সপ্তাহের শুরুর দিনে নিউ টাউনে এক তরুণীর প্রাণ কেড়ে নিল দুর্ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম সুচিত্রা দেবনাথ (২৬)। সোমবার সকালে ইকো পার্কের কাছে স্কুটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তিনি পথ-বিভাজিকায় ধাক্কা মেরে ছিটকে পড়েন। দুর্ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে তাঁকে চিনার পার্কের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। গত বৃহস্পতিবারই নিউ টাউন এলাকায় দু’টি দুর্ঘটনায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছিল।
পরের পর এমন প্রাণঘাতী দুর্ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে বিধাননগর পুলিশেরও। এ দিনের দুর্ঘটনার পরে নিউ টাউনের বিশ্ব বাংলা সরণি তথা মেজর আর্টেরিয়াল রোডের উপরে অতিরিক্ত গতির তত্ত্বই আবারও উঠে আসছে। তদন্তকারীরা জানান, দুর্ঘটনার পরে তরুণীর মাথার দিকের অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল। যা থেকে তাঁদের ধারণা, দুর্ঘটনায় ছিটকে পড়ার পরে তাঁকে চাপা দিয়ে চলে গিয়েছে কোনও গাড়ি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে তরুণীর মৃত্যুর আসল কারণ জানতে চাইছে পুলিশও।
গত বৃহস্পতিবার সাপুরজি এলাকায় মোটরবাইক থেকে ছিটকে পড়ে মৃত্যু হয়েছিল নদিয়ার বাসিন্দা এক তরুণীর। ওই রাতেই নিউ টাউন লাগোয়া গৌরাঙ্গনগরে বাইকের ধাক্কায় মারা যান ওষুধ সরবরাহকারী এক ব্যক্তি। তার আগের রাতেই বিশ্ব বাংলা সরণিতে, আকাঙ্ক্ষা মোড়ের কাছে লরির চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় ট্যাংরার বাসিন্দা এক স্কুটিচালকের। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনার সময় গভীর রাত কিংবা ভোরের দিকে। পুলিশ জানায়, সোমবারের দুর্ঘটনাটিও ভোর ৫টার কিছু পরে ঘটেছে। পুলিশ মনে করছে, ওই সময়ে চালকদের মধ্যে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর প্রবণতা কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না। বিশ্ব বাংলা সরণি উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার মধ্যে সংযোগকারী গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। রাতে সেখান দিয়ে বড় বড় লরি চলাচল করে। এক পদস্থ পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘দৈনিক দশ থেকে বারো হাজার গাড়ি চলে এই রাস্তায়। রাতেও গাড়ির সংখ্যা যথেষ্ট বেশি। সব গাড়িই অতিরিক্ত গতিতে ছোটে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কেউ পড়ে গেলে পিছনের গাড়িতে তাঁর চাপা পড়ার আশঙ্কা থেকে যায়। স্কুটির মতো ছোট চাকার গাড়ি যাঁরা চালান, তাঁদের অতিরিক্ত গতিতে ছোটা বিপজ্জনক, আমরা বার বারই তা বলছি।’’
পুলিশ জানাচ্ছে, এ দিন ওই তরুণী ইকো পার্কের ১ ও ২ নম্বর গেটের মাঝামাঝি দুর্ঘটনার মুখে পড়েন। তিনি রাস্তার বাঁ দিকেই ছিলেন। পুলিশের অনুমান, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তিনি পথ-বিভাজিকায় ধাক্কা মেরেছিলেন।
এ দিন দুপুরে দক্ষিণ কলকাতার গাঙ্গুলিবাগানের কাছে, বিদ্যাসাগর কলোনিতে ওই তরুণীর বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, সুচিত্রা পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য ছিলেন। রাজারহাটের কাছে একটি ওষুধ সংস্থার স্টোরের জন্য তিনি ওষুধ সরবরাহকারীর কাজ করতেন। সংস্থার তরফ থেকেই তাঁকে একটি স্কুটি দেওয়া হয়েছিল। রাতেও তাঁকে কাজ করতে হত। এ দিন সুচিত্রার বাড়িতে খোঁজ করতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর বৃদ্ধা মা মেয়ের মৃত্যুর খবর জানেন না। প্রতিবেশীরা তাঁকে আগলে রেখেছেন। তাঁরা জানান, আকস্মিক ঘটনায় তাঁরাও স্তম্ভিত। রবিবারেও সুচিত্রার সঙ্গে তাঁদের কথা হয়েছিল।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)