যুগে যুগে মহামানবরা শিখিয়ে গিয়েছেন মনুষ্যত্বের পথ।
শেখর ভৌমিক তাঁর ‘বেঁচে থাক বিদ্যাসাগর’ (রবিবাসরীয়, ২২-৯) নিবন্ধে এক মানবতাবাদী সৎ প্রয়াসের শুধু নেতিবাচক দিক বড় করে দেখিয়ে কী প্রমাণ করতে চেয়েছেন? যুগে যুগে মহামানবরা শিখিয়ে গিয়েছেন মনুষ্যত্বের পথ। আনুমানিক ৫০০০-৭০০০ বছর প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে সৎ পথের বহু সন্ধান আছে। উদাহরণ হিসেবে ভারতে বুদ্ধ, মহাবীর, চৈতন্য প্রমুখের মহাজীবন সাক্ষাৎ প্রমাণ। এই বহু মতের মধ্যে অনেক অমিল থাকতেই পারে। কিন্তু মিল যে জায়গায় তা অনন্য— সততার পথে মানবতা। তত্ত্বকথায় যত সহজ, বাস্তব কাজে ততই শক্ত। তবু দেখুন, স্বাধীন ভারতে সংবিধানে বিচারালয়ে সেই শপথটাই পাঠ করানো হয়— যাহা বলিব সত্য বলিব...। আইন, বিচার ও প্রশাসনে এই সততার ন্যায়বিচারই প্রধান।
কিছু অসৎ মানুষের জন্য এই মনুষ্যত্বের পথ অপ্রয়োজনীয়, মিথ্যে হয়ে যায় না। সারা বিশ্বে কী হচ্ছে, তা সবাই দেখছেন; সেটাই সব নয়। সেখানে বিশৃঙ্খলা, অসাম্য, অসঙ্গতির খবরই প্রধান হয়। বাকি ভারত, বাকি বিশ্ব এখনও সামগ্রিক মনুষ্যত্বের পথে চলেছে, যার নাম সভ্যতা। আর তা সম্ভব হয়েছে সম্মিলিত ভাবে মহামানবদের দেখানো পথে। লেখক কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছেন, বিদ্যাসাগরের সৎ প্রয়াস সম্পূর্ণ ও দ্রুত কার্যকর হয়নি। অতএব লেখকের সিদ্ধান্ত মানলে সততা, মনুষ্যত্ব, ন্যায়বিচারের কোনও মূল্য নেই। লেখক ইতিহাসে দেখাতে পারবেন, এ জাতীয় প্রয়াসের সম্পূর্ণ সাফল্যের উদাহরণ? সমাজবিজ্ঞান অনুযায়ী তা অসম্ভব।
প্রবন্ধের ভূমিকায় লেখা আছে ‘‘বিধবা বিবাহে কতটা লাভ হয়েছে বাংলার বিধবাদের?’’ হ্যাঁ, মুনাফাসর্বস্ব বাজারে ব্যক্তিগত ‘লাভ’ই মোক্ষ। কিন্তু বিদ্যাসাগরের এই মানবিক প্রয়াস বিষয়ক আলোচনায় ‘লাভ’ শব্দটি কত দূর প্রযোজ্য, তা ভেবে দেখতে অনুরোধ করি।
আলোচনায়, বিদ্যাসাগরের প্রয়াসে বিধবাবিবাহ প্রচলনের সঙ্গে বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংগ্রামের কথা আছে। কিছু প্রসঙ্গ উল্লেখ করলেও, বিচ্ছিন্ন ভাবে বিধবাবিবাহ বিরোধিতায় বেশি মন দিতে গিয়ে বিদ্যাসাগরের প্রয়াসের সামগ্রিক মনুষ্যত্বের দিক অবহেলিত, উপেক্ষিত থেকে গিয়েছে।
লেখক বিদ্যাসাগরের ‘উচ্ছ্বাস’, ‘চিররোগী’, করুণাসাগরের ‘আত্মতৃপ্তি’ ইত্যাদি নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। সবিনয়ে বলি, এখনও অনেক পথ হাঁটতে হবে। সৎ, মানবিক, সামাজিক প্রয়াসের সহজ, শর্টকাট রাস্তা নেই। বিদ্যাসাগরের জীবন তার জ্বলন্ত প্রমাণ।
‘সংবাদপত্রে— গালগল্প, খুনের খবর’-এ বেশি মন না দিয়ে বরং আলোচনা করা যেতে পারে, কত নারীর জীবন সার্থক হয়েছে বিদ্যাসাগরের প্রয়াসের ফলে।
শুভ্রাংশু কুমার রায়
ফটকগোড়া, চন্দননগর, হুগলি
‘শিল্পমহলের প্রত্যাশা ছাপিয়ে করে রেহাই’ (২১-৯) শীর্ষক সংবাদ পড়ে আবারও মনে হল, সরকার গোড়া কেটে আগায় জল দিয়ে গাছ বাঁচাতে চায়। ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার দাওয়াই হিসেবে কর্পোরেট কর অনেকখানি কমিয়ে দিল সরকার। এতে শেয়ার বাজার সাময়িক তেজি হলেও, অর্থনীতির দুরবস্থা এর মাধ্যমে দূর হতে পারে না।
রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের আপৎকালীন সংরক্ষিত তহবিল থেকে নেওয়া ১ লক্ষ ৭৬ হাজার ৫১ কোটি টাকা এ বার তারা ঢালছে কর্পোরেট সংস্থাগুলির পিছনে, যাতে কর্পোরেট কর ৩৪.৯৪% থেকে কমে ২৫.১৭%-এ নেমে আসবে, ১ অক্টোবরের পরে নতুন কারখানা খুললে কর্পোরেট কর ২৯.১২%-এর জায়গায় হবে ১৭.০১%, ম্যাট ১৮.৫% থেকে নেমে আসবে ১৫ শতাংশে। এমনই আরও কিছু রেহাইয়ের ফলে মোট রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ১.৪৫ লক্ষ কোটি টাকায়।
এখানে স্মরণ করা যেতে পারে, ব্যাঙ্ক শিল্পে অনাদায়ী ঋণ বা অনুৎপাদক সম্পদ (এনপিএ), যা সরকারি হিসেব মতে ৭.৯ লক্ষ কোটি টাকা, তার সিংহভাগই বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থার। বলা বাহুল্য, এনপিএ কেবল ব্যাঙ্ক শিল্পকে নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে দুর্বল করে দিয়েছে। সেই ঋণ আদায়ের ব্যাপারে সরকার হাত গুটিয়ে বসে আছে; উল্টে ব্যাঙ্কগুলির দুর্বলতা ঘোচাতে জনগণের করের টাকায় সৃষ্ট রাজস্ব থেকে ৭০,০০০ কোটি টাকা ঢালছে। এখন সেই কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে নানা সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দিয়ে সরকার অর্থনীতির হাল ফেরাতে ব্যস্ত। এ ভাবে শেয়ার বাজারে আপাত তেজি ভাব এলেও, এর দীর্ঘমেয়াদি ফল কোনও ভাবেই অর্থনীতির সামগ্রিক উন্নয়নের সহায়ক হতে পারে না।
বাজারে তেজি ভাব আনতে চাই বাজারের উপযুক্ত চাহিদা। আর চাহিদা বাড়াতে চাই আমজনতার হাতে নগদের জোগান বাড়ানোর কর্মসূচি। দরকার কৃষকদের কৃষিপণ্যের উচিত মূল্য পাওয়া, প্রয়োজনমতো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, সমকাজে সমবেতন এবং উপযুক্ত বেতন দেওয়া প্রভৃতি। মুনাফার স্বার্থে কর্ম ও কর্মিসঙ্কোচনের সমস্ত প্রক্রিয়াকে সজীব রেখে শিল্পমহলকে এ জাতীয় সুবিধা দিলে তা কখনওই অর্থনীতির হাল ফেরাতে পারে না। হাল ফিরতে পারে বিধ্বস্ত অর্থনীতির মূল কারিগর বৃহৎ পুঁজির মালিকদের।
গৌরীশঙ্কর দাস
সম্পাদক, ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ় ইউনিটি ফোরাম, পশ্চিমবঙ্গ
এত দিন পর?
‘চুপ! দেশ হারানোর উৎসব চলছে’ (২০-৯)-এর পরিপ্রেক্ষিতে একটিই প্রশ্ন: হিসেবটা কেন এত কাল বাদে হতে চলেছে? অসমে ঢাকঢোল পিটিয়ে শুরু করা হল একটা নতুন ধরনের খেলা— অসমে বসবাসকারী তথা এ দেশের নাগরিকদের নিয়ে ‘জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকরণ’ বা এনআরসির খেলা। এই খেলার খেলোয়াড়রা হলেন দেশের নাগরিক; যাঁদের খেলতে হবে তাঁদের
নিজের দেশের বিরুদ্ধেই এক বিজাতীয় খেলা— হয় দেশে থাকবে, নয়তো দেশ থেকে বিতাড়িত হতে হবে। এই লড়াইয়ের নিশানা সুদূর অতীতের এক লক্ষ্য ‘২৪/৩/১৯৭১’, যাকে ছুঁয়ে আরও অতীতের দিকে চলে যেতে হবে।
নাগরিকদের এই খেলার একমাত্র উপকরণ বা হাতিয়ার তাঁদের বা তাঁদের সাহায্যকারী পূর্বপুরুষদের এ দেশে বসবাসের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ নথি। আমরা যে কোনও খেলা খেলি বর্তমানকে নিয়ে, যার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই অতীত বা ভবিষ্যতের। কিন্তু অসমে নাগরিকদের সেখানে থাকা বা না থাকার যে খেলা শুরু হয়েছে, তা অতীতকে নিয়েই ও সেই অতীত এতটাই সুদূরের যে, তাকে ছোঁয়া অনেকের পক্ষেই অসম্ভব।
তাপস সাহা
শেওড়াফুলি, হুগলি
পুলিশের গর্ব!
রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নজিরবিহীন বললেও সম্ভবত কম বলা হবে। চোর-ডাকাতেরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর রাজ্যের গোয়েন্দা প্রধান গা ঢাকা দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন! কলকাতা পুলিশ তথা পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ নিশ্চয়ই গর্ববোধ করছে।
সুবীর গুপ্ত
কলাবেড়িয়া, পূর্ব মেদিনীপুর
আচরণ
সংবাদপত্রের মাধ্যমে প্রায়ই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অশান্তির খবর পাই। যে সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত, সেখানে এমন ঘটনা প্রায়ই দেখা যায়। সরকার ওই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার প্রসারের জন্যে বিপুল পরিমাণ অর্থ অনুদান হিসেবে দেয়। এই সমস্ত অর্থ দেশের করদাতাদের কাছ থেকেই আদায় করা হয়। কোনও ছাত্র রাজনীতি বা দেশের জন্যে কিছু করতে চাইলে সেটা নিশ্চয়ই কোনও অপরাধ নয়, কিন্তু তার জন্য তো অন্য অনেক রাস্তা খোলা আছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিশ্চয়ই সেই জায়গা নয়। সরকারি অর্থের অপচয় নিশ্চয়ই কাম্য নয়।
সুরজিৎ সাহা
কলকাতা-৩৩
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy