোনার আবির্ভাব সেই সমর্থনকে ভাগ করে দিল। তখন নতুন প্রজন্মের প্রায় সকলেই আর্জেন্টিনার সমর্থক। মারাদোনার জাদুতে মুগ্ধ হয়ে ব্রাজিল ভক্তদের অনেকেই সমর্থন পাল্টে ফেললেন। সেই সময় স্কুলপড়ুয়া আমাদের বই-খাতার মলাট থাকত খবরের কাগজ কেটে দিয়েগোর ছবি দিয়ে সাজানো। মারাদোনার জীবন, প্রতিকূলতা অতিক্রম করে ফুটবলার হয়ে ওঠার কাহিনি ছিল কণ্ঠস্থ। বিশ্বকাপ চলাকালীন ছাদে উড়েছে নীল-সাদা পতাকা। খেলার মাঠে গায়ে দশ নম্বর নীল-সাদা জার্সি। মারাদোনা ছিলেন স্বপ্নের রাজপুত্র। এক জন ফুটবলার তাঁর ক্রীড়া নৈপুণ্যে অনেক দূরের দেশ আর্জেন্টিনাকে আমাদের কাছের করে দিয়েছিলেন। মারাদোনা-আবেগ শেষ হওয়ার নয়। যত দিন ফুটবল থাকবে, তত দিন তিনি জীবিত থাকবেন।
কৌশিক চিনা
মুন্সিরহাট, হাওড়া
জাদুকর
সায়নদেব চৌধুরীর ‘দক্ষিণ গোলার্ধের জাদুকর’ (২৮-১১ ) নিবন্ধে সংযোজন করতে চাই, ১৯৬০ সালে ৩০ অক্টোবর আর্জেন্টিনার বুয়েনোস আইরেসে লানুস শহরে জন্মগ্রহণ করেন দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা। দারিদ্রকে সঙ্গে নিয়ে শৈশব থেকেই তিনি নিজেকে ফুটবলের জন্য তৈরি করতে থাকেন। ফলে ১৯৭৬ সালে নভেম্বরে মাত্র ১৬ বছর বয়সে প্রিমিয়ার ডিভিশনে প্রথম গোল তাঁকে দেশের কাছে পরিচিতি এনে দিল; পরের বছরই ফেব্রুয়ারিতে দেশের কনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে আর্জেন্টিনার জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। তার পরই তাঁর স্কিল, ড্রিবল, ক্ষিপ্রতা, অসাধারণ বল কন্ট্রোল, দুরন্ত পাস, সাড়ে পাঁচ ফুটের মানুষটি বিশ্ববাসীর আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠলেন।
তাঁর খেলোয়াড় জীবনের সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘটনা ১৯৮৬ সালে— ২২ জুন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ‘হ্যান্ড অব গড’ গোল। ম্যাচের ৫১ মিনিটের মাথায় ইংল্যান্ডের গোলকিপার পিটার শিলটনের মাথার উপরে লাফিয়ে ঘুষি মেরে বলটি গোলের মধ্যে ঢুকিয়ে দেন এবং তার চার মিনিট পরেই করেন শতাব্দীর সেরা গোল, ছয় ইংরেজ খেলোয়াড়কে ধরাশায়ী করে। সেই বছরই ২৯ জুন কার্যত একার কৃতিত্বে মেক্সিকোতে বিশ্বকাপ তুলে দিয়েছিলেন দেশকে। তবে ইটালিতেই তিনি ক্লাব জীবনের সেরা ফুটবল খেলেন। ১৯৮৭ এবং ১৯৯০-এ তিনি ইটালি লিগে চ্যাম্পিয়ন করেন নেপলসকে।
তবে পরবর্তী জীবনে কিছু কুসঙ্গে পড়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন তিনি। অসংযমী জীবনযাপনের জন্য ক্লাব থেকে ১৯৯১ সালে ১৫ মাসের জন্য নির্বাসিতও হন। বিতর্ক তাঁকে তাড়া করে বেড়াত। মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে রিহ্যাবিলিটেশন ক্লিনিকেও থেকেছেন তিনি। নীল-সাদা জার্সিতে শেষ ম্যাচ খেলেছিলেন ১৯৯৪-এর ২৬ জুন বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা বনাম নাইজেরিয়া ম্যাচে। ১৯৯৭ সালের অক্টোবর মাসে ফুটবল জীবন থেকে অবসর নেন পুনরায় ডোপ টেস্টে পজ়িটিভ হওয়ার কারণে।
তবুও ৪৯১ ম্যাচে ২৫৯ গোল করা মারাদোনা ফুটবলের রাজপুত্র।
পরেশনাথ কর্মকার
রানাঘাট, নদিয়া
নায়ক
জীবনের অনেকটা সময়ই দিয়েগো সাফল্যের স্বর্গ দেখেছেন, পাশাপাশি অশান্তির নরকদর্শনও করেছেন। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, দক্ষিণ ইটালির নেপলস-এ না গেলে তাঁর জীবন অন্য রকম হতে পারত। নেপলস-এর ফুটবলকে তিনি অনেক সুখ্যাতি ও স্বীকৃতি এনে দিলেও, সেখানে থাকাকালীনই স্থানীয় মাফিয়াদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে মাদকাসক্ত হন। তবে এই চির-বিতর্কিত ব্যক্তিত্বের পায়ের জাদুতেই ফুটবলপ্রেমী মানুষ স্বতন্ত্র এক পরিচয় খুঁজে পেয়েছেন।
শক্তিশঙ্কর সামন্ত
ধাড়সা, হাওড়া
স্পর্ধার নাম
মারাদোনা একটি লড়াইয়ের নাম। বারো বছর বয়সে বল-বয় হিসেবে, খেলার হাফ টাইমে বল দিয়ে জাদুকরী কারুকার্য দেখিয়ে যিনি দর্শকদের সন্তুষ্ট করতেন, তিনিই মারাদোনা। এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও, দু’বার ক্লাব ট্রান্সফার ফি-র ক্ষেত্রে বিশ্বরেকর্ড গড়েছিলেন তিনি।
১৯৮৬-র বিশ্বকাপে, ৬০ মিটার ড্রিবলিং করে, পাঁচ জন ইংরেজ ডিফেন্ডারকে একের পর এক দাঁড় করিয়ে রেখে, শতাব্দীর সেরা গোলদাতার নামও মারাদোনা। একার কৃতিত্বে বিশ্বকাপটিকে আকাশের সমান তুলে চুমু খাওয়ার স্পর্ধার নাম মারাদোনা। মারাদোনা এক স্বপ্নের, এক লড়াইয়ের, এক স্পর্ধার নাম। আর কে না জানে স্বপ্ন, লড়াই এবং স্পর্ধার কোনও মৃত্যু নেই। তাই মারাদোনার মৃত্যু নেই। যে যেখানে লড়ে যাওয়ার স্পর্ধা দেখান, তিনিই দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা।
উত্তমকুমার জৈন
লালগোলা, মুর্শিদাবাদ
তাঁর নাম
স্মরণীয়-বরণীয় ব্যক্তিদের নামে নবজাতকের নাম রাখা বিভিন্ন জাতির মধ্যেই দেখা যায়। আন্তর্জালে এই তথ্য পেলাম যে, ১৯৮৬ সালে প্রতি ১৮ জন আর্জেন্টিনীয় শিশু-পিছু এক জনের নাম রাখা হয়েছিল ‘দিয়েগো’। মারাদোনা-ভক্তি এমনই আকার ধারণ করেছিল সেই বছর!
সৌম্যদীপ লাহা
কলেজ পাড়া (দক্ষিণ), শিলিগুড়ি
হাসিমুখ?
মারাদোনার মৃত্যুসংবাদে পেলের প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে তাঁর হাসিমুখের ছবিটি কোনও মতেই যায় না (২৬-১১)। উপযুক্ত ছবি না থাকলে না-ই দিতে পারতেন। ফুটবলের সম্রাট পেলেকে চেনাতে ছবি লাগে না।
বিশ্বনাথ পাকড়াশি
শ্রীরামপুর, হুগলি
গেমিং অ্যাপ
গত কয়েক বছর ধরেই ড্রিম ইলেভেন, এমপিএল, মাই টিম ইলেভেন, মাই ইলেভেন সার্কল-এর মতো একাধিক ফ্যান্টাসি গেমিং অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইন বেটিং-এর দেদার কারবার চলছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষ অ্যাপগুলির প্রলোভনে পড়ে মোটা আর্থিক ক্ষতির দিকে পা বাড়াচ্ছেন। ফলে হিংসাত্মক ঘটনাগুলিও দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি এই ধরনের বেটিং অ্যাপগুলিতে টাকা খুইয়ে বেশ কয়েক জন তরুণ আত্মঘাতী পর্যন্ত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, আমাদের দেশে বেটিং আইনত ঘৃণ্য অপরাধ হওয়া সত্ত্বেও বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বিরাট কোহালির মতো ‘রোল মডেল’-দের প্রচারের মুখ করে গণমাধ্যমে একের পর এক বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি এই নিয়ে মাদ্রাজ হাইকোর্টের মাদুরাই বেঞ্চকে উদ্বেগ প্রকাশ করতেও দেখা গিয়েছে। অবিলম্বে এই ধরনের বেআইনি অ্যাপ নিষিদ্ধ করা হোক।
সুদীপ সোম
হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy