শেষ বল না খেলা পর্যন্ত কে জিতল কে হারল বলা যায় না— ক্রিকেট দুনিয়ার একটি প্রাচীন প্রবাদ। সেই প্রবাদ ভুল প্রমাণিত হল এ বারের ইংল্যান্ড বনাম নিউজ়িল্যান্ডের ফাইনাল খেলায়। সুপার ওভার শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও দর্শকদের বোধগম্য হচ্ছিল না, উইলিয়ামসন না মর্গ্যান, কার হাতে উঠছে উনিশের বিশ্বকাপ। শুধুমাত্র খেলার মাঠে নৈপুণ্যের নিরিখে নয়, ক্রীড়া-কর্তাদের সুপার ওভার সংক্রান্ত প্রশাসনিক নিয়ম অনুসারে হেরে গেল নিউজ়িল্যান্ড। অথচ বিশ্বের অগণিত দর্শক মনে মনে এগিয়ে রাখছিলেন উইলিয়ামসনের তরতাজা দলকে। এই খেলায় অজান্তেই আমাদের সমর্থন নিউজ়িল্যান্ডের প্রতি ধাবিত হয়, বিলেতের উপর শতাব্দীপ্রাচীন রাগ-ঝাল কি সহজে মেটে? আচ্ছা, নিয়ম তো এমনও হতে পারত, ম্যাচ টাই হয়ে গেলে মোট রান তুলতে গিয়ে উইকেট খোয়ানোর সংখ্যা হবে ফলনির্ধারক? অথবা অন্য কিছু? খেলা শেষ হওয়ার পরেও মনে ঘোরাফেরা করছিল নানা সম্ভাবনার কথা ।
আর একটি ক্রিকেটীয় প্রবাদ: স্কোরবোর্ড একটি গাধা। আমাদের মতো কোটি কোটি ক্রীড়ামোদীর হৃদয়ে কিউয়িরাই এ বারের বিশ্বজয়ী ।
বিশ্বনাথ পাকড়াশি
শ্রীরামপুর, হুগলি
অবিচার
ফাইনালে নিউজ়িল্যান্ড যখন ইংল্যান্ডকে পুরোপুরি চেপে ধরেছে, ঠিক সেই সময় ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস রান নিতে গিয়ে ক্রিজ়ে ব্যাট বাড়িয়ে দিতে, ফিল্ডারের ছোড়া বল তাঁর ব্যাট ছুঁয়ে চলে গেল বাউন্ডারির ও-পারে। ইংল্যান্ড পেয়ে গেল বাড়তি আরও চার রান, যা হারা-ম্যাচ টাই করতে সাহায্য করল। আবার সুপার ওভারেও টাই হওয়ায়, বলা হল ইংল্যান্ড খেলায় নিউজ়িল্যান্ডের থেকে বেশি বাউন্ডারি মারায়, চ্যাম্পিয়ন হল। ফুটবলে পেনাল্টিতে যে রকম নিয়ম রয়েছে, পেনাল্টির ফলাফল টাই হলে আবার সাডেন ডেথ হয়, সে ভাবে এ ক্ষেত্রেও উভয় দেশকে আর এক বার সুপার ওভার খেলার সুযোগ দেওয়া যেত। নিউজ়িল্যান্ড এই ফাইনালে সুবিচার পেল না।
তাপস সাহা
শেওড়াফুলি, হুগলি
মেট্রো দুর্ঘটনা
মেট্রো রেলে যে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটল, হাত আটকে এক জন যাত্রীর মৃত্যু হল, তার দায় ট্রেনটির পিছনের মোটরম্যান এড়াতে পারেন না। যাত্রীদের ট্রেনে ওঠা-নামার প্রতি নজর রেখেই তাঁর ট্রেনের দরজা বন্ধ করার কথা। তাঁর ব্যর্থতার কারণে একটি জীবন চলে গেল।
সুভাষ সরকার
প্রাক্তন মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক মেট্রো রেলওয়ে, কলকাতা
সিস্টেম আছে
কলকাতা পাতাল রেলের দুর্ঘটনা আমাকে হতবাক করেছে। যে Signaling system, CATC (Continuous Automatic Train Control) এখানকার পাতাল রেল-এ আছে, সেটা বিশ্বে সর্বাধুনিক ছিল কিছু বছর আগে, পাতাল রেলে যুক্ত করার সময়। আমি সেই প্রোজেক্টে যুক্ত ছিলাম।
CATC তে প্রধানত তিনটে sub- system আছে।
১) ATP (Automatic Train Protection System), যা পরিস্থিতি অনুযায়ী যে কোনও সময় ট্রেন থামিয়ে দিতে পারে।
২) ATO (Automatic Train Operation), যেখানে দরজা বন্ধ করা ছাড়া ড্রাইভারের কোনও কাজ নেই। ট্রেন automatically চলে প্রয়োজন অনুযায়ী।
৩) AST (Automatic Train Supervision), যা নেটওয়ার্কের সমস্ত ট্রেন কন্ট্রোল করে।
সাম্প্রতিক দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মনে হয় উপরোক্ত ১) এবং ২) কোনও কাজ করেনি। এর একটা সম্ভাব্য কারণ, ‘টোটাল সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন’টা মাঝে মাঝে পরীক্ষা করা হয় না।
ড্রাইভার কেবিনের বাইরে যে আয়নাটা আছে, তাতে যাত্রীদের ট্রেনে ওঠা-নামা পুরোটাই দেখা যায়। ড্রাইভার যদি তা দেখে দরজা বন্ধের বোতাম টেপেন, তা হলে এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো যেতে পারে।
যিনি গার্ড থাকেন, শুরুর দিকে দেখেছি, হুইস্ল বাজিয়ে যাত্রীদের ট্রেনে ওঠানামার তদারকি করতেন। আজকাল হয়তো করেন না।
তপন চক্রবর্তী
কলকাতা-৬০
তাঁকে দেখেছি
সজলদাকে (মেট্রোয় হাত আটকে মৃত সজলকুমার কাঞ্জিলাল)রোজই দেখতাম, অ্যাকাডেমির গেটে, নাট্যপত্রিকা বিক্রি করছেন। কখনও কিনতাম, কখনও এড়িয়ে যেতাম। এক দিন আমি ও আমার স্ত্রী নাটক দেখতে গিয়েছি, ছেলেরও আসার কথা ছিল, সে আসতে পারেনি। ফলে একটা অতিরিক্ত টিকিট ছিল। নষ্ট হবে, তাই সজলদাকে দিয়ে আসি। বলি, কেউ এলে দিয়ে দেবেন, বা আপনি নিজে যদি দেখেন, কিছু দিতে হবে না। নাটক সবে শুরু হয়েছে, অন্ধকারে একটা বাড়ানো হাত। ‘‘দাদা, টিকিটের টাকাটা। বিক্রি করে দিয়েছি।’’ তখন নাটক দেখব কী, আমি আর আমার স্ত্রী অভিভূত হয়ে বসে আছি! আমি টাকাটা ফেরত দেওয়ার স্পর্ধা দেখাতে পারলাম না। ওঁকে জানাই আমাদের সশ্রদ্ধ প্রণাম।
আশীষ চক্রবর্তী
ধাড়সা, হাওড়া
এত ব্যস্ততা
আজ থেকে বছর কুড়ি আগেও দেখেছি, মেট্রো ট্রেনের গেট ঠিকঠাক বন্ধ না হলে, ট্রেন ছাড়ত না বা ছাড়তে পারত না। মেট্রো ট্রেনে ভিড় চিরদিনই। তখনও দেখেছিকিছু ব্যস্তবাগীশ লোক গেট বন্ধ হওয়ার মুখে শরীরের একটা অংশ ভিতরে ঢুকিয়ে দিতেন। ঠিকমতো বন্ধ না হতে পেরে গেট আবার পুরো খুলে যেত। সেই সুযোগে তাঁরা ভিতরে ঢুকে যেতেন। এই প্রথাই সম্ভবত এখনও চলে আসছে। কাঞ্জিলালবাবুও হয়তো এই প্রথাই অবলম্বন করেছিলেন। তিনি ভাবতেই পারেননি, ঝকঝকে নতুন একটা ট্রেন এমন বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে। কাজেই ট্রেনটি যে তাঁকে খুন করেছে তা ঠিক। আবার একটা যন্ত্রদানবকে অবিবেচকের মতো বিশ্বাস করাও বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
হেম নাথ দাস
কলকাতা-১৫০
যাত্রীর এটিকেট
জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা শুনেছি। মৃত্যুও শিক্ষা দিয়ে যেতে পারে, সজলবাবুর মৃত্যু তার উদাহরণ। যন্ত্রের দোষ নিশ্চয়ই আছে, যাত্রীরও কি দোষ ছিল না? না কি থাকে না? প্রতি দিন মেট্রোয় অফিস যাওয়া-আসা করি, রোজই দেখি কেউ না কেউ ঠিক দরজা বন্ধের মুখে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঢোকেন বা ঢুকতে চান। নন-এসি মেট্রোর কামরা বন্ধ হওয়ার মুখে বাধা পেলে খুলে যায়, এত দিন ধরে সেটা জানা হয়ে গিয়েছে বলেই বোধ হয় এই সুযোগটা নিতে চাওয়া। এসি মেট্রোর কামরায় খোলা-বন্ধের ব্যবস্থা নন-এসি মেট্রোর মতো নয়, তবু দেখা যায় দরজা যখন বন্ধ হব-হব, ইঞ্চি কয়েক হয়তো বাকি, তখনও কেউ না কেউ লড়াই করছেন ঢোকার জন্য। তাঁরা তো জানেন, এটা ঠিক পদ্ধতি নয়, তবু কেন করেন?
মেট্রো রেল এখন একেবারেই সময় মেনে চলে না, সে কথা মাথায় রেখেও বলা যায়, এত কিসের তাড়া? ৫-৭ মিনিট পরেই তো আর একটা ট্রেন আসবে! আর যদি এতই তাড়া, একটু সময় বুঝে, হাতে ৫ মিনিট বেশি সময় নিয়ে প্ল্যাটফর্মে এলেই তো হয়।
কলকাতার সাধারণ মানুষের যেন নিয়ম না-মানার প্রতি একটা স্বাভাবিক আগ্রহ আছে। সবুজ সিগনালের মধ্যেই দৌড়ে রাস্তা পেরোব, হেডফোন কানে নিয়ে রেললাইন ধরে হাঁটব, মোবাইলে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হব, ট্রেনের দরজা বন্ধের মুখে ঢুকব, এই ভাবে আর কত দিন চলবে?
সাগ্নিক গুহ
কলকাতা-৩১
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy