ঈশা দাশগুপ্ত ‘আরও দেরি হওয়ার আগে’ (২৬-১২) শীর্ষক প্রবন্ধে হিন্দু-মুসলমানের সহাবস্থান ও দুই বাংলার বাঙালিদের ধর্মের ভিত্তিতে সম্পর্কের টানাপড়েনের কথা বলেছেন। আর এই টানাপড়েনের কারণেই অধুনা দু’দেশেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের সামনে সমূহ বিপদ। তা সৃষ্টি হয়েছে দুই দেশের কিছু মানুষের ধর্মান্ধতা ও পরস্পরের ধর্মের প্রতি বৈরিতা-জনিত কর্মকাণ্ডের জন্য। বিশেষ ভাবে বলা প্রয়োজন, অনেকে ভুল করে বাঙালি আর মুসলমানকে আলাদা করে ফেলেন। আসলে দু’পারের বাংলায় যাঁদের মাতৃভাষা বাংলা, তিনি হিন্দু বা মুসলমান যা-ই হোন না কেন, সকলেই বাঙালি। আর সে কারণেই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম দুই বাংলার। তাই তাঁদের জন্মদিন আজও দুই বাংলায় সাড়ম্বরে পালিত হয়। প্রকৃত সঙ্গীতপ্রেমিকরা কোনও দিন বাংলাদেশে বসবাসকারী প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পীদের ধর্মের ভিত্তিতে আলাদা চোখে দেখেন না বা বাংলাদেশি ভাবেন না। তাঁদের পরিচয় তাঁরা বাঙালি সঙ্গীতশিল্পী। এ পার বাংলায় ওই শিল্পীদের অনুষ্ঠানে উপচে পড়া ভিড় তা-ই বলে। এ পার বাংলার প্রথিতযশা শিল্পীরা আবার যখন ও পারের অনুষ্ঠানে যান সেখানকার মানুষের আতিথেয়তা ও সাড়া জাগানো ভিড় একই রকম ইঙ্গিত বহন করে। এ পারের বা ও পারের বাংলার লাখো হিন্দু বা মুসলিম বাঙালির বন্ধন আজও অটুট। আজও তাঁদের আত্মীয়-স্বজন এ পারেও আছেন, ও পারেও আছেন। এ পার বাংলার মানুষ আজও বলেন আমরা সিলেটের বা বরিশালের বা খুলনা ইত্যাদির। শিকড়ের টানে আজও মানুষ এ পার ও পার করছেন বসত ভিটের দেখার বাসনায়। দুই বাংলার মানুষের মধ্যে কত কিছুতেই তো মিল। যেমন তাঁদের প্রধান খাদ্য মাছভাত, মাতৃভাষা বাংলা, প্রাণের খেলা ফুটবল ও সেরা পছন্দের মিষ্টি রসগোল্লা। দুই বাংলার মাঠে আমন আউশ ফলে, দুই বাংলার জলে ইলিশ জন্মায়। এর পরেও ইদানীং বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলাদলির কারণে সে দেশের অস্থিরতাকে সাগরের ঢেউয়ের মতো এ পারে আছড়ে ফেলা হচ্ছে। সুস্থ মানসিকতার বাঙালিরা তা চান না।
শুধু কবি নজরুল ইসলাম বা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নয়, দু’পার বাংলার যে প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও কবি যাঁদের লেখা আমরা নিয়মিত পড়ি তাঁরা তো হিন্দু বা মুসলমান সম্প্রদায়ের নন, তাঁরা প্রায় ত্রিশ কোটি বাঙালির কবি ও সাহিত্যিক। তাই প্রবন্ধকারের কথার সূত্র ধরে বলা যেতে পারে দুই বাংলার তথা দেশের সম্প্রীতি ও রাজনৈতিক পরিবেশের সুস্থতা অটুট রাখতে সাম্প্রদায়িকতা সরিয়ে রেখে এখনই দু’দেশের লেখক, সঙ্গীতশিল্পী, চলচ্চিত্রশিল্পী, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ-সহ সর্বস্তরের মানুষজনকে এগিয়ে এসে নীতিবোধ জাগ্রত করতে হবে, দু’দেশে বসবাসকারী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের সুরক্ষিত রাখতে হবে বা তাঁদের যথাযথ স্বীকৃতি দিতে হবে। না হলে বড় দেরি হয়ে যাবে। হারিয়ে যেতে বসবে বাঙালির আবেগ— ঢাকাই শাড়ি, পদ্মার ইলিশের জন্য এ পার বাংলার বাঙালির অধীর অপেক্ষা ও ব্যাকুলতা।
স্বরাজ সাহা, কলকাতা-১৫০
অবহেলিত
বর্ষশেষের ‘নামভূমিকায়’ প্রবন্ধ (২৯-১২) বাংলা ভাষার অবস্থানকে বেশ স্পষ্ট করল। যেখানে বাংলাভাষার ভিত গড়ে উঠতে পারে, তেমন অল্প কিছু বাংলা মাধ্যম স্কুল এখনও বেঁচে আছে। তবে ধুঁকছে বলাই ভাল। সেই স্কুলগুলির অনেকগুলিই আগামী শিক্ষাবর্ষে আদৌ চালু থাকবে কি না তা নিয়ে গভীর সংশয় দেখা দিয়েছে। অভিভাবকরা সচেতন ভাবে সরকারি বাংলা মাধ্যম স্কুল বর্জন করে বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল বেছে নিচ্ছেন।
প্রশ্ন হল, বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয়ের প্রতি আজ এই ক্রমবর্ধমান অনীহার কারণ কী? অভিভাবকদের একটু প্রশ্ন করে দেখুন, দেখবেন তাঁরা বলবেন, ইংরেজি না শিখলে চাকরি হবে না। আজ এই মুহূর্তে এই দাবির আংশিক সত্যতা যে নেই তা নয়, কিন্তু তার জন্যে মাতৃভাষাকে সম্পূর্ণ বর্জন কি আদৌ সমর্থনযোগ্য? বাঙালিয়ানার এই অধঃপতনের সমর্থনে এ এক জবরদস্তি যুক্তি খাড়া করা নয় কি? এ কি তবে পরাজয়ের গ্লানি, পলায়নপ্রবৃত্তি? বাঙালি কি তবে সত্যিই এক আত্মঘাতী জাতি?
অক্ষয়কুমার দত্ত, মাইকেল মধুসূদন থেকে তারাশঙ্কর, বিভূতিভূষণ কাউকেই ইংরেজি পড়েও বাংলা সংস্কৃতি বিসর্জন দিয়ে বাঁচতে দেখিনি। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুকেও তো বাংলা ভাষা চর্চা ত্যাগ করতে হয়নি! বিমল রায়, কানন দেবী থেকে তাঁদের অব্যবহিত পরপ্রজন্মের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব সত্যজিৎ-মৃণাল-ঋত্বিক কাউকে এক ঘণ্টার জন্যও বাংলার সংস্কৃতি বিসর্জন দিতে হয়নি। হেমন্ত-মান্না-সলিলকেও বাঙালি সত্তা থেকে কখনও বিচ্ছিন্ন হতে দেখিনি।
তাই বর্তমানে বাংলা সংস্কৃতির এবং মাতৃভাষার এই অবক্ষয় কিছুতেই সমর্থনযোগ্য নয়। “বাংলায় এম এ করছি” বলতে ছাত্রছাত্রী লজ্জা পাবে, এ কথা কোনও দিন কি স্বপ্নেও কেউ ভেবেছিল? বাংলা সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান বাহক বাংলাভাষা। তাকে অবহেলা করলে বাংলা সংস্কৃতিও কিন্তু অস্তগামী হবে।
সোমনাথ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-৫৭
আদর্শচ্যুত
‘হুঙ্কার নয়, নীতিতেই আছে সিপিএম, ব্যাখ্যা সেলিমের’ (৩০-১২) শীর্ষক সংবাদের প্রেক্ষিতে কয়েকটি কথা। কর্মীরা অভিযোগ করেছেন যে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নির্যাতনের যথেষ্ট প্রতিবাদ দল করেনি। এতে তাঁদের কয়েক কোটি আত্মীয়-স্বজন যাঁরা এ দেশে আছেন তাঁদের কাছে ব্রাত্য হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। সেলিম বলেছেন, সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার হলে সিপিএম প্রতিবাদ করবে এবং করছে। সংখ্যাগুরুদের অত্যাচার বা নিপীড়নের প্রতিবাদ করাই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদে বিশ্বাসীদের কর্তব্য। সিপিএম কিন্তু মতাদর্শগত ভাবে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রধান শক্তি হিসাবে নিজেকে প্রচার করে। এ রাজ্যে সিপিএমের জনসমর্থন এখন তলানিতে ঠেকেছে। দলের ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিও দুর্বল হয়েছে। তা না হলে কেন সেলিমবাবুর মতো কমিউনিস্টকে মুর্শিদাবাদের মতো মুসলিম অধ্যুষিত কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হতে হয় এবং হারতে হয়!
২০১১-য় এ রাজ্যে পালাবদলের পর দলে দলে সিপিএম কর্মী বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন। যদিও পরবর্তী কালে অনেকেই আবার ফিরে এসে অন্য দলে যোগ দেন। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সারা দেশে সিপিএম-সহ অন্যান্য বামপন্থী দলের ফল আশানুরূপ হয়নি। সিপিএম কবুল করেছে যে, বামশাসিত একমাত্র রাজ্য কেরলেও কয়েকটি কেন্দ্রে বিজেপি তাদের সমর্থকদের ভোট আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। এও কি প্রমাণ করে না যে সিপিএম তাদের কর্মীদের মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শকে সঞ্চারিত করতে কতখানি ব্যর্থ?
নারায়ণ দত্ত, বর্ধমান
কুঅভ্যাস
ভাঁড়ে কিংবা কাগজের কাপে চা পান করার পর অবলীলায় খোলা জায়গায় ছুড়ে ফেলার দৃশ্য প্রায়ই দেখা যায়, অথচ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা থাকে। কলার খোসা, প্লাস্টিক, খাদ্যদ্রব্যের খালি প্যাকেট চলার পথে যত্রতত্র ছড়িয়ে ফেলা থাকে নির্লিপ্ত ভাবে। বিড়ি-সিগারেটের দগ্ধাবশেষ বেমালুম ছুড়ে ফেলার অভ্যাসও মজ্জাগত। উচ্ছিষ্ট ছড়ানো তো ছিলই, এখন তাতে জুড়েছে ব্যক্তিগত সামগ্রীর খালি প্যাকেট, কড়া পানীয়ের বোতল লোকসমক্ষে নিক্ষেপ। আর্থিক জরিমানা নিশ্চিত না করলে এই কুঅভ্যাস যাবে না।
বিশ্বজিৎ কর, কলকাতা-১০৩
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)