কেশবচন্দ্র সেন
‘কেশবচন্দ্র নিয়ে বিতর্কে বিশ্বভারতীর উপাচার্য’ (২১-১০) শীর্ষক প্রতিবেদন উপলক্ষে আমার এই পত্র। ঐতিহাসিক দিক দিয়ে দেখতে গেলে উপাসনার বার পরিবর্তনের একটা নির্দিষ্ট কারণ ছিল।
শ্রদ্ধেয় শ্রী নগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘মহাত্মা রাজা রামমোহন রায়ের জীবনচরিত’ গ্রন্থে, ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা হওয়ার বিবরণ দিয়েছেন: “রাজা রামমোহন রায় হরকরা নামক সংবাদপত্রের আপিস-বাড়ীর দ্বিতীয়-তল গৃহে ইউনিটেরিয়ান সোসাইটি নামক এক সভা স্থাপন করিলেন। এই সভাতে ইউনিটেরিয়ান খ্রীস্টানদিগের মতানুসারে ঈশ্বরোপাসনা হইত। রাজা রামমোহন রায় এই সভাতে তাঁহার পুত্রগণ, কয়েকজন দূরসম্পর্কীয় জ্ঞাতি, এবং তারাচাঁদ চক্রবর্তী ও চন্দ্রশেখর দেব এই দুই শিষ্য সমভিব্যাহারে গমন করিতেন। এক দিবস সভা ভঙ্গ হইলে তাঁহারা গৃহে প্রত্যাবর্তন করিতেছেন, এমন সময়ে তারাচাঁদ চক্রবর্তী ও চন্দ্রশেখর দেব বলিলেন যে, বিদেশীয়দিগের উপাসনাস্থলে আমাদের যাইবার প্রয়োজন কি? আমাদের নিজের একটি উপাসনা-গৃহ প্রতিষ্ঠা করা আবশ্যক। এই কথাটি রামমোহন রায়ের মনে লাগিল। তিনি তাঁহার বন্ধু দ্বারকানাথ ঠাকুর ও টাকি নিবাসী রায় কালীনাথ মুন্সীর সহিত পরামর্শ করিলেন। পরে এই বিষয় স্থির করিবার জন্য তাঁহার বাটিতে এক সভা হইল। সভায় শ্রীযুক্ত দ্বারকানাথ ঠাকুর, শ্রীযুক্ত রায় কালীনাথ মুন্সী , শ্রীযুক্ত প্রসন্নকুমার ঠাকুর ও হাবড়া নিবাসী শ্রীযুক্ত মথুরানাথ মল্লিক বলিলেন যে, এই মহৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্যে তাঁহারা যথাসাধ্য সাহায্য করিবেন। চন্দ্রশেখর দেবের প্রতি ভার দেওয়া হইল যে, তিনি সিমলায় শিবনারায়ণ সরকারের বাটির দক্ষিণে এক খণ্ড ভূমির মূল্য স্থির করেন। কিন্তু উক্ত স্থান উদ্দেশ্য সাধনপক্ষে অনুকূল বলিয়া বোধ না হওয়াতে, জোড়াসাঁকো চিতপুর রোডের উপর কমললোচন বসুর একটি বাড়ী মাসিক ৪০ টাকায় ভাড়া লইয়া ১৭৫০ শকে, ১৮২৮ খ্রীস্টাব্দে উপাসনা সভা স্থাপিত হইল।
প্রতি শনিবার সন্ধ্যা সাতটা হইতে নয়টা পর্যন্ত সভার কার্য হইত। দুইজন তেলেগু ব্রাহ্মণ বেদ, এবং উৎসবানন্দ বিদ্যাবাগীশ উপনিষদ পাঠ করিতেন।”
এর পর জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার থেকে আপার চিৎপুর রোডের কাছে জমি ক্রয় করা হল। ৮ জানুয়ারি ১৮৩০ তারিখে একটি ট্রাস্ট ডিড সম্পাদিত হল এবং ১১ মাঘ ১৭৫১ শকে (২৩ জানুয়ারি ১৮৩০) নবনির্মিত সমাজের প্রতিষ্ঠা হল।
মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ তাঁর ব্রাহ্মসমাজের পঞ্চবিংশতি বৎসরের পরীক্ষিত বৃত্তান্তে লিখেছেন, “প্রথমে যখন সমাজ স্থাপিত হয়, তখন শনিবারে সমাজ হইত। রবিবারে সকলের অবকাশ ছিল, শনিবার রাত্রিতে অধিক কাল পর্যন্ত উপাসনা হইলেও কাহারো অসুবিধা হইবার সম্ভাবনা ছিল না। কিন্তু রামমোহন রায়ের যারা সহযোগী, তাঁহাদের পক্ষে আমোদের দিন শনিবার, সুতরাং সে দিন সমাজ আসিতে তাঁহারা অতিশয় অসন্তুষ্ট হইতেন; এই জন্য বুধবার সমাজের দিন স্থির হইল। আমরা যখন সমাজে আসি, তখন বুধবারেই সমাজ হইত। ক্রমে এই বারই পবিত্র হইয়াছে।”
সুতরাং দেখা যাচ্ছে মাননীয় উপাচার্য, বুধবারে ব্রাহ্মসমাজের উপাসনা হওয়ার যে যুক্তির অবতারণা করেছেন তা ঠিক নয়। কেশবচন্দ্র সেন উপাসনার দিন পরিবর্তনের ব্যাপারে কোনও ভাবে দায়ী ছিলেন না। উপাচার্য ক্লাব এবং তন্ত্রসাধনার কথা বলেছেন, যা ভুল।
অমিত দাস
সহকারী সম্পাদক,
সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ
সমস্যা বুঝুন
‘হারিয়ে গিয়েছে পুকুর, নালা...’ (১১-১০) শীর্ষক প্রতিবেদনের সমর্থন করেও কিছু সংযোজন করছি। সাবমার্সিবল পাম্পের মালিকদের সম্পর্কে লেখাটিতে একতরফা বলা হয়েছে। তাঁদের পক্ষেও অনেক কথা বলার আছে। তাঁদেরও অনেক সমস্যা আছে। লোডশেডিং, লো-ভোল্টেজে চালাতে গিয়ে পাম্প পুড়ে যাওয়া, জলস্তর ওঠা-নামায় ফিল্টার নষ্ট হওয়া পাইপ ওঠানো বসানো... তা ছাড়া, অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিল দিয়ে যে খরচ হয়, বর্ষাকালে ও শীতে দিনে ও রাত জেগে জমিতে জল ধরিয়ে অমানুষিক পরিশ্রমের পরিবর্তে সে রকম লাভ হয় না। ট্রান্সফর্মার পুড়ে গেলে (দায় যেন তাঁরই), অতিবৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হলে, ফসলের দাম না পেলে (আলুর ক্ষেত্রে যা প্রায়ই হয়) চাষিরা বছর শেষ জলকরের টাকা দিতে চান না। বিদ্যুতের বিল দু’মাস না দিতে পারলে বিদ্যুৎ দফতর লাইন কেটে দিয়ে যায়। গ্রামের অর্ধেক মানুষ হুকিং করে বিদ্যুৎ নেন। বিদ্যুৎ দফতর রাজনৈতিক প্রভাব এড়িয়ে
এই ভোটব্যাঙ্ককে কিছু করতে পারে না। তাই লোকসানটা— যাঁরা নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল দেন— তাঁদের ওপর দিয়ে আদায় করা হয়। এক অরাজক অবস্থা।
ভূগর্ভস্থ জলের স্তর নেমে গেলে পানীয় জলের সঙ্কট হবে, তা গ্রামবাসীরাও জানেন। কিন্তু বর্ষা না হলে, ভূগর্ভের জল ব্যবহার করে চাষ না করলে, তাঁরা সারা বছর খাবেন কী? একশো দিনের কাজে ব্যক্তিগত মালিকানার অনেক পুকুর কাটা হয়েছে, কিন্তু মালিকেরা সেখানে মাছ চাষ করেন, চাষিদের জল দেন না। বিকল্প আছে বটে, কিন্তু সে দিকে কে নজর দেবে?
‘মনসা মঙ্গল’-এ বর্ধমানের দামোদরের চার শাখানদী গাঙ্গুর, বেহুলা, বল্লুকা, খড়ির উল্লেখ আছে। কিন্তু এই নদীগুলি আজ মৃতপ্রায়। বর্ষার সময়কার জল এই নদীগুলিতে ধরে রাখার ব্যবস্থা নেই। নদী সংস্কার, লকগেটের কোনও ব্যবস্থা নেই। নদীগুলি থেকে মাঠে জল আসার নালা, নয়ানজুলি সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ডিভিসি-র ক্যানেলগুলো সংস্কারের অভাবে এখন নিকাশি নালা। অতিবৃষ্টিতে এগুলো মাঠ ভাসিয়ে বন্যার সৃষ্টি করে। সরকারি কর্মীদের ডিএ, পে-কমিশনে মাইনে বাড়লেও, চাষিদের ফসলের সংগ্রহমূল্য বাড়ানো হয় না। বিপণনের ব্যবস্থা নেই। ফসলবিমা থাকলেও, তা পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। প্রকৃতির সঙ্গে থাকা, জীবনযুদ্ধে টিকে থাকা এই গ্রামীণ মানুষগুলোই বাংলার সংস্কৃতির ধারক, বাহক। কিন্তু তাঁদের কথা কে ভাবছে?
কুমারেশ পান
উপলতি, পূর্ব বর্ধমান
যানবাহন নেই
আমি হুগলি জেলার রিষড়া বাঁশতলা অঞ্চলের বাসিন্দা। বিগত কয়েক বছর ধরে দেখছি মহরমের দিন ও দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে (সপ্তমী থেকে দশমী) বিকেল ৫টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত, রিষড়া, কোন্নগর ও শ্রীরামপুর এই দীর্ঘ ৭/৮ কিলোমিটার পথে কোনও যানবাহন পাওয়া যায় না। গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত জিটি রোডের এই দীর্ঘ পথে কোনও অটো, টোটো চালানোয় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিষেধ থাকে। উল্লেখ্য, এই পথে আগে ২নং ও ৩নং রুটের বাস চলত। বর্তমানে তা পাওয়া দুষ্কর, চলে না বললেই চলে। খুব অল্প সংখ্যক সরকারি বাসের (প্রতি এক-দেড় ঘণ্টায় একটি) ওপর ভরসা করা যায় না বলে এখানে অটো ও টোটোই যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম। সুতরাং উৎসবের দিনগুলিতে সাধারণ মানুষকে কোনও জরুরি কাজে যেতে হলে, এই দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে যাওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না।
বিপ্লব শীল
রিষড়া, হুগলি
স্টেশনে কারা?
বর্ধমান-হাওড়া মেন লাইনের চুঁচুড়া স্টেশন এবং সংলগ্ন এলাকা দুষ্কৃতীদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে। স্টেশনে ঢোকার মুখেই ১নং বাসস্ট্যান্ডে বেআইনি দখল-করা গুমটিতে বিক্রি হয় মাদক। পাশেই শিবমন্দিরের চাতালে সন্ধ্যায় বসে জুয়ার আসর। ১নং প্ল্যাটফর্মে ওঠার সিঁড়িতে লোহার রেলিংয়ে কয়েক গোছা দড়ি বেঁধে এবং যাত্রীদের বসার জায়গা দখল করে, বিশাল মেহগনি বৃক্ষের গায়ে গজাল বিঁধে রুটি-তরকারি ও মদের দোকান চালাচ্ছে কেউ। কাছেই জিআরপি ফাঁড়ি, কিছুটা দূরে ধরমপুর পুলিশফাঁড়ি।
সোমনাথ চক্রবর্তী
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy