Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Daughter

সম্পাদক সমীপেষু: পরিবারে উপেক্ষিতা

ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ বর্তমানে অপরাধ বলে গণ্য হলেও টাকার বিনিময়ে এই কাজ অবাধে চলছে।

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

‘অজাত কন্যা’ (সম্পাদকীয়, ২৮-৮) উদ্বিগ্ন করল। কন্যাভ্রূণ হত্যায় ভারত অগ্রগণ্য এবং কয়েক বছরের মধ্যেই কন্যাসন্তানের জন্ম ভারতে উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পাবে। কন্যাসন্তানের প্রতি অবহেলা শিক্ষিত সমাজে কম নয়। সোনোগ্রাফি করে গর্ভস্থ সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ শিক্ষিত এবং অবস্থাপন্ন পরিবারে বেশি হয়ে থাকে। আমাদের এলাকায় এমনই এক পরিবারে প্রথমে কন্যাসন্তান জন্মের পর বাড়িতে অন্ধকার নেমে এসেছিল। অন্নপ্রাশনের কোনও অনুষ্ঠান পর্যন্ত হয়নি। কয়েক বছর পর একটি পুত্রসন্তানের জন্ম হলে বাড়িতে সবার মুখে আলো ফুটেছিল। ধুমধাম করে অন্নপ্রাশন হয়েছিল।

ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ বর্তমানে অপরাধ বলে গণ্য হলেও টাকার বিনিময়ে এই কাজ অবাধে চলছে। দোষী ডাক্তারের শাস্তি হয় না কেন? কন্যাভ্রূণ হত্যা কঠোর ব্যবস্থা ছাড়া বন্ধ করা সম্ভব নয়। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘বেটি বচাও, বেটি পঢ়াও’ এবং রাজ্য সরকারের ‘সুকন্যা যোজনা’ কন্যাভ্রূণ হত্যা বন্ধে খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি। এই প্রকল্পে গরিব পরিবারগুলো অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কিন্তু ভ্রূণহত্যা বেশি হয় অবস্থাপন্ন পরিবারগুলোতে। সেখানে কী হবে? আমরা শিক্ষিত হয়েছি বটে, কিন্তু আজও মন থেকে ছেলেমেয়ের বিভেদ দূর করতে পারিনি। কবে প্রতিটি পরিবারে কন্যাসন্তানরা ‘অজাত’ না হয়ে ‘সুকন্যা’ হিসেবে প্রতিপালিত হবে?

অতীশচন্দ্র ভাওয়াল, কোন্নগর, হুগলি

যুক্তিহীন

কিশোর অপরাধীদের ক্ষেত্রে, বিশেষত দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডের পর, সরকারের কণ্ঠেই ছেলেদের সাবালকত্বের বয়স কমিয়ে আনার পক্ষে সওয়াল শোনা গিয়েছে। জনসাধারণের একটা অংশ সেই সওয়াল সমর্থনও করেছেন। সেটা উচিত কি অনুচিত, তা ভিন্ন প্রশ্ন। কিন্তু যেখানে ছেলেদের সাবালকত্বের বয়স কমানোর চিন্তাভাবনা চলে, সেখানে মেয়েদের বিয়ের বয়স বাড়ানো হবে কোন যুক্তিতে? বালির বাঁধে নাবালিকা বিয়ের বন্যা রোধ করা যাবে কি ?

চন্দ্রপ্রকাশ সরকার, বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ

শাস্তি চাই

অন্য সম্প্রদায়ের এক যুবককে ভালবাসার অপরাধে আদিবাসী যুবতীকে গণধর্ষণের সাজা দেওয়ার (ভিন্‌জাতে প্রেম, সাজা ‘গণধর্ষণ’, ২৪-৮) ঘটনাটি রাজ্যের সম্মান নষ্ট করেছে। বীরভূমের মহম্মদবাজারে দুই সন্তানের জননী এক জন বিধবা আদিবাসী মহিলার ওপর সংগঠিত ভাবে যে ধরনের নির্যাতন চালানো হয়েছে, তা যে কোনও বর্বরতাকে হার মানায়। আদিবাসী সমাজের মহিলা অন্য সম্প্রদায়ের যুবকের সঙ্গে প্রেম করেন, এটা কি কোনও অপরাধ হতে পারে? সালিশি সভায় বসে গ্রামের মোড়ল-সহ যারা গণধর্ষণের ফরমান জারি করেছিল, পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেছে। এতে কিছুটা স্বস্তি হল। ধর্ষণকারী যুবকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া দরকার।

কাজি মুরশিদুল আরেফিন, খোলাপোতা, উত্তর ২৪ পরগনা

সালিশি কেন?

সারা দেশে এক বিচারব্যবস্থা রয়েছে। তা হলে বীরভূমের মহম্মদবাজারে গ্রামের লোকদের সালিশি সভা বসানোর ক্ষমতা দিল কে? সালিশি সভার সদস্য ও গণধর্ষণকারীদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি প্রদান করা উচিত রাজ্য সরকারের। আদিবাসীরাও এ দেশেরই মানুষ। তাঁরা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন কেন?

রীতা পাল, কলকাতা-২৪

এই কি বিচার

‘খেলনায়, পুতুলে সেজে নতুন পকসো আদালত হাওড়ায়’ (২৯-৮) শীর্ষক সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। আমি নিজে এক জন নির্যাতিতার বাবা। শিশুবান্ধব আদালত কক্ষ উদ্বোধন করলেই কি সব কর্তব্য সারা হয়ে যাবে? কত মামলা ঝুলে রয়েছে কত দিন ধরে, কত রকম কারণে। বিচারের বাণী কোথায়? যে শিশুর শৈশব চুরি হয়ে গিয়েছে, আদালত কক্ষের দেওয়ালে আঁকা কার্টুন দেখিয়ে তাকে অভয় দানের চেষ্টা কতখানি ফলদায়ক হবে? সেই তো অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী তাকে ‘ক্রস’ করার নামে পুনরায় তার শৈশবের দুঃস্বপ্ন ফিরিয়ে আনবেন ওই আদালতেরই কক্ষে! ছোটা ভীম, বার্বি হরেক রকমের খেলনা ওই মুহূর্তে ওই শিশুটির কোন কাজে লাগবে?

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, বিচারের আশায় পুলিশ-প্রশাসন থেকে শুরু করে বিচারের সঙ্গে যুক্ত পদকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা। সবাই প্রায় ঠারেঠোরে বলেছেন, এমন তো কতই হয়! অভিভাবকদের বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে বিষয়টা ভুলিয়ে দিতে হবে। জীবনকে গতি দিতে হবে। অথচ, বিচার ঝুলবে। এটাই স্বাভাবিক। মানিয়ে নিতে হবে।

সমাজের দ্বিচারিতা লক্ষ করুন। দ্রুত বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করার মাধ্যমে নির্যাতিতাকে স্বাভাবিক জীবনে পুনর্বাসনের কোনও উদ্যোগই নেই। উল্টে অভিভাবকদের জ্ঞান দেওয়া হয়— বিষয়টা বেশি গড়াতে দেবেন না। ভবিষ্যতে কোনও পুরুষের সঙ্গে সম্পর্কে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। বিচারের দ্বারস্থ হওয়াটাই যেন অপরাধের। এর চেয়ে চুপ করে থেকে মনোবিদের দেওয়া ঘুমের ওষুধ খেলেই বোধ হয় ভাল হত।

আলোচনার শেষে সবার কথা একটাই— তাঁদের বাড়িতেও মেয়ে আছে। তাঁরাও চিন্তিত। এটা কাটা ঘায়ে নুনের ছিটের মতো। এই শেষ কথাটা নির্যাতিতা তথা তার বাবা-মায়ের ক্ষতে কোনও প্রলেপ দিতে পারে কি? তাঁরা কত কাউন্সেলিং, ফ্রি লিগাল এড-এর কথা এক নাগাড়ে বলে যান। নিজেরা কোথায় কোথায় যুক্ত আছেন, তা-ও বলেন। শুধুই আত্মপ্রচার। কিন্তু একটাই কথা। বিচার কোথায়? বিচারই যখন অধরা, তখন কোর্ট-কক্ষ পুতুল দিয়ে সাজিয়ে আর কী হবে?

পার্থ প্রতিম চৌধুরী, কোন্নগর, হুগলি

লাগামছাড়া

আনাজের বাজারদরের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই (‘অগ্নিমূল্য আনাজ, বৃষ্টিই অজুহাত’, ৩১-৮)। বাজারে এখন আনাজের দাম কিলো প্রতি গড়ে ৫০-৬০ টাকা। আলু ৩৫-৪০ টাকা কিলো দামে বিক্রি হচ্ছে, যেখানে এখন আলুর দাম হওয়া উচিত কিলো প্রতি ২০-২২ টাকা। মাছ, মাংস, ডিম, ভোজ্যতেলের দামও বেশ চড়া।

বলা হচ্ছে, বৃষ্টিই আনাজপাতির দাম বৃদ্ধির একমাত্র কারণ। কৃষি বিপণন বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, রাজ্যে কৃষিজাত পণ্য সংরক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। সঙ্কটকালে প্রত্যেক বার আড়তদার, মজুতদার, ফড়ে ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বাড়ে। গুটিকতক বন্যাক্রান্ত অঞ্চল বাদ দিলেও পশ্চিমবঙ্গে বিস্তীর্ণ চাষযোগ্য জমিতে প্রচুর আনাজ চাষ হয়। চাষিরা বাধ্য হয়ে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে জলের দামে সবজি বিক্রি করছেন। এই সুযোগে চলছে মজুতদারি। অসাধু ব্যবসায়ীরা সবজির দাম তিন-চার গুণ বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। আমজনতা ও খুচরো ক্রেতাদের কাছে দাম হচ্ছে আকাশছোঁয়া।

বাজারে আনাজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের স্পেশাল টাস্কফোর্স রয়েছে। অথচ, কার্যক্ষেত্রে দেখা যায় এই টাস্কফোর্স কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে না। সংবাদমাধ্যম ও টিভির পর্দায় টাস্কফোর্স অফিসারদের মাঝে মাঝে দু’-একটি বাজারে নজরদারি করতেও দেখা যায়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেটে যাওয়ার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সবজির দাম কমে যায়। বাজারদর নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারকে আরও কঠোর ও সদর্থক ভূমিকা গ্ৰহণ করতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে কৃত্রিম ভাবে বাজারদর নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, সে দিকেও সর্তক থাকতে হবে।

হারান চন্দ্র মণ্ডল, ব্যারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

অন্য বিষয়গুলি:

Daughter Embryo
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE