‘গৃহশ্রমের মূল্য’ (৫-১০) এক অমূল্য সম্পাদকীয়। গৃহশ্রমিকদের ঘণ্টায় কত টাকা হারে বেতন হবে, তার পরিমাপ করা হবে কোন মানদণ্ডে, মাসে কত দিন ছুটি দেওয়া হবে, ছুটি নিলে বেতন কাটা যাবে কি না, পুজোর বোনাস দেওয়া হবে কি না ইত্যাদি প্রশ্ন কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে তোলা হচ্ছে, সেটাই ভাবার। সম্পাদকীয়তে সঙ্গত ভাবেই বলা হয়েছে, ভারতে অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীরা কার্যত দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বলে গণ্য হন, তাঁদের অসহায়তার সুযোগ নিতে সকলেই অভ্যস্ত। ‘কাজের মেয়ে’কে নিয়ে অনেক নালিশ— তাঁরা নাকি অলস, অদক্ষ, অপরাধপ্রবণ। তবু এই দরিদ্র, স্বল্পশিক্ষিত নারীশ্রমিকরাই লক্ষ লক্ষ গৃহ জঞ্জালমুক্ত করছেন, বৃদ্ধ ও শিশুদের পরিচর্যা করছেন, হরেক রুচির রান্না করে সাজিয়ে রাখছেন। সংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের বৃহত্তর অংশের কর্মজীবন তাঁদের গৃহশ্রমের উপর নির্ভরশীল।
বাস্তবে গৃহশ্রমিক, বিশেষ করে পরিচারিকাদের কাজের নিরাপত্তা, সামাজিক সুরক্ষা বলতে কিছুই নেই। কোভিডের সময় অধিকাংশের দুর্দশা ছিল চরমে। নানাবিধ অভিযোগের ভিত্তিতে যখন তখন কাজ থেকে বিতাড়িত করার ঘটনাও ঘটে আকছার। বহু ক্ষেত্রে যৌন হয়রানির ঘটনাও ঘটে, যা সব সময় প্রকাশ্যে আসে না। জেলাশাসকের নেতৃত্বে প্রতিটি জেলায় কমিটি গড়ার পরিকল্পনাও বাস্তবায়িত হয়নি।
ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজ়েশন-এর বয়ান অনুযায়ী, ভারতে গৃহশ্রমিকের সংখ্যা দুই থেকে আট কোটি, যাঁদের অধিকাংশই মহিলা। এঁদের রোজগারের নিরাপত্তা ও সামাজিক সুরক্ষার জন্য এখনও পর্যন্ত কোনও আইনি পরিকাঠামো তৈরি হয়নি। প্রচলিত আইন অনুযায়ী, এঁদের উপযুক্ত আবাসন বা অন্যান্য নাগরিক সুযোগসুবিধাও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অধরা। সুলভ রেলের পাসও আজকাল সহজে মেলে না। ধারাবাহিক আন্দোলন সংগঠিত করার মাধ্যমে ২০০৮ সালে এ রাজ্যে স্বনিযুক্ত শ্রমিক হিসাবে ‘ভবিষ্যনিধি প্রকল্প’, পরবর্তী পর্যায়ে যা সামাজিক সুরক্ষা যোজনা, এবং তারও পরে যা বিনামূল্যের সামাজিক সুরক্ষা যোজনাতে রূপান্তরিত হয়েছে, তাতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকলেও অনলাইনের মাধ্যমে তা কার্যকর হওয়ার ফলে এবং বেশির ভাগ সময়ে অনলাইন ব্যবস্থাকে অকার্যকর করে রাখায় এক বিরাট সংখ্যক পরিচারিকা বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া সত্ত্বেও আমাদের সংগঠনের রেজিস্ট্রেশনও কোনও অজ্ঞাত কারণে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। শ্রমের মর্যাদা আদায়ের জন্য গৃহশ্রমিকদের লড়াইকে জোরদার করতে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।
জয়শ্রী চক্রবর্তী, সম্পাদক, সারা বাংলা পরিচারিকা সমিতি
সরকারের কাজ
‘গৃহশ্রমের মূল্য’ শীর্ষক সম্পাদকীয়তে সঙ্গত কারণেই বলা হয়েছে, শুধুমাত্র ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণেই রাষ্ট্রের কর্তব্য শেষ হয়ে যায় না। পরিচারিকাদের সুরক্ষার সঙ্গে তাঁদের প্রতি সুসংহত উদ্যোগ করাও প্রয়োজন। লক্ষ করলে দেখা যাবে, অসংগঠিত শ্রমিকদের মধ্যে পরিচারিকাদের কাজের নিরাপত্তাজনিত সমস্যা সবচেয়ে বেশি। কারণ, এই গৃহ-শ্রমিকদের কাজের ধরনের এবং সময়ের নির্দিষ্ট কোনও পরিমাপ নেই। সেই হিসেবে এঁদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা বেশ কষ্টসাধ্য। তাই ঘণ্টা হিসেবেই এঁদের শ্রমের মজুরি নির্ধারণ করা যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়। অন্য দিকে, যে-হেতু এই ক্ষেত্রে প্রায় সবাই মহিলা, তাই এঁরা সকালে যখন কাজে বেরোন, তখন বাড়ির অন্যদের সঙ্গে নিজেরাও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অভুক্ত থাকেন এবং স্বাভাবিক ভাবেই এঁদের সন্তানদের দেখাশোনা, খাওয়া-দাওয়া, পড়াশোনা— কোনওটিই সঠিক ভাবে হয় না। তাই তাঁদের সন্তানদের জন্য দিনের বেলা থাকা, খাওয়া এবং পড়াশোনার জন্য ক্রেশ জাতীয় কিছুর ব্যবস্থা করা সরকারের অবশ্যকর্তব্য বলেই মনে হয়। আবার মজুরি বৃদ্ধি পরবর্তী সময়ে যাতে এই গৃহ-শ্রমিকদের কোনও অসুবিধার সম্মুখীন হতে না হয়, সে দিকেও দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ, কোনও শিল্পে উৎপাদন খরচ বাড়লে দেখা যায় অনেক সময়ই শ্রমিক ছাঁটাইয়ের দিকে মনোযোগ দেওয়া হয়। তেমন এই শ্রমে নিযুক্তদের মজুরি বৃদ্ধি পেলে অনেক গৃহস্থই বাধ্য হবেন আর্থিক টানাটানির জন্য বাড়ির কাজ থেকে এই পরিচারিকাদের ছাড়িয়ে দিতে। বিশেষত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, সুদ-নির্ভর বয়স্ক মানুষদের প্রয়োজন থাকলেও বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে নিয়মিত ভাবে এই বর্ধিত খরচ চালানো সম্ভব হবে না। তাই সমস্ত দিক বিবেচনা করেই সরকারের উচিত সাবধানে পা ফেলা।
অশোক দাশ, রিষড়া, হুগলি
রূপায়ণ সম্ভব?
‘গৃহশ্রমের মূল্য’ শীর্ষক সম্পাদকীয় প্রসঙ্গে কিছু কথা। রাজ্য সরকার যে অবশেষে গৃহপরিচারিকাদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করতে চলেছে, তা শুভ উদ্যোগ। কিন্তু তা কতটা বাস্তবে রূপায়ণ করা যাবে, সে ব্যাপারে প্রশ্ন থেকেই যায়। গৃহপরিচারিকাদের নিজস্ব সংগঠনের দাবি অনুযায়ী, যদি ঘণ্টায় ন্যূনতম মজুরি পঁচাত্তর টাকা করা হয় এবং মাসে চারটে ছুটির দাবি মেনে নেওয়া হয়, তা হলে এক জন গৃহপরিচারিকা কোনও বাড়িতে দু’ঘণ্টা কাজ করলে মাস গেলে তাঁর বেতন হবে ৪৫০০ টাকা। চারটি বাড়িতে কাজ করলে তাঁর মাসে রোজগার দাঁড়াবে ১৮০০০ টাকা। কিন্তু মজুরি বৃদ্ধি করতে চাইলেই কি নিয়োগকারী তা মেনে নেবেন? বর্তমানে গৃহপরিচারিকাদের মোটামুটি মাসিক বেতন ৫০০ থেকে ১০০০-১২০০ টাকা। বেতন এতটা বৃদ্ধি করতে হলে অত টাকা দিয়ে অত্যন্ত প্রয়োজন না পড়লে কোনও নিয়োগকারী বাড়িতে কাজের লোক রাখবেন কি? ফলে গৃহপরিচারিকাদের ব্যাপক হারে কাজ হারানোর একটা আশঙ্কা আছেই। আবার মাসে নির্ধারিত চারটে ছুটির অধিক ছুটি নিলে বেতন কাটা হবে কি না— সে ব্যাপারে আইনের নির্দেশিকাটিও দেখার। তা ছাড়া, প্রত্যেক গৃহপরিচারিকার কাজের ধরন আলাদা। ঘর মোছা-বাসন মাজা, শিশু পরিচর্যা ও অসুস্থকে দেখাশোনার মজুরি এক হতে পারে না। সে ক্ষেত্রে শ্রম মন্ত্রককে আলাদা মজুরি নির্ধারণ করতে হবে। পরিশেষে বলা যায়, শুধু মজুরি বৃদ্ধি করলেই সরকারের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। তাঁদের সামাজিক সুরক্ষা ও সম্মানের দিকটাও গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার। সকল অসংগঠিত শ্রমিককে পেনশন ও চিকিৎসা ভাতা প্রদানের আওতায় আনা উচিত। তবে সরকার থেকে বেতন নির্ধারণ না করে বরং গৃহপরিচারিকাদের হাতেই তা ছেড়ে দেওয়া উচিত। যাঁর যত টাকার মজুরিতে পোষাবে, তিনি সেই টাকায় কাজ করবেন। সরকার বরং তাঁদের নিরাপত্তার দিকটা নিশ্চিত করুক।
অতীশচন্দ্র ভাওয়াল, কোন্নগর, হুগলি
মত্ত চালক
ইদানীং বিশেষ করে রাতের শহরে কলকাতা বা বিধাননগরের বুকে উদ্দাম গতিতে দু’চাকা, ও চারচাকা গাড়িগুলো ছুটছে এবং তার জেরে দুর্ঘটনাও ঘটছে অহরহ। এ বার তার নিবারণে ওই নেশাগ্রস্ত চালকদের বিরুদ্ধে লালবাজার কঠোর পদক্ষেপ করতে চলেছে (‘মত্ত চালক ও বেপরোয়া গাড়ির বিরুদ্ধে আরও কড়া হতে নির্দেশ’, ১৮-১২)। ব্রেথ আন্যালাইজ়ার-সহ চালকদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর নিয়ম ও নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে লালবাজারের কন্ট্রোল রুম অনেকটাই দুর্ঘটনা রোধ করতে পারবে। মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালাতে গেলে চালকদেরও দু’বার ভাবতে হবে।
গৌতম মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-১০১
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy