Advertisement
E-Paper

ভোঁতা বস্তুর আঘাতে নির্ভয়া-ছায়া

ময়না তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, আর জি করের নির্যাতিতার গোপনাঙ্গেবলপূর্বক কিছু প্রবেশের চিহ্ন মিললেও, সেখানে বীর্য না মেলার কারণেরও ব্যাখ্যা রয়েছে রিপোর্টে।

আর জি কর কাণ্ডে ন্যায়বিচারের দাবিতে বড়দিনে অবস্থান মঞ্চ। বুধবার ধর্মতলায়।

আর জি কর কাণ্ডে ন্যায়বিচারের দাবিতে বড়দিনে অবস্থান মঞ্চ। বুধবার ধর্মতলায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৫:৫৫
Share
Save

ভোঁতা কোনও বস্তু প্রবেশের কারণেও আর জি করের নির্যাতিতার গোপনাঙ্গে আঘাত হয়ে থাকতে পারে। ইতিমধ্যেই সিবিআইকে পাঠানো রিপোর্টে এমন কথাই উল্লেখ করেছে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের নিয়ে গঠিত ‘মাল্টি ইনস্টিটিউশনাল মেডিক্যাল বোর্ড’ (এমআইএমবি)। ময়না তদন্তের রিপোর্টে নির্যাতিতার গোপনাঙ্গে যে ধরনের আঘাতের চিহ্নের উল্লেখ রয়েছে, তাতে ভোঁতা কোনও বস্তু বা শরীরের অন্য কোনও অংশ প্রবেশ করিয়ে অত্যাচারের ইঙ্গিত দিয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ওই বোর্ড। যা দেখা গিয়েছিল ১২ বছর আগে দিল্লিতে নির্ভয়া গণধর্ষণের ঘটনাতেও।

আর জি করের খুন ও ধর্ষণের মামলা সিবিআই গ্রহণ করার পরে নির্যাতিতার ময়না তদন্তের রিপোর্ট খুঁটিয়ে পরীক্ষা করার জন্য অগস্টের শেষে চিকিৎসা শাস্ত্রের বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ‘এমআইএমবি’ গঠন করা হয়। ১১ জনের ওই দলে তিন জন ফরেন্সিক মেডিসিন এবং স্ত্রীরোগ, অস্থি, শল্য ও চক্ষু বিভাগের দু’জন করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের রাখা হয়েছিল। এঁরা প্রত্যেকেই দিল্লির বিভিন্ন হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত। সূত্রের খবর, আর জি করের ময়না তদন্তের রিপোর্ট পুনর্মূল্যায়নের জন্য সিবিআইয়ের আবেদন মতো দিল্লি এমস-এর ফরেন্সিক মেডিসিনের প্রফেসর আদর্শ কুমারকে চেয়ারম্যান করে ওই ১১ জন বিশেষজ্ঞকে নিয়ে ‘এমআইএমবি’ তৈরি হয়েছিল। ময়না তদন্তের রিপোর্ট এবং বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণের প্রেক্ষিতে পর পর চারটি বৈঠক করেন ওই বিশেষজ্ঞেরা। এর পরেই তাঁরা গত ২১ সেপ্টেম্বর সমস্ত প্রশ্নের উত্তর এবং মতামত রিপোর্ট আকারে পাঠিয়ে দেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কাছে।

আর জি করের তরুণীর গোপনাঙ্গে যে আঘাতের চিহ্ন মিলেছে, তার সম্ভাব্য কারণ সেই রিপোর্টেই ব্যাখ্যা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সেখানে, ময়না তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী নির্যাতিতার গোপনাঙ্গে বলপূর্বক ভোঁতা কোনও বস্তু বা গোপনাঙ্গ ছাড়াও শরীরের অন্য কোনও অংশ প্রবেশের ইঙ্গিত মিলছে বলেই জানানো হয়েছে। এখানেই সংশয় প্রকাশ করছেন এ রাজ্যের চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, আর জি করের নির্যাতিতার গোপনাঙ্গে কোনও বীর্য মেলেনি। ফলে দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডের মতো এখানেও নির্যাতিতার গোপনাঙ্গে ভোঁতা কোনও বস্তু ঢুকিয়ে নির্যাতনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। দিল্লির ওই তরুণীকে গণধর্ষণের পরে, গোপনাঙ্গে লোহার রড ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘কতটা নৃশংস ভাবে আর জি করের তরুণী চিকিৎসক-পড়ুয়ার উপরে অত্যাচার করা হয়েছে, সেটা রিপোর্টেই স্পষ্ট। তার পরেও সিবিআইয়ের তদন্তে ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে।’’

ময়না তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, আর জি করের নির্যাতিতার গোপনাঙ্গেবলপূর্বক কিছু প্রবেশের চিহ্ন মিললেও, সেখানে বীর্য না মেলার কারণেরও ব্যাখ্যা রয়েছে রিপোর্টে। বলা হয়েছে, অন্য কোনও বস্তু বা শরীরের অন্য কোনও অংশ প্রবেশ করানো হতে পারে মেয়েটির গোপনাঙ্গে। বা পুরুষাঙ্গপ্রবেশ করলেও বীর্যপাত হয়নি বা কনডোম ব্যবহার করা হয়েছিল।

শহরের এক ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘রিপোর্টে যে বিষয়গুলি বলা হয়েছে, তা খুবই যুক্তিযুক্ত। তা না হলে ময়না তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী গোপনাঙ্গে এমন আঘাত হল কী ভাবে?’’ সূত্রের খবর, সঞ্জয় রায়ের ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী নির্যাতিতার শরীরের পোশাক, এমনকি সেমিনার কক্ষ থেকে উদ্ধার হওয়া তথ্যপ্রমাণের কোথাও তার বীর্য মেলেনি। তবে নির্যাতিতার শরীর থেকে সংগৃহীত লালা সঞ্জয়েরই, সেটা ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টে প্রমাণ মিলেছে। ফলে আর জি করের তরুণী চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় সঞ্জয়ের যোগ খুবই স্পষ্ট।

কিন্তু শু‌ধুই কি সঞ্জয়? না কি তাকে এই গোটা কাজ করার জন্য কেউ বা কারা নিযুক্ত করেছিল? আর ভোঁতা কোনও বস্তু যদি প্রবেশ করানো হয়ে থাকে, সেটাই বা কেন? কোনও আক্রোশ থেকে?

আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের অভিযোগ, ‘‘এই ধোঁয়াশাগুলিই কোনও ভাবে কাটছে না। সিবিআই স্পষ্ট করে কিছু জানাচ্ছে না। আর এই না-জানানোর নেপথ্যে কাউকে আড়াল করার প্রচেষ্টা চলছে বলেই মনে হচ্ছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

RG Kar Medical College and Hospital Incident RG Kar Protest InvestigationTeam

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}