আমাদের দেশে সরকারি অফিসগুলো শুরুতে সপ্তাহে সাত দিনের মধ্যে প্রতি শনিবার অর্ধদিবস এবং রবিবার পূর্ণ দিবস বন্ধ থাকত। যদিও শনিবার অফিসগুলো কার্যত প্রায় ফাঁকাই থাকত, যে-হেতু ওই দিন খুব প্রয়োজন ছাড়া মানুষ অফিসমুখো হতেন না। অফিসগুলোতে কর্মী-সংখ্যা কম থাকায় স্বাভাবিক ভাবেই শনিবারে অফিসের কাজকর্ম নিয়ে সাধারণ মানুষের একটা অভিযোগ ছিল। কর্মচারীদের মধ্যেও শনিবারের অর্ধেক অফিস নিয়ে বিরক্তি ছিল। এ দিকে সরকারের তরফে অফিস পরিচালনা সংক্রান্ত খরচ সাশ্রয় করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল। ফলে, প্রাথমিক ভাবে রাজ্য সরকারের অফিসগুলো মাসের দ্বিতীয় ও চতুর্থ শনিবার বন্ধ থাকার কথা ঘোষিত হয়। যদিও তাতে সাধারণ মানুষের অসুবিধা দূর হয়েছিল বলে মনে হয় না। ফলে বিভিন্ন দিক থেকে এই ব্যবস্থা পরিবর্তনের পক্ষে জনমত সৃষ্টি হল। যার ফলে এক সময় এই ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল। সরকারের তরফে সে ব্যবস্থা তুলে দিয়ে সব শনিবার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফলে অফিসগুলোতে একেবারে পাঁচ দিনে সপ্তাহ চালু হয়। এখন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সব অফিস সপ্তাহে পাঁচ দিন খোলা থাকে। তবে এই ব্যবস্থার কারণে সাপ্তাহিক মোট কাজের সময় যাতে না কমে সেই লক্ষ্যে দৈনিক অফিসের সময় বাড়ানো হয়। এই প্রক্রিয়া ক্রমশ অন্য রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কর্মীদের মধ্যে চালু হতে শুরু করে।
ইতিমধ্যে ব্যাঙ্ক-বিমা’সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের কারণে কাজের ধারার অনেক পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। এখন ডিজিটাইজ়েশনের যুগে অনেক পরিষেবা অফিসের বাইরে থেকেই সম্পন্ন হয়ে যাচ্ছে। এমনিতেই এখন বহির্বিশ্বে ব্যাঙ্কিং পরিষেবার ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। সেখানে গ্রাহকদের প্রতিনিয়ত ব্যাঙ্কে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা কমে এসেছে। কাস্টমার সার্ভিস সেন্টার-সহ বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যাঙ্কের পরিষেবা দেওয়া শুরু হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই ব্যাঙ্ক থেকে সরাসরি পরিষেবা দেওয়ার দিন কমিয়ে আনার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। যার ফলে এক সময় শনিবারের অর্ধেক দিন অফিস তুলে দিয়ে দ্বিতীয় ও চতুর্থ শনিবার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা শিল্পে পাঁচ দিনের কাজের সপ্তাহ চালু হয়ে যায়। ফলত, ব্যাঙ্ক শিল্পের কর্মচারীদের উপরেও তার প্রভাব পড়ে। এর অন্যতম কারণ কর্মচারী অপ্রতুলতার কারণে ব্যাঙ্ক পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক চাপবৃদ্ধি।
ব্যাঙ্ক শিল্পের সমস্ত সংগঠনের সঙ্গে ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক অ্যাসোসিয়েশনের পাঁচ দিনের সপ্তাহ চালু করার পক্ষে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। নিয়ম অনুযায়ী, সেই প্রস্তাব ভারত সরকারের অর্থ দফতরে পেশ করা হয়। অন্যান্য সময় এই ধরনের স্বাক্ষরিত চুক্তির প্রস্তাব খুব দ্রুত কার্যকর হয়েছে। কিন্তু এখন প্রায় দু’বছর ধরে এই প্রস্তাব কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পড়ে আছে। তারা এই বিষয়ে কোনও সদর্থক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। এই প্রেক্ষাপটে উঠে এসেছে নামী বহুজাতিক সংস্থার শীর্ষকর্তাদের কাজের সময় ও দিন নিয়ে সাম্প্রতিক মন্তব্য। যা জনমানসে এখন ব্যাপক চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্মক্ষেত্রে এক জন মানুষের ‘ওয়ার্ক লাইফ ব্যালান্স’ ভয়ঙ্কর বিঘ্নিত হচ্ছে। তাই এখন কর্মচারীদের বেতন সংশোধনের থেকেও পাঁচ দিনের সপ্তাহ চালু হওয়া না-হওয়া নিয়ে আগ্রহ বেশি। তবে সরকারের এ ব্যাপারে নিস্পৃহতা দেখে এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
দেবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ
বেলাগাম দূষণ
সুপ্রতিম কর্মকারের লেখা ‘জল আর জীবিকার গল্প’ (২-১) শীর্ষক প্রবন্ধটি পড়ে পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে আরও এক বার অবগত হলাম। নানা ভাবে এই পৃথিবীর জলে-স্থলে-অন্তরিক্ষে পরিবেশ দ্রুত গতিতে দূষিত হয়ে যে ভাবে ভয় ধরিয়ে দিচ্ছে, তা থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনও উপায় দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদেরই ভোগবাদী সভ্যতার কারণে তৈরি হচ্ছে গ্রিনহাউস গ্যাস। যা মহাকাশে অতি গুরুত্বপূর্ণ ‘ওজ়োন’ স্তরে ছিদ্র সৃষ্টি করেছে। সেই সঙ্গে রয়েছে অরণ্য এবং খনিজ সম্পদ লুণ্ঠন। অরণ্যবাসীদের অধিকার অস্বীকার করে তা কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। ফলে জঙ্গল সাফ হয়ে যাচ্ছে।
খনিজ সম্পদের সন্ধান পেলে তো আর কথাই নেই। পরিবেশের কোনও তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। জৈব জ্বালানি কমানোর উদ্যোগ করা হলেও তা যৎসামান্য। জাপান-সহ আরও কিছু দেশে যেখানে কয়লা খনি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, সেখানে আমাদের দেশে নতুন কয়লা খনির কাজ শুরু করার উদ্যোগ করা হচ্ছে। বিতর্কিত বীরভূমে ডেউচা-পাঁচামি তার সাম্প্রতিকতম উদ্যোগ। সেখানকার মানুষের প্রতিবাদকে অগ্রাহ্য করে এবং সমস্ত রকম আন্দোলন দমন করে সরকার থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, ওই কয়লা খনি হবেই। সেখানে কয়লা কত সহজে মিলবে, কর্মসংস্থানই বা কত হবে তার সঠিক কোনও হিসাব নেই। এর ফলে আগামী দিনে কত মানুষ বাস্তুচ্যুত হবেন, তাঁদের জীবন ও জীবিকার ক্ষতি হবে, সেটা মাথায় রাখা হচ্ছে না।
প্রবন্ধকারের আলোচনায় দেখা গেল, কী ভাবে জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, মৎস্যজীবীদের অধিকারগুলোকে দূরে সরিয়ে রেখে, পরিবেশের কথা চিন্তা না করে, শুধুমাত্র পর্যটন স্বার্থকেই গুরুত্ব দেওয়া হল। গত চার-পাঁচ বছর ধরে যে হোটেল এবং রিসোর্টগুলো তাদের অধিকার বিস্তার করে চলেছে, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা করা হবে, উত্তর নেই। প্রবন্ধকার অত্যন্ত যথাযথ ভাবেই উল্লেখ করেছেন, ১৯৮৯ সালে বোম্বাই (বর্তমানে মুম্বই) ও সুন্দরবনের বাসন্তী থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত উপকূলভাগের সমস্ত মৎস্যজীবী গণআন্দোলন শুরু করেন ‘ন্যাশনাল ফিশ ওয়ার্কার্স ফোরাম’-এর ছাতার তলায় এসে। দাবি উঠেছিল ‘জল বাঁচাও তট বাঁচাও উপকূলের লোক বাঁচাও’। তাতে এই অঞ্চলের মৎস্যজীবীরাও অংশগ্রহণ করেন। এর পরে কোস্টাল রেগুলেশন জ়োন নোটিফিকেশন জারি হয় ১৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯১। মন্দারমণির মৎস্যজীবীরা ভেবেছিলেন ‘নিয়ন্ত্রিত তট অঞ্চল’ ঘোষিত হওয়ায় হোটেল, পর্যটন কেন্দ্র, ভেড়ি ইত্যাদি হবে না। সুরক্ষিত থাকবে তাঁদের জীবন ও জীবিকা। কিন্তু ২০০০ সালের পর থেকে হোটেল তৈরি শুরু হয়, বাড়তে থাকে ভূমিক্ষয়। সঙ্কুচিত হতে থাকে ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীদের এলাকা। যাঁরা জলকে দূষণের হাত থেকে বাঁচান, তাঁদের দূরে সরিয়ে দিয়ে যাঁরা জল দূষণের কারণ, তাঁদের ডেকে আনা হল।
মৎস্যজীবীদের ওই আন্দোলন, জানি না এখন কোন পর্যায়ে আছে। জোরালো আন্দোলন অবশ্যই প্রয়োজন ছিল। হয়তো তাঁদের এই আন্দোলনকেই জঙ্গি আন্দোলন আখ্যা দেওয়া হত। কর্পোরেটদের স্বার্থরক্ষার্থে তা দমনে যথাযথ পদক্ষেপ করত সরকার। দুর্বলের কথা শোনার জন্য কে আছে এই দুনিয়ায়?
অলোক কুমার নাথ, হাওড়া
পুকুর ভরাট
বিভিন্ন জায়গায় আজকাল দেদার জলাভূমি ভরাটের মধ্যেও আমাদের এলাকায় ছবিটা তার ঠিক উল্টো। কিছু দিন আগে বারুইপুর দক্ষিণরায় পল্লির একটি পুকুর ভরাট চলছিল সবার সামনেই। গত বেশ কিছু মাস হল সেই কাজ বন্ধ হয়েছে দেখছি। সম্ভবত প্রশাসন এবং স্থানীয় আইনরক্ষকদের হস্তক্ষেপে এই কাজ বন্ধ হয়েছে। কিন্তু এখন প্রায় ভরাট করা ওই পুকুরটিকে আগের অবস্থায় ফেরানো খুব জরুরি। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আমার অনুরোধ, পুকুর ভরাট বন্ধের মতো প্রশংসনীয় পদক্ষেপের সঙ্গে প্রায় ভরাট হয়ে যাওয়া পুকুরটিকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আগামী বর্ষার আগে যদি আবর্জনা ফেলে প্রায় ভরাট করা পুকুরটির সংস্কার না করা যায়, তা হলে সমূহ বিপদ।
সৌম্যকান্তি মণ্ডল, কলকাতা-১৪৪
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy