রঞ্জিত সুর লিখিত ‘প্রাপ্যটুকু কবে পাবেন বন্দিরা’ (১৯-৩) শীর্ষক সুলিখিত প্রবন্ধ পড়ে এই চিঠি। কারাগারে বন্দিদের প্রতি অত্যন্ত অমানবিক ব্যবহারের ধারা বহু দিন ধরেই চলেছে। মনে পড়ে, ১৯৮০ সালে আনন্দবাজারে প্রকাশিত, ‘মালতী ঘর চায়, বর চায়, দু’বেলা খেতে চায়’ খবরের কথা। কলকাতার দমদম এয়ারপোর্টের লাউঞ্জে পড়ে থাকা খাবারের প্যাকেট কুড়িয়ে, এক গৃহপরিচারিকার ১২ বছর বয়সি মেয়ে মালতী তা খাচ্ছিল। এতে যাত্রীদের বিরক্তির উদ্রেক হয়েছিল। তাই, পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছিল। কাজটা যে আইনের চোখে শাস্তিযোগ্য তা ক’জন উচ্চশিক্ষিত মানুষ জানেন? তা হলে, সামান্য পরিচারিকার ছোট্ট মেয়ে মালতী তা কী করে জানবে? পুলিশ মালতীকে আদালতে পাঠিয়েছিল। কিন্তু উকিল দিতে না পারায় কৈশোরে খেলে বেড়ানোর সুন্দর ছ’টি বছর বিচারাধীন আসামি হিসাবে তার গারদেই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
১৯৯৪ সালে নজরে এসেছিল অজয় ঘোষ-এর কাহিনি, যা ২০-১২-১৯৯৪ তারিখে এবং পরের দিন আনন্দবাজারে প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৬২ সাল থেকে বিচারাধীন বন্দি হিসাবে থাকা অজয় ঘোষের বিরুদ্ধে মামলা ৩২ বছরে আশানুরূপ এগোয়নি। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে প্রদত্ত ফৌজদারি ধারাটি জামিনযোগ্য ছিল না, তবু উকিল নিয়োগ এবং নিয়মিত শুনানি হলে অনেক আগেই এই মামলার নিষ্পত্তি হত এবং অজয়বাবুও গারদের বাইরে চলে আসতে পারতেন। তা ছাড়া অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ার সময় অজয়বাবু ছিলেন বিকৃত-মস্তিষ্ক। সেই হিসাবেও অনেক আগেই তাঁর মুক্তি পাওয়ার কথা। এত বছর পর অজয়বাবু যখন বলছিলেন, “এক বার মাকে দেখতে ইচ্ছে করে”, তা পড়ে অশ্রু সংবরণ করা যায় না। অজয়বাবু জানতেন না যে, এর বহু আগেই তাঁর মা পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। এর পর বিশিষ্ট আইনজীবী গীতানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ২০০০ সালের ২৯ জানুয়ারি তিনি মুক্তি পেয়েছিলেন। কিন্তু তত দিনে জীবনের মূল্যবান ৩৮টি বছর কেটে গিয়েছিল জেলে। এর পর তাঁর নিজের বাড়িতে ফেরার মতো পরিস্থিতি ছিল না। তাই হতভাগ্য বৃদ্ধের ঠাঁই হয়েছিল মিশনারিস অব চ্যারিটির বৃদ্ধাশ্রমে।
অতিরিক্ত দুঃখজনক গুয়াহাটির একটি ঘটনা। ২০০৫ সালে নজরে আসে ‘মাচান লালুং’ নামের ৭৭ বছরের এক বৃদ্ধ ১৯৫১ সাল থেকে সুদীর্ঘ ৫৪ বছর কোনও এক লঘু অপরাধের অভিযোগে বিচারাধীন আসামি হিসাবে জেলে বন্দি। এই ৫৪ বছর তাঁর মামলার কোনও শুনানিই হয়নি। মানুষটির জীবনে তা হলে কী অবশিষ্ট রইল?
১৯৫১ সাল থেকে ২০২০ সাল অবধি হওয়া এই সব ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক দলের কোনও সম্বন্ধ নেই, কারণ এই দীর্ঘ সময়ে বহু দলই ক্ষমতার মসনদে এসেছে। কিন্তু অবস্থার উন্নতি কতটুকু হয়েছে? মহার্ঘ ভাতা, বোনাস, গ্যাস, ইলেকট্রিসিটি ইত্যাদির দাবিতে লড়ার জন্য বহু সংগ্রামী মানুষকে পাওয়া যায়। কিন্তু কারাগারে আবদ্ধ, মুক্ত পৃথিবীর স্বাদ থেকে বঞ্চিত মানুষদের যন্ত্রণা ক’জন অনুভব করেন?
সোনা বন্দ্যোপাধ্যায়
খড়দহ, উত্তর ২৪ পরগনা
ব্যাঙ্ককর্মীরা
কেন্দ্রীয় সরকারি প্যাকেজে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ৫০ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্য বিমার ব্যবস্থা অবশ্যই খুব ভাল কাজ। কিন্তু ব্যাঙ্ক, পুলিশ, বিদ্যুৎ দফতর ও টেলিকম কর্মচারীরা এর আওতা থেকে কেন বাদ পড়লেন? করোনাভাইরাস কি তাঁদের থেকে দূরে থাকবে? তাঁদের কাজেও কি এই ভাইরাসে সংক্রমিত হবার যথেষ্ট সম্ভাবনা নেই?
ব্যাঙ্ককর্মীরা অবশ্য এই সমাজে, কে জানে কেন, কিছুটা অচ্ছুত টাইপের। এই দুঃসময়ে তাঁরা যে অফিসে রোজ কাজ করছেন, সেটা নেতা-মন্ত্রীরা এক বার উল্লেখ করতেও ভুলে যান, বা চান না।
ব্যাঙ্ককর্মীরা যতই সময়মতো সরকারি প্রকল্প রূপায়িত করুন, দিনরাত খেটে বিমুদ্রাকরণের কাজ করুন— তাঁদের বাড়তি সুবিধা দেওয়া তো দূরের কথা, পাঁচ বছর পর বেতন চুক্তি করার সময় ২% থেকে আলোচনা শুরু করা হয়, মাসের পর মাস চলতে থাকে বৈঠকের পর বৈঠক। মন্ত্রী মহাশয়রাও সুযোগ পেলেই সমালোচনা করেন।
অনেক সাধারণ মানুষ ও তা-ই। ব্যাঙ্ককর্মীরা বেসরকারিকরণ বা কর্মী নিয়োগ নিয়ে স্ট্রাইক করলেও, না জেনে অনেকে বলেন, ‘‘এদের আর কত মাইনে চাই!’’ যাঁরা মুখ বুজে বিভিন্ন সরকারি অফিসে দাঁড়িয়ে থেকে, মাথা নিচু করে কাজ করাতে বাধ্য হন, তাঁরাই ব্যাঙ্কে এসে দশ মিনিটও বসতে চান না, খুব খানিক হম্বিতম্বি করেন।
আশিস রায়চৌধুরী
এক্সচেঞ্জ রোড, শিলিগুড়ি
না করলে চলে
রাষ্ট্রায়ত্ত এক ব্যাঙ্ককর্মী হিসেবে করোনা লকডাউনে বন্ধ না হওয়া ব্যাঙ্কের বিচিত্র গ্রাহকদের কর্মকাণ্ডের দু’-একটা উদাহরণ দিতেই আমার এ পত্রাবতারণা। পঞ্চাশোর্ধ্ব এক প্রৌঢ় তাঁর অশীতিপর অসমর্থ বাবাকে টিপসই দিয়ে লাইফ সার্টিফিকেট জমা দিতে টেনে হিঁচড়ে ব্যাঙ্কের সরু গেট দিয়ে ঢোকাচ্ছেন।
আবার, এক পরিবারের জনাচারেক (তাঁদের গাড়ি চালক-সহ) মৃত্যুপথযাত্রী কর্ত্রীমাকে নিয়ে ঢুকে ভিতরের সোফায় গ্যাঁট হয়ে বসলেন— নমিনি চিহ্নিত মেয়ের নাম নমিনির পরিবর্তে অ্যাকাউন্টে তৃতীয় ব্যক্তি-গ্রাহক হিসেবে নথিভুক্ত করতে।
আরও অবাক হলাম, যখন তিন সত্তরোর্ধ্ব পেনশন-প্রাপক পরস্পরের গলা জড়িয়ে ব্যাঙ্কে ঢুকে অতিমারির সংক্রমণ ও ভয়াবহতা বিশ্লেষণের পর ১৫জি/ ১৫এইচ ফর্ম আগাম সংগ্রহ করতে চেয়ে বসলেন। নিজের জন্য ১৫এইচ, আর হায়দরাবাদে চাকুরিরতা বৌমার জন্যই দাবি ১৫জি-র। এপ্রিল মাসের মধ্যে যা জমা না দিলে সমূহ বিপদ।
এ ছাড়াও সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাঙ্কের অন্যান্য শাখায় টাকা পাঠানোর হিড়িক আর সব রকমের নোটে বেশি অঙ্কের টাকা তুলে শুধু নিজের স্বার্থসিদ্ধি তো নিত্য দিনের ঘটনা।
অনেকে আবার এসেছেন স্রেফ খোঁজখবর নিতে— নতুন কোনও নিষেধাজ্ঞা এল কি না, কোন নিষেধাজ্ঞা কত দিন বলবৎ থাকবে, অথবা কোনও নিয়মবিধির পরিবর্তন, এই আর কি।
ভাবুন এক বার, এত সরকারি ঘোষণা, ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞদের সতর্কবাণী এবং মুখ্যমন্ত্রী/ প্রধানমন্ত্রীর করজোড় আবেদন সত্ত্বেও, বয়স্ক মানুষদের নিয়ে তাঁদেরই স্বজন-আত্মীয়েরা যে ভাবে ‘পড়ে থাকা কাজ’ হাসিল করতে অতি উদ্যোগী এই দুঃসময়ে, তা নিতান্ত দুর্ভাগ্যের। যে সময় সমাজের সমস্ত জনসাধারণের ঘর থেকে বেরোনোই বারণ, তখন বাংলার বেশ কিছু শিক্ষিত (?) মানুষ, অশক্ত, কমজোরি বৃদ্ধদের জোর করে ব্যাঙ্কে টেনে এনে তাঁদেরই উপার্জিত অর্থের সংস্থান করার জন্য কী হেনস্থাটাই না করছেন। এই সময় যা না করলেও চলে, তেমন কাজেই গ্রাহক ও পরিবারবর্গের অদম্য উৎসাহ।
প্রতাপ কুমার মণ্ডল
কলকাতা-৪২
কেব্ল সঙ্কট
বর্তমানে মানুষ গৃহবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন আর পরিস্থিতি জানতে পারছেন টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রেখে। বিনোদনের চেয়েও করোনা সংক্রান্ত আপডেট জরুরি এখন প্রত্যেকের কাছে। অথচ কেব্ল অফিসে ঠিক সময়ে গিয়ে মাসিক সাবস্ক্রিপশন শোধ করা দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। লকডাউন অমান্য করে বাড়ির বাইরে যাওয়া মুশকিল, আর বিভিন্ন পেশায় জড়িত মানুষদের হাতে এ মুহূর্তে টাকা নেই। কেব্ল অপারেটরদের পক্ষ থেকে সময়সীমার ব্যাপারে ছাড় দেওয়া তো দূর, বাড়িতে এসে টাকা সংগ্রহ করতেও তাঁদের অনীহা। ফলে অনেকে না-বলেই কেব্লের সংযোগ কেটে দিচ্ছেন।
মণিদীপা গুপ্ত
কলকাতা-১৫৭
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy