প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ‘ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা’ জানিয়েছেন প্রণব-কন্যা। ছবি: সংগৃহীত।
স্মৃতিসৌধ পর্বে নতুন মোড়। প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের স্মৃতিসৌধের জন্য জমি দেওয়ার দাবি তুলেছিল কংগ্রেস। তা নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরে জোর চাপানউতর চলেছিল সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে। অবশেষে ভারত সরকার স্মৃতিসৌধের জন্য জমি চিহ্নিত করার কথা ঘোষণা করল। কিন্তু এখনও মনমোহনের জন্য নয়, প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিসৌধের জন্য।
প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কন্যা শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে ভারত সরকারের আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রক এই স্মৃতিসৌধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। নির্মাণ ভবন থেকে শর্মিষ্ঠাকে চিঠি লেখা হয়েছে ১ জানুয়ারি। তাতে জানানো হয়েছে, প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের জন্য রাষ্ট্রীয় স্মৃতি কমপ্লেক্সের (রাজঘাট পরিসরের অংশ) মধ্যেই স্মৃতিসৌধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি এত দিন প্রকাশ্যে আসেনি। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার ছবি শর্মিষ্ঠা নিজের এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করায় বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। শর্মিষ্ঠা এক্সে জানিয়েছেন, ভারত সরকার তাঁর বাবার স্মৃতিসৌধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাঁকে ‘ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা’ জানাতে গিয়েছিলেন। সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘আমরা কোনও আর্জি না জানানো সত্ত্বেও বাবার জন্য স্মৃতিসৌধ তৈরি করা হচ্ছে, এটা আরও বেশি করে ভাল লেগেছে। প্রধানমন্ত্রীর এই অপ্রত্যাশিত কিন্তু প্রকৃতই সহৃদয় আচরণ আমাকে খুবই স্পর্শ করেছে।’’
গত ২৬ ডিসেম্বর দিল্লির এমস হাসপাতালে প্রয়াত হন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মননোহন সিংহ। তাঁর শেষকৃত্যের আগেই কংগ্রেসের তরফে তাঁর সমাধি মন্দির তৈরির জন্য জমি চিহ্নিত করার দাবি তোলা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, সরকার আগে কোনও একটি জমি চিহ্নিত করুক। সেখানেই দাহ করা হোক। পরে সেই স্থানেই সমাধি মন্দির তৈরি হোক। এমনই দাবি ছিল কংগ্রেসের।
কেন্দ্রীয় সরকার সে দাবি মানেনি। নিগমবোধ ঘাটে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মনমোহনের শেষকৃত্য হয়। সরকারের তরফে কংগ্রেসকে চিঠি দিয়ে জানানো হয় যে, মনমোহনের জন্য স্মৃতিসৌধ হবে। তবে তার জন্য আগে মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়ে ট্রাস্ট গঠন করবে। জমি চিহ্নিত করে ট্রাস্টের হাতে তা তুলে দেওয়া হবে। এই প্রক্রিয়া শেষকৃত্যের আগে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। তাই যেখানে স্মৃতিসৌধ হবে, সেই জমিতেই দাহ করতে হবে, এই দাবি মানা যাচ্ছে না।
সরকারের এই যুক্তি মানতে রাজি হয়নি কংগ্রেস। মনমোহনের প্রতি বিজেপির সরকার সম্মান দেখাচ্ছে না বলে কংগ্রেস তোপ দাগতে শুরু করে। তখনই পাল্টা তোপ এসেছিল প্রণব-কন্যা শর্মিষ্ঠার তরফ থেকে। স্মৃতিসৌধের দাবি তোলা দূরের কথা, তাঁর বাবার মৃত্যুর পর কংগ্রেস কর্মসমিতি একটা শোকসভা পর্যন্ত করেনি— এ কথা মনে করিয়ে দিয়ে গান্ধী পরিবার-সহ গোটা কংগ্রেস নেতৃত্বের অস্বস্তি বাড়িয়েছিলেন শর্মিষ্ঠা।
ইন্দিরা গান্ধীর জমানা থেকে শুরু করে মনমোহন সিংহের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার, এই দীর্ঘ সময়কালের প্রায় পুরোটাতেই প্রণব কংগ্রেসের শীর্ষ অলিন্দে বিচরণ করেছেন। মাঝে রাজীব জমানা শুধু ব্যতিক্রম। শুধু দলের শীর্ষ অলিন্দে বিচরণ নয়, কংগ্রেস নেতৃত্বধীন সব মন্ত্রিসভায় প্রণব সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকগুলোর কোনও না কোনও একটি বরাবর সামলে এসেছেন। ২০১২ সালে রাষ্ট্রপতি হন তিনি। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হন মোদী।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রণব অনেক ক্ষেত্রেই প্রধানমন্ত্রী মোদীকে পথ দেখিয়েছেন। মোদী নিজেই সে কথা একাধিক স্মৃতিচারণে বলেছেন। কংগ্রেসের অনেকেই সে সব ভাল চোখে দেখতেন না বলে দিল্লি সূত্রে জানা যেত সে সময়ে। অবসরের পরে প্রণব রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের মঞ্চে আমন্ত্রিত হন। নাগপুরের সেই মঞ্চে তিনি মোহন ভাগবতের পাশে দাঁড়িয়ে ভাষণও দেন। আরএসএসের মঞ্চে প্রণবের পদার্পণের পর কংগ্রেসের অনেকেই আর রাখঢাক করেননি। প্রকাশ্যেই অনেকে প্রণবের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন। আর প্রণবের প্রয়াণের পরে কংগ্রেস কর্মসমিতি যে কোনও শোকসভাও করেনি, তা শর্মিষ্ঠা নিজেই বলেছেন।
শর্মিষ্ঠার সাম্প্রতিক তোপ আগেই কংগ্রেসের অস্বস্তি বাড়িয়েছিল। আজ সমাজমাধ্যমে তাঁর পোস্ট কংগ্রেসের অস্বস্তি আরও বাড়াচ্ছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি। কারণ দশকের পর দশক ধরে কংগ্রেসের শীর্ষস্তরে বিচরণ করে আসা নেতা প্রণব। দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব। তাঁর স্মৃতিসৌধ নির্মাণের বিরোধিতা করাও কংগ্রেসের পক্ষে কঠিন হবে। আগে মনমোহনের স্মৃতিসৌধের জন্য জমি কেন নয়, কেন আগে প্রণবের জন্য? এ প্রশ্ন তোলাও মুশকিল হবে কংগ্রেসের পক্ষে।
প্রণবের স্মৃতিসৌধ তৈরির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের আঁচ রাজ্যের রাজনীতিতেও লেগেছে। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের পোস্ট, ‘‘রাষ্ট্রীয় স্মৃতিস্থলে এটি কোনও বঙ্গসন্তানের প্রথম সমাধি।’’ কিন্তু যে বঙ্গ কংগ্রেসের উজ্জ্বলতম নক্ষত্রদের অন্যতম ছিলেন প্রণব, সেই প্রদেশ কংগ্রেস এখনও কোনও উচ্ছ্বাস দেখাতে পারেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy