রাজধানীর বাসিন্দাদের মন জিততে দলীয় ইস্তাহারে খয়রাতির বান ছোটালেন আম আদমি পার্টির (আপ) আহ্বায়ক অরবিন্দ কেজরীওয়াল। আজ দলের হয়ে দ্বিতীয় ইস্তাহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি জানালেন, আগের জনমোহিনী নীতি যেমন-চলছে তেমন-চলবে। তার সঙ্গে আম আদমি পার্টি ফের জিতলে মহিলাদের মাসিক একুশশো টাকা সাহায্য, পড়ুয়াদের বাস ও মেট্রোর ভাড়ায় ছাড়, অটোচালকদের জন্য জীবন বিমার সুবিধা ছাড়াও অটোচালকদের মেয়ের বিয়েতে এক লক্ষ টাকা করে সরকারি সাহায্য দেওয়া হবে।
বিজেপি এ বার দিল্লিতে তিন দফায় ইস্তাহার প্রকাশ করেছে। অনেকের মতে, বিজেপির প্রতিশ্রুতি মেপে নিয়েই দ্বিতীয় ইস্তাহার প্রকাশের পরিকল্পনা নেন আপ নেতৃত্ব। আজ ‘কেজরীওয়াল কি গ্যারান্টি’ নামে প্রকাশিত ওই ইস্তাহারে দিল্লিবাসীকে মোট ১৫টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আপ। যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল— মহিলাদের মাসিক ২১০০ টাকা অর্থসাহায্য, প্রবীণ নাগরিকদের বিনামূল্যে চিকিৎসা, যুবসমাজের জন্য চাকরি, পড়ুয়াদের জন্য বিনামূল্যে বাস পরিষেবা এবং মেট্রোর ভাড়া অর্ধেক মকুব। অটো ও ই-রিক্সাচালক, ট্যাক্সিচালকদের জন্য জীবনবিমা, দুর্ঘটনাজনিত বিমা, তাঁদের মেয়েদের বিয়েতে এক লক্ষ টাকার সাহায্য ও ছেলেমেয়েদের বিনামূল্যে কোচিং-এর ব্যবস্থা। এ ছাড়া বিনামূল্যে বিদ্যুৎ ও জল। যমুনা সাফাইয়ের প্রতিশ্রুতিও রয়েছে ফের। আজকের ঘোষণায় স্পষ্ট— মহিলা, যুবদের সঙ্গেই অটোচালক সমাজের ভোট, যা আপের পক্ষে থেকেছে এত দিন, সেটা যাতে বিজেপি ভাঙতে না পারে, তার জন্য একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছে। একই ভাবে মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্তদের মন জিততে প্রতিটি আবাসনে সরকারি খরচে নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।
প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও গত দশ বছরে যমুনা সাফ করতে না পারার জন্য বিরোধীদের আক্রমণের শিকার কেজরীওয়াল ও তাঁর দল। সেই ব্যর্থতা মেনে নিয়ে আজ কেজরীওয়াল বলেন, “গত পাঁচ বছরের অর্ধেক সময় করোনা সংক্রমণের কারণে কিছু করা সম্ভব হয়নি। আর শেষ আড়াই বছরে আমায় ও আমার মন্ত্রীদের গ্রেফতার করেছিল কেন্দ্র, ফলে আমার দল সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছিল। কিন্তু আবার ক্ষমতায় এলে নিশ্চিত যমুনা সাফ করে দেখাব।” যা শুনে বিজেপি নেতা মনোজ তিওয়ারির কটাক্ষ, “নিজের ব্যর্থতা এখন অন্যের ঘাড়ে ঠেলার কৌশল নিয়েছেন কেজরীওয়াল। প্রশ্ন হল, দশ বছরে কি যমুনাকে দূষণমুক্ত করার বিষয়ে আদৌ ভাবনাচিন্তা করেছিলেন তিনি!”
কিন্তু কেজরী যে ভাবে জনমোহিনী নীতির পথে হাঁটার ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাতে বেশ ফাঁপরে বিজেপি। তারা পাল্টা বলতে চাইছে, কেজরীর নীতির জন্য কোষাগারে চাপ বাড়বে। কেজরীর আগে দিল্লিতে উদ্বৃত্ত বাজেট হত। এখন কোষাগারে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। খরচ সামলাতে বাজার থেকে অর্থ ধার করতে হচ্ছে আপ সরকারকে। জবাবে আজ কেজরীওয়াল বলেন, “দেশে দু’ধরনের রাজনীতি চলছে। প্রথমটি হল শিল্পপতিদের ঋণ মকুব করে দেওয়া, যা বিজেপির রাস্তা। আর আপের রাস্তা হল ওই টাকাই গরিবদের উন্নয়নে ব্যবহার করা। যাতে গরিব মানুষের সাশ্রয় হয়। এখন মানুষকেই বেছে নিতে হবে, তাঁরা কী চান।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)