অমিতাভ গুপ্তের ‘অর্ধসত্য ভয়ঙ্কর’ (২২-১২) শীর্ষক প্রবন্ধের প্রেক্ষিতে এই চিঠি। ফেক নিউজ় এখন মহামারির আকার ধারণ করেছে। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ মুখ্য ভূমিকা পালন করলেও, নিউজ় চ্যানেল এবং নিয়মিত নেতানেত্রীদের মিথ্যে ভাষণ এই আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়ে চলেছে। এর মধ্যে বেশ কিছু পুরোপুরি ‘হেট স্পিচ’, যা কট্টরপন্থীদের আরও গোঁড়া করে তুলছে, এবং বেশ কিছু হল অর্ধসত্য বা বিকৃত সত্য, যা সাধারণ মানুষকে ক্রমাগত প্রভাবিত করতে করতে করে তুলছে আরও কট্টর। ফেক নিউজ় থেকে বিরোধ বা দাঙ্গা লাগানো ঘটে চলেছে অবিরত। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই, সামান্য একটু তলিয়ে দেখলেই বোঝা যায়, এই যুক্তি বা পরিসংখ্যানগুলি বিকৃত বা প্রেক্ষিত-বিচ্যুত। কিন্তু দৈনিক চাকরিজীবী মানুষের পক্ষে সেই তলিয়ে দেখার সময়টুকু বার করা মুশকিল। বিমুদ্রাকরণ থেকে শুরু করে মব-লিঞ্চিং, কাশ্মীর, শবরীমালা, জেএনইউ, ৩৭০, জামিয়া মিলিয়া, জিডিপি— সব ক্ষেত্রে জনমত গঠন করতে বড় ভূমিকা নিচ্ছে এই দু’লাইনের ছোট্ট মিথ্যেগুলি। চায়ের কাপে তুফান উঠছে এই মিথ্যে ভিতের ওপরে দাঁড়িয়ে ।
ফেক নিউজ়ের বিরুদ্ধে কী ভাবে লড়াই করা যেতে পারে, ভাবতে গবেষকরা রীতিমতো হিমশিম, কারণ এর পিছনে রয়েছে মোটা অঙ্কের রাজনৈতিক বিনিয়োগ। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ইদানীং ফেক নিউজ় বিরোধী লড়াইয়ের বেশ কিছু উপায় সামনে এনেছে, কিন্তু সংখ্যাগুরু মানুষ তা সম্পর্কে খুব একটা অবহিত, তা নয়। এ ছাড়া অল্টনিউজ়-এর মতো কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে, যারা চেষ্টা করছে সত্যিটাকে তুলে ধরার। কিন্তু তারাও সেই অর্থে ‘মেনস্ট্রিম’ নয়।
আবেদন, আনন্দবাজারের পাতায় এ রকম একটি বিভাগ রাখুন, যেখানে নিয়মিত এই ধরনের মিথ্যেগুলোকে চিহ্নিত করে, তার পিছনের সত্যিটাকে পাঠকের কাছে তুলে ধরা হবে। যে গবেষণা সাধারণ মানুষের পক্ষে করা সম্ভব হচ্ছে না, সেটি পত্রিকার তরফ থেকে নিরপেক্ষ ভাবে করে মানুষের সামনে রাখা হোক। নিয়মিত এই খবর দেখতে পেলে, যে-কোনও ফরওয়ার্ড করা মেসেজের প্রতি ভ্রুকুটি একটু বাড়বে সন্দেহ নেই। আর সংশোধন চোখে পড়লে, নেতারাও বক্তব্য পেশ করার সময় আর একটু দায়িত্ববান হবেন, আশা করা যায়।
সুপ্রতীক রায়চৌধুরী
কলকাতা-১১৪
কিসের জন্য?
গত লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ তাদের নির্বাচনী ইস্তাহারে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার করেছিল, ভোটে জয়লাভ করলে তারা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আনবে (সিএবি)। জনগণ বিপুল ভোটে এনডিএ জোটকেই পুনর্বার নির্বাচিত করেছে। লোকসভায় সিএবি পাশ হওয়ার পর, রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকা সত্ত্বেও সিএবি পাশ হয়ে আইনে (সিএএ) পরিণত হয়েছে।
আগের কোনও সরকার ১৯৭১-এর পর বাধ্য হয়ে এ দেশে আসা সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যবস্থা করেনি। ভোটব্যাঙ্কের স্বার্থে, কখনও অর্থের বিনিময়ে, তাঁদের রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড করে দিয়েছে। যাঁদের সামর্থ্য ছিল, তাঁদের জমি কেনার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। সামর্থ্যহীনেরা সরকারি পতিত জমি দখল করে কষ্টের মধ্যে জীবন নির্বাহ করছেন। জনসাধারণের অবগতির জন্য জানাই, পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নির্দেশ অনুযায়ী, কোনও বাংলাদেশিদের স্কুলে ভর্তি নেওয়া যায় না। বাংলাদেশ থেকে আসা ছেলেমেয়েরা, প্রধান শিক্ষকের মানবিকতার কারণে স্কুলে ভর্তি হতে পারে নবম শ্রেণি পর্যন্ত। অনেক মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীরা নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয় অথবা তাদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। আমরা, যারা বা যাদের পূর্বপুরুষ সাম্প্রদায়িক অত্যাচারে দেশভাগের পরে জন্মভূমি, আর্থিক সচ্ছলতা বিসর্জন দিয়ে শান্তির জন্য এ বঙ্গে এসেছিলাম, এক বার ভাবব না, সিএএ কাদের সুরক্ষা দেবে? সংসদে পরিষ্কার ভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, মুসলমান-সহ সকল ভারতীয়দের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে। তা হলে যাঁরা বিরোধিতা করছেন, তাঁরা কি এই অত্যাচারিত মানুষদের নাগরিকত্ব দিতে চান না? এই বিরোধিতা কি সংবিধানকে অসম্মান করা নয়?
যদি সিএএ অসাংবিধানিক হয়, বিরোধী দল আগামী লোকসভায় সরকার গঠন করে, সংসদে এই আইন বাতিল করতেই পারে। কতিপয় সংখ্যালঘুকে উত্তেজিত করে জাতীয় সম্পত্তি নষ্ট করা কেন?
রবীন্দ্রনাথ বসু
নৈহাটি, উত্তর ২৪ পরগনা
হিংসাত্মক
পশ্চিমবঙ্গে, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে যে ভাবে বাস পোড়ানো, ট্রেনে পাথর ছোড়া, সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করা হল, তা চরম নিন্দনীয়। সরকারি কোনও নীতি বা আইনের বিরুদ্ধে অবশ্যই আন্দোলন করা যায়। কিন্তু তা অবশ্যই শান্তিপূর্ণ হতে হবে। এই আইনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছে, সেই সব মামলার রায় বার হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক হল, পশ্চিমবঙ্গ সরকার হিংসাত্মক আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কোনও আইনি ব্যবস্থাই গ্রহণ করল না, যদিও ২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার একটি অাইন করেছিল যে, যারা আন্দোলনের নামে সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি করবে, তাদের কাছ থেকেই ক্ষতিপূরণ আদায় করা হবে।
বিজনকুমার মিত্র
চুঁচুড়া, হুগলি
এক হোক
আমাদের দেশটার নাম ভারত হলেও, যে কোনও বিষয়েই দেখা যায় পাকিস্তানের নাম উল্লেখ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী চ্যালেঞ্জ করেছেন, যদি সাহস থাকে তবে বিরোধীরা যেন সমস্ত পাকিস্তানিকে ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা ঘোষণা করে। বিরোধীদের থাকুক না থাকুক, আমরা সবাই জানি, প্রধানমন্ত্রীর খুব সাহস। আমরাও চাই ১৯৪৭-এ অঙ্গচ্ছেদের যে যন্ত্রণা, যা আমরা আজও ভোগ করছি, তা তিনি লাঘব করুন। শুধুমাত্র মুষ্টিমেয় মানুষের জন্য নয়, পূর্ব এবং পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশের জনগণ, যাঁরা আমাদের পূর্বতন সহ-নাগরিকদের বর্তমান প্রজন্ম, তাঁদের সকলকে আবার আমাদের সহ-নাগরিক করার ব্যবস্থা করুন। তা হলে অবিশ্বাস, ভুল বোঝাবুঝি, সন্দেহ, হানাহানি— কোনও কিছুরই আর অবকাশ থাকবে না। ইতিহাস তাঁকে মনে রাখবে।
সেখ হাফীজুর রহমান
দুর্গাপুর
উল্টো ফল
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মের মানুষেরা ভারতে পাঁচ বছর বসবাস করলেই ভারতের নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন। আগামী দিনে যদি এই তিন দেশ থেকে বহু মানুষ নাগরিকত্বের আশায় এই দেশে চলে আসেন? এই মুহূর্তে বাংলাদেশে ১ কোটি ৫০ লক্ষ ও পাকিস্তানে প্রায় ৮০ লক্ষ হিন্দু আছেন, শিখ বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধরলে সংখ্যাটা প্রায় তিন কোটি। এত মানুষ ভারতে চলে এলে, এঁদের খাদ্য, বাসস্থান, কর্মসংস্থান ভারত করতে পারবে তো?
এঁরা ভারতে এসে মূলত পশ্চিমবঙ্গ ও পঞ্জাবেই বাসা বাঁধবেন, অবস্থানগত কারণেই। এই দু’টি রাজ্যে ব্যাপক জনসংখ্যা বাড়বে, নানা আর্থ-সামাজিক সমস্যা দেখা দেবে।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে কিছু মৌলবাদী সংগঠন আওয়াজ তুলছে, হিন্দুদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দেবে। ওই দেশগুলির হিন্দুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। হয়তো আগামী দিনে এমন পরিস্থিতি হবে, ইচ্ছা না থাকলেও হিন্দুরা ভারতে আসতে বাধ্য হবেন।
তাই যে-অাইনের ফলে হিন্দুদের অনেক বেশি সুবিধা দেওয়া হবে বলা হচ্ছে, বাস্তবে তা হয়তো অসুবিধার সৃষ্টি করবে বেশি, শুধু হিন্দুদের ক্ষেত্রে নয়, গোটা ভারতের ক্ষেত্রেই।
রাধাপদ দাস
খাজরা, পশ্চিম মেদিনীপুর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy