Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
National news

এমন ইদ যেন আর না আসে ভূস্বর্গে

এক ইদ থেকে আর এক ইদ। একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হল যেন। কিন্তু সম্পূর্ণ হয়েও রক্তরেখায় চিত্রিত সে বৃত্ত শেষ হতে চাইছে না কিছুতেই। এখনও রোজ রক্তে ভিজে যাচ্ছে উপত্যকা। ইদুল-ফিতরের সময় শুরু হয়েছিল অশান্তিটা। দু’মাস কাটল তার পর থেকে। তবু কাশ্মীরের রক্তস্নানে ছেদ নেই।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৫৫
Share: Save:

এক ইদ থেকে আর এক ইদ। একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হল যেন। কিন্তু সম্পূর্ণ হয়েও রক্তরেখায় চিত্রিত সে বৃত্ত শেষ হতে চাইছে না কিছুতেই। এখনও রোজ রক্তে ভিজে যাচ্ছে উপত্যকা। ইদুল-ফিতরের সময় শুরু হয়েছিল অশান্তিটা। দু’মাস কাটল তার পর থেকে। তবু কাশ্মীরের রক্তস্নানে ছেদ নেই। টানা চলছে। কুরবানির ইদ আজ দ্বারপ্রান্তে। কিন্তু জঙ্গি আর বিচ্ছিন্নতাবাদীর সঙ্গে রাষ্ট্রের সঙ্ঘাতে উৎসবই আজ কুরবান।

সংখ্যাটা বাড়ছে ক্রমশ। পাঁচ, বারো, ষোলো, একুশ, বত্রিশ, আটচল্লিশ, তিপ্পান, সাতষট্টি, পঁচাত্তর, আটাত্তর...। কবর বাড়ছে, চিতা বাড়ছে। জঙ্গির শব, বিচ্ছিন্নতাবাদীর শব, বেপথু তরুণের শব, সাধারণ নাগরিকের শব, সেনা জওয়ানের শব, পুলিশ কর্মীর শব-- উপত্যকায় আজ শবের পাহাড়। কিন্তু শব দেখে আজ কাঁদার সময়ও নেই কাশ্মীরের। এক দিকে সন্ত্রাসের মারণ প্ররোচনায় রোজ লকলক করে উঠছে অশান্তির অগ্নিশিখা। আর সে আগুন নেভাতে অন্য প্রান্ত থেকে অগ্নিবর্ষী হয়ে উঠছে রাষ্ট্র। নিজের আগুনে নিজেই ঝলসে যাচ্ছে ভূস্বর্গ। উৎসবে উৎসাহ নেই আর।

বহু দিন পর এমন ভয়ঙ্কর আবর্তে কাশ্মীর। এর সমাধান কিন্তু বলপ্রয়োগে নেই। শুধু বুটের শব্দেই দমে যাবে সব জঙ্গিপনা, সব বিচ্ছিন্নতাবাদ, ভেবেছিলেন কোনও কোনও ‘অমিত’-শক্তিধর রাজনীতিক। কিন্তু অচিরেই তাঁরা বুঝে গিয়েছেন যে তাঁরা ‘অমিত’-শক্তিধর নন। অতএব আলাপ-আলোচনার চিরস্বীকৃত পথেই ফেরার চেষ্টা আবার। সে চেষ্টাটা রাষ্ট্রের তরফে যথেষ্ট আন্তরিক ভাবে হয়েছে ঠিকই। বিচ্ছিন্নতাবাদীকেও এমনকী আলোচনার মঞ্চে জায়গা দেওয়ার উদগ্রীব প্রচেষ্টা হয়েছে। কিন্তু সে প্রচেষ্টা সাফল্যের মুখ দেখল না কিছুতেই। কারণ সন্ত্রাসের প্ররোচকরাও মরিয়া এ বার। অতএব রক্তস্নান অব্যহত।

এখন উপায়?

আরও সেনা যাচ্ছে কাশ্মীরে। আরও বাড়ছে বুটের শব্দ। আবার বলপ্রয়োগে ফেরার কথা ভাবা হচ্ছে।

বন্দুকের নল যে সর্বদা শেষ কথা বলে না, ইতিহাস তা প্রমাণ করেছে বার বার। বুটের ভারী শব্দে দ্রোহের স্বর সাময়িক ভাবে ম্লান লাগে ঠিকই। কিন্তু ভিতরে ভিতরে আগুনটা জ্বলতে থাকে একই উত্তাপে। দায়িত্বশীল রাষ্ট্রকে এ কথা মাথায় রাখতেই হবে। নাগরিকের রক্তে আর ভিজবে না উপত্যকা, আর ভাসবে উৎসবের আঙিনা, রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হবে।

এ ভূস্বর্গ চায় না ভারতবাসী। রাষ্ট্রের কাছে, উপত্যকার কাছ আসমুদ্রহিমাচলের আর্তি আজ-- এমন ইদ যেন আর না আসে ভূস্বর্গে।

অন্য বিষয়গুলি:

kashmir anjan bandopadhyay news letter eid eve
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE